রায়ের বাজার স্মৃতিসৌধের কাছে দাফন করা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের লাশ শনাক্তের কাজ আন্তর্জাতিক প্রটোকল মেনে করা হবে বলে জানিয়েছেন সিআইডি প্রধান ছিবগাত উল্লাহ। সেখানে ১১৪ জনের মতো জুলাই শহীদকে দাফন করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেছেন, ‘শনাক্ত প্রক্রিয়াটি একটু সময় সাপেক্ষ।’
রোববার, (০৭ ডিসেম্বর ২০২৫) সকালে রায়ের বাজার কবরস্থানে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শাহাদাতবরণকারী অজ্ঞাত শহীদদের লাশ উত্তোলনপূর্বক শনাক্তকরণ কার্যক্রম’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। দেহাবশেষ কবর থেকে তুলে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহের জন্য রায়ের বাজার কবরস্থানেই একটি অস্থায়ী ফরেনসিক ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই লাশ উত্তোলনের কাজ শুরু হয়েছে।
ছিবগাত উল্লাহ বলেন, ‘আন্তর্জাতিক প্রটোকল অনুযায়ী এই মরদেহগুলো এখান থেকে উত্তোলন করা হবে। এরপর সেগুলোর ডিএনএ পরীক্ষা সম্পন্ন করা হবে। ‘স্বজনরা চাইলে মরদেহগুলো তাদের হস্তান্তর করা হবে, যাতে তারা কবরস্থ করতে পারেন অথবা পরীক্ষার পর মরদেহগুলো যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে দাফন করা হবে।’
সিআইডি প্রধান বলেন, কোনো দেশে এ ধরনের ‘গণহত্যার’ ক্ষেত্রে তদন্ত ও লাশ শনাক্তের জন্য ‘মিনেসোটা প্রটোকল’ অনুসরণ করা হয়। সেই অনুযায়ী এই লাশ শনাক্ত ও তদন্ত কাজ সম্পন্ন করা হবে। ‘এ প্রক্রিয়াটি সময় সাপেক্ষ। তাই কবে নাগাদ শেষ হবে সেটা বলা যাচ্ছে না।’
রাষ্ট্রের মাধ্যমে বেআইনি মৃত্যুর ফরেনসিক তদন্তের জাতিসংঘের নির্দেশিকা হচ্ছে এই ‘মিনেসোটা প্রটোকল’। সংবাদ সম্মেলনে শহীদ পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি ছিলেন আর্জেন্টিনার ফরেনসিক অ্যানথ্রোপোলজিস্ট লুইস ফনডিব্রাইডার।
ছিবগাত উল্লাহ বলেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার (ওএইচসিএইচআর) মাধ্যমে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ লুইস আর্জেন্টিনা থেকে ঢাকায় এসে পুরো কার্যক্রমে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি গত ৪০ বছরে ৬৫টি দেশে একই ধরনের অপারেশন পরিচালনা করেছেন।
সিআইডি প্রধান ছিবগাত বলেন, মিনেসোটা প্রটোকল অনুসরণ করে লাশ উত্তোলন, পোস্টমর্টেম, ডিএনএ নমুনা সংগ্রহসহ প্রতিটি ধাপ সম্পন্ন হবে। ‘সিটি করপোরেশন, ঢাকা মেডিকেল, ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ, ডিএমপি, বিভাগীয় কমিশনারসহ সব স্টেকহোল্ডারকে আমরা প্রশিক্ষণ দিয়েছি।’
লাশ উত্তোলন থেকে পুনঃদাফন পর্যন্ত নির্দিষ্ট ধাপে সব কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আবেদন অনুযায়ী প্রাথমিকভাবে ১১৪টি কবর চিহ্নিত হয়েছে, যা বাস্তবে কমবেশি হতে পারে। মৃতদেহ উত্তোলনের পর পোস্টমর্টেম, বোন স্যাম্পল/টিস্যু সংগ্রহ, ডিএনএ প্রোফাইল তৈরি করা হবে। পরিচয় নিশ্চিত হলে ধর্মীয় সম্মান বজায় রেখে আবার পুনঃদাফন করা হবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে ছিবগাত উল্লাহ বলেন, ‘পরিচয় শনাক্তের পর কেউ যদি লাশ গ্রহণ করতে চান, তাহলে গ্রহণ করতে পারবেন।’ আবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত ১০ জন স্বজন আবেদন করেছেন, আরও কেউ থাকলে সিআইডিতে যোগাযোগ করতে পারবেন। সিআইডির হটলাইনে যোগাযোগ করলে স্বজনদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হবে।
সিআইডি প্রধান ছিবগাত বলেন, ‘আমরা জানি না কোন কবরে কে আছেন। তাই সময় কত লাগবে বলা সম্ভব নয়। ‘তবে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এই প্রক্রিয়ায় সব শহীদের পরিচয় আমরা বের করতে পারবো।’ এ প্রক্রিয়া চলাকালীন দেহাবশেষের ছবি না তুলতে সংবাদ কর্মীদের অনুরোধ জানান তিনি।
জুলাই আন্দোলনে নিহত শতাধিক শহীদকে ১ রায়ের বাজার কবরস্থানে দাফন করা হয়। যে জায়গায় তাদের দাফন করা হয়েছে, সিটি করপোরেশনের তরফে সে জায়গাটি মার্বেল পাথর, টাইলস দিয়ে ঘিরে দেয়া হয়েছে। গত ২ আগস্ট রায়েরবাজার কবরস্থান পরিদর্শনে গিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী নিহতদের পরিচয় শনাক্তে সরকারের উদ্যোগ নেয়ার কথা বলেছিলেন।
সেদিন তিনি বলেছিলেন, ‘দাফন করা অনেককেই শনাক্ত করা যায়নি। কীভাবে শনাক্ত করা যায় সে ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা আছে। এতদিন কবর থেকে মরদেহ উঠানো হোক এটা রাজি হয়নি অনেকেই। এখন মোটামুটি সবাই রাজি হয়েছে। ‘সবাই রাজি হলে শনাক্ত করবো ডিএনএ’র মাধ্যমে। কেউ যদি তাদের গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যেতে চায় ওটাও আমরা অনুমতি দেব।’