মানবতাবিরোধী অপরাধে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া রায়কে ‘অতীতের কোনো প্রতিশোধ নয়’ বলে মন্তব্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান কৌঁসুলি মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
এই ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদণ্ডের রায়ের ভিত্তিতেই আওয়ামী লীগের আমলে জামায়াতে ইসলামীর পাঁচ শীর্ষ নেতা এবং বিএনপির একজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছিল।
সেই প্রসঙ্গে ইঙ্গিত করে তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা মনে করি এই রায়টি কোনো ধরনের কোনো অতীতের প্রতিশোধ নয়। এটি হচ্ছে জাতির প্রতিজ্ঞা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য। এটা হচ্ছে জাতির কোয়েস্ট ফর জাস্টিস।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই রায় প্রমাণ করেছে অপরাধী যত বড় হোক, যত ক্ষমতাশালী হোক সে আইনের ঊর্ধ্বে নয়। এবং বাংলাদেশ এমন একটি রাষ্ট্র যেখানে যত বড় অপরাধীই হোক, তার অপরাধের জন্য তাকে জবাবদিহিতার মুখোমুখি হতে হবে এবং তার প্রাপ্য শাস্তি পেতে হবে।’
জুলাই গণঅভ্যুত্থান দমানোর চেষ্টায় মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের দায়ে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছে বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। সোমবার,(১৭ নভেম্বর ২০২৫) দেয়া এ রায়ে শেখ হাসিনা ছাড়াও তার সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত।
এ মামলার তিন আসামির মধ্যে সেই সময়ের আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন দায় স্বীকার করে রাজসাক্ষী হয়েছিলেন। সেজন্য ট্রাইব্যুনাল তাকে লঘুদণ্ড হিসেবে ৫ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে।
ট্রাইব্যুনালের প্রধান কৌঁসুলি তাজুল বলেন, ‘বাংলাদেশে যে ১৪০০ তরতাজা তরুণ প্রাণ এই স্বৈরশাসনের অবসানের জন্য জীবন দিয়েছেন, তাদের পরিবারে যদি সামান্য একটু স্বস্তি আসে, সেটিই আজকের এই প্রসিকিউশনের প্রাপ্তি।’
তিনি আরও বলেন, ‘জাতির পক্ষে আমরা একটা বিচারিক প্রক্রিয়াকে সম্পন্ন করার মাধ্যমে এই জাতিকে বিচারহীনতার কলঙ্ক থেকে মুক্ত করার যে ক্ষুদ্র আমাদের প্রয়াস, সেটা যদি সফল হয় সেখানেই আমাদের সাফল্য।’
‘আন্তর্জাতিক মানদণ্ড’ মেনে এ বিচারের রায় হয়েছে দাবি করে তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা একই সঙ্গে এটাও বলতে চাই যে, কোয়ালিটি অফ এভিডেন্স এখানে দেখানো হয়েছে যে ধরনের সাক্ষ্যপ্রমাণ এই আদালতে উপস্থাপিত হয়েছে, বিশ্বের যে কোনো আদালতের স্ট্যান্ডার্ডে এই সাক্ষ্যপ্রমাণগুলো উত্তীর্ণ হয়ে যাবে। এবং পৃথিবীর যে কোনো আদালতে এই সাক্ষ্য প্রমাণ উপস্থাপন করা হলে আজকে যেসব আসামিকে শাস্তি প্রদান করা হয়েছে তারা প্রত্যেকেই সেই শাস্তি পাবেন।’
এই রায় আগামী প্রজন্মের জন্য ‘যুগান্তকারী’: অ্যাটর্নি জেনারেল
মানবতাবিরোধী অপরাধে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল যে রায় দিয়েছে, তা আগামী প্রজন্মের জন্য ‘যুগান্তকারী’ রায় বলে মন্তব্য করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।
রায় ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় সোমবার অ্যাটর্নি জেনারেল আদালত প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা মনে করি শহীদদের প্রতি, দেশের প্রতি, এদেশের মানুষের প্রতি, গণতন্ত্রের প্রতি, সংবিধানের প্রতি, আইনের শাসনের প্রতি এবং আগামী প্রজন্মের প্রতি দায়বদ্ধতা পরিশোধের স্বার্থে এ রায় একটি যুগান্তকারী রায়।’
এই রায় ‘প্রশান্তি’ আনবে মন্তব্য করে অ্যাটর্নি জেনারেল আসাদুজ্জামান বলেন, ‘এই রায় ভবিষ্যতের জন্য একটি বার্তা। এই রায় বাংলাদেশে ন্যায়বিচার এবং আইনের শাসনের জন্য একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে। এটা আমাদের কথা।’
আসামিদের সাজার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এই মামলার দুইজন আসামিকে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। একজন আসামি যিনি রাজসাক্ষী হিসেবে নিজেকে আদালতের সামনে উপস্থাপন করেছেন সার্বিক বিবেচনায় আদালত তাকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করেছে।’
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘যে অভিযোগে সাজা হয়েছে তা আপনারা শুনেছেন। ওনার (শেখ হাসিনা) পাঁচটা অভিযোগকে তিনটা কাউন্টে এনে আদালত সাজা দিয়েছেন। শেখ হাসিনাকে একটা কাউন্টে সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসিবিলিটিতে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন। আর সরাসরি যে নির্দেশনা দিয়েছেন, সেখানে তাকে প্রাণদণ্ড দিয়েছেন।’
কবে থেকে সাজা কার্যকর হবে জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আইনের বিধান মতে যেদিন থেকে গ্রেপ্তার হবেন সেদিন থেকে সাজা কার্যকর হবে।’
তিনি বলেন, ‘এই মামলায় শহীদদের পরিবারকে ও আহতদেরকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার জন্য একটা নির্দেশনা আদালত দিয়েছেন।’
আসামিরা আপিল করতে পারবেন কিনা জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘পলাতক অবস্থায় আপিল করার সুযোগ বাংলাদেশে শুধু নয়, বিশ্বের কোথাও আছে বলে আমার জানা নেই।’
আন্দোলন দমনে ‘১৪০০’ জনকে হত্যার উসকানি, প্ররোচনা ও নির্দেশ দান, ‘সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসেবলিটি’ এবং ‘জয়েন্ট ক্রিমিনাল এন্টারপ্রাইজের’ মোট পাঁচ অভিযোগে গত ১০ জুলাই তিন আসামির বিচার শুরুর আদেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫
মানবতাবিরোধী অপরাধে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া রায়কে ‘অতীতের কোনো প্রতিশোধ নয়’ বলে মন্তব্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান কৌঁসুলি মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
এই ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদণ্ডের রায়ের ভিত্তিতেই আওয়ামী লীগের আমলে জামায়াতে ইসলামীর পাঁচ শীর্ষ নেতা এবং বিএনপির একজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছিল।
সেই প্রসঙ্গে ইঙ্গিত করে তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা মনে করি এই রায়টি কোনো ধরনের কোনো অতীতের প্রতিশোধ নয়। এটি হচ্ছে জাতির প্রতিজ্ঞা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য। এটা হচ্ছে জাতির কোয়েস্ট ফর জাস্টিস।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই রায় প্রমাণ করেছে অপরাধী যত বড় হোক, যত ক্ষমতাশালী হোক সে আইনের ঊর্ধ্বে নয়। এবং বাংলাদেশ এমন একটি রাষ্ট্র যেখানে যত বড় অপরাধীই হোক, তার অপরাধের জন্য তাকে জবাবদিহিতার মুখোমুখি হতে হবে এবং তার প্রাপ্য শাস্তি পেতে হবে।’
জুলাই গণঅভ্যুত্থান দমানোর চেষ্টায় মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের দায়ে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছে বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। সোমবার,(১৭ নভেম্বর ২০২৫) দেয়া এ রায়ে শেখ হাসিনা ছাড়াও তার সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত।
এ মামলার তিন আসামির মধ্যে সেই সময়ের আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন দায় স্বীকার করে রাজসাক্ষী হয়েছিলেন। সেজন্য ট্রাইব্যুনাল তাকে লঘুদণ্ড হিসেবে ৫ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে।
ট্রাইব্যুনালের প্রধান কৌঁসুলি তাজুল বলেন, ‘বাংলাদেশে যে ১৪০০ তরতাজা তরুণ প্রাণ এই স্বৈরশাসনের অবসানের জন্য জীবন দিয়েছেন, তাদের পরিবারে যদি সামান্য একটু স্বস্তি আসে, সেটিই আজকের এই প্রসিকিউশনের প্রাপ্তি।’
তিনি আরও বলেন, ‘জাতির পক্ষে আমরা একটা বিচারিক প্রক্রিয়াকে সম্পন্ন করার মাধ্যমে এই জাতিকে বিচারহীনতার কলঙ্ক থেকে মুক্ত করার যে ক্ষুদ্র আমাদের প্রয়াস, সেটা যদি সফল হয় সেখানেই আমাদের সাফল্য।’
‘আন্তর্জাতিক মানদণ্ড’ মেনে এ বিচারের রায় হয়েছে দাবি করে তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা একই সঙ্গে এটাও বলতে চাই যে, কোয়ালিটি অফ এভিডেন্স এখানে দেখানো হয়েছে যে ধরনের সাক্ষ্যপ্রমাণ এই আদালতে উপস্থাপিত হয়েছে, বিশ্বের যে কোনো আদালতের স্ট্যান্ডার্ডে এই সাক্ষ্যপ্রমাণগুলো উত্তীর্ণ হয়ে যাবে। এবং পৃথিবীর যে কোনো আদালতে এই সাক্ষ্য প্রমাণ উপস্থাপন করা হলে আজকে যেসব আসামিকে শাস্তি প্রদান করা হয়েছে তারা প্রত্যেকেই সেই শাস্তি পাবেন।’
এই রায় আগামী প্রজন্মের জন্য ‘যুগান্তকারী’: অ্যাটর্নি জেনারেল
মানবতাবিরোধী অপরাধে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল যে রায় দিয়েছে, তা আগামী প্রজন্মের জন্য ‘যুগান্তকারী’ রায় বলে মন্তব্য করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।
রায় ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় সোমবার অ্যাটর্নি জেনারেল আদালত প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা মনে করি শহীদদের প্রতি, দেশের প্রতি, এদেশের মানুষের প্রতি, গণতন্ত্রের প্রতি, সংবিধানের প্রতি, আইনের শাসনের প্রতি এবং আগামী প্রজন্মের প্রতি দায়বদ্ধতা পরিশোধের স্বার্থে এ রায় একটি যুগান্তকারী রায়।’
এই রায় ‘প্রশান্তি’ আনবে মন্তব্য করে অ্যাটর্নি জেনারেল আসাদুজ্জামান বলেন, ‘এই রায় ভবিষ্যতের জন্য একটি বার্তা। এই রায় বাংলাদেশে ন্যায়বিচার এবং আইনের শাসনের জন্য একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে। এটা আমাদের কথা।’
আসামিদের সাজার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এই মামলার দুইজন আসামিকে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। একজন আসামি যিনি রাজসাক্ষী হিসেবে নিজেকে আদালতের সামনে উপস্থাপন করেছেন সার্বিক বিবেচনায় আদালত তাকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করেছে।’
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘যে অভিযোগে সাজা হয়েছে তা আপনারা শুনেছেন। ওনার (শেখ হাসিনা) পাঁচটা অভিযোগকে তিনটা কাউন্টে এনে আদালত সাজা দিয়েছেন। শেখ হাসিনাকে একটা কাউন্টে সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসিবিলিটিতে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন। আর সরাসরি যে নির্দেশনা দিয়েছেন, সেখানে তাকে প্রাণদণ্ড দিয়েছেন।’
কবে থেকে সাজা কার্যকর হবে জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আইনের বিধান মতে যেদিন থেকে গ্রেপ্তার হবেন সেদিন থেকে সাজা কার্যকর হবে।’
তিনি বলেন, ‘এই মামলায় শহীদদের পরিবারকে ও আহতদেরকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার জন্য একটা নির্দেশনা আদালত দিয়েছেন।’
আসামিরা আপিল করতে পারবেন কিনা জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘পলাতক অবস্থায় আপিল করার সুযোগ বাংলাদেশে শুধু নয়, বিশ্বের কোথাও আছে বলে আমার জানা নেই।’
আন্দোলন দমনে ‘১৪০০’ জনকে হত্যার উসকানি, প্ররোচনা ও নির্দেশ দান, ‘সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসেবলিটি’ এবং ‘জয়েন্ট ক্রিমিনাল এন্টারপ্রাইজের’ মোট পাঁচ অভিযোগে গত ১০ জুলাই তিন আসামির বিচার শুরুর আদেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল।