জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থানকে তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত হিসেবে উল্লেখ করেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্কর। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা যেসব ‘পরিস্থিতির’ মধ্য দিয়ে ভারতে আসতে বাধ্য হয়েছেন, সেই প্রেক্ষাপট তার সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করেছে।
রক্তক্ষয়ী গণঅভ্যুত্থানের পর গত বছরের ৫ অগাস্ট ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা এবং এখনও সেখানে আছেন। ছাত্রনেতৃত্বাধীন আন্দোলন দমনের চেষ্টায় ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের’ অভিযোগে গত মাসে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাকে অনুপস্থিতিতেই মৃত্যুদণ্ড প্রদান করে। এরপর তাকে ফেরত চেয়ে ভারতকে চিঠি দেয় বাংলাদেশ সরকার।
হিন্দুস্তান টাইমস লিডারশিপ সামিটে এক প্রশ্নোত্তর পর্বে জয়শঙ্করকে জানতে চাওয়া হয়—শেখ হাসিনা কি ইচ্ছা করলেই যতদিন চান ততদিন ভারতে থাকতে পারবেন?
জবাবে তিনি বলেন—
“এটা এক ভিন্ন বিষয়। তিনি বিশেষ পরিস্থিতিতে এখানে এসেছেন। সেই পরিস্থিতি তার সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করে—এটা স্বাভাবিক। তবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব তারই।”
ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রতিবেশী দেশে বিশ্বাসযোগ্য গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া দেখাটা ভারতের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের অতীত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন—
“যারা এখন ক্ষমতায় আছেন, তারা আগের নির্বাচনগুলো নিয়ে অসন্তুষ্ট ছিলেন। এখন যদি নির্বাচনই মূল ইস্যু হয়ে থাকে, তাহলে প্রথম প্রয়োজন হলো ন্যায়সঙ্গত নির্বাচন।”
দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন—
“গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যেই আসুক না কেন, তারা সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্যপূর্ণ ও পরিপক্ক অবস্থান নেবেন—এ ব্যাপারে আমি আত্মবিশ্বাসী।”
এদিকে ১৭ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালকে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ড দেয়। কামালও ভারতে অবস্থান করছেন। সেদিনই বাংলাদেশ সরকার তাদের ফেরত দেওয়ার আহ্বান জানায়। পরে ২৩ নভেম্বর ভারতকে কূটনৈতিকপত্র পাঠানো হয়। দিল্লি চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করলেও ফেরত পাঠানো হবে কি না সে সম্পর্কে কোনো অবস্থান এখনো জানায়নি।
বাংলাদেশ সরকার আরও দাবি করেছে—দিল্লিতে বসে শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে ‘অস্থিতিশীল করার চেষ্টা’ করছেন। অন্যদিকে ভারত বলেছে—বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ আশা করে।
সাম্প্রতিক সময়ে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক টানাপোড়েন বেড়েছে। পাল্টাপাল্টি বিবৃতি, কূটনীতিক ‘তলব’, এবং বাণিজ্যে নিষেধাজ্ঞার ঘটনাও ঘটেছে। সর্বশেষ ১৭ মে ভারত স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশি পোশাক ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য আমদানি বন্ধের ঘোষণা দেয়।
এছাড়া ১২ নভেম্বর বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঢাকায় ভারতের উপ-হাই কমিশনারকে তলব করে শেখ হাসিনাকে দিল্লিতে বসে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দেওয়ার সুযোগ রাখায় অসন্তোষ জানায়।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫
জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থানকে তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত হিসেবে উল্লেখ করেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্কর। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা যেসব ‘পরিস্থিতির’ মধ্য দিয়ে ভারতে আসতে বাধ্য হয়েছেন, সেই প্রেক্ষাপট তার সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করেছে।
রক্তক্ষয়ী গণঅভ্যুত্থানের পর গত বছরের ৫ অগাস্ট ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা এবং এখনও সেখানে আছেন। ছাত্রনেতৃত্বাধীন আন্দোলন দমনের চেষ্টায় ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের’ অভিযোগে গত মাসে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাকে অনুপস্থিতিতেই মৃত্যুদণ্ড প্রদান করে। এরপর তাকে ফেরত চেয়ে ভারতকে চিঠি দেয় বাংলাদেশ সরকার।
হিন্দুস্তান টাইমস লিডারশিপ সামিটে এক প্রশ্নোত্তর পর্বে জয়শঙ্করকে জানতে চাওয়া হয়—শেখ হাসিনা কি ইচ্ছা করলেই যতদিন চান ততদিন ভারতে থাকতে পারবেন?
জবাবে তিনি বলেন—
“এটা এক ভিন্ন বিষয়। তিনি বিশেষ পরিস্থিতিতে এখানে এসেছেন। সেই পরিস্থিতি তার সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করে—এটা স্বাভাবিক। তবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব তারই।”
ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রতিবেশী দেশে বিশ্বাসযোগ্য গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া দেখাটা ভারতের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের অতীত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন—
“যারা এখন ক্ষমতায় আছেন, তারা আগের নির্বাচনগুলো নিয়ে অসন্তুষ্ট ছিলেন। এখন যদি নির্বাচনই মূল ইস্যু হয়ে থাকে, তাহলে প্রথম প্রয়োজন হলো ন্যায়সঙ্গত নির্বাচন।”
দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন—
“গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যেই আসুক না কেন, তারা সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্যপূর্ণ ও পরিপক্ক অবস্থান নেবেন—এ ব্যাপারে আমি আত্মবিশ্বাসী।”
এদিকে ১৭ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালকে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ড দেয়। কামালও ভারতে অবস্থান করছেন। সেদিনই বাংলাদেশ সরকার তাদের ফেরত দেওয়ার আহ্বান জানায়। পরে ২৩ নভেম্বর ভারতকে কূটনৈতিকপত্র পাঠানো হয়। দিল্লি চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করলেও ফেরত পাঠানো হবে কি না সে সম্পর্কে কোনো অবস্থান এখনো জানায়নি।
বাংলাদেশ সরকার আরও দাবি করেছে—দিল্লিতে বসে শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে ‘অস্থিতিশীল করার চেষ্টা’ করছেন। অন্যদিকে ভারত বলেছে—বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ আশা করে।
সাম্প্রতিক সময়ে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক টানাপোড়েন বেড়েছে। পাল্টাপাল্টি বিবৃতি, কূটনীতিক ‘তলব’, এবং বাণিজ্যে নিষেধাজ্ঞার ঘটনাও ঘটেছে। সর্বশেষ ১৭ মে ভারত স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশি পোশাক ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য আমদানি বন্ধের ঘোষণা দেয়।
এছাড়া ১২ নভেম্বর বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঢাকায় ভারতের উপ-হাই কমিশনারকে তলব করে শেখ হাসিনাকে দিল্লিতে বসে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দেওয়ার সুযোগ রাখায় অসন্তোষ জানায়।