আওয়ামী লীগ শাসনে জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেলে (জেআইসি) গুম-নির্যাতনে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক ও বর্তমান সেনা কর্মকর্তাসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের আবেদন করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন। রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবীসহ আসামিপক্ষের শুনানির জন্য আগামীকাল দিন ঠিক করা হয়েছে। রোববার, (০৭ ডিসেম্বর ২০২৫) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ এ তারিখ ঠিক করে দেয়। বেঞ্চের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন প্রধান কৌঁসুলি মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তিন সেনা কর্মকর্তার পক্ষে উপস্থিত ছিলেন আজিজুর রহমান দুলু। সেনানিবাসের বিশেষ কারাগারে থাকা তিন সেনা কর্মকর্তাকে এদিন আদালতে হাজির করা হয়।
শুনানিতে প্রধান কৌঁসুলি জেআইসিতে লোকজনকে তুলে নিয়ে গুম ও নির্যাতনের বিভিন্ন ঘটনার বিবরণ দেন। আওয়ামী লীগ সরকারের শাসন আমলে ২০১৫ সালের ২২ অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত গুম হওয়া ২৬ জনের তথ্য তিনি উপস্থাপন করেন, এসব ঘটনায় পাঁচটি অভিযোগ তুলে এ মামলায় ১৩ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আবেদন করেন।
প্রধান কৌঁসুলির শুনানি শেষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী এবং গ্রেপ্তার তিন সেনা কর্মকর্তার আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু সময় প্রার্থনা করলে আগামীকালকের দিন রাখা হয়। এ মামলায় ১৩ আসামির মধ্যে তিন সেনা কর্মকর্তা গ্রেপ্তার রয়েছেন। রোববার, সকালে ঢাকার সেনানিবাসের বিশেষ কারাগার থেকে কড়া নিরাপত্তায় তাদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করে পুলিশ। তারা হলেন, ডিজিএফআইয়ের সাবেক পরিচালক (সিটিআইবি) মেজর জেনারেল শেখ মো. সারওয়ার হোসেন, ডিজিএফআইয়ের সাবেক পরিচালক (সিটিআইবি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান সিদ্দিক ও ডিজিএফআইয়ের সাবেক পরিচালক (সিটিআইবি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভীর মাজাহার সিদ্দিক।
জেনারেল (অব) মো. সাইফুল আলম, সাবেক ডিজি লে., শেখ হাসিনা এবং ৯ সেনা কর্মকর্তা পলাতক আছেন। পলাতক অন্যরা হলেন শেখ হাসিনার প্রতিরক্ষাবিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল তারিক আহমেদ সিদ্দিক, ডিজিএফআইয়ের সাবেক ডিজি অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোহাম্মদ আকবর হোসেন, সাবেক ডিজি অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল সাইফুল আবেদিন, লেফটেন্যান্ট জেনারেল তাবরেজ শামস চৌধুরী, সাবেক ডিজি অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল হামিদুল হক, মেজর জেনারেল তৌহিদুল ইসলাম, মেজর জেনারেল কবির আহাম্মদ ও অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল মখসুরুল হক। গত ২৩ নভেম্বর পলাতকদের পক্ষে স্টেট ডিফেন্স নিয়োগ দেয় ট্রাইব্যুনাল। ওইদিন স্বেচ্ছায় লড়তে চাইলে শেখ হাসিনার আইনজীবী হন জ্যেষ্ঠ অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতা দেখিয়ে গত ৩ ডিসেম্বর তিনি সরে দাঁড়ান। এরপর মো. আমির হোসেনকে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী করা হয়। গত ২২ অক্টোবর সেনা হেফাজতে থাকা এ মামলার তিন সেনা কর্মকর্তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। পরে তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে পলাতক আসামিদের হাজিরের জন্য দুটি জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেয়া হয়। গত ৮ অক্টোবর এ মামলায় ১৩ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। পরে অভিযোগ আমলে নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে ট্রাইব্যুনাল।