রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে কয়েকদিন ধরে কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী লীগের মিছিল করার প্রেক্ষাপটে ঝটিকা মিছিলসহ বেআইনি সমাবেশ মোকাবিলায় কঠোর বার্তা দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। যারা বেআইনি তৎপরতার সঙ্গে যুক্ত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠক থেকে।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম রোববার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলন করে বিষয়টি জানান। তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সেই বৈঠক হয়েছে সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর আলোকে।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফজলুল কবির খান, আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, নৌপরিবহন ও শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা এম. সাখাওয়াত হোসেন, অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান। এছাড়া ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়) খোদা বকশ চৌধুরী, আইজিপি বাহারুল আলম, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব সিরাজ উদ্দিন মিয়া এবং উর্ধ্বতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা।

প্রেস সচিব বলেন, “প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, ঝটিকা মিছিলসহ বেআইনি সমাবেশের বিষয়ে মনিটরিং জোরদার করতে হবে। এর নেপথ্যে যারা সক্রিয় রয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তিনি আরও জানান, স্থানীয় প্রশাসনকে আরও সক্রিয়ভাবে এসব ঘটনা মোকাবিলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বৈঠকে রাজনৈতিক ঐক্য ধরে রাখার ওপর জোর দেওয়া হয়। শফিকুল আলম বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখতে এবং সবাই মিলে সামনের নির্বাচনকে ঘিরে কোনো ধরনের নিরাপত্তাজনিত ঘটনা না ঘটে সে বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।”

প্রধান উপদেষ্টা আসন্ন দুর্গাপূজায় অস্থিরতা সৃষ্টির আশঙ্কা প্রকাশ করে আগাম নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, গত বছরের মতো এ বছরও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। এ জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয়কে দেশের সব ধর্মভিত্তিক সংগঠনের সাথে বৈঠক করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া বৈঠকে নিরাপত্তা পরিস্থিতি ক্রমাগতভাবে মনিটর করা, নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে সমন্বয় বাড়ানো এবং যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসনকে আগাম প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে ডাকসু নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

প্রেস সচিব বলেন, “বৈঠকে আলোচনায় আসে যে পতিত পরাজিত ফ্যাসিবাদী শক্তি যখনই দেখছে দেশ নির্বাচনের দিকে এগোচ্ছে এবং জুলাইয়ের হত্যাযজ্ঞের সাথে জড়িতদের বিচার দ্রুত এগোচ্ছে, তখনই তারা মরিয়া হয়ে উঠছে। তারা দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা বিনষ্ট করতে এবং গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে মাঠে নামছে। এটা এখন আইন-শৃঙ্খলা নয়, জাতীয় নিরাপত্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।”

তিনি জানান, বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে—দেশের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। সরকারের মতে, দেশের স্বার্থে জনগণের সাথে সব রাজনৈতিক দলের ঐক্যবদ্ধ থাকা প্রয়োজন।

সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার দুই উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার ও অপূর্ব জাহাঙ্গীরও উপস্থিত ছিলেন।

গণ আন্দোলনে ক্ষমতা হারিয়ে ২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে যান। তিন দিন পর ৮ অগাস্ট গঠন করা হয় অন্তর্বর্তী সরকার। এরপর থেকে একে একে গ্রেপ্তার হতে থাকেন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, শীর্ষ পর্যায়ের নেতা ও প্রভাবশালী সংসদ সদস্যরা। আওয়ামী লীগের জোটভুক্ত অন্যদলগুলোর কয়েকজন নেতাকেও গ্রেপ্তার করা হয়।

আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের অধিকাংশই আত্মগোপনে থাকায় নিয়মিত রাজনৈতিক কর্মসূচিতেও তারা অনুপস্থিত। আন্দোলন দমাতে শত শত মানুষকে হত্যার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের বিচারের উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। আর সেই বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত দলটির সব ধরনের কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

তবে মাঝে মাঝে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ কর্মীদের ঝটিকা মিছিলের খবর পাওয়া যায় এবং এসব মিছিল থেকে অনেক সময় ধরপাকড়ও হয়। রোববার দুপুরে সংসদ ভবন এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতারা মিছিল করেছেন। তার আগে শুক্রবার তেজগাঁও এলাকায় তারা মিছিল করেন। এর আগে ৩১ অগাস্ট ধানমন্ডি এবং তারও আগে গুলিস্তানে বায়তুল মোকাররম এলাকায় একই ধরনের কর্মসূচি পালন করেন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা।