ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের ‘উপায় চূড়ান্ত করেছে’ জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। আজ মঙ্গলবার অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
সোমবার, (২৭ অক্টোবর ২০২৫) বিকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে ঐকমত্য কমিশনের শেষ বৈঠকে এ বিষয়ে সুপারিশ চূড়ান্ত করা হয়। পরে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের উপস্থিতিতে বেলা ১২টায় তা আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হবে।
সমাপনী বৈঠকে ঐকমত্য কমিশন গঠনের পর থেকে চূড়ান্ত সুপারিশ দেওয়া পর্যন্ত সব নথি ও কাগজপত্র, আলোচনার ভিডিও, অডিও, ছবি সংরক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, ‘এগুলো মহামূল্যবান সম্পদ। জাতি হিসাবে আমরা কোন প্রেক্ষাপটে কী প্রক্রিয়ায় কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছালাম, তা সকলের জন্য দীর্ঘমেয়াদে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা এবং উন্মুক্ত থাকা দরকার। যত বৈঠক হয়েছে সেগুলোর ছবি ও ভিডিও, যত চিঠি চালাচালি হয়েছে - সমস্ত ডকুমেন্ট সংরক্ষণ করতে হবে এবং ক্যাটাগরি করে রাখতে হবে। টেলিভিশনে যেসব আলোচনা লাইভ প্রচার হয়েছে সেগুলো খণ্ড খণ্ড আকারে সংরক্ষণ করতে হবে। কারণ এগুলো হবে ইতিহাসের চির জীবন্ত দলিল। যারা গবেষণা করতে চায় তারা যেন এগুলো দেখে কাজে লাগাতে পারে। প্রজন্মের পর প্রজন্মে এই ডকুমেন্ট থেকে যাবে। এই দলিলগুলোই ভবিষ্যতের রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে।’
এসময় রাজনৈতিক দল, ঐকমত্য কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী, গবেষক ও সংবাদমাধ্যম কর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান প্রধান উপদেষ্টা।
দীর্ঘ এক বছরের আলোচনার ভিত্তিতে রাষ্ট্র সংস্কারের যেসব উদ্যোগ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়, সেগুলো বাস্তবায়নের অঙ্গীকার সম্বলিত জুলাই জাতীয় সনদ গত ১৭ অক্টোবর হয়। ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে অংশ নেওয়া ২৪টি রাজনৈতিক দলের নেতাদের পাশাপাশি প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্যরা এই রাজনৈতিক সমঝোতার দলিলে সই করেন। এরপর এই সনদ বাস্তবায়নের উপায় খুঁজতে কাজ করছে ঐকমত্য কমিশন।
কমিশনের সমাপনী বৈঠকে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের রূপরেখা চূড়ান্ত করার পাশাপাশি অন্য সংস্কার কমিশনগুলোর সুপারিশ বাস্তবায়নেও সরকারকে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন কমিশন সদস্যরা।
ঐকমত্য কমিশন বাংলাদেশে একটি ‘স্থায়ী জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্রের ভিত্তি স্থাপনে’ কাজ করেছে তুলে ধরে কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ বলেন, “রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি আইন বিশেষজ্ঞ, বিচারপতি, শিক্ষাবিদসহ নাগরিক সমাজের বিশিষ্টজনের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ চূড়ান্ত করা হয়েছে।
‘চব্বিশের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের তিনটি মূল দায়িত্বের (বিচার, সংস্কার, নির্বাচন) একটি কাঠামোগত সংস্কার।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রধান দায়িত্ব ছিল সংস্কারের একটি রূপরেখা তৈরি করা। মিল-অমিল সত্ত্বেও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও সংস্কারের আকাঙ্ক্ষা দৃশ্যমান ছিল। তারা বরাবরই আমাদের সব ধরনের সহযোগিতা করেছেন। দিনের পর দিন অত্যন্ত ধৈর্য ও বিচক্ষণতার সঙ্গে সংলাপে অংশ নিয়েছেন।’
তিনি বলেন, “চব্বিশে ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণঅভ্যুত্থান আমাদের যে সুযোগ দিয়েছে সেটা যেন হারিয়ে না ফেলি। কমিশন সংস্কারকেই অগ্রাধিকার দিয়েছে, যাতে ভবিষ্যতে জনগণ কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন দেখতে পারে। কমিশন দায়িত্ব শেষ করল। আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর হবে। কমিশনের মেয়াদ শেষ হবে ৩১ অক্টোবর। এরপরেও সরকারের প্রয়োজন হলে এ দেশের নাগরিক হিসেবে আমরা ব্যক্তিগতভাবে সহযোগিতা প্রদানের চেষ্টা করব।”
নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান ও কমিশন সদস্য বদিউল আলম মজুমদার বলেন, জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে সবাই সরকারের নিবিষ্টতা ও সাহসিকতা প্রত্যাশা করে।
বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের ও ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বিচারপতি এমদাদুল হক বলেন, গণ-অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে ঐক্য ছিল একইরকম আন্তরিকতার প্রতিফলন ছিল কমিশনের বৈঠকগুলোতে। এটা খুবই ইতিবাচক দিক। পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান ও কমিশন সদস্য সফর রাজ বলেন, প্রথমবারের মতো রাজনৈতিক দলগুলো বসে ধৈর্যের সঙ্গে আলোচনা করেছে। ভবিষ্যতেও যেন এই ধরনের সৌহার্দ্যতা থাকে এটাই প্রত্যাশা।
দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রধান ও কমিশন সদস্য ইফতেখারুজ্জামান জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পাশাপাশি দুদক সংস্কারেও সরকারকে দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার বলেন, যারা জুলাইয়ে জীবন দিল তারাই এর মূল ভিত্তি।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫
জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের ‘উপায় চূড়ান্ত করেছে’ জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। আজ মঙ্গলবার অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
সোমবার, (২৭ অক্টোবর ২০২৫) বিকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে ঐকমত্য কমিশনের শেষ বৈঠকে এ বিষয়ে সুপারিশ চূড়ান্ত করা হয়। পরে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের উপস্থিতিতে বেলা ১২টায় তা আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হবে।
সমাপনী বৈঠকে ঐকমত্য কমিশন গঠনের পর থেকে চূড়ান্ত সুপারিশ দেওয়া পর্যন্ত সব নথি ও কাগজপত্র, আলোচনার ভিডিও, অডিও, ছবি সংরক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, ‘এগুলো মহামূল্যবান সম্পদ। জাতি হিসাবে আমরা কোন প্রেক্ষাপটে কী প্রক্রিয়ায় কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছালাম, তা সকলের জন্য দীর্ঘমেয়াদে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা এবং উন্মুক্ত থাকা দরকার। যত বৈঠক হয়েছে সেগুলোর ছবি ও ভিডিও, যত চিঠি চালাচালি হয়েছে - সমস্ত ডকুমেন্ট সংরক্ষণ করতে হবে এবং ক্যাটাগরি করে রাখতে হবে। টেলিভিশনে যেসব আলোচনা লাইভ প্রচার হয়েছে সেগুলো খণ্ড খণ্ড আকারে সংরক্ষণ করতে হবে। কারণ এগুলো হবে ইতিহাসের চির জীবন্ত দলিল। যারা গবেষণা করতে চায় তারা যেন এগুলো দেখে কাজে লাগাতে পারে। প্রজন্মের পর প্রজন্মে এই ডকুমেন্ট থেকে যাবে। এই দলিলগুলোই ভবিষ্যতের রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে।’
এসময় রাজনৈতিক দল, ঐকমত্য কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী, গবেষক ও সংবাদমাধ্যম কর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান প্রধান উপদেষ্টা।
দীর্ঘ এক বছরের আলোচনার ভিত্তিতে রাষ্ট্র সংস্কারের যেসব উদ্যোগ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়, সেগুলো বাস্তবায়নের অঙ্গীকার সম্বলিত জুলাই জাতীয় সনদ গত ১৭ অক্টোবর হয়। ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে অংশ নেওয়া ২৪টি রাজনৈতিক দলের নেতাদের পাশাপাশি প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্যরা এই রাজনৈতিক সমঝোতার দলিলে সই করেন। এরপর এই সনদ বাস্তবায়নের উপায় খুঁজতে কাজ করছে ঐকমত্য কমিশন।
কমিশনের সমাপনী বৈঠকে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের রূপরেখা চূড়ান্ত করার পাশাপাশি অন্য সংস্কার কমিশনগুলোর সুপারিশ বাস্তবায়নেও সরকারকে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন কমিশন সদস্যরা।
ঐকমত্য কমিশন বাংলাদেশে একটি ‘স্থায়ী জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্রের ভিত্তি স্থাপনে’ কাজ করেছে তুলে ধরে কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ বলেন, “রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি আইন বিশেষজ্ঞ, বিচারপতি, শিক্ষাবিদসহ নাগরিক সমাজের বিশিষ্টজনের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ চূড়ান্ত করা হয়েছে।
‘চব্বিশের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের তিনটি মূল দায়িত্বের (বিচার, সংস্কার, নির্বাচন) একটি কাঠামোগত সংস্কার।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রধান দায়িত্ব ছিল সংস্কারের একটি রূপরেখা তৈরি করা। মিল-অমিল সত্ত্বেও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও সংস্কারের আকাঙ্ক্ষা দৃশ্যমান ছিল। তারা বরাবরই আমাদের সব ধরনের সহযোগিতা করেছেন। দিনের পর দিন অত্যন্ত ধৈর্য ও বিচক্ষণতার সঙ্গে সংলাপে অংশ নিয়েছেন।’
তিনি বলেন, “চব্বিশে ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণঅভ্যুত্থান আমাদের যে সুযোগ দিয়েছে সেটা যেন হারিয়ে না ফেলি। কমিশন সংস্কারকেই অগ্রাধিকার দিয়েছে, যাতে ভবিষ্যতে জনগণ কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন দেখতে পারে। কমিশন দায়িত্ব শেষ করল। আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর হবে। কমিশনের মেয়াদ শেষ হবে ৩১ অক্টোবর। এরপরেও সরকারের প্রয়োজন হলে এ দেশের নাগরিক হিসেবে আমরা ব্যক্তিগতভাবে সহযোগিতা প্রদানের চেষ্টা করব।”
নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান ও কমিশন সদস্য বদিউল আলম মজুমদার বলেন, জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে সবাই সরকারের নিবিষ্টতা ও সাহসিকতা প্রত্যাশা করে।
বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের ও ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বিচারপতি এমদাদুল হক বলেন, গণ-অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে ঐক্য ছিল একইরকম আন্তরিকতার প্রতিফলন ছিল কমিশনের বৈঠকগুলোতে। এটা খুবই ইতিবাচক দিক। পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান ও কমিশন সদস্য সফর রাজ বলেন, প্রথমবারের মতো রাজনৈতিক দলগুলো বসে ধৈর্যের সঙ্গে আলোচনা করেছে। ভবিষ্যতেও যেন এই ধরনের সৌহার্দ্যতা থাকে এটাই প্রত্যাশা।
দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রধান ও কমিশন সদস্য ইফতেখারুজ্জামান জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পাশাপাশি দুদক সংস্কারেও সরকারকে দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার বলেন, যারা জুলাইয়ে জীবন দিল তারাই এর মূল ভিত্তি।