গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৪৫৫ জন হাসপাতালে, মৃত্যু ২ জন
গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৪৫৫ জন হাসপাতালে, মৃত্যু ২ জন
ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও ৪৫৫ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সোমবার, (০৮ ডিসেম্বর ২০২৫) পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৯৮ হাজার ২৮৪ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তার মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৩৯৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তিকৃতদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ৫৭ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৫১ জন, ঢাকা বিভাগে ৫৩ জন, ঢাকা উত্তরে ১০৬ জন, ঢাকা দক্ষিণে ৫৫ জন, খুলনা বিভাগে ৪৪ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৩২ জন, রাজশাহী বিভাগে ৪৮ জন, রংপুর বিভাগে ৩ জন ও সিলেট বিভাগে ৬ জন ভর্তি হয়েছে। নিহত ২ জন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায়।
বয়স অনুযায়ী হাসপাতালে ভর্তিকৃতদের মধ্যে ৫ বছর বয়সের ২৮ শিশু, ৬-১০ বছর বয়সের ২০ জন, ১১-১৫ বছর বয়সের ২২ জন, ১৬-২০ বছর বয়সের ৪৮ জন, ২১-২৫ বছর বয়সের ৬৫ জন, ২৬-৩০ বছর বয়সের ৭৫ জন, ৩১-৩৫ বছর বয়সের ৫১ জন, ৩৬-৪০ বছর বয়সের ৩৪ জন, ৪১-৪৫ বছর বয়সের ৩০ জন, ৭১-৭৫ বছর বয়সের ৩ জন, ৭৬-৮০ বছর বয়সের ৫ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এ নিয়ে এখনও হাসপাতালে ভর্তি আছে ১ হাজার ৬শ’ ৫৪ জন।
কীটতত্ত্ব বিশেষজ্ঞদের মতে, মশা পৃথিবীর ভয়ংকর প্রাণীদের মধ্যে অন্যতম। ছোট এ প্রাণীটি সবচেয়ে বেশি মানুষের প্রাণ নিয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এক সতর্কবার্তা জারি করেছেন যে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পৃথিবীর অনেক মানুষ ডেঙ্গু ঝুঁকিতে আছে। বাংলাদেশেও এর প্রভাব পড়েছে।
মশার ঘনত্ব ও প্রজাতির বৈচিত্র্য বেশি থাকার কারণে মশাবাহিত রোগের ঝুঁকিও অনেক বেশি বাংলাদেশে। বিজ্ঞানীদের গবেষণা অনুযায়ী বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ১২৬ প্রজাতির মশা শনাক্ত করা হয়েছে। তার মধ্যে বর্তমানে ঢাকায় আছে ১৪-১৬ প্রজাতির মশা।
বাংলাদেশে মশাবাহিত রোগগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো- ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, ম্যালেরিয়া, ফাইলেরিয়া ও জাপানিজ অ্যানসেফালাইটিস ।
ঢাকায় প্রথম ডেঙ্গু দেখা দেয় ১৯৬৩ সালে। তখন এটিকে ঢাকা ফিভার হিসেবেও চিহ্নিত করা বা নাম দেয়া হয়েছিল। এরপর ডেঙ্গুর প্রথম আউটব্রেইক হয় ২০০০ সালে। তখন বিজ্ঞানীরা একে ডেঙ্গু ফিভার হিসেবে চিহ্নিত করেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ অনেকটা সময় মৃদু থাকে, ফলে অনেকেই হাসপাতালে না গিয়ে ঘরেই চিকিৎসা নেয়। এ অনুপস্থিতির ডাটা অনেক সময় বাস্তব পরিস্থিতি গভীরতা বুঝতে বাধা সৃষ্টি করে।
২০০৮ সালে বাংলাদেশে প্রথম চিকুনগুনিয়া ধরা পড়ে। যা ডেঙ্গুর মতো একটি রোগ। এই রোগটি চিকুনগুনিয়া ভাইরাস বহনকারী এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায়। ২০১১-২০১৭ সাল পর্যন্ত প্রায় প্রতি বছর বাংলাদেশে চিকুনগুনিয়া শনাক্ত হয়। ঢাকায় সবচেয়ে বেশি চিকুনগুনিয়া শনাক্ত হয় ২০১৬-১৭ সালে।
ঢাকা ও চট্টগ্রামে সম্প্রতি চিকুনগুনিয়ার পরিস্থিতি জনস্বাস্থ্যের জন্য গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, মশাবাহিত রোগ থেকে মানুষের জীবন বাঁচানো, জনদুর্ভোগ ও আর্থিক ক্ষতি ঠেকাতে টেকসই পরিকল্পনা ও তার বাস্তবতা দরকার। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর মতো মশাবাহিত রোগ নিয়ে গবেষণা ও নিয়ন্ত্রণে জাতীয় প্রতিষ্ঠান দরকার। সেই প্রতিষ্ঠানে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, কীটতত্ত্ববিদ, গবেষক, অন্যান্য অংশিজনের সম্মিলিত প্রয়াস ঘটাতে পারলে মশাবাহিত রোগ থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করা সম্ভব বলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ কবিরুল বাশার তার এক প্রতিবেদনে মন্তব্য করেছেন।