ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
সাংবিধানিক আদেশ জারি করে গণভোটের মাধ্যমে ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ বাস্তবায়নের সুপারিশ করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে অথবা নির্বাচনের দিন এই গণভোট আয়োজনের সুপারিশ করা হয়েছে। গণভোটের প্রশ্ন প্রসঙ্গে দুটি বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছে কমিশন যার মধ্যে একটি ‘খসড়া বিল আকারে’।
সাংবিধানিক আদেশ জারি করে গণভোট আয়োজনের সুপারিশ ঐকমত্য কমিশনের
সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হবে জুলাই জাতীয় সনদ
কর্মযজ্ঞ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দুটি বিকল্প প্রস্তাব
গণভোটে যাচ্ছে না ‘নোট অব ডিসেন্ট’
গণভোটের ফলাফল ইতিবাচক ‘হ্যাঁ’ সূচক ভোট সংখ্যাগরিষ্ঠ হলে সংবিধান সংস্কারের জন্য ‘সংবিধান সংস্কার পরিষদ’ গঠনের কথা বলা হয়েছে, যে পরিষদ ২৭০ পঞ্জিকা দিবসের মধ্যে জুলাই জাতীয় সনদ অনুসারে সংবিধান সংস্কার করবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে ব্যর্থ হলে সংবিধান সংস্কার বিল ‘গৃহীত হয়েছে’ বলে গণ্য হবে এবং তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধান সংস্কার আইন হিসেবে কার্যকর হবে।
ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ মঙ্গলবার,(২৮ অক্টোবর ২০২৫) দুপুরে কমিশনের সভাপতি, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে এই সুপারিশমালা তুলে দেন। জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫-এর খসড়াও সেখানে যুক্ত করে দেয়া হয়।
সেখানে বলা হয়, জুলাই জাতীয় সনদে অন্তর্ভুক্ত প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের জন্য ‘সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী’ জনগণের অনুমোদন প্রয়োজন এবং সেজন্য গণভোট অনুষ্ঠান, সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠন এবং ওই পরিষদের মাধ্যমে সংবিধান সংস্কার ‘অপরিহার্য’। এই আদেশ জারির পর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে যথোপযুক্ত সময়ে অথবা নির্বাচনের দিন গণভোট হবে। সেজন্য প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করতে হবে।
গণভোটে জানতে চাওয়া হবে, ভোটার জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশে সন্নিবেশিত সংবিধান সংস্কার প্রস্তাবগুলোতে সম্মতি দিচ্ছেন কিনা।
গণভোটে জনগণের সায় পেলে আগামী জাতীয় নির্বাচনের পর নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের নিয়ে একটি সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠিত হবে। তারা একইসঙ্গে জাতীয় সংসদের সদস্য এবং সংবিধান সংস্কার পরিষদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। পরিষদ প্রথম অধিবেশন শুরুর তারিখ থেকে ২৭০ পঞ্জিকা দিবসের মধ্যে জুলাই জাতীয় সনদ অনুসারে সংবিধান সংস্কার করবে।
এই কর্মযজ্ঞ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দুটি বিকল্পের সুপারিশ করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
প্রথম বিকল্পে বলা হয়েছে, গণভোটের আগে জনগণের জ্ঞাতার্থে এবং সাংবিধানিক পরিষদের দায়িত্ব পালনের সুবিধার্থে জুলাই জাতীয় সনদে অন্তর্ভুক্ত প্রস্তাবগুলোর ভিত্তিতে সরকার প্রণীত একটি ‘খসড়া বিল’ আকারে গণভোটে উপস্থাপন করা হবে।
সংবিধান সংস্কার পরিষদ নির্ধারিত ২৭০ পঞ্জিকা দিবসের মধ্যে কাজ শেষ করতে ব্যর্থ হলে সংবিধান সংস্কার বিলটি ‘গৃহীত হয়েছে’ বলে গণ্য হবে এবং তা সংবিধান সংস্কার আইন হিসেবে কার্যকর হবে।
এই ‘খসড়া বিলের’ বিষয়টি দ্বিতীয় বিকল্পে রাখা হয়নি।
প্রধান উপদেষ্টার কাছে সুপারিশমালা হস্তান্তর করার পর ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে আসেন ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ।
তিনি বলেন, ‘সাংবিধানিক আদেশ দেয়ার পর এবং জাতীয় সংসদে সাধারণ নির্বাচনের আগে সরকার যেন গণভোট অনুষ্ঠান করে, আমরা এটা লিখিতভাবে বলেছি। এর বাইরে আমরা সরকারকে আজ (মঙ্গলবার) বলেছি, অবিলম্বে এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে একটি নির্বাচনের তফসিল (গণভোট) তৈরি করে ফেলে।’
পরে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে পাঠানো এক ‘দৃষ্টি আকর্ষণ’ বার্তায় বলা হয়, ‘ঐকমত্য কমিশনের সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক আলী রীয়াজের একটি বক্তব্য থেকে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে। পরবর্তীতে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি (আলী রীয়াজ) স্পষ্ট করে বলেন, নির্বাচনের দিনসহ তার আগে যে কোনো দিন সরকার জুলাই জাতীয় সনদ-এর ওপর গণভোটের আয়োজন করতে পারে এই মর্মে ঐকমত্য কমিশন সুপারিশ দিয়েছে।’
*গণভোটের ফল নেতিবাচক হলে*
জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে গণভোটের যে প্রস্তাব করা হয়েছে তাতে ইতিবাচক ফল না এলে কী হবে, এমন প্রশ্নে জনগণের ওপর আস্থা রাখার কথা বলেছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, ‘গণভোটে পাস না হলে, হবে না। তার মানে জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে।’
লাতিন আমেরিকার দেশ চিলিতে সংবিধান নিয়ে দুইবার গণভোট ব্যর্থ হওয়ার উদাহরণ টেনে আলী রীয়াজ বলেন, ‘প্রথমবার চিলিতে একটা সংবিধান তৈরি করে দেয়া হলো গণভোটে, সেটা হারলো। কেউ কেউ বললেন, এটা অনেক বেশি দক্ষিণপন্থি হয়ে উঠেছিল অথবা বামপন্থি হয়ে উঠেছিল। একেকজনকে একেকটা বললো। তারপর আবার এটা সংশোধন-সংযোজন করা হয়, করে আবার গণভোটে দেয়া হয়েছিল। আবারও ফেল করেছে। পাস না করলে তার মানে হচ্ছে যে, জনগণ তাহলে গ্রহণ করছেন না। এজন্য আমি আবার বলছি, জনগণের ওপর আস্থা রাখুন।’
সংবিধান সংশোধন বিষয়ক ৪৮টি প্রস্তাব ‘প্যাকেজ আকারে’ গণভোটের জন্য থাকবে বলে এক প্রশ্নের উত্তরে জানান আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, ‘যে কোনো গণভোটের ক্ষেত্রে এক অথবা দুইটা প্রশ্ন থাকে। কোথাও একটু বেশিও হয়েছে। আইসল্যান্ডের ক্ষেত্রে সম্ভবত উদাহরণ আছে যে ছয়টা প্রশ্ন ছিল। কিন্তু আমাদের সুপারিশ হচ্ছে একটা প্যাকেজ হিসেবে একটি প্রশ্ন যে আপনি এই আদেশ এবং এই আদেশের তফসিলে যে বিষয়গুলো সংবিধান সংস্কার সংক্রান্ত আছে তার প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করছেন কিনা।’
৪৮টি বিষয় একই প্যাকেজে আনাটা গণভোটের প্রশ্ন হিসেবে জটিল হয়ে যাবে কিনা, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘যে কোনো গণভোটে সাধারণত এক বা দুটো প্রশ্ন হয়, ক্ষেত্রবিশেষে তার চেয়ে বেশি হয়েছে। দুয়েকটিতে, পাঁচটা বা ছয়টা প্রশ্ন ছিল। কিন্তু এযাবৎকালে ১৭৮৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত যে তথ্য বা গবেষণার বিষয়গুলো আমার কাছে জানা আছে, তার ওপর ভিত্তি করে আমি বলতে পারি, অধিকাংশ প্রশ্ন আসলে একটা।’
এক বা দুই প্রশ্ন হলেও এর পেছনে অনেক প্রশ্ন থাকে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আমি একটু উদাহরণ দিলে আপনি বুঝতে পারবেন। ২০১৬ সালে তুরস্কে যে গণভোট অনুষ্ঠিত হয়েছিল, সেটার প্রশ্ন একটাই ছিল। কিন্তু সেই এক প্রশ্নে ২১টি বিষয়ে সংশোধনের কথা বলা হয়েছে। তাহলে এই যে, আপনি বা আমি-আমরা যদি মনে করি যে জনগণ এগুলো বুঝতে পারবেন না। জনগণের ওপর আস্থা রাখুন, বাংলাদেশের জনগণের ওপর আস্থা রাখুন। বাংলাদেশের জনগণ মুক্তিযুদ্ধ করেছে, বাংলাদেশের মানুষ নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থান ঘটিয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ ফ্যাসিবাদী শাসনকে প্রতিরোধ করেছে এবং যখনই সুযোগ তৈরি হয়েছে তখনই নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় তারা তাদের রায় দিতে পেরেছে।’
জনগণ বুঝতে পারবে না, এমন কথা বলায় নিজের অস্বস্তির কথা তুলে ধরে আলী রীয়াজ বলেন, ‘যখন কেউ আমাকে বলেন যে জনগণ এটা বুঝবেন না, আমি এটাতে খুব অস্বস্তিবোধ করি, ব্যক্তিগতভাবে আমি খুবই অস্বস্তিবোধ করি। বোঝাবার ক্ষেত্রে সরকারের একটা দায়িত্ব আছে। আমি বোঝাবার অর্থে বলছি না, আমি বলছি সরকারের দায়িত্ব হবে এগুলো (গণভোট বিষয়ক প্রশ্ন) যতটা দ্রুত সম্ভব, যতটা সহজলভ্য করে যেভাবে হোক প্রত্যেকের দোড়গোড়ায় পৌঁছে দেয়া। আজকে আমরা যখন সুপারিশটা সরকারকে দিয়েছি, সেখানে এটা আমরা সুস্পষ্টভাবে, অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে বলেছি, এটা আপনারা করবেন, এটা আপনাদের কাজ।’
*আনুষ্ঠানিক আদেশের প্রয়োজনীয়তা*
ঐকমত্য কমিশনের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, যেহেতু জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের জন্য সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী জনগণের অনুমোদন প্রয়োজন এবং গণভোট অনুষ্ঠান, সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠন এবং সেই পরিষদ কর্তৃক সংবিধান সংস্কার অপরিহার্য। তাই এটি বাস্তবায়ন সম্পন্ন করার জন্য একটি আনুষ্ঠানিক আদেশ জারি করা একান্ত প্রয়োজন।
*গণভোটে কী থাকবে*
জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতা প্রয়োগের উদ্দেশ্যে জুলাই জাতীয় সনদের সংবিধান সংস্কার সম্পর্কিত অংশ গণভোটে উপস্থাপন করা হবে। গণভোটের ব্যালটে প্রশ্ন থাকবে ‘আপনি কি জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫ এবং ইহার তফসিল-১ এ সন্নিবেশিত সংবিধান সংস্কার প্রস্তাবসমূহের প্রতি আপনার সম্মতি জ্ঞাপন করিতেছেন?’ তফসিল-১ এ সংবিধান সংক্রান্ত ৪৮টি সংস্কার প্রস্তাব থাকবে। এখানে দলগুলোর আপত্তি বা নোট অব ডিসেন্টের উল্লেখ থাকবে না। ব্যালটের মাধ্যমে গণভোট অনুষ্ঠিত হবে এবং নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত ব্যালটে প্রত্যেক ভোটার গোপনে ভোট দেবেন।
*গণভোটের ফলাফল*
গণভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট ‘হ্যাঁ’ সূচক হলে পরবর্তী সংসদে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠিত হবে। এই পরিষদ সংবিধান সংস্কার বিষয়ে ‘গাঠনিক’ (কনস্টিটুয়েন্ট) ক্ষমতা প্রয়োগ করবে।
আর যদি গণভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট ‘না’ সূচক হয়, তাহলে এই প্রক্রিয়ার সেখানেই সমাপ্ত হবে।
*সংসদ সদস্যদের দুই শপথ*
যে সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠিত হবে, ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের ভোটে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরাই ওই পরিষদের সদস্য হতে পারবেন। তারা সংস্কারের ২৭০ দিনের সময়সীমার আগপর্যন্ত সংবিধান সংস্কার পরিষদের সদস্য হিসেবে অভিহিত হবেন। এজন্য তারা নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথমে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেবেন। এরপর সংবিধান সংস্কার পরিষদের সদস্য হিসেবে আরেকটি শপথ নেবেন।
*প্রস্তাব পাস কীভাবে*
পরিষদের প্রথম অধিবেশনের প্রথম বৈঠকে সভাপ্রধান ও উপ-সভাপ্রধান (স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের মতো) নির্বাচন করবেন। কোরামের জন্য ন্যূনতম ৬০ (ষাট) জন পরিষদ সদস্যের উপস্থিতিই যথেষ্ট হবে। সংবিধান সংস্কার সংক্রান্ত কোনো প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য প্রয়োজন হবে পরিষদের মোট সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট।
*উচ্চকক্ষ গঠন যেভাবে*
সংবিধান সংস্কার শেষ হওয়ার ৪৫ দিনের মধ্যে নি¤œকক্ষের নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে একটি উচ্চকক্ষ গঠন করা হবে। তবে ওই উচ্চকক্ষের মেয়াদ নি¤œকক্ষের (জাতীয় সংসদের) মেয়াদের শেষ দিবস পর্যন্ত হবে।
*সংস্কারের জন্য আর ভোট লাগবে না*
সার্বভৌম জনগণের অভিপ্রায়ের ভিত্তিতে সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠিত হবে বলে সংবিধান সংস্কারের বিষয়ে আর কোনো অনুমোদন বা ভোটের প্রয়োজন হবে না।
জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের অঙ্গীকারনামা অনুসারে সংবিধানে জুলাই জাতীয় সনদ অন্তর্ভুক্ত হবে।
*নোট অব ডিসেন্টগুলোর কী হবে*
ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় বিভিন্ন প্রস্তাবে বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের ‘নোট অব ডিসেন্ট’ ছিল। এর আগে বলা হয়েছিল, যেসব দলের যে প্রস্তাবে নোট অব ডিসেন্ট রয়েছে, তারা ক্ষমতায় গেলে ওই প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নে তাদের ওপর বাধ্যবাধকতা থাকবে না।
মঙ্গলবার খসড়া জমা দেয়ার পর রাজনৈতিক দলগুলোর ‘নোট অব ডিসেন্ট’ নিয়ে কী হবে এ বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে আলী রীয়াজ বলেন, তারা সরকারকে বলেছেন এগুলো জনগণের কাছে নিয়ে যেতে। জনগণের রায় পাওয়ার পর রাজনৈতিক দল সিদ্ধান্ত নেবে। কমিশন সংবিধানের ৪৮টি বিষয়ে জনগণের সম্মতি-অসম্মতিকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।
*জাতীয় নির্বাচন*
রোজার আগে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ভোট করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল ঘোষণার কথা রয়েছে। তার আগে আরেকটি নির্বাচন করতে গেলে বিপুল অর্থের অপচয় হবে বলে মন্তব্য করেছিলেন একজন নির্বাচন কমিশনার।
দীর্ঘ এক বছরের আলোচনার ভিত্তিতে রাষ্ট্র সংস্কারের যেসব উদ্যোগ নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়নের অঙ্গীকার সম্বলিত জুলাই জাতীয় সনদ গত ১৭ অক্টোবর স্বাক্ষরিত হয়।
সংস্কার উদ্যোগগুলোর বাস্তবায়ন কীভাবে হবে, সে বিষয়ে জুলাই সনদে কিছু বলা হয়নি। এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতভিন্নতা থাকায় আলাদাভাবে আলোচনা করে বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে ঐকমত্য কমিশন তাদের সুপারিশ চূড়ান্ত করেছে। সেই সুপারিশমালা মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টার হাতে তুলে দেয় ঐকমত্য কমিশন।
*বিএনপি ও জামায়াতের অবস্থান*
জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি দল সাংবিধানিক আদেশ জারি করে গণভোটের মাধ্যমে সনদ বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে আসছিল। আর বিএনপিসহ কয়েকটি দল এর বিরোধিতা করে আসছিল।
শেষ পর্যন্ত গণভোটের বিষয়ে ‘ঐকমত্য’ হয়েছে বলে কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হলেও সেই গণভোট কবে, কীভাবে হবে তা নিয়ে দলগুলোর মতভিন্নতা ছিল।
জামায়াতসহ কয়েকটি দল ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের আগে আগামী নভেম্বরেই গণভোট চায়। পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবিতেও তারা আন্দোলন করছে।
অন্যদিকে এ দুই বিষয়ে প্রবল আপত্তি আছে বিএনপির। নভেম্বরে গণভোটের দাবির মধ্যে ‘অন্য কোনো মাস্টারপ্ল্যান’ আছে কিনা, সে প্রশ্নও তুলেছেন বিএনপি নেতারা।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৫
সাংবিধানিক আদেশ জারি করে গণভোটের মাধ্যমে ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ বাস্তবায়নের সুপারিশ করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে অথবা নির্বাচনের দিন এই গণভোট আয়োজনের সুপারিশ করা হয়েছে। গণভোটের প্রশ্ন প্রসঙ্গে দুটি বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছে কমিশন যার মধ্যে একটি ‘খসড়া বিল আকারে’।
সাংবিধানিক আদেশ জারি করে গণভোট আয়োজনের সুপারিশ ঐকমত্য কমিশনের
সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হবে জুলাই জাতীয় সনদ
কর্মযজ্ঞ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দুটি বিকল্প প্রস্তাব
গণভোটে যাচ্ছে না ‘নোট অব ডিসেন্ট’
গণভোটের ফলাফল ইতিবাচক ‘হ্যাঁ’ সূচক ভোট সংখ্যাগরিষ্ঠ হলে সংবিধান সংস্কারের জন্য ‘সংবিধান সংস্কার পরিষদ’ গঠনের কথা বলা হয়েছে, যে পরিষদ ২৭০ পঞ্জিকা দিবসের মধ্যে জুলাই জাতীয় সনদ অনুসারে সংবিধান সংস্কার করবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে ব্যর্থ হলে সংবিধান সংস্কার বিল ‘গৃহীত হয়েছে’ বলে গণ্য হবে এবং তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধান সংস্কার আইন হিসেবে কার্যকর হবে।
ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ মঙ্গলবার,(২৮ অক্টোবর ২০২৫) দুপুরে কমিশনের সভাপতি, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে এই সুপারিশমালা তুলে দেন। জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫-এর খসড়াও সেখানে যুক্ত করে দেয়া হয়।
সেখানে বলা হয়, জুলাই জাতীয় সনদে অন্তর্ভুক্ত প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের জন্য ‘সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী’ জনগণের অনুমোদন প্রয়োজন এবং সেজন্য গণভোট অনুষ্ঠান, সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠন এবং ওই পরিষদের মাধ্যমে সংবিধান সংস্কার ‘অপরিহার্য’। এই আদেশ জারির পর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে যথোপযুক্ত সময়ে অথবা নির্বাচনের দিন গণভোট হবে। সেজন্য প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করতে হবে।
গণভোটে জানতে চাওয়া হবে, ভোটার জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশে সন্নিবেশিত সংবিধান সংস্কার প্রস্তাবগুলোতে সম্মতি দিচ্ছেন কিনা।
গণভোটে জনগণের সায় পেলে আগামী জাতীয় নির্বাচনের পর নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের নিয়ে একটি সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠিত হবে। তারা একইসঙ্গে জাতীয় সংসদের সদস্য এবং সংবিধান সংস্কার পরিষদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। পরিষদ প্রথম অধিবেশন শুরুর তারিখ থেকে ২৭০ পঞ্জিকা দিবসের মধ্যে জুলাই জাতীয় সনদ অনুসারে সংবিধান সংস্কার করবে।
এই কর্মযজ্ঞ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দুটি বিকল্পের সুপারিশ করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
প্রথম বিকল্পে বলা হয়েছে, গণভোটের আগে জনগণের জ্ঞাতার্থে এবং সাংবিধানিক পরিষদের দায়িত্ব পালনের সুবিধার্থে জুলাই জাতীয় সনদে অন্তর্ভুক্ত প্রস্তাবগুলোর ভিত্তিতে সরকার প্রণীত একটি ‘খসড়া বিল’ আকারে গণভোটে উপস্থাপন করা হবে।
সংবিধান সংস্কার পরিষদ নির্ধারিত ২৭০ পঞ্জিকা দিবসের মধ্যে কাজ শেষ করতে ব্যর্থ হলে সংবিধান সংস্কার বিলটি ‘গৃহীত হয়েছে’ বলে গণ্য হবে এবং তা সংবিধান সংস্কার আইন হিসেবে কার্যকর হবে।
এই ‘খসড়া বিলের’ বিষয়টি দ্বিতীয় বিকল্পে রাখা হয়নি।
প্রধান উপদেষ্টার কাছে সুপারিশমালা হস্তান্তর করার পর ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে আসেন ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ।
তিনি বলেন, ‘সাংবিধানিক আদেশ দেয়ার পর এবং জাতীয় সংসদে সাধারণ নির্বাচনের আগে সরকার যেন গণভোট অনুষ্ঠান করে, আমরা এটা লিখিতভাবে বলেছি। এর বাইরে আমরা সরকারকে আজ (মঙ্গলবার) বলেছি, অবিলম্বে এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে একটি নির্বাচনের তফসিল (গণভোট) তৈরি করে ফেলে।’
পরে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে পাঠানো এক ‘দৃষ্টি আকর্ষণ’ বার্তায় বলা হয়, ‘ঐকমত্য কমিশনের সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক আলী রীয়াজের একটি বক্তব্য থেকে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে। পরবর্তীতে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি (আলী রীয়াজ) স্পষ্ট করে বলেন, নির্বাচনের দিনসহ তার আগে যে কোনো দিন সরকার জুলাই জাতীয় সনদ-এর ওপর গণভোটের আয়োজন করতে পারে এই মর্মে ঐকমত্য কমিশন সুপারিশ দিয়েছে।’
*গণভোটের ফল নেতিবাচক হলে*
জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে গণভোটের যে প্রস্তাব করা হয়েছে তাতে ইতিবাচক ফল না এলে কী হবে, এমন প্রশ্নে জনগণের ওপর আস্থা রাখার কথা বলেছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, ‘গণভোটে পাস না হলে, হবে না। তার মানে জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে।’
লাতিন আমেরিকার দেশ চিলিতে সংবিধান নিয়ে দুইবার গণভোট ব্যর্থ হওয়ার উদাহরণ টেনে আলী রীয়াজ বলেন, ‘প্রথমবার চিলিতে একটা সংবিধান তৈরি করে দেয়া হলো গণভোটে, সেটা হারলো। কেউ কেউ বললেন, এটা অনেক বেশি দক্ষিণপন্থি হয়ে উঠেছিল অথবা বামপন্থি হয়ে উঠেছিল। একেকজনকে একেকটা বললো। তারপর আবার এটা সংশোধন-সংযোজন করা হয়, করে আবার গণভোটে দেয়া হয়েছিল। আবারও ফেল করেছে। পাস না করলে তার মানে হচ্ছে যে, জনগণ তাহলে গ্রহণ করছেন না। এজন্য আমি আবার বলছি, জনগণের ওপর আস্থা রাখুন।’
সংবিধান সংশোধন বিষয়ক ৪৮টি প্রস্তাব ‘প্যাকেজ আকারে’ গণভোটের জন্য থাকবে বলে এক প্রশ্নের উত্তরে জানান আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, ‘যে কোনো গণভোটের ক্ষেত্রে এক অথবা দুইটা প্রশ্ন থাকে। কোথাও একটু বেশিও হয়েছে। আইসল্যান্ডের ক্ষেত্রে সম্ভবত উদাহরণ আছে যে ছয়টা প্রশ্ন ছিল। কিন্তু আমাদের সুপারিশ হচ্ছে একটা প্যাকেজ হিসেবে একটি প্রশ্ন যে আপনি এই আদেশ এবং এই আদেশের তফসিলে যে বিষয়গুলো সংবিধান সংস্কার সংক্রান্ত আছে তার প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করছেন কিনা।’
৪৮টি বিষয় একই প্যাকেজে আনাটা গণভোটের প্রশ্ন হিসেবে জটিল হয়ে যাবে কিনা, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘যে কোনো গণভোটে সাধারণত এক বা দুটো প্রশ্ন হয়, ক্ষেত্রবিশেষে তার চেয়ে বেশি হয়েছে। দুয়েকটিতে, পাঁচটা বা ছয়টা প্রশ্ন ছিল। কিন্তু এযাবৎকালে ১৭৮৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত যে তথ্য বা গবেষণার বিষয়গুলো আমার কাছে জানা আছে, তার ওপর ভিত্তি করে আমি বলতে পারি, অধিকাংশ প্রশ্ন আসলে একটা।’
এক বা দুই প্রশ্ন হলেও এর পেছনে অনেক প্রশ্ন থাকে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আমি একটু উদাহরণ দিলে আপনি বুঝতে পারবেন। ২০১৬ সালে তুরস্কে যে গণভোট অনুষ্ঠিত হয়েছিল, সেটার প্রশ্ন একটাই ছিল। কিন্তু সেই এক প্রশ্নে ২১টি বিষয়ে সংশোধনের কথা বলা হয়েছে। তাহলে এই যে, আপনি বা আমি-আমরা যদি মনে করি যে জনগণ এগুলো বুঝতে পারবেন না। জনগণের ওপর আস্থা রাখুন, বাংলাদেশের জনগণের ওপর আস্থা রাখুন। বাংলাদেশের জনগণ মুক্তিযুদ্ধ করেছে, বাংলাদেশের মানুষ নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থান ঘটিয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ ফ্যাসিবাদী শাসনকে প্রতিরোধ করেছে এবং যখনই সুযোগ তৈরি হয়েছে তখনই নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় তারা তাদের রায় দিতে পেরেছে।’
জনগণ বুঝতে পারবে না, এমন কথা বলায় নিজের অস্বস্তির কথা তুলে ধরে আলী রীয়াজ বলেন, ‘যখন কেউ আমাকে বলেন যে জনগণ এটা বুঝবেন না, আমি এটাতে খুব অস্বস্তিবোধ করি, ব্যক্তিগতভাবে আমি খুবই অস্বস্তিবোধ করি। বোঝাবার ক্ষেত্রে সরকারের একটা দায়িত্ব আছে। আমি বোঝাবার অর্থে বলছি না, আমি বলছি সরকারের দায়িত্ব হবে এগুলো (গণভোট বিষয়ক প্রশ্ন) যতটা দ্রুত সম্ভব, যতটা সহজলভ্য করে যেভাবে হোক প্রত্যেকের দোড়গোড়ায় পৌঁছে দেয়া। আজকে আমরা যখন সুপারিশটা সরকারকে দিয়েছি, সেখানে এটা আমরা সুস্পষ্টভাবে, অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে বলেছি, এটা আপনারা করবেন, এটা আপনাদের কাজ।’
*আনুষ্ঠানিক আদেশের প্রয়োজনীয়তা*
ঐকমত্য কমিশনের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, যেহেতু জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের জন্য সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী জনগণের অনুমোদন প্রয়োজন এবং গণভোট অনুষ্ঠান, সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠন এবং সেই পরিষদ কর্তৃক সংবিধান সংস্কার অপরিহার্য। তাই এটি বাস্তবায়ন সম্পন্ন করার জন্য একটি আনুষ্ঠানিক আদেশ জারি করা একান্ত প্রয়োজন।
*গণভোটে কী থাকবে*
জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতা প্রয়োগের উদ্দেশ্যে জুলাই জাতীয় সনদের সংবিধান সংস্কার সম্পর্কিত অংশ গণভোটে উপস্থাপন করা হবে। গণভোটের ব্যালটে প্রশ্ন থাকবে ‘আপনি কি জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫ এবং ইহার তফসিল-১ এ সন্নিবেশিত সংবিধান সংস্কার প্রস্তাবসমূহের প্রতি আপনার সম্মতি জ্ঞাপন করিতেছেন?’ তফসিল-১ এ সংবিধান সংক্রান্ত ৪৮টি সংস্কার প্রস্তাব থাকবে। এখানে দলগুলোর আপত্তি বা নোট অব ডিসেন্টের উল্লেখ থাকবে না। ব্যালটের মাধ্যমে গণভোট অনুষ্ঠিত হবে এবং নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত ব্যালটে প্রত্যেক ভোটার গোপনে ভোট দেবেন।
*গণভোটের ফলাফল*
গণভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট ‘হ্যাঁ’ সূচক হলে পরবর্তী সংসদে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠিত হবে। এই পরিষদ সংবিধান সংস্কার বিষয়ে ‘গাঠনিক’ (কনস্টিটুয়েন্ট) ক্ষমতা প্রয়োগ করবে।
আর যদি গণভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট ‘না’ সূচক হয়, তাহলে এই প্রক্রিয়ার সেখানেই সমাপ্ত হবে।
*সংসদ সদস্যদের দুই শপথ*
যে সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠিত হবে, ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের ভোটে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরাই ওই পরিষদের সদস্য হতে পারবেন। তারা সংস্কারের ২৭০ দিনের সময়সীমার আগপর্যন্ত সংবিধান সংস্কার পরিষদের সদস্য হিসেবে অভিহিত হবেন। এজন্য তারা নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথমে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেবেন। এরপর সংবিধান সংস্কার পরিষদের সদস্য হিসেবে আরেকটি শপথ নেবেন।
*প্রস্তাব পাস কীভাবে*
পরিষদের প্রথম অধিবেশনের প্রথম বৈঠকে সভাপ্রধান ও উপ-সভাপ্রধান (স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের মতো) নির্বাচন করবেন। কোরামের জন্য ন্যূনতম ৬০ (ষাট) জন পরিষদ সদস্যের উপস্থিতিই যথেষ্ট হবে। সংবিধান সংস্কার সংক্রান্ত কোনো প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য প্রয়োজন হবে পরিষদের মোট সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট।
*উচ্চকক্ষ গঠন যেভাবে*
সংবিধান সংস্কার শেষ হওয়ার ৪৫ দিনের মধ্যে নি¤œকক্ষের নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে একটি উচ্চকক্ষ গঠন করা হবে। তবে ওই উচ্চকক্ষের মেয়াদ নি¤œকক্ষের (জাতীয় সংসদের) মেয়াদের শেষ দিবস পর্যন্ত হবে।
*সংস্কারের জন্য আর ভোট লাগবে না*
সার্বভৌম জনগণের অভিপ্রায়ের ভিত্তিতে সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠিত হবে বলে সংবিধান সংস্কারের বিষয়ে আর কোনো অনুমোদন বা ভোটের প্রয়োজন হবে না।
জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের অঙ্গীকারনামা অনুসারে সংবিধানে জুলাই জাতীয় সনদ অন্তর্ভুক্ত হবে।
*নোট অব ডিসেন্টগুলোর কী হবে*
ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় বিভিন্ন প্রস্তাবে বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের ‘নোট অব ডিসেন্ট’ ছিল। এর আগে বলা হয়েছিল, যেসব দলের যে প্রস্তাবে নোট অব ডিসেন্ট রয়েছে, তারা ক্ষমতায় গেলে ওই প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নে তাদের ওপর বাধ্যবাধকতা থাকবে না।
মঙ্গলবার খসড়া জমা দেয়ার পর রাজনৈতিক দলগুলোর ‘নোট অব ডিসেন্ট’ নিয়ে কী হবে এ বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে আলী রীয়াজ বলেন, তারা সরকারকে বলেছেন এগুলো জনগণের কাছে নিয়ে যেতে। জনগণের রায় পাওয়ার পর রাজনৈতিক দল সিদ্ধান্ত নেবে। কমিশন সংবিধানের ৪৮টি বিষয়ে জনগণের সম্মতি-অসম্মতিকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।
*জাতীয় নির্বাচন*
রোজার আগে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ভোট করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল ঘোষণার কথা রয়েছে। তার আগে আরেকটি নির্বাচন করতে গেলে বিপুল অর্থের অপচয় হবে বলে মন্তব্য করেছিলেন একজন নির্বাচন কমিশনার।
দীর্ঘ এক বছরের আলোচনার ভিত্তিতে রাষ্ট্র সংস্কারের যেসব উদ্যোগ নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়নের অঙ্গীকার সম্বলিত জুলাই জাতীয় সনদ গত ১৭ অক্টোবর স্বাক্ষরিত হয়।
সংস্কার উদ্যোগগুলোর বাস্তবায়ন কীভাবে হবে, সে বিষয়ে জুলাই সনদে কিছু বলা হয়নি। এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতভিন্নতা থাকায় আলাদাভাবে আলোচনা করে বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে ঐকমত্য কমিশন তাদের সুপারিশ চূড়ান্ত করেছে। সেই সুপারিশমালা মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টার হাতে তুলে দেয় ঐকমত্য কমিশন।
*বিএনপি ও জামায়াতের অবস্থান*
জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি দল সাংবিধানিক আদেশ জারি করে গণভোটের মাধ্যমে সনদ বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে আসছিল। আর বিএনপিসহ কয়েকটি দল এর বিরোধিতা করে আসছিল।
শেষ পর্যন্ত গণভোটের বিষয়ে ‘ঐকমত্য’ হয়েছে বলে কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হলেও সেই গণভোট কবে, কীভাবে হবে তা নিয়ে দলগুলোর মতভিন্নতা ছিল।
জামায়াতসহ কয়েকটি দল ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের আগে আগামী নভেম্বরেই গণভোট চায়। পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবিতেও তারা আন্দোলন করছে।
অন্যদিকে এ দুই বিষয়ে প্রবল আপত্তি আছে বিএনপির। নভেম্বরে গণভোটের দাবির মধ্যে ‘অন্য কোনো মাস্টারপ্ল্যান’ আছে কিনা, সে প্রশ্নও তুলেছেন বিএনপি নেতারা।