বৃহস্পতিবার, দশমী উদযাপন শেষে হিন্দু সম্প্রদায় দেবী দুর্গা প্রতিমাকে বুড়িগঙ্গায় বিসর্জন দেয়
আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে বেলতলায় আনন্দময়ীর নিদ্রাভঙ্গের বন্দনায় যে উৎসবের শুরু হয়েছিল, দশমীতে দর্পণ বিসর্জনের মাধ্যমে শেষ হলো সেই দুর্গোৎসবের। বৃহস্পতিবার সকালে বিজয়া দশমীর বিহিত পূজা সম্পন্ন করে ভক্তদের পুষ্পাঞ্জলি ও শান্তির জল ছিঁটানোর পর দর্পণ বিসর্জন হয়।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, নবমী পূজা শেষে মর্ত্য ছেড়ে নিজালয়ে যাত্রা করেন দেবী দুর্গা। দশমীতে দর্পণ বিসর্জনের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয় ত্রিনয়নীর পূজা।
দর্পণ বিসর্জনের পর রীতি অনুযায়ী বিভিন্ন মণ্ডপে দেবী দুর্গাকে তেল সিঁদুর আর পান চিনিতে অশ্রু সজল নয়নে বিদায় জানানোর প্রস্তুতি শুরু হয়। বিসর্জনের মাধ্যমে আগামী বছরের অপেক্ষায় থেকে দুর্গতিনাশিনী দেবীকে বিদায় জানান ভক্তরা।
বাঙালি হিন্দুদের বিশ্বাস অনুযায়ী, দেবী দুর্গা প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের দেবী। একইসঙ্গে তিনি ‘মাতৃরূপেণ’, ‘শক্তিরূপেণ’। গত ২১ সেপ্টেম্বর মহালয়ার দিন সূচনা হয়েছে দেবীপক্ষের, আগামী ৬ অক্টোবর কোজাগরী পূর্ণিমার মধ্যে দিয়ে এ পক্ষের শেষ হবে। সাধারণত আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠ থেকে দশম দিন হয় দুর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা। আশ্বিন মাসের এই শুক্ল পক্ষকেই দেবীপক্ষ বলা হয়।
শাস্ত্র মতে, এবার দেবী দুর্গা কৈলাস থেকে সপরিবারে মর্ত্য লোকে এসেছেন গজে (হাতি) চড়ে। ফিরে যাচ্ছেন দোলায় (পালকি) করে। ত্রিনয়নীর গজে আগমন হলে মর্ত্যে শান্তি, সমৃদ্ধি, শস্য বৃদ্ধি ও মঙ্গল বয়ে আনে। আর দোলায় গমন মহামারী কিংবা অন্য কোনো বড় ধরনের বিপর্যয়ের ইঙ্গিত বহন করে।
ঢাকায় বুড়িগঙ্গায় প্রতিমা বিসর্জন
বৃহস্পতিবার, (০২ অক্টোবর ২০২৫) বেলা তিনটার দিকে পুরান ঢাকার সদরঘাট এলাকার বীণা স্মৃতি স্নানঘাটে ধানমন্ডি থানার দুর্গামন্দিরের প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে বিসর্জন কার্যক্রম শুরু হয়। শারদীয় দুর্গাপূজার বিজয়া দশমীতে রাজধানীর বুড়িগঙ্গা নদীতে প্রতিমা বিসর্জন উপলক্ষে কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
ঢাকা মহানগর পূজা উদ্যাপন কমিটির উদ্যোগে সদরঘাট টার্মিনালের পাশে বীণা স্মৃতি স্নানঘাটে অস্থায়ী বিসর্জন মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। ঘাট এলাকা ও বুড়িগঙ্গার তীরজুড়ে আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা হয়। সেনাবাহিনী, র্যাব, পুলিশ ও আনসার সদস্যরা ঘাট ও আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন। পাশাপাশি নদীতে নৌ পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ট্রলার ও স্পিডবোটে টহল দিচ্ছেন।
প্রতিমা বিসর্জন দেখতে বিকেল থেকেই ভক্ত ও দর্শনার্থীরা ঘাট এলাকায় ভিড় করেন। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে হাজার হাজার মানুষ বুড়িগঙ্গার দুই পাড়ে সমবেত হন প্রতিমা বিসর্জন দেখতে। এক পর্যায়ে বুড়িগঙ্গার দুই পাড় লোকে লোকারন্য হয়ে যায়। সে সময় সেখানে তিন ধারনের ঠাই ছিলনা।
প্রতিমা বিসর্জন কেন্দ্রীয় ঘাট কমিটির কর্মকর্তা রজত কুমার সুর জানান, ঢাকেশ্বরী মন্দির থেকে প্রতিমা বিসর্জনের শোভাযাত্রা বিকেল নাগাদ বীণা স্মৃতি ঘাটে এসে পৌঁছায়। এ উপলক্ষে ঘাটকেন্দ্রিক সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়। বিকেল গড়াতেই ট্রাকে করে বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিমা নিয়ে আসা হয় বুড়িগঙ্গার তীরে। পরে শৃঙ্খলা মেনে একের পর এক প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয়।
এদিকে বুড়িগঙ্গা নদীর ওপারে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের আগানগর ইউনিয়নের নাগরমহল ঘাট এলাকায় আরেকটি বিসর্জন মঞ্চ নির্মাণ করা হয়েছে। দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা উদ্যাপন কমিটির সভাপতি অনুপ কুমার বর্মণ বলেন, কেরানীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার প্রতিমা বুড়িগঙ্গায় বিসর্জন দেওয়া হয়। সন্ধ্যা ছয়টার পর থেকে কেরানীগঞ্জের প্রতিমা বিসর্জনের জন্য আনা হয়। প্রতিমা বিসর্জনকে কেন্দ্র করে তাঁদের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
চট্টগ্রামে বিসর্জন
চট্টগ্রাম নগরীতে প্রতিবছরের মতো এবারও বিসর্জনের প্রধান স্থান ছিল পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত। পাশাপাশি কর্ণফুলি নদীর কালুরঘাট, অভয়মিত্র ঘাট এবং বিভিন্ন এলাকার পুকুরেও দেওয়া হয়েছে বিসর্জন। দুপুরের পর থেকে ট্রাকে করে দেবী দুর্গার প্রতিমা নিরঞ্জনের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যে বিসর্জন দেখতে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পাশাপাশি অন্যান্য ধর্মের মানুষেরও ভিড় দেখা গেছে। নিরাপত্তায় র্যাব-পুলিশের পাশাপাশি সেনা সদস্যরা ছিলেন। নগরীর যেসব সড়ক দিয়ে পতেঙ্গায় প্রতিমা নেওয়া হয়ে, সেসব সড়কের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদ্?যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নিখিল কুমার নাথ বলেন, “বেলা সাড়ে ১২টার পর থেকে পতেঙ্গায় বিসর্জনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বিভিন্ন ম-প থেকে প্রতিমা নিয়ে যারা বিসর্জনে আসছেন, তাদের বিসর্জনে সহায়তা করতে আমাদের স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ করছেন।”
নিখিল জানান, নগরীর ২৯২টি পূজা মধ্যে শতাধিক মণ্ডপের বিসর্জন হবে পতেঙ্গায়। এর বাইরে কর্ণফুলি নদীর অভয়মিত্র ঘাট, কালুরঘাট, পারকি সৈকতে এবং স্থানীয় পুকুরে বিসর্জন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
পূজা কমিটির হিসাব অনুযায়ী, এ বছর নগরীতে ২৯২টি এবং জেলার ১৬ উপজেলায় এক হাজার ৫০৮টি মণ্ডপে পূজা হয়েছে। এর বাইরে রয়েছে অনেক ঘট পূজা।
রাজধানীতে বিজয়ার বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা
বিজয়া দশমীতে দেবী দুর্গা মর্ত্য ছেড়ে কৈলাশে (স্বামীগৃহে) ফিরে যাচ্ছেন বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে। ভক্তরা পথে পথে নেচে-গেয়ে বিদায় জানান মহিষাসুরমর্দিনীকে। ষষ্ঠীতে দেবীর বোধনের মধ্য দিয়ে পাঁচ দিনের যে দুর্গোৎসব শুরু হয়েছিল, প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে তা শেষ হয়েছে বৃহস্পতিবার। সে কারণে বিজয়া দশমীর দিনটি ভক্তদের কাছে একদিকে যেমন উৎসবের, অপরদিকে বেদনার।
রাজধানীতে বিজয় শোবাযাত্রার জন্য দুপুরের পর থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পলাশীর মোড় এলাকায় জড়ো হতে থাকে নগরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পূজা কমিটির ট্রাক, তাতে করে নিয়ে আসা হয় দেবীর প্রতিমা। শঙ্খনাদ-উলুধ্বনি, খোল-করতাল-ঢাকের বাদ্য, আর সধবাদের সিঁদুর খেলার আচারে দেবীদুর্গাকে অশ্রুভেজা ভালোবাসায় বিদায় জানান সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।
বিকাল পৌনে ৪টায় শোভাযাত্রাটি পলাশীর মোড় থেকে রওনা করলে পথের দুই দিকে দাঁড়িয়ে থাকা হাজারো ভক্ত উলুধ্বনিতে বিদায় জানান। কেউ কেউ স্লোগান দেন– ‘বলো দুগগা কি জয়’, ‘আসছে বছর আবার হবে’।
কেন্দ্রীয় পূজা উদযাপন পরিষদ, মহানগর পূজা উদযাপন কমিটির পাশাপাশি নগরীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকেও অনেকে যোগ দেন শোভযাত্রায়।
ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল, শিববাড়ি আবাসিক এলাকার শিবমন্দির দুর্গাপূজা উদযাপন কমিটি, তেজগাঁ শাহীনবাগ সার্বজনীন পূজা কমিটি, আজিমপুর সরকারি আবাসন পূজা কমিটি, তেজাগাঁও ফার্ম সরকারি প্রাথমিক হিন্দু কল্যাণ সমিতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়লয় আবসিক এলাকার রামকৃষ্ণ ধর্ম সভা, শাহজাহানপুর রেলওয়ে সার্বজনীন পূজা মন্দিরসহ অন্তত শতাধিক ট্রাকে করে শোভাযাত্রায় যোগ দেন।
মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব বলেন, “সবাইকে নিয়ে আমরা দুর্গোৎসবে মেতেছিলাম। দেবীর কাছে আমরা প্রার্থনা করেছি। দেবী ফিরে যাচ্ছেন কৈলাশে, আবার ফিরবেন এক বছর পর। সবাইকে বিজয়ার শুভেচ্ছা জানাই।”
দশমীর দিন সকাল থেকেই মণ্ডপে মণ্ডপে চলে দেবীরা আরাধন। ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে সকাল ৯টার পর থেকে দশমীর বিহিত পূজার মধ্য দিয়ে দশমীর আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। পরে দর্পণ বিসর্জন ও ঘট বিসর্জন হয়। দুপুরে শুরু হয় সধবাদের সিঁদুর খেলা। এ সময় আনন্দ-উল্লাসে মাতেন দেবীর ভক্তরা। আনন্দ উৎসবের এই লগ্ন শেষ হবে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে। ফের দেবীকে মর্ত্যের পৃথিবীতে আমন্ত্রণ জানাতে অপেক্ষা করতে হবে এক বছর।
পলাশীর মোড় থেকে কেন্দ্রীয় পূজা উদযাপন পরিষদের শোভাযাত্রাটি পুরান ঢাকার ওয়াইজঘাটে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে একে একে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। এছাড়া, আশুলিয়া, বছিলাসহ অন্যান্য জায়গাতেও প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়।
এবার ঢাকায় ২৫৯টি এবং সারাদেশে মোট ৩৩ হাজার ৩৫৫টি মণ্ডপে দুর্গা পূজা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার, দশমী উদযাপন শেষে হিন্দু সম্প্রদায় দেবী দুর্গা প্রতিমাকে বুড়িগঙ্গায় বিসর্জন দেয়
বৃহস্পতিবার, ০২ অক্টোবর ২০২৫
আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে বেলতলায় আনন্দময়ীর নিদ্রাভঙ্গের বন্দনায় যে উৎসবের শুরু হয়েছিল, দশমীতে দর্পণ বিসর্জনের মাধ্যমে শেষ হলো সেই দুর্গোৎসবের। বৃহস্পতিবার সকালে বিজয়া দশমীর বিহিত পূজা সম্পন্ন করে ভক্তদের পুষ্পাঞ্জলি ও শান্তির জল ছিঁটানোর পর দর্পণ বিসর্জন হয়।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, নবমী পূজা শেষে মর্ত্য ছেড়ে নিজালয়ে যাত্রা করেন দেবী দুর্গা। দশমীতে দর্পণ বিসর্জনের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয় ত্রিনয়নীর পূজা।
দর্পণ বিসর্জনের পর রীতি অনুযায়ী বিভিন্ন মণ্ডপে দেবী দুর্গাকে তেল সিঁদুর আর পান চিনিতে অশ্রু সজল নয়নে বিদায় জানানোর প্রস্তুতি শুরু হয়। বিসর্জনের মাধ্যমে আগামী বছরের অপেক্ষায় থেকে দুর্গতিনাশিনী দেবীকে বিদায় জানান ভক্তরা।
বাঙালি হিন্দুদের বিশ্বাস অনুযায়ী, দেবী দুর্গা প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের দেবী। একইসঙ্গে তিনি ‘মাতৃরূপেণ’, ‘শক্তিরূপেণ’। গত ২১ সেপ্টেম্বর মহালয়ার দিন সূচনা হয়েছে দেবীপক্ষের, আগামী ৬ অক্টোবর কোজাগরী পূর্ণিমার মধ্যে দিয়ে এ পক্ষের শেষ হবে। সাধারণত আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠ থেকে দশম দিন হয় দুর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা। আশ্বিন মাসের এই শুক্ল পক্ষকেই দেবীপক্ষ বলা হয়।
শাস্ত্র মতে, এবার দেবী দুর্গা কৈলাস থেকে সপরিবারে মর্ত্য লোকে এসেছেন গজে (হাতি) চড়ে। ফিরে যাচ্ছেন দোলায় (পালকি) করে। ত্রিনয়নীর গজে আগমন হলে মর্ত্যে শান্তি, সমৃদ্ধি, শস্য বৃদ্ধি ও মঙ্গল বয়ে আনে। আর দোলায় গমন মহামারী কিংবা অন্য কোনো বড় ধরনের বিপর্যয়ের ইঙ্গিত বহন করে।
ঢাকায় বুড়িগঙ্গায় প্রতিমা বিসর্জন
বৃহস্পতিবার, (০২ অক্টোবর ২০২৫) বেলা তিনটার দিকে পুরান ঢাকার সদরঘাট এলাকার বীণা স্মৃতি স্নানঘাটে ধানমন্ডি থানার দুর্গামন্দিরের প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে বিসর্জন কার্যক্রম শুরু হয়। শারদীয় দুর্গাপূজার বিজয়া দশমীতে রাজধানীর বুড়িগঙ্গা নদীতে প্রতিমা বিসর্জন উপলক্ষে কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
ঢাকা মহানগর পূজা উদ্যাপন কমিটির উদ্যোগে সদরঘাট টার্মিনালের পাশে বীণা স্মৃতি স্নানঘাটে অস্থায়ী বিসর্জন মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। ঘাট এলাকা ও বুড়িগঙ্গার তীরজুড়ে আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা হয়। সেনাবাহিনী, র্যাব, পুলিশ ও আনসার সদস্যরা ঘাট ও আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন। পাশাপাশি নদীতে নৌ পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ট্রলার ও স্পিডবোটে টহল দিচ্ছেন।
প্রতিমা বিসর্জন দেখতে বিকেল থেকেই ভক্ত ও দর্শনার্থীরা ঘাট এলাকায় ভিড় করেন। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে হাজার হাজার মানুষ বুড়িগঙ্গার দুই পাড়ে সমবেত হন প্রতিমা বিসর্জন দেখতে। এক পর্যায়ে বুড়িগঙ্গার দুই পাড় লোকে লোকারন্য হয়ে যায়। সে সময় সেখানে তিন ধারনের ঠাই ছিলনা।
প্রতিমা বিসর্জন কেন্দ্রীয় ঘাট কমিটির কর্মকর্তা রজত কুমার সুর জানান, ঢাকেশ্বরী মন্দির থেকে প্রতিমা বিসর্জনের শোভাযাত্রা বিকেল নাগাদ বীণা স্মৃতি ঘাটে এসে পৌঁছায়। এ উপলক্ষে ঘাটকেন্দ্রিক সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়। বিকেল গড়াতেই ট্রাকে করে বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিমা নিয়ে আসা হয় বুড়িগঙ্গার তীরে। পরে শৃঙ্খলা মেনে একের পর এক প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয়।
এদিকে বুড়িগঙ্গা নদীর ওপারে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের আগানগর ইউনিয়নের নাগরমহল ঘাট এলাকায় আরেকটি বিসর্জন মঞ্চ নির্মাণ করা হয়েছে। দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা উদ্যাপন কমিটির সভাপতি অনুপ কুমার বর্মণ বলেন, কেরানীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার প্রতিমা বুড়িগঙ্গায় বিসর্জন দেওয়া হয়। সন্ধ্যা ছয়টার পর থেকে কেরানীগঞ্জের প্রতিমা বিসর্জনের জন্য আনা হয়। প্রতিমা বিসর্জনকে কেন্দ্র করে তাঁদের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
চট্টগ্রামে বিসর্জন
চট্টগ্রাম নগরীতে প্রতিবছরের মতো এবারও বিসর্জনের প্রধান স্থান ছিল পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত। পাশাপাশি কর্ণফুলি নদীর কালুরঘাট, অভয়মিত্র ঘাট এবং বিভিন্ন এলাকার পুকুরেও দেওয়া হয়েছে বিসর্জন। দুপুরের পর থেকে ট্রাকে করে দেবী দুর্গার প্রতিমা নিরঞ্জনের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যে বিসর্জন দেখতে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পাশাপাশি অন্যান্য ধর্মের মানুষেরও ভিড় দেখা গেছে। নিরাপত্তায় র্যাব-পুলিশের পাশাপাশি সেনা সদস্যরা ছিলেন। নগরীর যেসব সড়ক দিয়ে পতেঙ্গায় প্রতিমা নেওয়া হয়ে, সেসব সড়কের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদ্?যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নিখিল কুমার নাথ বলেন, “বেলা সাড়ে ১২টার পর থেকে পতেঙ্গায় বিসর্জনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বিভিন্ন ম-প থেকে প্রতিমা নিয়ে যারা বিসর্জনে আসছেন, তাদের বিসর্জনে সহায়তা করতে আমাদের স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ করছেন।”
নিখিল জানান, নগরীর ২৯২টি পূজা মধ্যে শতাধিক মণ্ডপের বিসর্জন হবে পতেঙ্গায়। এর বাইরে কর্ণফুলি নদীর অভয়মিত্র ঘাট, কালুরঘাট, পারকি সৈকতে এবং স্থানীয় পুকুরে বিসর্জন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
পূজা কমিটির হিসাব অনুযায়ী, এ বছর নগরীতে ২৯২টি এবং জেলার ১৬ উপজেলায় এক হাজার ৫০৮টি মণ্ডপে পূজা হয়েছে। এর বাইরে রয়েছে অনেক ঘট পূজা।
রাজধানীতে বিজয়ার বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা
বিজয়া দশমীতে দেবী দুর্গা মর্ত্য ছেড়ে কৈলাশে (স্বামীগৃহে) ফিরে যাচ্ছেন বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে। ভক্তরা পথে পথে নেচে-গেয়ে বিদায় জানান মহিষাসুরমর্দিনীকে। ষষ্ঠীতে দেবীর বোধনের মধ্য দিয়ে পাঁচ দিনের যে দুর্গোৎসব শুরু হয়েছিল, প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে তা শেষ হয়েছে বৃহস্পতিবার। সে কারণে বিজয়া দশমীর দিনটি ভক্তদের কাছে একদিকে যেমন উৎসবের, অপরদিকে বেদনার।
রাজধানীতে বিজয় শোবাযাত্রার জন্য দুপুরের পর থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পলাশীর মোড় এলাকায় জড়ো হতে থাকে নগরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পূজা কমিটির ট্রাক, তাতে করে নিয়ে আসা হয় দেবীর প্রতিমা। শঙ্খনাদ-উলুধ্বনি, খোল-করতাল-ঢাকের বাদ্য, আর সধবাদের সিঁদুর খেলার আচারে দেবীদুর্গাকে অশ্রুভেজা ভালোবাসায় বিদায় জানান সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।
বিকাল পৌনে ৪টায় শোভাযাত্রাটি পলাশীর মোড় থেকে রওনা করলে পথের দুই দিকে দাঁড়িয়ে থাকা হাজারো ভক্ত উলুধ্বনিতে বিদায় জানান। কেউ কেউ স্লোগান দেন– ‘বলো দুগগা কি জয়’, ‘আসছে বছর আবার হবে’।
কেন্দ্রীয় পূজা উদযাপন পরিষদ, মহানগর পূজা উদযাপন কমিটির পাশাপাশি নগরীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকেও অনেকে যোগ দেন শোভযাত্রায়।
ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল, শিববাড়ি আবাসিক এলাকার শিবমন্দির দুর্গাপূজা উদযাপন কমিটি, তেজগাঁ শাহীনবাগ সার্বজনীন পূজা কমিটি, আজিমপুর সরকারি আবাসন পূজা কমিটি, তেজাগাঁও ফার্ম সরকারি প্রাথমিক হিন্দু কল্যাণ সমিতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়লয় আবসিক এলাকার রামকৃষ্ণ ধর্ম সভা, শাহজাহানপুর রেলওয়ে সার্বজনীন পূজা মন্দিরসহ অন্তত শতাধিক ট্রাকে করে শোভাযাত্রায় যোগ দেন।
মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব বলেন, “সবাইকে নিয়ে আমরা দুর্গোৎসবে মেতেছিলাম। দেবীর কাছে আমরা প্রার্থনা করেছি। দেবী ফিরে যাচ্ছেন কৈলাশে, আবার ফিরবেন এক বছর পর। সবাইকে বিজয়ার শুভেচ্ছা জানাই।”
দশমীর দিন সকাল থেকেই মণ্ডপে মণ্ডপে চলে দেবীরা আরাধন। ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে সকাল ৯টার পর থেকে দশমীর বিহিত পূজার মধ্য দিয়ে দশমীর আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। পরে দর্পণ বিসর্জন ও ঘট বিসর্জন হয়। দুপুরে শুরু হয় সধবাদের সিঁদুর খেলা। এ সময় আনন্দ-উল্লাসে মাতেন দেবীর ভক্তরা। আনন্দ উৎসবের এই লগ্ন শেষ হবে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে। ফের দেবীকে মর্ত্যের পৃথিবীতে আমন্ত্রণ জানাতে অপেক্ষা করতে হবে এক বছর।
পলাশীর মোড় থেকে কেন্দ্রীয় পূজা উদযাপন পরিষদের শোভাযাত্রাটি পুরান ঢাকার ওয়াইজঘাটে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে একে একে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। এছাড়া, আশুলিয়া, বছিলাসহ অন্যান্য জায়গাতেও প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়।
এবার ঢাকায় ২৫৯টি এবং সারাদেশে মোট ৩৩ হাজার ৩৫৫টি মণ্ডপে দুর্গা পূজা হয়েছে।