সরকারি বিভিন্ন সেক্টরে বিশেষ করে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে কর্মকর্তাদের পদায়ন-বদলি নিয়ে আওয়ামী লীগের আমলে চলমান রাজনৈতিক তদবির বন্ধ হয়নি। এখন বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এবং ছোট দলগুলোও এ ধরনের তদবির করছে বলে অভিযোগ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
‘আমার লোক, তোমার লোক’- কালচার থেকে বেরিয়ে আসতে হবে
সাম্প্রতিককালে দুই পুলিশ কর্মকর্তার বদলি নিয়ে বড় দুই দল থেকে টেলিফোনে কল (তদবির) পাওয়ার দাবি করে এ উপদেষ্টা বলেছেন, ‘আমার লোক, তোমার লোক- কালচার থেকে বিএনপি, জামায়াতকে বের হয়ে আসতে হবে। এনসিপি ও ছোট দলগুলোকেও বের হয়ে আসতে হবে। ছোট দলগুলো বা উদীয়মান দলগুলো এ ব্যাধি থেকে মুক্ত নয়।’ তিনি বলেন, ‘যত খারাপ কাজ, সবকিছু শুরু করেছে আওয়ামী লীগ, বাকিরা (অন্য রাজনৈতিক দলগুলো) কন্টিনিউ করেছে।’
শনিবার, (০১ নভেম্বর ২০২৫) ঢাকার কারওয়ান বাজারে প্রথম আলোর কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশ পুলিশের সংস্কার: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তব্য আসিফ নজরুল এসব কথা বলেন। এমন প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানান তিনি। সন্ধ্যায় প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে বৈঠকের একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়, যার শিরোনাম ছিল- “‘আমার লোক, তোমার লোক’ ব্যাধি থেকে দলগুলোকে বের হতে হবে: আসিফ নজরুল”।
অন্তর্বর্তী সরকারের এই উপদেষ্টা বলেন, ‘আমার লোক, তোমার লোক- ডেফিনেটলি এটা আওয়ামী লীগ আমলে ভয়াবহ অবস্থায় গিয়েছে। বাংলাদেশে যত খারাপ কাজ, শয়তানি কাজ, সেটা প্রথম আওয়ামী লীগ আমলে শুরু হয়েছে, ’৭৩ সালের আওয়ামী লীগের আমলে। গুম বলেন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বলেন, হেফাজতে নির্যাতন বলেন, হেফাজতে মৃত্যু বলেন, ভুয়া নির্বাচন বলেন, দলীয়করণ বলেন- সবকিছু শুরু করেছে আওয়ামী লীগ, বাকিরা কন্টিনিউ করেছে।’
‘আমার লোক, তোমার লোক’ সংস্কৃতি নাগরিক সমাজের মধ্যেও রয়েছে বলে মন্তব্য করে এ উপদেষ্টা। তার দাবি, এ কারণেই আওয়ামী লীগ আমলে সংগ্রামের সম্পাদক আবুল আসাদ আক্তান্ত হওয়ার পর কোনো প্রতিবাদ হয়নি। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় বাহিনী পুলিশকে একটি ‘নির্মম, অত্যাচারী, পাশবিক, দানবীয় বাহিনী’তে পরিণত করেছিলেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
পুলিশি নির্যাতনের নানা দিক তুলে ধরে আসিফ নজরুল বলেন, ‘একটা সরকারি দলের আদেশে, সরকারি দলের ইচ্ছা পূরণের জন্য। আর কেউ কেউ করে নিজ স্বভাবে, সে ক্ষমতাশালী হতে চায়, টাকা বানাতে চায়। সরকার তাকে যতটুকু অত্যাচার করতে বলে, তার থেকেও দশগুণ বেশি করে।’ নিজ স্বভাবের উদাহরণ হিসেবে তিনি সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজি) বেনজীর আহমেদের কথা বলেন।
প্রাতিষ্ঠানিক সীমাবদ্ধতার পাশাপাশি ফরেনসিক সুবিধা না থাকাকেও অত্যাচারের অন্যতম কারণ হিসেবে দেখিয়ে আসিফ নজরুল বলেন, ‘কিছু কিছু ক্ষেত্রে অত্যাচার করা হয় অপরাধ স্বীকার করানোর জন্য, এটা আমাদের সংস্কৃতির অংশ।’
এখন কোনো ধরনের রাজনৈতিক প্রভাব ছাড়াই পুলিশ সংস্কারে অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ করেছে বলে দাবি করেন তিনি। পুলিশের হাতে নাগরিকদের নির্যাতন বন্ধে এই সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরে আসিফ নজরুল বলেন, ‘এর মধ্যে ফৌজদারি কার্যবিধি সংশোধন করা হয়েছে, ১২ ঘণ্টার মধ্যে আটক করা ব্যক্তির স্বজনদের জানাতে হবে। এছাড়া গুমসংক্রান্ত আইনে সংশোধন করা হয়েছে, যাতে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জানাতে হবে। এটি না হলে গুম হিসেবে গণ্য হবে।’
পুলিশ সংস্কার কমিশনের ক্ষমতাকাঠামো না থাকার যে সমালোচনা, তা নিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, ক্ষমতা থাকলেই কেউ মানবাধিকার রক্ষায় কাজ করবে, তা ঠিক নয়। পুলিশের সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘গার্ড অব অনার দেয়ার জন্যই কিছু লোক থাকে, তাদের কাজই গার্ড অব অনার দেয়া। নিষেধ করলে তারা মন খারাপ করে। এ সংস্কৃতি বন্ধে কাজ করতে হবে।’
যৌথভাবে এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে প্রথম আলো ও অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার কল্যাণ সমিতি। বৈঠকে স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান।
বৈঠকের শুরুতে ‘বাংলাদেশ পুলিশের সংস্কার: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ নিয়ে একটি প্রবন্ধ তুলে ধরেন পুলিশের অতিরিক্ত আইজি (অবসরপ্রাপ্ত) ও বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা কল্যাণ সমিতির সহ-সভাপতি ইয়াসমিন গফুর।
বৈঠকে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম, বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক নুরুল হুদা, পুলিশ সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক শাহনাজ হুদা, অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার কল্যাণ সমিতির সভাপতি এম আকবর আলী, মানবাধিকারকর্মী নূর খান বক্তব্য দেন।
এছাড়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের, পুলিশের অতিরিক্ত আইজি কাজী মো. ফজলুল করীম এ বৈঠকে অংশ নেন।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
শনিবার, ০১ নভেম্বর ২০২৫
সরকারি বিভিন্ন সেক্টরে বিশেষ করে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে কর্মকর্তাদের পদায়ন-বদলি নিয়ে আওয়ামী লীগের আমলে চলমান রাজনৈতিক তদবির বন্ধ হয়নি। এখন বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এবং ছোট দলগুলোও এ ধরনের তদবির করছে বলে অভিযোগ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
‘আমার লোক, তোমার লোক’- কালচার থেকে বেরিয়ে আসতে হবে
সাম্প্রতিককালে দুই পুলিশ কর্মকর্তার বদলি নিয়ে বড় দুই দল থেকে টেলিফোনে কল (তদবির) পাওয়ার দাবি করে এ উপদেষ্টা বলেছেন, ‘আমার লোক, তোমার লোক- কালচার থেকে বিএনপি, জামায়াতকে বের হয়ে আসতে হবে। এনসিপি ও ছোট দলগুলোকেও বের হয়ে আসতে হবে। ছোট দলগুলো বা উদীয়মান দলগুলো এ ব্যাধি থেকে মুক্ত নয়।’ তিনি বলেন, ‘যত খারাপ কাজ, সবকিছু শুরু করেছে আওয়ামী লীগ, বাকিরা (অন্য রাজনৈতিক দলগুলো) কন্টিনিউ করেছে।’
শনিবার, (০১ নভেম্বর ২০২৫) ঢাকার কারওয়ান বাজারে প্রথম আলোর কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশ পুলিশের সংস্কার: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তব্য আসিফ নজরুল এসব কথা বলেন। এমন প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানান তিনি। সন্ধ্যায় প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে বৈঠকের একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়, যার শিরোনাম ছিল- “‘আমার লোক, তোমার লোক’ ব্যাধি থেকে দলগুলোকে বের হতে হবে: আসিফ নজরুল”।
অন্তর্বর্তী সরকারের এই উপদেষ্টা বলেন, ‘আমার লোক, তোমার লোক- ডেফিনেটলি এটা আওয়ামী লীগ আমলে ভয়াবহ অবস্থায় গিয়েছে। বাংলাদেশে যত খারাপ কাজ, শয়তানি কাজ, সেটা প্রথম আওয়ামী লীগ আমলে শুরু হয়েছে, ’৭৩ সালের আওয়ামী লীগের আমলে। গুম বলেন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বলেন, হেফাজতে নির্যাতন বলেন, হেফাজতে মৃত্যু বলেন, ভুয়া নির্বাচন বলেন, দলীয়করণ বলেন- সবকিছু শুরু করেছে আওয়ামী লীগ, বাকিরা কন্টিনিউ করেছে।’
‘আমার লোক, তোমার লোক’ সংস্কৃতি নাগরিক সমাজের মধ্যেও রয়েছে বলে মন্তব্য করে এ উপদেষ্টা। তার দাবি, এ কারণেই আওয়ামী লীগ আমলে সংগ্রামের সম্পাদক আবুল আসাদ আক্তান্ত হওয়ার পর কোনো প্রতিবাদ হয়নি। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় বাহিনী পুলিশকে একটি ‘নির্মম, অত্যাচারী, পাশবিক, দানবীয় বাহিনী’তে পরিণত করেছিলেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
পুলিশি নির্যাতনের নানা দিক তুলে ধরে আসিফ নজরুল বলেন, ‘একটা সরকারি দলের আদেশে, সরকারি দলের ইচ্ছা পূরণের জন্য। আর কেউ কেউ করে নিজ স্বভাবে, সে ক্ষমতাশালী হতে চায়, টাকা বানাতে চায়। সরকার তাকে যতটুকু অত্যাচার করতে বলে, তার থেকেও দশগুণ বেশি করে।’ নিজ স্বভাবের উদাহরণ হিসেবে তিনি সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজি) বেনজীর আহমেদের কথা বলেন।
প্রাতিষ্ঠানিক সীমাবদ্ধতার পাশাপাশি ফরেনসিক সুবিধা না থাকাকেও অত্যাচারের অন্যতম কারণ হিসেবে দেখিয়ে আসিফ নজরুল বলেন, ‘কিছু কিছু ক্ষেত্রে অত্যাচার করা হয় অপরাধ স্বীকার করানোর জন্য, এটা আমাদের সংস্কৃতির অংশ।’
এখন কোনো ধরনের রাজনৈতিক প্রভাব ছাড়াই পুলিশ সংস্কারে অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ করেছে বলে দাবি করেন তিনি। পুলিশের হাতে নাগরিকদের নির্যাতন বন্ধে এই সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরে আসিফ নজরুল বলেন, ‘এর মধ্যে ফৌজদারি কার্যবিধি সংশোধন করা হয়েছে, ১২ ঘণ্টার মধ্যে আটক করা ব্যক্তির স্বজনদের জানাতে হবে। এছাড়া গুমসংক্রান্ত আইনে সংশোধন করা হয়েছে, যাতে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জানাতে হবে। এটি না হলে গুম হিসেবে গণ্য হবে।’
পুলিশ সংস্কার কমিশনের ক্ষমতাকাঠামো না থাকার যে সমালোচনা, তা নিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, ক্ষমতা থাকলেই কেউ মানবাধিকার রক্ষায় কাজ করবে, তা ঠিক নয়। পুলিশের সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘গার্ড অব অনার দেয়ার জন্যই কিছু লোক থাকে, তাদের কাজই গার্ড অব অনার দেয়া। নিষেধ করলে তারা মন খারাপ করে। এ সংস্কৃতি বন্ধে কাজ করতে হবে।’
যৌথভাবে এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে প্রথম আলো ও অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার কল্যাণ সমিতি। বৈঠকে স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান।
বৈঠকের শুরুতে ‘বাংলাদেশ পুলিশের সংস্কার: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ নিয়ে একটি প্রবন্ধ তুলে ধরেন পুলিশের অতিরিক্ত আইজি (অবসরপ্রাপ্ত) ও বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা কল্যাণ সমিতির সহ-সভাপতি ইয়াসমিন গফুর।
বৈঠকে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম, বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক নুরুল হুদা, পুলিশ সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক শাহনাজ হুদা, অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার কল্যাণ সমিতির সভাপতি এম আকবর আলী, মানবাধিকারকর্মী নূর খান বক্তব্য দেন।
এছাড়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের, পুলিশের অতিরিক্ত আইজি কাজী মো. ফজলুল করীম এ বৈঠকে অংশ নেন।