জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে থাকার বিষয়টি তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত মন্তব্য করে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্কর বলেছেন, সেই সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে প্রভাব রয়েছে তিনি যে ‘পরিস্থিতিতে’ ভারতে আসতে বাধ্য হয়েছেন।
রক্তক্ষয়ী গণঅভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা এবং এখনও সেখানেই আছেন তিনি। ছাত্রদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠে আন্দোালন দমানোর চেষ্টায় ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের’ অভিযোগে গত মাসে ৭৮ বছর বয়সী সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে তার অনুপস্থিতিতেই মৃত্যুদ- দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এরপর তাকে ফেরত চেয়ে ভারতে চিঠিও দিয়েছে ঢাকা।
হিন্দুস্তান টাইমস লিডারশিপ সামিটে এনডিটিভির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রধান সম্পাদক রাহুল কানওয়ালের সঙ্গে আলাপচারিতায় জয়শঙ্করের কাছে জানতে চাওয়া হয়, শেখ হাসিনা ‘যতদিন চান ততদিনই ভারতে থাকতে পারবেন কিনা’?
জবাবে জয়শঙ্কর বলেন, ‘এটা একটা ভিন্ন বিষয়, তাই না? তিনি একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে এখানে এসেছেন। তাকে ঘিরে যা ঘটছে তাতে সেই পরিস্থিতির স্পষ্ট প্রভাব রয়েছে বলে আমি মনে করি। কিন্তু তারপরও, এটা এমন এক বিষয়ে যে বিষয়ে সিদ্ধান্ত তাকেই নিতে হবে,’ বলেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
নয়া দিল্লি ও ঢাকার মধ্যে সম্পর্কের প্রসঙ্গ টেনে প্রতিবেশী দেশে বিশ্বাসযোগ্য গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে ভারতের অবস্থানের ওপর জোর দেন তিনি।
বাংলাদেশের অতীত রাজনৈতিক পরিস্থিতির দিকে ইঙ্গিত করে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যা শুনেছি, বাংলাদেশের মানুষ, বিশেষ করে যারা এখন ক্ষমতায় আছেন, তাদের আগের নির্বাচনগুলো যেভাবে হয়েছে তা নিয়ে অসন্তোষ ছিল। এখন নির্বাচনই যদি ইস্যু হয়ে থাকে, তাহলে প্রথম কাজই হওয়া উচিত একটি ন্যায়সঙ্গত নির্বাচন।’ ভবিষ্যৎ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে এ প্রসঙ্গের ইতি টানেন তিনি।
প্রতিবেশী দেশে গণতান্ত্রিক অগ্রাধিকারের পক্ষে ভারতের অবস্থান তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমাদের দিক থেকে, আমরা বাংলাদেশের মঙ্গল কামনা করি। একটি গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে আমরা মনে করি, যে কোনো গণতান্ত্রিক দেশ জনতার ইচ্ছা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জানার চেষ্টা করতে পছন্দ করে। আমি সম্পূর্ণ আত্মবিশ্বাসী যে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যারাই আসুক, সম্পর্কের বিষয়ে তাদের ভারসাম্যগত ও পরিপক্ক দৃষ্টিভঙ্গি থাকবে এবং আশা করছি যে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।’
শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়ে গত ২৩ নভেম্বর ভারতকে কূটনৈতিকপত্র পাঠায় সরকার। তার তিন দিন পর দিল্লি চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করে। তবে শেখ হাসিনা ও কামালকে ফেরত দেয়া হবে কিনা সে বিষয়ে ভারত এখনও কিছু জানায়নি। তার আগেও বিচারের জন্য শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়ে চিঠি দেয়া হয়েছিল। কিন্তু ভারত সেই চিঠিতে সাড়া দেয়নি।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দিল্লিতে বসে বাংলাদেশকে ‘অস্থিতিশীল’ করার প্রচেষ্টার অভিযোগ এনেছে ইউনূস সরকার। অন্যদিকে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ‘নিরাপত্তার’ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে এক্ষেত্রে পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানিয়েছে ভারত সরকার। পাশাপাশি ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা ও অপতথ্য’ এবং ‘অতিরঞ্জিত প্রচারণার’ অভিযোগ বাংলাদেশ সরকার করেছে। বিভিন্ন বিষয়ে পাল্টাপাল্টি বিবৃতি দেয়ার পাশাপাশি সীমান্তের বিষয়ে এবং দিল্লি থেকে দেয়া শেখ হাসিনার বক্তব্য ঘিরে পাল্টাপাল্টি কূটনীতিক ‘তলবের’ ঘটনাও ঘটেছে।
সর্বশেষ দিল্লি থেকে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দেয়া থেকে শেখ হাসিনাকে রাখার আহ্বান জানাতে গত ১২ নভেম্বর ঢাকায় ভারতের উপ-হাইকমিশনারকে ‘তলব’ করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫
জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে থাকার বিষয়টি তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত মন্তব্য করে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্কর বলেছেন, সেই সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে প্রভাব রয়েছে তিনি যে ‘পরিস্থিতিতে’ ভারতে আসতে বাধ্য হয়েছেন।
রক্তক্ষয়ী গণঅভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা এবং এখনও সেখানেই আছেন তিনি। ছাত্রদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠে আন্দোালন দমানোর চেষ্টায় ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের’ অভিযোগে গত মাসে ৭৮ বছর বয়সী সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে তার অনুপস্থিতিতেই মৃত্যুদ- দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এরপর তাকে ফেরত চেয়ে ভারতে চিঠিও দিয়েছে ঢাকা।
হিন্দুস্তান টাইমস লিডারশিপ সামিটে এনডিটিভির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রধান সম্পাদক রাহুল কানওয়ালের সঙ্গে আলাপচারিতায় জয়শঙ্করের কাছে জানতে চাওয়া হয়, শেখ হাসিনা ‘যতদিন চান ততদিনই ভারতে থাকতে পারবেন কিনা’?
জবাবে জয়শঙ্কর বলেন, ‘এটা একটা ভিন্ন বিষয়, তাই না? তিনি একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে এখানে এসেছেন। তাকে ঘিরে যা ঘটছে তাতে সেই পরিস্থিতির স্পষ্ট প্রভাব রয়েছে বলে আমি মনে করি। কিন্তু তারপরও, এটা এমন এক বিষয়ে যে বিষয়ে সিদ্ধান্ত তাকেই নিতে হবে,’ বলেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
নয়া দিল্লি ও ঢাকার মধ্যে সম্পর্কের প্রসঙ্গ টেনে প্রতিবেশী দেশে বিশ্বাসযোগ্য গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে ভারতের অবস্থানের ওপর জোর দেন তিনি।
বাংলাদেশের অতীত রাজনৈতিক পরিস্থিতির দিকে ইঙ্গিত করে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যা শুনেছি, বাংলাদেশের মানুষ, বিশেষ করে যারা এখন ক্ষমতায় আছেন, তাদের আগের নির্বাচনগুলো যেভাবে হয়েছে তা নিয়ে অসন্তোষ ছিল। এখন নির্বাচনই যদি ইস্যু হয়ে থাকে, তাহলে প্রথম কাজই হওয়া উচিত একটি ন্যায়সঙ্গত নির্বাচন।’ ভবিষ্যৎ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে এ প্রসঙ্গের ইতি টানেন তিনি।
প্রতিবেশী দেশে গণতান্ত্রিক অগ্রাধিকারের পক্ষে ভারতের অবস্থান তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমাদের দিক থেকে, আমরা বাংলাদেশের মঙ্গল কামনা করি। একটি গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে আমরা মনে করি, যে কোনো গণতান্ত্রিক দেশ জনতার ইচ্ছা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জানার চেষ্টা করতে পছন্দ করে। আমি সম্পূর্ণ আত্মবিশ্বাসী যে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যারাই আসুক, সম্পর্কের বিষয়ে তাদের ভারসাম্যগত ও পরিপক্ক দৃষ্টিভঙ্গি থাকবে এবং আশা করছি যে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।’
শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়ে গত ২৩ নভেম্বর ভারতকে কূটনৈতিকপত্র পাঠায় সরকার। তার তিন দিন পর দিল্লি চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করে। তবে শেখ হাসিনা ও কামালকে ফেরত দেয়া হবে কিনা সে বিষয়ে ভারত এখনও কিছু জানায়নি। তার আগেও বিচারের জন্য শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়ে চিঠি দেয়া হয়েছিল। কিন্তু ভারত সেই চিঠিতে সাড়া দেয়নি।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দিল্লিতে বসে বাংলাদেশকে ‘অস্থিতিশীল’ করার প্রচেষ্টার অভিযোগ এনেছে ইউনূস সরকার। অন্যদিকে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ‘নিরাপত্তার’ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে এক্ষেত্রে পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানিয়েছে ভারত সরকার। পাশাপাশি ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা ও অপতথ্য’ এবং ‘অতিরঞ্জিত প্রচারণার’ অভিযোগ বাংলাদেশ সরকার করেছে। বিভিন্ন বিষয়ে পাল্টাপাল্টি বিবৃতি দেয়ার পাশাপাশি সীমান্তের বিষয়ে এবং দিল্লি থেকে দেয়া শেখ হাসিনার বক্তব্য ঘিরে পাল্টাপাল্টি কূটনীতিক ‘তলবের’ ঘটনাও ঘটেছে।
সর্বশেষ দিল্লি থেকে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দেয়া থেকে শেখ হাসিনাকে রাখার আহ্বান জানাতে গত ১২ নভেম্বর ঢাকায় ভারতের উপ-হাইকমিশনারকে ‘তলব’ করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।