দীর্ঘ ১৪ বছর পর শনিবার, খুলনার নতুন কারাগার চালু হয়েছে। ২০১১ সালে শহরের জয় বাংলা মোড়ের কাছে আসানখালি এলাকায় ৩০ একর জমির ওপর এর নিমার্ণকাজ শুরু হয় -সংবাদ
দীর্ঘ ১৪ বছর নির্মাণ কাজের পর শনিবার, (০১ নভেম্বর ২০২৫) চালু হয়েছে খুলনার নতুন কারাগার। জনবল সংকটের কারণে আপাতত সাজাপ্রাপ্ত ১০০ বন্দী নিয়ে নতুন কারাগারের কার্যক্রম শুরু হবে। তবে পুরনোটির কার্যক্রমও চলবে।
খুলনা কারাগারের জেলার মোহাম্মদ মুনীর হুসাইন বলেন, খুলনায় দুটি কারাগার চালু রাখার বিষয়ে সরকার নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আপাতত বর্তমান কারাগারের কর্মকর্তারাই দুটি কারাগারের দায়িত্ব পালন করবেন।
মুনীর বলেন, ১৯১২ সালে খুলনা নগরের ভৈরব নদীর তীরে নির্মাণ করা হয় খুলনার প্রথম কারাগার। সেখানে বন্দী ধারণক্ষমতা ৬৭৮ জনের। রয়েছেন ১ হাজার ৪শ’র বেশি বন্দী। ১১৩ বছরের পুরনো জরাজীর্ণ ভবনে ঝুঁকি নিয়ে থাকতে হয় বন্দীদের। এসব বিবেচনায় নিয়েই নতুন কারাগার নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়।
প্রকল্প অনুযায়ী, নতুন কারাগারের ভেতরে মোট স্থাপনা রয়েছে ৫৭টি। শুধু বন্দীদের রাখার জন্য ভবন রয়েছে ১১টি। এখানে চার হাজার বন্দী রাখা যাবে। প্রকল্পের আওতায় আপাতত দুই হাজার বন্দী রাখার অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। পরে প্রয়োজন পড়লে পৃথক প্রকল্প নিয়ে অন্য অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে।
খুলনার জেল সুপার নাসির উদ্দিন প্রধান বলেন, কারাগার পরিচালনার জন্য ৬০০ জনবলের চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে প্রায় ২০৮ জনবল রয়েছে। নতুন করে ৪৪ জনকে পদায়ন করা হয়েছে। আপাতত এই জনবল দিয়েই দুটি কারাগারের কাজ চালিয়ে নেয়া হবে।
জেল সুপার বলেন, নতুন কারাগারে জেলার ৯টি উপজেলার এবং পুরনো কারাগারে খুলনা নগরের বন্দীদের রাখা হবে। বিচারাধীন ও সাজাপ্রাপ্ত বন্দীদের পৃথক স্থানে রাখা হবে। কিশোর ও কিশোরী বন্দীদের জন্য রয়েছে পৃথক ব্যারাক। নারীদের জন্য আছে পৃথক হাসপাতাল, মোটিভেশন সেন্টার ও ওয়ার্কশেড।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, খুলনার সিটি বাইপাস সড়কের জয় বাংলা মোড়ের অদূরে আসানখালী এলাকায় প্রায় ৩০ একর জমির ওপর খুলনার জেলা কারাগার নির্মাণ প্রকল্প শুরু হয় ২০১১ সালে। ২০১২-১৩ অর্থবছর থেকে প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু করে খুলনা জেলা প্রশাসন। ২৬ কোটি ৫৪ লাখ ৮৭ হাজার টাকায় ৪১২ জনের কাছ থেকে ওই জমি অধিগ্রহণ করা হয়। তবে শুরু থেকেই এ প্রকল্প ঘিরে নানা প্রশ্ন ছিল খুলনাবাসীর।
এর মধ্যে ৮ বার প্রকল্পের সময় বেড়েছে, দুই দফা সংশোধনের পর ব্যয় বেড়ে হয়েছে ২৮৮ কোটি টাকা। কাগজে-কলমে প্রকল্পের কাজ শেষ দেখানো হয়েছে গত বছরের জুনে। তবে বাস্তবে কাজ চলছে এখনও।
এ দিকে অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, এ নির্মাণ প্রকল্পে রাজনৈতিক প্রভাব, কমিশনের ভাগবাটোয়ারা, আর সরকারি অর্থলুটের চিত্র। এমনকি প্রকল্পটি অনুমোদনের আগে কোনো সমীক্ষা হয়নি। কোনো কিছু ঠিক না করেই প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। প্রকল্প চলাকালে এর দেখভালকারী প্রতিষ্ঠান খুলনা গণপূর্ত বিভাগ-২-এর ১৩ জন নির্বাহী প্রকৌশলী পরিবর্তন হয়েছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ভূমি উন্নয়ন ও অবকাঠামো নির্মাণ খাতে ৩৯টি টেন্ডার আহ্বান করেছিল খুলনা গণপূর্ত বিভাগ-২। এর প্রতিটি টেন্ডারই শতভাগ নিয়ন্ত্রণ করেছে খুলনায় ‘শেখ পরিবারের সদস্যরা’। ইজিপির মাধ্যমে টেন্ডার হলেও কে কাজ পাবে তা নির্ধারিত থাকতো আগেই। অভিযোগ, কাজ শুরুর আগেই ১০ শতাংশ হারে অগ্রিম টাকা দিতে হয়েছে তাদের।
এছাড়াও অভিযোগ আছে, কমিশনের টাকা গিয়েছে গণপূর্তের প্রকৌশলীদের পকেটে। শুধু তাই নয়, অন্যের ঠিকাদারি লাইসেন্স ব্যবহার করে অধিকাংশ কাজ করেছেন প্রভাবশালী নেতারা।
প্রকল্পের মোট ৩৯টি টেন্ডারের মধ্যে ১৩টির কাজ পেয়েছেন খুলনা নগর আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য দাউদ হায়দারের মালিকানাধীন এসএন বিল্ডার্স লিমিটেড। প্রকল্পের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত কয়েকজন ঠিকাদারের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
কেন সমীক্ষা করা হয়নি, এমন প্রশ্নে সর্বশেষ প্রকল্প পরিচালক মোকতার আহমদ চৌধুরী বলেন, এসব ব্যাপারে আমি কিছু জানি না। গণপূর্তের কাছে খোঁজ নেন।
খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, প্রকল্প এলাকায় মাটি ভরাটের কাজটি পেয়েছিলেন নড়াইলের মেসার্স ইডেন প্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু কাজ করেছেন কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা এস এম মেজবাহ হোসেন বুরুজ। কাজ চলাকালেই ২০১৬ সালে তিনি মারা যান। মৃত্যুর আগে তিনি তার কাজের চেয়ে ১০ শতাংশ বেশি টাকা তুলে নেন, ফলে কাজ বন্ধ থাকে দীর্ঘদিন।
পরে মূল ঠিকাদারকে দিয়ে ভরাটের কাজ করানো হয়। অভিযোগ রয়েছে, লোকসান হওয়ায় তিনি যথাযথভাবে বালু ভরাট করেননি। এ কারণে প্রকল্প এলাকা মূল সড়ক থেকে প্রায় এক ফুট নিচু। পুরো চত্বরজুড়ে বালুর ওপর নয় ইঞ্চি পুরু মাটি দেয়ার কথা থাকলেও তা এখনও দেয়া হয়নি। ডিজাইনে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। এ কারণে ভারী বৃষ্টি হলেই তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে প্রকল্প এলাকা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রকল্প এলাকায় বালু ফেলা হয়েছে দুই কোটি ৭৮ লাখ ৬০৯ দশমিক ২৪ ঘনমিটার। এর মধ্যে বুরুজ বালু ফেলেছেন দুই কোটি ৬৬ লাখ ১৯২ দশমিক শূন্য আট ঘনমিটার। বুরুজ মারা যাওয়ার পর অবশিষ্ট অংশের কাজ করে এস এন বিল্ডার্স। বুরুজকে প্রতি ঘনফুট বালুর দাম দেয়া হয় সাড়ে ৮ টাকারও বেশি। আর দাউদকে দেয়া হয় ১১ টাকারও বেশি।
খুলনার অন্তত তিন বালু সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৪-১৫ সালের দিকে গন্তব্যে পৌঁছে দেয়া পর্যন্ত প্রতি ঘনফুট বালুর দাম ছিল সাড়ে চার টাকা থেকে পাঁচ টাকা। ওই হিসেবে শুধু বালু থেকে বুরুজ অতিরিক্ত নিয়ে গেছে প্রায় ৩৩ লাখ টাকা। আর এসএন বিল্ডার্স যখন বালু সরবরাহ শুরু করে তখন বালুর দাম ছিল কিছুটা বেশি। তখন বাজারে প্রতি ঘনফুট বালু গন্তব্যে পৌঁছে দেয়া পর্যন্ত ছিল ছয় টাকার মতো। শুধু বালু থেকে এসএন বিল্ডার্স অতিরিক্ত নিয়েছে প্রায় ২২ লাখ টাকা।
এ ব্যাপারে খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ-উজ-জামান বলেন, খুলনার নতুন কারাগার নির্মাণ প্রকল্পে অনিয়ম- দুর্নীতির তদন্ত প্রয়োজন। নির্মাণ শেষ না হতেই কোনো কোনো স্থাপনায় ফাটল দেখা দিয়েছে। পলেস্তারা খসে পড়ছে।
খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট বাবুল হাওলাদার বলেন, খুলনার নতুন কারাগার নির্মাণ প্রকল্পে অনিয়ম, দীর্ঘসূত্রতা ও অর্থ লুটপাটে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া প্রয়োজন।
প্রকল্পে অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে জানতে চাইলে খুলনা গণপূর্ত বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান দাবি করেন, প্রকল্পের শেষের দিকে ২০২৩ সালের ১৯ অক্টোবর তিনি যোগদান করেছেন। এ কারণে অনিয়ম ও দুর্নীতির কোনো তথ্য তার কাছে নেই।
তবে তিনি দাবি করেন, জমি অধিগ্রহণ দেরি হওয়ায় কাজ শুরু হতে দেরি হয়েছে, এ কারণে প্রকল্পের কাজও শেষ করতে বাড়তি সময় লেগেছে।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
দীর্ঘ ১৪ বছর পর শনিবার, খুলনার নতুন কারাগার চালু হয়েছে। ২০১১ সালে শহরের জয় বাংলা মোড়ের কাছে আসানখালি এলাকায় ৩০ একর জমির ওপর এর নিমার্ণকাজ শুরু হয় -সংবাদ
শনিবার, ০১ নভেম্বর ২০২৫
দীর্ঘ ১৪ বছর নির্মাণ কাজের পর শনিবার, (০১ নভেম্বর ২০২৫) চালু হয়েছে খুলনার নতুন কারাগার। জনবল সংকটের কারণে আপাতত সাজাপ্রাপ্ত ১০০ বন্দী নিয়ে নতুন কারাগারের কার্যক্রম শুরু হবে। তবে পুরনোটির কার্যক্রমও চলবে।
খুলনা কারাগারের জেলার মোহাম্মদ মুনীর হুসাইন বলেন, খুলনায় দুটি কারাগার চালু রাখার বিষয়ে সরকার নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আপাতত বর্তমান কারাগারের কর্মকর্তারাই দুটি কারাগারের দায়িত্ব পালন করবেন।
মুনীর বলেন, ১৯১২ সালে খুলনা নগরের ভৈরব নদীর তীরে নির্মাণ করা হয় খুলনার প্রথম কারাগার। সেখানে বন্দী ধারণক্ষমতা ৬৭৮ জনের। রয়েছেন ১ হাজার ৪শ’র বেশি বন্দী। ১১৩ বছরের পুরনো জরাজীর্ণ ভবনে ঝুঁকি নিয়ে থাকতে হয় বন্দীদের। এসব বিবেচনায় নিয়েই নতুন কারাগার নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়।
প্রকল্প অনুযায়ী, নতুন কারাগারের ভেতরে মোট স্থাপনা রয়েছে ৫৭টি। শুধু বন্দীদের রাখার জন্য ভবন রয়েছে ১১টি। এখানে চার হাজার বন্দী রাখা যাবে। প্রকল্পের আওতায় আপাতত দুই হাজার বন্দী রাখার অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। পরে প্রয়োজন পড়লে পৃথক প্রকল্প নিয়ে অন্য অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে।
খুলনার জেল সুপার নাসির উদ্দিন প্রধান বলেন, কারাগার পরিচালনার জন্য ৬০০ জনবলের চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে প্রায় ২০৮ জনবল রয়েছে। নতুন করে ৪৪ জনকে পদায়ন করা হয়েছে। আপাতত এই জনবল দিয়েই দুটি কারাগারের কাজ চালিয়ে নেয়া হবে।
জেল সুপার বলেন, নতুন কারাগারে জেলার ৯টি উপজেলার এবং পুরনো কারাগারে খুলনা নগরের বন্দীদের রাখা হবে। বিচারাধীন ও সাজাপ্রাপ্ত বন্দীদের পৃথক স্থানে রাখা হবে। কিশোর ও কিশোরী বন্দীদের জন্য রয়েছে পৃথক ব্যারাক। নারীদের জন্য আছে পৃথক হাসপাতাল, মোটিভেশন সেন্টার ও ওয়ার্কশেড।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, খুলনার সিটি বাইপাস সড়কের জয় বাংলা মোড়ের অদূরে আসানখালী এলাকায় প্রায় ৩০ একর জমির ওপর খুলনার জেলা কারাগার নির্মাণ প্রকল্প শুরু হয় ২০১১ সালে। ২০১২-১৩ অর্থবছর থেকে প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু করে খুলনা জেলা প্রশাসন। ২৬ কোটি ৫৪ লাখ ৮৭ হাজার টাকায় ৪১২ জনের কাছ থেকে ওই জমি অধিগ্রহণ করা হয়। তবে শুরু থেকেই এ প্রকল্প ঘিরে নানা প্রশ্ন ছিল খুলনাবাসীর।
এর মধ্যে ৮ বার প্রকল্পের সময় বেড়েছে, দুই দফা সংশোধনের পর ব্যয় বেড়ে হয়েছে ২৮৮ কোটি টাকা। কাগজে-কলমে প্রকল্পের কাজ শেষ দেখানো হয়েছে গত বছরের জুনে। তবে বাস্তবে কাজ চলছে এখনও।
এ দিকে অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, এ নির্মাণ প্রকল্পে রাজনৈতিক প্রভাব, কমিশনের ভাগবাটোয়ারা, আর সরকারি অর্থলুটের চিত্র। এমনকি প্রকল্পটি অনুমোদনের আগে কোনো সমীক্ষা হয়নি। কোনো কিছু ঠিক না করেই প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। প্রকল্প চলাকালে এর দেখভালকারী প্রতিষ্ঠান খুলনা গণপূর্ত বিভাগ-২-এর ১৩ জন নির্বাহী প্রকৌশলী পরিবর্তন হয়েছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ভূমি উন্নয়ন ও অবকাঠামো নির্মাণ খাতে ৩৯টি টেন্ডার আহ্বান করেছিল খুলনা গণপূর্ত বিভাগ-২। এর প্রতিটি টেন্ডারই শতভাগ নিয়ন্ত্রণ করেছে খুলনায় ‘শেখ পরিবারের সদস্যরা’। ইজিপির মাধ্যমে টেন্ডার হলেও কে কাজ পাবে তা নির্ধারিত থাকতো আগেই। অভিযোগ, কাজ শুরুর আগেই ১০ শতাংশ হারে অগ্রিম টাকা দিতে হয়েছে তাদের।
এছাড়াও অভিযোগ আছে, কমিশনের টাকা গিয়েছে গণপূর্তের প্রকৌশলীদের পকেটে। শুধু তাই নয়, অন্যের ঠিকাদারি লাইসেন্স ব্যবহার করে অধিকাংশ কাজ করেছেন প্রভাবশালী নেতারা।
প্রকল্পের মোট ৩৯টি টেন্ডারের মধ্যে ১৩টির কাজ পেয়েছেন খুলনা নগর আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য দাউদ হায়দারের মালিকানাধীন এসএন বিল্ডার্স লিমিটেড। প্রকল্পের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত কয়েকজন ঠিকাদারের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
কেন সমীক্ষা করা হয়নি, এমন প্রশ্নে সর্বশেষ প্রকল্প পরিচালক মোকতার আহমদ চৌধুরী বলেন, এসব ব্যাপারে আমি কিছু জানি না। গণপূর্তের কাছে খোঁজ নেন।
খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, প্রকল্প এলাকায় মাটি ভরাটের কাজটি পেয়েছিলেন নড়াইলের মেসার্স ইডেন প্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু কাজ করেছেন কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা এস এম মেজবাহ হোসেন বুরুজ। কাজ চলাকালেই ২০১৬ সালে তিনি মারা যান। মৃত্যুর আগে তিনি তার কাজের চেয়ে ১০ শতাংশ বেশি টাকা তুলে নেন, ফলে কাজ বন্ধ থাকে দীর্ঘদিন।
পরে মূল ঠিকাদারকে দিয়ে ভরাটের কাজ করানো হয়। অভিযোগ রয়েছে, লোকসান হওয়ায় তিনি যথাযথভাবে বালু ভরাট করেননি। এ কারণে প্রকল্প এলাকা মূল সড়ক থেকে প্রায় এক ফুট নিচু। পুরো চত্বরজুড়ে বালুর ওপর নয় ইঞ্চি পুরু মাটি দেয়ার কথা থাকলেও তা এখনও দেয়া হয়নি। ডিজাইনে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। এ কারণে ভারী বৃষ্টি হলেই তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে প্রকল্প এলাকা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রকল্প এলাকায় বালু ফেলা হয়েছে দুই কোটি ৭৮ লাখ ৬০৯ দশমিক ২৪ ঘনমিটার। এর মধ্যে বুরুজ বালু ফেলেছেন দুই কোটি ৬৬ লাখ ১৯২ দশমিক শূন্য আট ঘনমিটার। বুরুজ মারা যাওয়ার পর অবশিষ্ট অংশের কাজ করে এস এন বিল্ডার্স। বুরুজকে প্রতি ঘনফুট বালুর দাম দেয়া হয় সাড়ে ৮ টাকারও বেশি। আর দাউদকে দেয়া হয় ১১ টাকারও বেশি।
খুলনার অন্তত তিন বালু সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৪-১৫ সালের দিকে গন্তব্যে পৌঁছে দেয়া পর্যন্ত প্রতি ঘনফুট বালুর দাম ছিল সাড়ে চার টাকা থেকে পাঁচ টাকা। ওই হিসেবে শুধু বালু থেকে বুরুজ অতিরিক্ত নিয়ে গেছে প্রায় ৩৩ লাখ টাকা। আর এসএন বিল্ডার্স যখন বালু সরবরাহ শুরু করে তখন বালুর দাম ছিল কিছুটা বেশি। তখন বাজারে প্রতি ঘনফুট বালু গন্তব্যে পৌঁছে দেয়া পর্যন্ত ছিল ছয় টাকার মতো। শুধু বালু থেকে এসএন বিল্ডার্স অতিরিক্ত নিয়েছে প্রায় ২২ লাখ টাকা।
এ ব্যাপারে খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ-উজ-জামান বলেন, খুলনার নতুন কারাগার নির্মাণ প্রকল্পে অনিয়ম- দুর্নীতির তদন্ত প্রয়োজন। নির্মাণ শেষ না হতেই কোনো কোনো স্থাপনায় ফাটল দেখা দিয়েছে। পলেস্তারা খসে পড়ছে।
খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট বাবুল হাওলাদার বলেন, খুলনার নতুন কারাগার নির্মাণ প্রকল্পে অনিয়ম, দীর্ঘসূত্রতা ও অর্থ লুটপাটে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া প্রয়োজন।
প্রকল্পে অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে জানতে চাইলে খুলনা গণপূর্ত বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান দাবি করেন, প্রকল্পের শেষের দিকে ২০২৩ সালের ১৯ অক্টোবর তিনি যোগদান করেছেন। এ কারণে অনিয়ম ও দুর্নীতির কোনো তথ্য তার কাছে নেই।
তবে তিনি দাবি করেন, জমি অধিগ্রহণ দেরি হওয়ায় কাজ শুরু হতে দেরি হয়েছে, এ কারণে প্রকল্পের কাজও শেষ করতে বাড়তি সময় লেগেছে।