ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
আসছে ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ‘সহায়ক পরিবেশ’ আছে বলে দাবি করেছেন নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ। নির্বাচন আয়োজনে আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী দেশের বর্তমান পরিস্থিতিকে ‘উদ্বেগজনক বলে ভাবছে না’ বলেও জানিয়েছেন তিনি। সোমবার,(২০ অক্টোবর ২০২৫) ঢাকার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে এক মতবিনিময় সভার পর ব্রিফিংয়ে ইসি সচিব এ কথা বলেন।
লুট হওয়া ‘৮৫% অস্ত্র’ উদ্ধার হয়েছে
ভোটের আগে-পরে মোট ৮ দিন মাঠে থাকবে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা
নামানো হবে ‘এক লাখ সেনা, দেড় লাখ পুলিশ, ছয় লাখ আনসার-ভিডিপি’
থাকবে বডি-ওর্ন ক্যামেরা; ড্রোনের ব্যবস্থা
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে ‘মতবিনিময় ও প্রাক-প্রস্তুতিমূলক’ এ সভায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে চার নির্বাচন কমিশনার অংশ নেন। সভায় স্বরাষ্ট্র সচিব, আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর প্রধান ও প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
আগামী বছর ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে, রোজার আগে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন আয়োজন করতে নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। নির্দেশনা অনুযায়ী ইসি কাজ শুরু করেছে। ইসি সচিবালয় সূত্র বলছে, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের জন্য আগামী ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল ঘোষণা করা হবে।
নির্বাচন সামনে রেখে ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও পুলিশের সক্ষমতা প্রশ্নে’ নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ নিয়ে নানা মহল থেকে সংশয় প্রকাশ করা হচ্ছে। বৈষম্যবিরোধীদের গড়া দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে ইসির সদিচ্ছা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে।
নানা মহলের সংশয় প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, ‘আমি তাদের (আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী) ভেতরে উদ্বেগ দেখিনি বরং এটা দেখেছি যে তারা একটা ভালো ইলেকশনের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। নির্বাচন করার মতো পরিবেশ অবশ্যই আছে। এবং সেটাই আরও সংহত করার জন্যই আজকের আলোচনা এবং এটা চলমান থাকবে।’
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে ইসি সচিব বলেন, ‘আশঙ্কা প্রকাশ করার যৌক্তিক কোনো কারণ নেই। কেউ করেননি। আমি দ্বিতীয়বার এটা বললাম, তৃতীয়বারও বলছি আশঙ্কা প্রকাশের কোনো কারণ এখানে ছিল না।’ তিনি বলেন, ‘লক্ষ্য একটাই অবাধ সুষ্ঠু পার্টিসিপেটরি একটা নির্বাচন। এবং সবাই এ ব্যাপারে দৃঢ় অঙ্গীকারবদ্ধ যে তারা একটা ভালো নির্বাচন দিতে চান যেটার প্রতি জাতি অঙ্গীকারবদ্ধ।’
বৈঠকের বিষয়বস্তু
আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক এই বৈঠকে আলোচনার বিষয়বস্তু কী ছিল, এ প্রশ্নে ইসি সচিব জানান, ভোটকেন্দ্র ও নির্বাচনী এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার পরিকল্পনা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যক্রম সমন্বয়, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, অবৈধ অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে ভুয়া তথ্য প্রতিরোধ, বিদেশি সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকদের নিরাপত্তা, ডাকযোগে ভোটের (পোস্টাল ভোট) ব্যবস্থাপনা, সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েনের পরিকল্পনা, পার্বত্য এলাকায় নির্বাচনী সরঞ্জাম পরিবহন, হেলিকপ্টার সহায়তা ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় বাড়ানো- এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
দেশে বিভিন্ন অগ্নিকাণ্ডের পর বর্তমান পরিস্থিতিতে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন সম্ভব কিনা তা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর শঙ্কা নিয়ে ইসির বক্তব্য জানতে চাইলে সচিব বলেন, ‘আজকের আলোচনায় এই সম্পর্কিত কোনো আলোচনা হয়নি। আজকের আলোচনাটা ছিল মূলত নির্বাচনকে সুষ্ঠু আরও সুন্দর করার জন্য, প্রস্তুতিমূলক বিষয়। যে কথাটা বলেছেন এটার সঙ্গে আজকের আলোচনার কোনো সূত্র ছিল না।’
ভোটে ৮ দিন নিরাপত্তা সদস্য
নির্বাচন ঘিরে ৮ দিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েনের প্রস্তাব এসেছে নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি বৈঠকে। এ বিষয়ে ইসি সচিব বলেন, ‘এই বিষয়গুলো নিয়ে আমরা মোটামুটিভাবে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আমরা মূলত পাঁচ দিনের ডেপ্লয়মেন্ট প্রোগ্রাম করা হয়। সেখানে একটা প্রস্তাব এসেছে- এটা যেন আট দিন করা হয়। নির্বাচনের আগে তিন দিন, নির্বাচনের দিন এবং নির্বাচন পরবর্তীতে চারদিন। এটা আমরা পরীক্ষা করে দেখব।’
এআই, ড্রোন
এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) নিয়ে কমিশন আরও পর্যালোচনা করছে জানিয়ে ইসি সচিব বলেন, ‘এআইয়ের অপব্যবহারের ক্ষেত্রে এনটিএমসি (ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার) পূজার সময় ৩৫ হাজারেরও বেশি তথ্য প্রযুক্তির ব্যবস্থাটা নিয়েছিল, একটা সাকসেসফুল ইভেন্ট। সেটা আমরা ব্যবহার করতে পারি কিনা। এ বিষয়ে আমি এই মুহূর্তে যেটা বলতে চাচ্ছি- মঙ্গলবার (আজ) আমাদের এ ব্যাপারে একটা সেমিনার আছে, ওয়ার্কশপ আছে সেটাতে আমরা আরও কিছু তথ্য সন্নিবেশ করে এই জিনিসটা দেখবো।’
ইসি সচিব বলেন, ‘ইউজ অব ড্রোনের ব্যাপারে বলা হয়েছে যে নির্বাচনী প্রচারণায় ড্রোন ব্যবহার করা যাবে না। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তার প্রয়োজনে ড্রোন ব্যবহার করবেন।’
পার্বত্য অঞ্চলে হেলিকপ্টার
পার্বত্য অঞ্চলে ভোটের সামগ্রী আনা-নেয়ার হেলিকপ্টার ব্যবহারের বিষয়টিও আলোচনায় হয়েছে এবং এ সংক্রান্ত প্রস্তুতি নেয়ার কথা হয়েছে। এ বিষয়ে আখতার আহমেদ বলেন, ‘আর্মি এভিয়েশন, এয়ারফোর্স এভিয়েশন হেলিকপ্টার করে নির্বাচন সামগ্রী পরিবহনের দায়িত্ব নিয়ে কথা হয়েছে। যে সমস্ত জায়গায় এটি হবে সেখানে যেন হ্যালিপ্যাডগুলো আমরা যেন একটু ব্যবস্থা করে রাখি। যাতে সহজে অবতরণ উত্তরণ এবং অবতরণ করা যায়।’
মাঠে সশস্ত্রবাহিনী
বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তায় এখন সশস্ত্র বাহিনী মাঠে রয়েছে। সেক্ষেত্রে তাদের কাজে সমন্বয়ের বিষয়টি বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে ইসি সচিব বলেন, ‘সেনাবাহিনী মাঠপর্যায়ে তারা কাজ করছেন, ডেপ্লয়মেন্ট আছে ইন টু সিভিল পাওয়ার। তাদের অবস্থানটা কী হবে সেটা আমরা বলেছি- নীতিগতভাবে তারা যে অবস্থানে; যে যার অবস্থানে আছেন আমরা জোর দিয়েছি ইন্টেলিজেন্স শেয়ারিংয়ের বিষয়টিতে।’ তিনি বলেন, ‘প্রত্যেকটা অর্গানাইজেশনে তাদের কিছু নিজস্ব ইন্টেলিজেন্স রয়েছে, তারা তথ্য কালেক্ট করে শেয়ারিংটা হবে। করলে জিনিসটা আরও সুসংগত হবে।’
বৈঠকে যানবাহনের বিষয়টিও আলোচনায় তুলেছেন জানিয়ে আখতার আহমেদ বলেন, ‘যানবাহন একটা সীমাবদ্ধতা, যানবাহনের স্বল্পতা রয়েছে। অন্যথায় রিকুইজিশনের একটা পদ্ধতি আছে সে পদ্ধতিগুলো নিয়ে কাজ করতে হবে।’
সশস্ত্র বাহিনী আগামী নির্বাচনে ‘ইন এইড টু সিভিল পাওয়ারে’ থাকবে নাকি তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য হিসেবে থাকবে জানতে চাইলে ইসি সচিব বলেন, ‘এটার ব্যাপারে আরপিওটা (গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ) সংশোধন হয়ে আসুক। দুটো মতামতই আছে। বাট তাদের কন্টিনিউয়েশনের পক্ষেই আলোচনা হচ্ছে- ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার-এ যেটা আছে আছেন। কিন্তু তার সঙ্গে আরপিওর সাংঘর্ষিকভাবে যেন না হয় সে জিনিসটা আমরা লক্ষ্য করবো।’
ভোটে কোন বাহিনীর কত সদস্য
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বৈঠকে আইজিপির তথ্য তুলে ধরে ইসি সচিব বলেন, পুলিশের দেড় লাখ কর্মীবাহিনী থাকবে ভোটে। সবচেয়ে বেশি বাহিনীর সদস্য আসবে আনসার ভিডিপি থেকে। ইসি সচিব বলেন, ‘স্বরাষ্ট্র সচিব বলেছেন, বডি-ওর্ন ক্যামেরা থাকবে; ড্রোনের ব্যবস্থা থাকবে। কাজেই আমার ভিজিলেন্সটা অনেক বেশিই হবে।’
আখতার আহমেদ বলেন, ‘সেনাবাহিনীর সদস্যের থাকার কথা জানিয়েছে- ৯০ হাজার থেকে লাখ। আনসারের সংখ্যাটা আরেকটু বেশি। আনসার ভিডিপি প্রায় সাড়ে ৫-৬ লাখ সদস্য। সংখ্যাগত হিসাবগুলো বিন্যাসের পরে ক্যাটাগরাইজেশনের পরে এটা আরও একটু সঠিক হবে। উনারা মোটামুটিভাবে মোটা দাগে বলেছেন যে, তাদের সর্বোচ্চ যেটুকু দেয়া সম্ভব সেটুকুই আমাদের সরবরাহ করছে।’
বাজেট পরে
নির্বাচনের বাজেট প্রসঙ্গে ইসি সচিব বলেন, ‘আজকে সূচনা এটা। এখন কনক্লুসিভ কোনো কিছু না। এটা তো ধারাবাহিকভাবে চলবে। আরেকটা বড় জিনিস আছে যেটা বাজেট। প্রত্যেকটা অর্গানাইজেশন প্রত্যেকটা ইউনিটে একটা বাজেট লাগবে, তাদের খরচ আছে প্রশিক্ষণের সঙ্গে প্রত্যেকটা খরচ আছে সেগুলো আমাদের দিবেন। এটা ইলেকশন বাজেটের সঙ্গে সম্পর্কিত, সেটা বাজেটটা করবো।’
নির্বাচন পরিচালনার কয়েকগুণ বেশি ব্যয় হয় নিরাপত্তায়। এবার প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ প্রস্তাব রয়েছে। সর্বশেষ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে মোট ব্যয় প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা।
ইসি সচিব বলেন, ‘কেউ এখনও পর্যন্ত বাজেটের কথা বলেননি, কত টাকা। কিন্তু সবাই বলেছেন, বাজেট একটা ফ্যাক্টর।’
লুট হওয়া ৮৫% অস্ত্র উদ্ধার
অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়ে তৎপরতা নেয়ার তাগিদ দেয়া হয় বৈঠকে। এ প্রসঙ্গে ইসি সচিব বলেন, ‘লুট হওয়া অস্ত্রগুলোর বিষয়ে উনারা বলেছেন যে কিছু অস্ত্র এখনও পর্যন্ত ৮৫% পর্যন্ত তারা রিকভারি করেছেন। আরও কিছু অস্ত্র এবং কিছু গোলাবারুদ এখনও পর্যন্ত আছে। কিন্তু প্রক্রিয়া চালু আছে।’ আইনশৃঙ্খলা সভায় প্রস্তুতিমূলক বিষয় নিয়ে আলোচনা হলেও কোনো ধরনের নির্দেশনা ইসির পক্ষ থেকে দেয়া হয়নি বলে জানান তিনি।
গণভোট
জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতির মধ্যে জুলাই সনদ নিয়ে গণভোটের বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নির্বাচন কমিশনে না এলেও সোমবার আইন শৃঙ্খলা সভায় প্রসঙ্গটির অবতারণা হয়েছে। বৈঠকে বলা হয়, গণভোট করার বিষয়টি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ও সরকারের সিদ্ধান্ত। গণভোট নিয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত এলে তা বাস্তবায়নে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর প্রস্তুতির বিষয় রয়েছে।
সভায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনিসহ আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর প্রধান ও প্রতিনিধিদের মধ্যে ছিলেন- পুলিশের মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম, সেনাবাহিনী প্রধানের প্রতিনিধি লেফট্যানেন্ট জেনারেল মিজানুর রহমান শামীম, বিমানবাহিনীর প্রধানের প্রতিনিধি এয়ার ভাইস মার্শাল রুশাদ দিন আসাদ, নৌবাহিনী প্রধানের প্রতিনিধি রিয়ার অ্যাডমিরাল মীর এরশাদ আলী, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম কামরুল হাসান।
এছাড়া বৈঠকে এনএসআইয়ের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবু মোহাম্মদ সরোয়ার ফরিদ, ডিজিএফআইয়ের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম, বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী, আনসার ভিডিপি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আব্দুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ, কোস্টগার্ডের মহাপরিচালক রিয়াল অ্যাডমিরাল মো. জিয়াউল হক, এনটিএমসির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুল কাইয়ুম মোল্লা, ঢাকার র?্যাব হেডকোয়ার্টারের মহাপরিচালক এ কে এম শহিদুর রহমান, এসবির অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (প্রশাসন ও অর্থ) জি এম আজিজুর রহমান এবং সিআইডির অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মো. ছিবগাত উল্ল্যাহ উপস্থিত ছিলেন।
নির্বাচন নিয়ে ‘সংশয়’ দেখছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা নিয়ে ‘সংশয়’ দেখার কথা বলেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। সোমবার বিকেলে সচিবালয়ে কোর কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ বিষয়ে কথা বলেন। তার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল নির্বাচন ঘিরে পুলিশকে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে, প্রশিক্ষণে কী কী বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে, নির্বাচন নিয়ে কোনো সংশয় আছে কিনা।
জবাবে তিনি বলেন, ‘এর আগে কোনো নির্বাচনে প্রশিক্ষণ ছিল না, এবার সংশয় আছে বলেই আমরা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি।’ তবে সেই ‘সংশয়ের’ জায়গাটি স্পষ্ট না করে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘নির্বাচনটা ভালোভাবে করার জন্য যে সব জায়গা কন্ডাক্ট করা দরকার, ওইসব জায়গাগুলোতে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।’
বিগত তিনটি নির্বাচনে যারা দায়িত্ব পালন করেছেন, তাদের ‘যতটুকু সম্ভব দূরে রাখা হবে’ বলেও তিনি স্মরণ করিয়ে দেন। পুলিশ প্রধান বাহারুল আলম সম্প্রতি একটি সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন না হলে দেশ ‘ঝুঁকির মধ্যে’ পড়বে।
পুলিশ প্রধানের উপস্থিতিতে তার এই বক্তব্যের বিষয়ে সাংবাদিকরা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ‘আমার আইজিপি যদি বলে থাকে তাহলে ডেফিনিটলি আমি আইজিপিকে সাপোর্ট করবো।’ নির্বাচন নিয়ে ঝুঁকির বিষয়ে সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,‘ঝুঁকির কোনো অভাব আছে?’
সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে কোর কমিটির বৈঠকে আলোচনা হয়। কী আলোচনা হয়েছে জানতে চাওয়া হলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘বিভিন্ন কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি তদন্ত করছে, তদন্তের পরে আমরা জানতে পারবো কী কারণে আগুনের ঘটনা ঘটেছে।’
সম্প্রতি কয়েকটি দেশ সফর করে গতকাল রোববার রাতে দেশে ফেরেন জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। সফরের কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘যারা রেমিট্যান্স যোদ্ধা, তাদের পাসপোর্টে ফি সাধারণের চেয়ে বেশি নেয়া হয়। এই টাকাটা এখন থেকে বেশি নেবো না, সমান করে দেবো।’
বিমানবন্দরে এসব রেমিট্যান্স যোদ্ধারা যেন সুযোগ-সুবিধা বেশি পায়, সে ব্যাপারেও চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের বিমান ভাড়া কমানোর বিষয়টিও ‘দেখা হবে’। বিমান বন্দরে ‘ই’ গেইট খুলে দেয়া হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘খুব তাড়াতাড়ি ইন্সটল হয়ে গেছে, দু’চার দিনের মধ্যে খুলে দেবো। আর ডিসেম্বরে মধ্যে ই পাসপোর্ট চালু হবে বলে আশা করছি।’
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫
আসছে ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ‘সহায়ক পরিবেশ’ আছে বলে দাবি করেছেন নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ। নির্বাচন আয়োজনে আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী দেশের বর্তমান পরিস্থিতিকে ‘উদ্বেগজনক বলে ভাবছে না’ বলেও জানিয়েছেন তিনি। সোমবার,(২০ অক্টোবর ২০২৫) ঢাকার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে এক মতবিনিময় সভার পর ব্রিফিংয়ে ইসি সচিব এ কথা বলেন।
লুট হওয়া ‘৮৫% অস্ত্র’ উদ্ধার হয়েছে
ভোটের আগে-পরে মোট ৮ দিন মাঠে থাকবে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা
নামানো হবে ‘এক লাখ সেনা, দেড় লাখ পুলিশ, ছয় লাখ আনসার-ভিডিপি’
থাকবে বডি-ওর্ন ক্যামেরা; ড্রোনের ব্যবস্থা
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে ‘মতবিনিময় ও প্রাক-প্রস্তুতিমূলক’ এ সভায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে চার নির্বাচন কমিশনার অংশ নেন। সভায় স্বরাষ্ট্র সচিব, আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর প্রধান ও প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
আগামী বছর ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে, রোজার আগে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন আয়োজন করতে নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। নির্দেশনা অনুযায়ী ইসি কাজ শুরু করেছে। ইসি সচিবালয় সূত্র বলছে, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের জন্য আগামী ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল ঘোষণা করা হবে।
নির্বাচন সামনে রেখে ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও পুলিশের সক্ষমতা প্রশ্নে’ নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ নিয়ে নানা মহল থেকে সংশয় প্রকাশ করা হচ্ছে। বৈষম্যবিরোধীদের গড়া দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে ইসির সদিচ্ছা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে।
নানা মহলের সংশয় প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, ‘আমি তাদের (আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী) ভেতরে উদ্বেগ দেখিনি বরং এটা দেখেছি যে তারা একটা ভালো ইলেকশনের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। নির্বাচন করার মতো পরিবেশ অবশ্যই আছে। এবং সেটাই আরও সংহত করার জন্যই আজকের আলোচনা এবং এটা চলমান থাকবে।’
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে ইসি সচিব বলেন, ‘আশঙ্কা প্রকাশ করার যৌক্তিক কোনো কারণ নেই। কেউ করেননি। আমি দ্বিতীয়বার এটা বললাম, তৃতীয়বারও বলছি আশঙ্কা প্রকাশের কোনো কারণ এখানে ছিল না।’ তিনি বলেন, ‘লক্ষ্য একটাই অবাধ সুষ্ঠু পার্টিসিপেটরি একটা নির্বাচন। এবং সবাই এ ব্যাপারে দৃঢ় অঙ্গীকারবদ্ধ যে তারা একটা ভালো নির্বাচন দিতে চান যেটার প্রতি জাতি অঙ্গীকারবদ্ধ।’
বৈঠকের বিষয়বস্তু
আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক এই বৈঠকে আলোচনার বিষয়বস্তু কী ছিল, এ প্রশ্নে ইসি সচিব জানান, ভোটকেন্দ্র ও নির্বাচনী এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার পরিকল্পনা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যক্রম সমন্বয়, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, অবৈধ অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে ভুয়া তথ্য প্রতিরোধ, বিদেশি সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকদের নিরাপত্তা, ডাকযোগে ভোটের (পোস্টাল ভোট) ব্যবস্থাপনা, সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েনের পরিকল্পনা, পার্বত্য এলাকায় নির্বাচনী সরঞ্জাম পরিবহন, হেলিকপ্টার সহায়তা ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় বাড়ানো- এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
দেশে বিভিন্ন অগ্নিকাণ্ডের পর বর্তমান পরিস্থিতিতে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন সম্ভব কিনা তা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর শঙ্কা নিয়ে ইসির বক্তব্য জানতে চাইলে সচিব বলেন, ‘আজকের আলোচনায় এই সম্পর্কিত কোনো আলোচনা হয়নি। আজকের আলোচনাটা ছিল মূলত নির্বাচনকে সুষ্ঠু আরও সুন্দর করার জন্য, প্রস্তুতিমূলক বিষয়। যে কথাটা বলেছেন এটার সঙ্গে আজকের আলোচনার কোনো সূত্র ছিল না।’
ভোটে ৮ দিন নিরাপত্তা সদস্য
নির্বাচন ঘিরে ৮ দিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েনের প্রস্তাব এসেছে নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি বৈঠকে। এ বিষয়ে ইসি সচিব বলেন, ‘এই বিষয়গুলো নিয়ে আমরা মোটামুটিভাবে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আমরা মূলত পাঁচ দিনের ডেপ্লয়মেন্ট প্রোগ্রাম করা হয়। সেখানে একটা প্রস্তাব এসেছে- এটা যেন আট দিন করা হয়। নির্বাচনের আগে তিন দিন, নির্বাচনের দিন এবং নির্বাচন পরবর্তীতে চারদিন। এটা আমরা পরীক্ষা করে দেখব।’
এআই, ড্রোন
এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) নিয়ে কমিশন আরও পর্যালোচনা করছে জানিয়ে ইসি সচিব বলেন, ‘এআইয়ের অপব্যবহারের ক্ষেত্রে এনটিএমসি (ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার) পূজার সময় ৩৫ হাজারেরও বেশি তথ্য প্রযুক্তির ব্যবস্থাটা নিয়েছিল, একটা সাকসেসফুল ইভেন্ট। সেটা আমরা ব্যবহার করতে পারি কিনা। এ বিষয়ে আমি এই মুহূর্তে যেটা বলতে চাচ্ছি- মঙ্গলবার (আজ) আমাদের এ ব্যাপারে একটা সেমিনার আছে, ওয়ার্কশপ আছে সেটাতে আমরা আরও কিছু তথ্য সন্নিবেশ করে এই জিনিসটা দেখবো।’
ইসি সচিব বলেন, ‘ইউজ অব ড্রোনের ব্যাপারে বলা হয়েছে যে নির্বাচনী প্রচারণায় ড্রোন ব্যবহার করা যাবে না। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তার প্রয়োজনে ড্রোন ব্যবহার করবেন।’
পার্বত্য অঞ্চলে হেলিকপ্টার
পার্বত্য অঞ্চলে ভোটের সামগ্রী আনা-নেয়ার হেলিকপ্টার ব্যবহারের বিষয়টিও আলোচনায় হয়েছে এবং এ সংক্রান্ত প্রস্তুতি নেয়ার কথা হয়েছে। এ বিষয়ে আখতার আহমেদ বলেন, ‘আর্মি এভিয়েশন, এয়ারফোর্স এভিয়েশন হেলিকপ্টার করে নির্বাচন সামগ্রী পরিবহনের দায়িত্ব নিয়ে কথা হয়েছে। যে সমস্ত জায়গায় এটি হবে সেখানে যেন হ্যালিপ্যাডগুলো আমরা যেন একটু ব্যবস্থা করে রাখি। যাতে সহজে অবতরণ উত্তরণ এবং অবতরণ করা যায়।’
মাঠে সশস্ত্রবাহিনী
বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তায় এখন সশস্ত্র বাহিনী মাঠে রয়েছে। সেক্ষেত্রে তাদের কাজে সমন্বয়ের বিষয়টি বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে ইসি সচিব বলেন, ‘সেনাবাহিনী মাঠপর্যায়ে তারা কাজ করছেন, ডেপ্লয়মেন্ট আছে ইন টু সিভিল পাওয়ার। তাদের অবস্থানটা কী হবে সেটা আমরা বলেছি- নীতিগতভাবে তারা যে অবস্থানে; যে যার অবস্থানে আছেন আমরা জোর দিয়েছি ইন্টেলিজেন্স শেয়ারিংয়ের বিষয়টিতে।’ তিনি বলেন, ‘প্রত্যেকটা অর্গানাইজেশনে তাদের কিছু নিজস্ব ইন্টেলিজেন্স রয়েছে, তারা তথ্য কালেক্ট করে শেয়ারিংটা হবে। করলে জিনিসটা আরও সুসংগত হবে।’
বৈঠকে যানবাহনের বিষয়টিও আলোচনায় তুলেছেন জানিয়ে আখতার আহমেদ বলেন, ‘যানবাহন একটা সীমাবদ্ধতা, যানবাহনের স্বল্পতা রয়েছে। অন্যথায় রিকুইজিশনের একটা পদ্ধতি আছে সে পদ্ধতিগুলো নিয়ে কাজ করতে হবে।’
সশস্ত্র বাহিনী আগামী নির্বাচনে ‘ইন এইড টু সিভিল পাওয়ারে’ থাকবে নাকি তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য হিসেবে থাকবে জানতে চাইলে ইসি সচিব বলেন, ‘এটার ব্যাপারে আরপিওটা (গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ) সংশোধন হয়ে আসুক। দুটো মতামতই আছে। বাট তাদের কন্টিনিউয়েশনের পক্ষেই আলোচনা হচ্ছে- ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার-এ যেটা আছে আছেন। কিন্তু তার সঙ্গে আরপিওর সাংঘর্ষিকভাবে যেন না হয় সে জিনিসটা আমরা লক্ষ্য করবো।’
ভোটে কোন বাহিনীর কত সদস্য
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বৈঠকে আইজিপির তথ্য তুলে ধরে ইসি সচিব বলেন, পুলিশের দেড় লাখ কর্মীবাহিনী থাকবে ভোটে। সবচেয়ে বেশি বাহিনীর সদস্য আসবে আনসার ভিডিপি থেকে। ইসি সচিব বলেন, ‘স্বরাষ্ট্র সচিব বলেছেন, বডি-ওর্ন ক্যামেরা থাকবে; ড্রোনের ব্যবস্থা থাকবে। কাজেই আমার ভিজিলেন্সটা অনেক বেশিই হবে।’
আখতার আহমেদ বলেন, ‘সেনাবাহিনীর সদস্যের থাকার কথা জানিয়েছে- ৯০ হাজার থেকে লাখ। আনসারের সংখ্যাটা আরেকটু বেশি। আনসার ভিডিপি প্রায় সাড়ে ৫-৬ লাখ সদস্য। সংখ্যাগত হিসাবগুলো বিন্যাসের পরে ক্যাটাগরাইজেশনের পরে এটা আরও একটু সঠিক হবে। উনারা মোটামুটিভাবে মোটা দাগে বলেছেন যে, তাদের সর্বোচ্চ যেটুকু দেয়া সম্ভব সেটুকুই আমাদের সরবরাহ করছে।’
বাজেট পরে
নির্বাচনের বাজেট প্রসঙ্গে ইসি সচিব বলেন, ‘আজকে সূচনা এটা। এখন কনক্লুসিভ কোনো কিছু না। এটা তো ধারাবাহিকভাবে চলবে। আরেকটা বড় জিনিস আছে যেটা বাজেট। প্রত্যেকটা অর্গানাইজেশন প্রত্যেকটা ইউনিটে একটা বাজেট লাগবে, তাদের খরচ আছে প্রশিক্ষণের সঙ্গে প্রত্যেকটা খরচ আছে সেগুলো আমাদের দিবেন। এটা ইলেকশন বাজেটের সঙ্গে সম্পর্কিত, সেটা বাজেটটা করবো।’
নির্বাচন পরিচালনার কয়েকগুণ বেশি ব্যয় হয় নিরাপত্তায়। এবার প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ প্রস্তাব রয়েছে। সর্বশেষ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে মোট ব্যয় প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা।
ইসি সচিব বলেন, ‘কেউ এখনও পর্যন্ত বাজেটের কথা বলেননি, কত টাকা। কিন্তু সবাই বলেছেন, বাজেট একটা ফ্যাক্টর।’
লুট হওয়া ৮৫% অস্ত্র উদ্ধার
অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়ে তৎপরতা নেয়ার তাগিদ দেয়া হয় বৈঠকে। এ প্রসঙ্গে ইসি সচিব বলেন, ‘লুট হওয়া অস্ত্রগুলোর বিষয়ে উনারা বলেছেন যে কিছু অস্ত্র এখনও পর্যন্ত ৮৫% পর্যন্ত তারা রিকভারি করেছেন। আরও কিছু অস্ত্র এবং কিছু গোলাবারুদ এখনও পর্যন্ত আছে। কিন্তু প্রক্রিয়া চালু আছে।’ আইনশৃঙ্খলা সভায় প্রস্তুতিমূলক বিষয় নিয়ে আলোচনা হলেও কোনো ধরনের নির্দেশনা ইসির পক্ষ থেকে দেয়া হয়নি বলে জানান তিনি।
গণভোট
জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতির মধ্যে জুলাই সনদ নিয়ে গণভোটের বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নির্বাচন কমিশনে না এলেও সোমবার আইন শৃঙ্খলা সভায় প্রসঙ্গটির অবতারণা হয়েছে। বৈঠকে বলা হয়, গণভোট করার বিষয়টি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ও সরকারের সিদ্ধান্ত। গণভোট নিয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত এলে তা বাস্তবায়নে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর প্রস্তুতির বিষয় রয়েছে।
সভায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনিসহ আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর প্রধান ও প্রতিনিধিদের মধ্যে ছিলেন- পুলিশের মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম, সেনাবাহিনী প্রধানের প্রতিনিধি লেফট্যানেন্ট জেনারেল মিজানুর রহমান শামীম, বিমানবাহিনীর প্রধানের প্রতিনিধি এয়ার ভাইস মার্শাল রুশাদ দিন আসাদ, নৌবাহিনী প্রধানের প্রতিনিধি রিয়ার অ্যাডমিরাল মীর এরশাদ আলী, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম কামরুল হাসান।
এছাড়া বৈঠকে এনএসআইয়ের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবু মোহাম্মদ সরোয়ার ফরিদ, ডিজিএফআইয়ের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম, বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী, আনসার ভিডিপি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আব্দুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ, কোস্টগার্ডের মহাপরিচালক রিয়াল অ্যাডমিরাল মো. জিয়াউল হক, এনটিএমসির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুল কাইয়ুম মোল্লা, ঢাকার র?্যাব হেডকোয়ার্টারের মহাপরিচালক এ কে এম শহিদুর রহমান, এসবির অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (প্রশাসন ও অর্থ) জি এম আজিজুর রহমান এবং সিআইডির অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মো. ছিবগাত উল্ল্যাহ উপস্থিত ছিলেন।
নির্বাচন নিয়ে ‘সংশয়’ দেখছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা নিয়ে ‘সংশয়’ দেখার কথা বলেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। সোমবার বিকেলে সচিবালয়ে কোর কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ বিষয়ে কথা বলেন। তার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল নির্বাচন ঘিরে পুলিশকে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে, প্রশিক্ষণে কী কী বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে, নির্বাচন নিয়ে কোনো সংশয় আছে কিনা।
জবাবে তিনি বলেন, ‘এর আগে কোনো নির্বাচনে প্রশিক্ষণ ছিল না, এবার সংশয় আছে বলেই আমরা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি।’ তবে সেই ‘সংশয়ের’ জায়গাটি স্পষ্ট না করে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘নির্বাচনটা ভালোভাবে করার জন্য যে সব জায়গা কন্ডাক্ট করা দরকার, ওইসব জায়গাগুলোতে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।’
বিগত তিনটি নির্বাচনে যারা দায়িত্ব পালন করেছেন, তাদের ‘যতটুকু সম্ভব দূরে রাখা হবে’ বলেও তিনি স্মরণ করিয়ে দেন। পুলিশ প্রধান বাহারুল আলম সম্প্রতি একটি সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন না হলে দেশ ‘ঝুঁকির মধ্যে’ পড়বে।
পুলিশ প্রধানের উপস্থিতিতে তার এই বক্তব্যের বিষয়ে সাংবাদিকরা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ‘আমার আইজিপি যদি বলে থাকে তাহলে ডেফিনিটলি আমি আইজিপিকে সাপোর্ট করবো।’ নির্বাচন নিয়ে ঝুঁকির বিষয়ে সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,‘ঝুঁকির কোনো অভাব আছে?’
সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে কোর কমিটির বৈঠকে আলোচনা হয়। কী আলোচনা হয়েছে জানতে চাওয়া হলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘বিভিন্ন কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি তদন্ত করছে, তদন্তের পরে আমরা জানতে পারবো কী কারণে আগুনের ঘটনা ঘটেছে।’
সম্প্রতি কয়েকটি দেশ সফর করে গতকাল রোববার রাতে দেশে ফেরেন জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। সফরের কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘যারা রেমিট্যান্স যোদ্ধা, তাদের পাসপোর্টে ফি সাধারণের চেয়ে বেশি নেয়া হয়। এই টাকাটা এখন থেকে বেশি নেবো না, সমান করে দেবো।’
বিমানবন্দরে এসব রেমিট্যান্স যোদ্ধারা যেন সুযোগ-সুবিধা বেশি পায়, সে ব্যাপারেও চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের বিমান ভাড়া কমানোর বিষয়টিও ‘দেখা হবে’। বিমান বন্দরে ‘ই’ গেইট খুলে দেয়া হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘খুব তাড়াতাড়ি ইন্সটল হয়ে গেছে, দু’চার দিনের মধ্যে খুলে দেবো। আর ডিসেম্বরে মধ্যে ই পাসপোর্ট চালু হবে বলে আশা করছি।’