তীব্র ভূমিকম্পের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ফের ঝাঁকুনিতে কেঁপে উঠল বাংলাদেশ। শনিবার সকাল ১০টা ৩৬ মিনিটে মৃদু ভূমিকম্প অনুভূত হয়। আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূকম্পন পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের কর্মকর্তা রুবাঈয়্যাৎ কবীর জানান, এটি ‘আফটার শক’ ছিল। ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকা থেকে ২৯ কিলোমিটার দূরে নরসিংদীর পলাশ। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৩ দশমিক ৩।
এর আগে শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে কয়েক দশকের মধ্যে দেশের সবচেয়ে প্রাণঘাতী ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে বাংলাদেশ। তাতে তিন জেলায় অন্তত ১০ জনের মৃত্যু হয়, আহত হন ছয় শতাধিক মানুষ। ঢাকার বহু ভবনে ফাটল দেখা দেয়; কোথাও কোথাও ভবন হেলে পড়ার ঘটনাও ঘটে।
৫ দশমিক ৭ মাত্রার এই ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকা থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে নরসিংদীর মাধবদীতে, যার কেন্দ্র ছিল ভূপৃষ্ঠের ১০ কিলোমিটার গভীরে। স্থায়ীত্ব ছিল ২৬ সেকেন্ড।
তীব্র এই ভূমিকম্পের পর এখনই করণীয় ঠিক করতে তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মেহেদি আহমেদ আনসারী বলেন, “আজকের ভূমিকম্পটা বলা যেতে পারে ‘ফোরশক’। বড় ভূমিকম্পের আগে ছোট ছোট যে ভূমিকম্প হয়, এটা সেগুলোর একটি।”
তিনি আরও বলেন, “এ অঞ্চলে বড় ভূমিকম্পের আশঙ্কা আগেও ছিল, এখন সেটি আরও বাড়ছে। ঢাকা শহরের ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে যদি ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হয়, তাহলে ২ থেকে ৩ লাখ মানুষ হতাহত হতে পারে। পাঁচ থেকে সাত লাখ মানুষ অবরুদ্ধ হওয়ার পাশাপাশি ভেঙে পড়তে পারে ঢাকার প্রায় ৩৫ শতাংশ ভবন।”
বিশ্লেষকরা মনে করেন, বড় ধরনের ভূমিকম্প ঠেকানো সম্ভব না হলেও ক্ষয়ক্ষতি কমানো সম্ভব। এজন্য ভবনের মান পরীক্ষা, ঝুঁকির ভিত্তিতে ভবন শ্রেণিবিন্যাস, নাগরিকদের সচেতন করা এবং নিয়মিত মহড়া আয়োজনের ওপর জোর দিয়েছেন তারা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ববিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলেন, “বাংলাদেশ কম ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ হলেও ঝুঁকির দিক দিয়ে উপরের সারিতে। ইন্ডিয়ান-বার্মা প্লেটের সংযোগস্থলে বিপুল শক্তি জমা হচ্ছে। সেই শক্তি মুক্ত হলে ৮ দশমিক ২ থেকে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প হতে পারে। এটা আগামীকালও হতে পারে, আবার ৫০ বছর পরেও হতে পারে। সময় বলা সম্ভব নয়, তবে যেটি হবে, সেটি ভয়াবহ হবে। কারণ ‘সাবডাকশন জোনের’ ভূমিকম্প সাধারণত ভয়ঙ্কর হয়ে থাকে।”
শনিবার সকালের ভূমিকম্প নিয়ে প্রাথমিকভাবে বিভ্রান্তি দেখা দেয়। বেলা একটার দিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছিল, ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল সাভারের আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকায়। তবে বিকেল চারটার দিকে তারা জানায়, বিশ্লেষণে ত্রুটির কারণে ভুল হয়েছিল—ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল আসলে নরসিংদীর পলাশ উপজেলা।
আবহাওয়াবিদ তরিফুল নেওয়াজ কবির বলেন, “আমাদের বিশ্লেষণে একটু সমস্যা হয়েছিল। বাইপাইলে নয়, নরসিংদীর পলাশেই সকাল ১০টা ৩৬ মিনিট ১২ সেকেন্ডে রিখটার স্কেলে ৩ দশমিক ৩ মাত্রার মৃদু ভূমিকম্প হয়েছে।”
এর আগে শুক্রবারের ভূমিকম্পে শিশুসহ ১০ জনের মৃত্যু ও ছয় শতাধিক আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। নরসিংদীতে পাঁচজন, ঢাকায় চারজন এবং নারায়ণগঞ্জে একজন নিহত হন। ভূমিকম্পের সময় আতঙ্কে অনেকেই ভবন থেকে লাফিয়ে পড়েন। কিছু ভবন হেলে পড়ে ও ফাটল দেখা দেয়।
শুক্রবারের ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদীর মাধবদীতে, আর তার পরদিনই একই জেলার পলাশে ফের ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। পরপর দুই দিনের এই কম্পনে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি বড় ভূমিকম্পের ইঙ্গিত হতে পারে, তাই এখনই প্রস্তুতি ও সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫
তীব্র ভূমিকম্পের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ফের ঝাঁকুনিতে কেঁপে উঠল বাংলাদেশ। শনিবার সকাল ১০টা ৩৬ মিনিটে মৃদু ভূমিকম্প অনুভূত হয়। আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূকম্পন পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের কর্মকর্তা রুবাঈয়্যাৎ কবীর জানান, এটি ‘আফটার শক’ ছিল। ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকা থেকে ২৯ কিলোমিটার দূরে নরসিংদীর পলাশ। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৩ দশমিক ৩।
এর আগে শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে কয়েক দশকের মধ্যে দেশের সবচেয়ে প্রাণঘাতী ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে বাংলাদেশ। তাতে তিন জেলায় অন্তত ১০ জনের মৃত্যু হয়, আহত হন ছয় শতাধিক মানুষ। ঢাকার বহু ভবনে ফাটল দেখা দেয়; কোথাও কোথাও ভবন হেলে পড়ার ঘটনাও ঘটে।
৫ দশমিক ৭ মাত্রার এই ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকা থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে নরসিংদীর মাধবদীতে, যার কেন্দ্র ছিল ভূপৃষ্ঠের ১০ কিলোমিটার গভীরে। স্থায়ীত্ব ছিল ২৬ সেকেন্ড।
তীব্র এই ভূমিকম্পের পর এখনই করণীয় ঠিক করতে তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মেহেদি আহমেদ আনসারী বলেন, “আজকের ভূমিকম্পটা বলা যেতে পারে ‘ফোরশক’। বড় ভূমিকম্পের আগে ছোট ছোট যে ভূমিকম্প হয়, এটা সেগুলোর একটি।”
তিনি আরও বলেন, “এ অঞ্চলে বড় ভূমিকম্পের আশঙ্কা আগেও ছিল, এখন সেটি আরও বাড়ছে। ঢাকা শহরের ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে যদি ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হয়, তাহলে ২ থেকে ৩ লাখ মানুষ হতাহত হতে পারে। পাঁচ থেকে সাত লাখ মানুষ অবরুদ্ধ হওয়ার পাশাপাশি ভেঙে পড়তে পারে ঢাকার প্রায় ৩৫ শতাংশ ভবন।”
বিশ্লেষকরা মনে করেন, বড় ধরনের ভূমিকম্প ঠেকানো সম্ভব না হলেও ক্ষয়ক্ষতি কমানো সম্ভব। এজন্য ভবনের মান পরীক্ষা, ঝুঁকির ভিত্তিতে ভবন শ্রেণিবিন্যাস, নাগরিকদের সচেতন করা এবং নিয়মিত মহড়া আয়োজনের ওপর জোর দিয়েছেন তারা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ববিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলেন, “বাংলাদেশ কম ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ হলেও ঝুঁকির দিক দিয়ে উপরের সারিতে। ইন্ডিয়ান-বার্মা প্লেটের সংযোগস্থলে বিপুল শক্তি জমা হচ্ছে। সেই শক্তি মুক্ত হলে ৮ দশমিক ২ থেকে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প হতে পারে। এটা আগামীকালও হতে পারে, আবার ৫০ বছর পরেও হতে পারে। সময় বলা সম্ভব নয়, তবে যেটি হবে, সেটি ভয়াবহ হবে। কারণ ‘সাবডাকশন জোনের’ ভূমিকম্প সাধারণত ভয়ঙ্কর হয়ে থাকে।”
শনিবার সকালের ভূমিকম্প নিয়ে প্রাথমিকভাবে বিভ্রান্তি দেখা দেয়। বেলা একটার দিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছিল, ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল সাভারের আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকায়। তবে বিকেল চারটার দিকে তারা জানায়, বিশ্লেষণে ত্রুটির কারণে ভুল হয়েছিল—ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল আসলে নরসিংদীর পলাশ উপজেলা।
আবহাওয়াবিদ তরিফুল নেওয়াজ কবির বলেন, “আমাদের বিশ্লেষণে একটু সমস্যা হয়েছিল। বাইপাইলে নয়, নরসিংদীর পলাশেই সকাল ১০টা ৩৬ মিনিট ১২ সেকেন্ডে রিখটার স্কেলে ৩ দশমিক ৩ মাত্রার মৃদু ভূমিকম্প হয়েছে।”
এর আগে শুক্রবারের ভূমিকম্পে শিশুসহ ১০ জনের মৃত্যু ও ছয় শতাধিক আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। নরসিংদীতে পাঁচজন, ঢাকায় চারজন এবং নারায়ণগঞ্জে একজন নিহত হন। ভূমিকম্পের সময় আতঙ্কে অনেকেই ভবন থেকে লাফিয়ে পড়েন। কিছু ভবন হেলে পড়ে ও ফাটল দেখা দেয়।
শুক্রবারের ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদীর মাধবদীতে, আর তার পরদিনই একই জেলার পলাশে ফের ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। পরপর দুই দিনের এই কম্পনে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি বড় ভূমিকম্পের ইঙ্গিত হতে পারে, তাই এখনই প্রস্তুতি ও সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি।