নবায়নযোগ্য জ্বালানির পথে উত্তরণে আরও সময় প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেছেন, জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে ‘রাতারাতি’ নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে ‘জাম্প করা’ সম্ভব হবে না। শনিবার,(০৬ ডিসেম্বর ২০২৫) ঢাকায় সামরিক জাদুঘরে ‘বাংলাদেশ জ্বালানি সম্মেলন ২০২৫’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
দেশের জ্বালানি খাতের উন্নয়ন, নীতি-সংস্কার ও সবুজ রূপান্তরকে এগিয়ে নিতে ‘তৃতীয় বাংলাদেশ জ্বালানি সম্মেলন ২০২৫’ শনিবার শুরু হয়, চলবে আগামী ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
শনিবার সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশের প্রতিবেশ ও উন্নয়নবিষয়ক কর্মজোট (বিডব্লিউজিইডি) আহ্বায়ক অধ্যাপক কাজী মারুফুল ইসলাম। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিডব্লিউজিইডির নির্বাহী সদস্য মনোয়ার মোস্তফা।
পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, ‘এখনও যখন আমাদের বলে যে, বিভিন্ন জায়গার শিল্পপতিরা, যে আমরা গ্যাস পাচ্ছি না, বিভিন্ন জায়গায়। আমার নিজের বাসাতেও তো ‘সমস্যা আমি ফেইস করছি’ কিন্তু। আপনারাও অনেকের মিরপুরে যাদের বাসা আপনারা ফেইস করছেন। এখন মানুষ গ্যাস চায়। আপনি নবায়নযোগ্য চান। এখন নবায়নযোগ্য জ্বালানির পথে উত্তরণে আমাদের যেটুকুন সময় লাগবে সেটুকুন সময় আমাদের দিতে হবে। সেটুকুন বিনিয়োগ আমাদের করতে হবে। এটা সরকারের প্রাধিকার হিসেবেই সরকারকে নিয়ে করতে হবে। কিন্তু রাতারাতি এই ‘জাম্পটা’ করে ফেলা হয়তো সম্ভব হবে না।’ ‘রাতারাতি’ না করে একটা লক্ষ্য ধরে সে মোতাবেক পরিকল্পনা ও ‘বাস্তবভিত্তিক পথনকশা’ তৈরির কথা বলেন তিনি।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘এখন যখন সচিবালয়ে নতুন ভবনের কথা তুলি তখন সেখানে কথা হচ্ছে যে সেটাকে শতভাগ নবায়নযোগ্য করা যায় কিনা। এগুলোর জন্য যে বিনিয়োগ লাগে সেটা আমাদের সহজলভ্য কিনা। অনেক টাকা রেখে আমাদের জন্য আগের সরকার চলে যায় নাই। এটাও একটু মনে রাখতে হবে। কিন্তু তারপরেও এগুলোকে সীমাবদ্ধতা হিসেবে দেখছি না, অতিক্রম করার চেষ্টা করছি। ‘ইটস জাস্ট গেটিং টাইম কনজিউমিং’।’
অনুষ্ঠানে সমন্বিত জ্বালানি ও বিদ্যুৎ মহাপরিকল্পনা (আইইপিএমপি) দ্রুত সংশোধন করে তাতে নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের অংশীদারত্ব বাড়ানোর আহ্বান জানান বিশেষজ্ঞরা।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)-এর গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘প্রযুক্তিগত জ্ঞান, সঠিক নীতি ও দক্ষ জনবল এই তিনটির সমন্বয় ছাড়া কার্যকর জ্বালানি রূপান্তর সম্ভব নয়। বিদেশি পরামর্শক নির্ভরতা কমিয়ে প্রতিষ্ঠানভিত্তিক সক্ষমতা গড়ে তোলা এবং নীতি বাস্তবায়নে দেশীয় মালিকানা তৈরি করাই এখন সবচেয়ে জরুরি কাজ।’
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘বিগত সরকারের আমলে জ্বালানি খাতে সঙ্ঘবদ্ধ অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। যার বড় একটি ছিল পলিসিগত অপরাধ। জাইকা বা বিদেশি পরামর্শকদের তৈরি মহাপরিকল্পনা কখনোই নবায়নযোগ্য জ্বালানির স্বার্থ রক্ষা করবে না। সুতরাং পরিকল্পনায় দেশি বিশেষজ্ঞদের বেশি যুক্ত করতে হবে।’
অধ্যাপক কাজী মারুফুল আগামী নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে যেন জ্বালানি রুপান্তরের বিষয়টি সবসময় থাকে সেই বিষয়ে জোর আহ্বান জানান।
বিডাব্লিউজিইডিপ্রধান আয়োজক হিসেবে তিন দিনব্যাপী এই সম্মেলনটি পরিচালনা করছে। এ
আয়োজনের সহ-আয়োজক হিসেবে রয়েছে ১৬টি প্রতিষ্ঠান। সেগুলো হলো- অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), ব্রাইট গ্রিন এনার্জি ফাউন্ডেশন (বিজিইএফ), সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি), সেন্টার ফর রিনিউয়্যাবল এনার্জি সার্ভিসেস (ক্রেসল), উপকূলীয় জীবনযাত্রা ও পরিবেশ কর্মজোট (ক্লিন), দি আর্থ, এথিক্যাল ট্রেডিং ইনিশিয়েটিভ (ইটিআই), লাইয়ার্স ফর এনার্জি, লিড, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজিএফ), রিগ্লোবাল, সেফটি অ্যান্ড রাইটস সোসাইটি (এসআরএস), শক্তি ফাউন্ডেশন, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এবং ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ।
আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, নীতিনির্ধারক, সরকারি-বেসরকারি সংস্থা, বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগী ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিনিয়োগকারীসহ বিভিন্ন পেশার প্রতিনিধিরা এ সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন। দেশের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলোর যৌথ উদ্যোগে ২০২৩ সালে প্রথম এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এর ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালে দ্বিতীয় সম্মেলনে চার শতাধিক প্রতিনিধি অংশ নেন।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫
নবায়নযোগ্য জ্বালানির পথে উত্তরণে আরও সময় প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেছেন, জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে ‘রাতারাতি’ নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে ‘জাম্প করা’ সম্ভব হবে না। শনিবার,(০৬ ডিসেম্বর ২০২৫) ঢাকায় সামরিক জাদুঘরে ‘বাংলাদেশ জ্বালানি সম্মেলন ২০২৫’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
দেশের জ্বালানি খাতের উন্নয়ন, নীতি-সংস্কার ও সবুজ রূপান্তরকে এগিয়ে নিতে ‘তৃতীয় বাংলাদেশ জ্বালানি সম্মেলন ২০২৫’ শনিবার শুরু হয়, চলবে আগামী ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
শনিবার সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশের প্রতিবেশ ও উন্নয়নবিষয়ক কর্মজোট (বিডব্লিউজিইডি) আহ্বায়ক অধ্যাপক কাজী মারুফুল ইসলাম। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিডব্লিউজিইডির নির্বাহী সদস্য মনোয়ার মোস্তফা।
পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, ‘এখনও যখন আমাদের বলে যে, বিভিন্ন জায়গার শিল্পপতিরা, যে আমরা গ্যাস পাচ্ছি না, বিভিন্ন জায়গায়। আমার নিজের বাসাতেও তো ‘সমস্যা আমি ফেইস করছি’ কিন্তু। আপনারাও অনেকের মিরপুরে যাদের বাসা আপনারা ফেইস করছেন। এখন মানুষ গ্যাস চায়। আপনি নবায়নযোগ্য চান। এখন নবায়নযোগ্য জ্বালানির পথে উত্তরণে আমাদের যেটুকুন সময় লাগবে সেটুকুন সময় আমাদের দিতে হবে। সেটুকুন বিনিয়োগ আমাদের করতে হবে। এটা সরকারের প্রাধিকার হিসেবেই সরকারকে নিয়ে করতে হবে। কিন্তু রাতারাতি এই ‘জাম্পটা’ করে ফেলা হয়তো সম্ভব হবে না।’ ‘রাতারাতি’ না করে একটা লক্ষ্য ধরে সে মোতাবেক পরিকল্পনা ও ‘বাস্তবভিত্তিক পথনকশা’ তৈরির কথা বলেন তিনি।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘এখন যখন সচিবালয়ে নতুন ভবনের কথা তুলি তখন সেখানে কথা হচ্ছে যে সেটাকে শতভাগ নবায়নযোগ্য করা যায় কিনা। এগুলোর জন্য যে বিনিয়োগ লাগে সেটা আমাদের সহজলভ্য কিনা। অনেক টাকা রেখে আমাদের জন্য আগের সরকার চলে যায় নাই। এটাও একটু মনে রাখতে হবে। কিন্তু তারপরেও এগুলোকে সীমাবদ্ধতা হিসেবে দেখছি না, অতিক্রম করার চেষ্টা করছি। ‘ইটস জাস্ট গেটিং টাইম কনজিউমিং’।’
অনুষ্ঠানে সমন্বিত জ্বালানি ও বিদ্যুৎ মহাপরিকল্পনা (আইইপিএমপি) দ্রুত সংশোধন করে তাতে নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের অংশীদারত্ব বাড়ানোর আহ্বান জানান বিশেষজ্ঞরা।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)-এর গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘প্রযুক্তিগত জ্ঞান, সঠিক নীতি ও দক্ষ জনবল এই তিনটির সমন্বয় ছাড়া কার্যকর জ্বালানি রূপান্তর সম্ভব নয়। বিদেশি পরামর্শক নির্ভরতা কমিয়ে প্রতিষ্ঠানভিত্তিক সক্ষমতা গড়ে তোলা এবং নীতি বাস্তবায়নে দেশীয় মালিকানা তৈরি করাই এখন সবচেয়ে জরুরি কাজ।’
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘বিগত সরকারের আমলে জ্বালানি খাতে সঙ্ঘবদ্ধ অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। যার বড় একটি ছিল পলিসিগত অপরাধ। জাইকা বা বিদেশি পরামর্শকদের তৈরি মহাপরিকল্পনা কখনোই নবায়নযোগ্য জ্বালানির স্বার্থ রক্ষা করবে না। সুতরাং পরিকল্পনায় দেশি বিশেষজ্ঞদের বেশি যুক্ত করতে হবে।’
অধ্যাপক কাজী মারুফুল আগামী নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে যেন জ্বালানি রুপান্তরের বিষয়টি সবসময় থাকে সেই বিষয়ে জোর আহ্বান জানান।
বিডাব্লিউজিইডিপ্রধান আয়োজক হিসেবে তিন দিনব্যাপী এই সম্মেলনটি পরিচালনা করছে। এ
আয়োজনের সহ-আয়োজক হিসেবে রয়েছে ১৬টি প্রতিষ্ঠান। সেগুলো হলো- অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), ব্রাইট গ্রিন এনার্জি ফাউন্ডেশন (বিজিইএফ), সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি), সেন্টার ফর রিনিউয়্যাবল এনার্জি সার্ভিসেস (ক্রেসল), উপকূলীয় জীবনযাত্রা ও পরিবেশ কর্মজোট (ক্লিন), দি আর্থ, এথিক্যাল ট্রেডিং ইনিশিয়েটিভ (ইটিআই), লাইয়ার্স ফর এনার্জি, লিড, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজিএফ), রিগ্লোবাল, সেফটি অ্যান্ড রাইটস সোসাইটি (এসআরএস), শক্তি ফাউন্ডেশন, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এবং ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ।
আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, নীতিনির্ধারক, সরকারি-বেসরকারি সংস্থা, বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগী ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিনিয়োগকারীসহ বিভিন্ন পেশার প্রতিনিধিরা এ সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন। দেশের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলোর যৌথ উদ্যোগে ২০২৩ সালে প্রথম এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এর ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালে দ্বিতীয় সম্মেলনে চার শতাধিক প্রতিনিধি অংশ নেন।