শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান কামালের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ ভিত্তিহীন: আমির হোসেন
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে বিচার করা মানে ‘হাত-পা বেধে নদীতে ফেলে দিয়ে আসামিকে বলা এখন সাঁতার কাটো’। রাষ্ট্রনিযুক্ত আসামিপক্ষের আইনজীবী মো. আমির হোসেন তার যুক্তিতর্কের প্রথমদিনে আদালতে এ কথা বলেন। এছাড়াও জুলাই আন্দোলনের সময় সংঘটিত অপরাধ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সরাসরি নির্দেশে হয়েছে, প্রসিকিউশনের এমন অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে জানিয়েছেন শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন।
জুলাই আন্দোলনের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে করা মামলায় সোমবার,(২০ অক্টোবর ২০ যুক্তিতর্কে আমির হোসেন এসব কথা বলেন। শেখ হাসিনার পাশাপাশি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন এ মামলার আসামি। তাদের মধ্যে মামুন নিজের দোষ স্বীকার করে ‘অ্যাপ্রুভার’ (রাজসাক্ষী হিসেবে পরিচিত) হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন। আর শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের অনুপস্থিতিতেই এ বিচারকাজ চলছে। এই দুজনের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন।
গত ১৬ অক্টোবর থেকে পাঁচদিন এ মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করেছেন প্রসিকিউশন। প্রসিকিউশনের যুক্তিতর্ক শেষে রাষ্ট্রনিযুক্ত শেখ হাসিনার আইনজীবী আমির হোসেন যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য এক সপ্তাহ সময় চাইলে আদালত তাকে তিনদিন সময় দেন। পরে সোমবার রাষ্ট্রনিযুক্ত শেখ হাসিনার আইনজীবী তার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করেন।
ট্রাইব্যুনাল শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপিত সাক্ষ্যপ্রমাণে প্রসিকিউশন অভিযোগ প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছে বলে জানান শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রের নিযুক্ত করা এই আইনজীবী । এ সময় শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামাল মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ থেকে রায়ে খালাস পাবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
সোমবার যুক্তিতর্কের শুরুতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের সীমাবদ্ধতা নিয়ে কথা বলেন আসামিপক্ষের আইনজীবী আমির হোসেন। তিনি জামায়াতে ইসলামীর সাবেক নেতা মীর কাসেম আলীর ছেলে আইনজীবী আহমাদ বিন কাসেম আরমানের একটি ভিডিওর কথা উল্লেখ করে বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় যখন মীর কাসেম আলীর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার চলছিল তখন আহমাদ বিন কাসেম আরমানের সাক্ষাৎকারের ভিডিও সেটি। সেই ভিডিওতে আরমান তার বাবার বিচার চলাকালে এ আইনের কঠোর সমালোচনা করেন। আরমান বলেন, ‘এ আইনে সাক্ষ্য আইনের সঠিক ব্যবহার না করতে পারাসহ ব্যাপক সীমাবদ্ধতার মধ্যে বিচার হচ্ছে, যা ন্যায়বিচারকে বিঘ্নিত করেছে।’
১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া সাবেক জামায়াত নেতা মীর কাশেম আলীর ছেলে আহমাদ বিন কাসেম আরমানের এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করে রাষ্ট্রনিযুক্ত শেখ হাসিনার আইনজীবী আমির হোসেন বলেন, ‘এ আইনে মূল যে এভিডেন্স অ্যাক্ট, সেটাকে প্রয়োগ করার কোনো সুযোগ নেই। সিআরপিসিও এ আইনে গ্রহণ করা যায় না। এ আইনে এমন একটি বিচার, যে বিচারে হাত-পা বেধে নদীতে ফেলে দিয়ে আসামিকে বলা হবে এখন সাঁতার কাটো। এ রকমেরই একটা আইন এটি।’
এ মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগে বা ফরমাল চার্জে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে দুর্নীতির সর্বগ্রাসী চর্চার প্রসঙ্গ আনা হয়েছে বলে যুক্তিতর্কের একপর্যায়ে উল্লেখ করেন আমির হোসেন। যুক্তিতর্কে তিনি বলেন, এ কথাগুলো ততক্ষণ পর্যন্ত গ্রহণযোগ্য নয়, যতক্ষণ পর্যন্ত সেসব বিচারের মাধ্যমে প্রমাণিত। এসব ঢালাও বক্তব্য গ্রহণ করার সুযোগ নেই । তখন ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘সংবাদপত্রের প্রতিবেদন আমলে নেয়ার সুযোগ আছে। আপনারাই তো এই আইন তৈরি করেছেন।’
ট্রাইব্যুনালের জবাবে আইনজীবী আমির হোসেন বলেন, ‘গণমাধ্যমে এলেই সবকিছু সত্য হয়ে যায় না। তাছাড়া অন্য আইনে পত্রপত্রিকার সংবাদের মূল্য নেই। শেখ হাসিনা আইন করেছেন বলেই যে এটা ভালো আইন হয়েছে সেটি তিনি বলছেন না। যেই আইন করুক না কেন, ভুল মানে ভুলই।’
গত ১৬ অক্টোবর টানা পাঁচদিন যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের মৃত্যুদণ্ড চেয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। এ সময় আদালতে শেখ হাসিনার ‘১৪০০ বার ফাঁসি হওয়া দরকার’ বলে দাবি করেন তাজুল। পাশাপাশি রাজসাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেয়ায় সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের শাস্তির বিষয়টি আদালতের সিদ্ধান্তের ওপর ছেড়ে দেন তিনি।
শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান কামালের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ ভিত্তিহীন: আমির হোসেন
সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে বিচার করা মানে ‘হাত-পা বেধে নদীতে ফেলে দিয়ে আসামিকে বলা এখন সাঁতার কাটো’। রাষ্ট্রনিযুক্ত আসামিপক্ষের আইনজীবী মো. আমির হোসেন তার যুক্তিতর্কের প্রথমদিনে আদালতে এ কথা বলেন। এছাড়াও জুলাই আন্দোলনের সময় সংঘটিত অপরাধ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সরাসরি নির্দেশে হয়েছে, প্রসিকিউশনের এমন অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে জানিয়েছেন শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন।
জুলাই আন্দোলনের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে করা মামলায় সোমবার,(২০ অক্টোবর ২০ যুক্তিতর্কে আমির হোসেন এসব কথা বলেন। শেখ হাসিনার পাশাপাশি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন এ মামলার আসামি। তাদের মধ্যে মামুন নিজের দোষ স্বীকার করে ‘অ্যাপ্রুভার’ (রাজসাক্ষী হিসেবে পরিচিত) হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন। আর শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের অনুপস্থিতিতেই এ বিচারকাজ চলছে। এই দুজনের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন।
গত ১৬ অক্টোবর থেকে পাঁচদিন এ মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করেছেন প্রসিকিউশন। প্রসিকিউশনের যুক্তিতর্ক শেষে রাষ্ট্রনিযুক্ত শেখ হাসিনার আইনজীবী আমির হোসেন যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য এক সপ্তাহ সময় চাইলে আদালত তাকে তিনদিন সময় দেন। পরে সোমবার রাষ্ট্রনিযুক্ত শেখ হাসিনার আইনজীবী তার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করেন।
ট্রাইব্যুনাল শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপিত সাক্ষ্যপ্রমাণে প্রসিকিউশন অভিযোগ প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছে বলে জানান শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রের নিযুক্ত করা এই আইনজীবী । এ সময় শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামাল মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ থেকে রায়ে খালাস পাবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
সোমবার যুক্তিতর্কের শুরুতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের সীমাবদ্ধতা নিয়ে কথা বলেন আসামিপক্ষের আইনজীবী আমির হোসেন। তিনি জামায়াতে ইসলামীর সাবেক নেতা মীর কাসেম আলীর ছেলে আইনজীবী আহমাদ বিন কাসেম আরমানের একটি ভিডিওর কথা উল্লেখ করে বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় যখন মীর কাসেম আলীর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার চলছিল তখন আহমাদ বিন কাসেম আরমানের সাক্ষাৎকারের ভিডিও সেটি। সেই ভিডিওতে আরমান তার বাবার বিচার চলাকালে এ আইনের কঠোর সমালোচনা করেন। আরমান বলেন, ‘এ আইনে সাক্ষ্য আইনের সঠিক ব্যবহার না করতে পারাসহ ব্যাপক সীমাবদ্ধতার মধ্যে বিচার হচ্ছে, যা ন্যায়বিচারকে বিঘ্নিত করেছে।’
১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া সাবেক জামায়াত নেতা মীর কাশেম আলীর ছেলে আহমাদ বিন কাসেম আরমানের এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করে রাষ্ট্রনিযুক্ত শেখ হাসিনার আইনজীবী আমির হোসেন বলেন, ‘এ আইনে মূল যে এভিডেন্স অ্যাক্ট, সেটাকে প্রয়োগ করার কোনো সুযোগ নেই। সিআরপিসিও এ আইনে গ্রহণ করা যায় না। এ আইনে এমন একটি বিচার, যে বিচারে হাত-পা বেধে নদীতে ফেলে দিয়ে আসামিকে বলা হবে এখন সাঁতার কাটো। এ রকমেরই একটা আইন এটি।’
এ মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগে বা ফরমাল চার্জে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে দুর্নীতির সর্বগ্রাসী চর্চার প্রসঙ্গ আনা হয়েছে বলে যুক্তিতর্কের একপর্যায়ে উল্লেখ করেন আমির হোসেন। যুক্তিতর্কে তিনি বলেন, এ কথাগুলো ততক্ষণ পর্যন্ত গ্রহণযোগ্য নয়, যতক্ষণ পর্যন্ত সেসব বিচারের মাধ্যমে প্রমাণিত। এসব ঢালাও বক্তব্য গ্রহণ করার সুযোগ নেই । তখন ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘সংবাদপত্রের প্রতিবেদন আমলে নেয়ার সুযোগ আছে। আপনারাই তো এই আইন তৈরি করেছেন।’
ট্রাইব্যুনালের জবাবে আইনজীবী আমির হোসেন বলেন, ‘গণমাধ্যমে এলেই সবকিছু সত্য হয়ে যায় না। তাছাড়া অন্য আইনে পত্রপত্রিকার সংবাদের মূল্য নেই। শেখ হাসিনা আইন করেছেন বলেই যে এটা ভালো আইন হয়েছে সেটি তিনি বলছেন না। যেই আইন করুক না কেন, ভুল মানে ভুলই।’
গত ১৬ অক্টোবর টানা পাঁচদিন যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের মৃত্যুদণ্ড চেয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। এ সময় আদালতে শেখ হাসিনার ‘১৪০০ বার ফাঁসি হওয়া দরকার’ বলে দাবি করেন তাজুল। পাশাপাশি রাজসাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেয়ায় সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের শাস্তির বিষয়টি আদালতের সিদ্ধান্তের ওপর ছেড়ে দেন তিনি।