image
যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন দুই উপদেষ্টা। তারপর মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদের সঙ্গে ছবি তুলেছেন মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি তাদের কিছু উপদেশও দেন

পদত্যাগ করলেন আসিফ ও মাহফুজ, তফসিল ঘোষণা হলেই কার্যকর

এটি একটি রূপান্তরমাত্র; আশা করি আগামীতে তোমরা আরও বড় অবদান রাখবে: প্রধান উপদেষ্টা

বুধবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৫
সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

সংসদ নির্বাচনে তফসিল ঘোষণার আগে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ থেকে পদত্যাগ করেছেন দুই উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও মাহফুজ আলম। বুধবার,(১০ ডিসেম্বর ২০২৫) বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে তারা পদত্যাগপত্র জমা দেন।

সন্ধ্যায় যমুনায় সংবাদ সম্মেলন করে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘বিকেল ৫টায় যমুনায় পদত্যাগপত্র জমা দেন দুই উপদেষ্টা। নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে তাদের পদত্যাগ কার্যকর হবে।’

আজ সন্ধ্যা ৬টায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণা করবেন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সম্মুখসারিতে থেকে নেতৃত্ব দেয়া এই দুই ছাত্রনেতার পদত্যাগপত্র গ্রহণের পর প্রধান উপদেষ্টা তাদের ভবিষ্যৎ জীবনের মঙ্গল কামনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়ে তোমরা যেভাবে জাতিকে ফ্যাসিবাদী শাসন থেকে মুক্তির পথে অবদান রেখেছ, তা জাতি মনে রাখবে। আমি বিশ্বাস করি, ভবিষ্যতেও গণতান্ত্রিক উত্তরণ ও বিকাশে তোমরা একইভাবে সক্রিয় ভূমিকা রাখবে।’

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘আজ (বুধবার) একটি ঐতিহাসিক দিন। অন্তর্বর্তী সরকার সব সময় তোমাদের অবদান স্মরণ করবে। আমি তোমাদের সুন্দর ও শুভ ভবিষ্যৎ কামনা করি। এত অল্প সময়ে তোমরা জাতিকে যা দিয়েছ, তা জাতি কখনো ভুলবে না। এটি একটি রূপান্তরমাত্র। আমি আশা করি, আগামীতে বৃহত্তর পরিমণ্ডলে তোমরা আরও বড় অবদান রাখবে।’ নিজেদের কর্মের মাধ্যমে দেশের মঙ্গলে নিয়োজিত থাকার আহ্বান জানিয়ে দুই ছাত্রনেতার উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘সরকারে থেকে যে অভিজ্ঞতা তোমরা অর্জন করেছ, তা ভবিষ্যৎ জীবনে অবশ্যই কাজে লাগাতে হবে।’

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় (এলজিআরডি) মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন আসিফ মাহমুদ। আর মাহফুজ আলম ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা।

তাদের পদত্যাগের গুঞ্জনের মধ্যেই বুধবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে আসেন আসিফ মাহমুদ। সেখানে তিনি তার সময়ে মন্ত্রণালয়ের কর্মকাণ্ডের বিস্তারিত তুলে ধরেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি আগেই বলেছি, আমার নির্বাচন করার ইচ্ছে আছে। তবে কোন আসন থেকে করবো, সেটা এখনও ঠিক করিনি।’ পদত্যাগ করেছেন কিনা কিংবা পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন কিনা, এমন প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কোনো কিছু বলার অনুমতি নেই। এটা মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে আপনাদের জানিয়ে দেয়া হবে।’

শিক্ষার্থী-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া ছাত্রদের প্রতিনিধি হিসেবে তিনজন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে জায়গা পান।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম পান তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দায়িত্ব। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি উপদেষ্টা পরিষদ থেকে পদত্যাগ করে বৈষম্যবিরোধীদের নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) হাল ধরেন; দায়িত্ব নেন দলের আহ্বায়ক হিসেবে।

আসিফ মাহমুদ প্রথমে শ্রম মন্ত্রণালয় পেলেও পরে পরিবর্তন করে তাকে এলজিআরডি এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় দেয়া হয়। মাহফুজ আলম প্রথমে সচিব পদমর্যাদায় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারীর দায়িত্ব পান। গত বছরের ১০ নভেম্বর তিনি উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন। তবে সে সময় তাকে কোনো মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়নি। নাহিদ ইসলামের পতদ্যাগের পর তাকে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিজ হাতে রেখে দেন প্রধান উপদেষ্টা।

কুমিল্লার ছেলে আসিফ মাহমুদ ঢাকায় সংসদ নির্বাচন করতে কুমিল্লা থেকে ভোটার এলাকা কিছুদিন আগে ঢাকা-১০ আসনে স্থানান্তর করেছেন। বিএনপি প্রথমে এই আসনটি খালি রাখায় আসিফ মাহমুদের বিএনপি থেকে মনোনয়ন নেয়ার গুঞ্জন ওঠে। পরে বিএনপি থেকে এই আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়।

এদিকে মাহফুজ আলম লক্ষ্মীপুর-১ আসনের ভোটার। তিনি বিএনপির প্রার্থী হতে পারেন বলে গুঞ্জন শোনা গেলেও সেখানে এখন অন্য প্রার্থী দিচ্ছে বিএনপি।

বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদকে গত সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে পদত্যাগের পরামর্শ দেয়া হয়েছিল অন্তর্বর্তী সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে। কিন্তু তারা আরও সময় চান। এর মধ্যে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম সরকারের শেষ সময় পর্যন্ত থাকার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন।

উপদেষ্টা পরিষদের অনেকে এ ব্যাপারে একমত ছিলেন যে তফসিল ঘোষণার পর দুই ছাত্র উপদেষ্টার সরকারে থাকা উচিত হবে না। শেষ পর্যন্ত সরকারের অবস্থান মেনে নিয়ে তফসিল ঘোষণার আগে আগে পদত্যাগ করলেন তারা।

অন্তর্বর্তী সরকারে দায়িত্ব পালন করায় আসিফ মাহমুদ ও মাহফুজ আলম এতদিন এনসিপিতে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দেনিনি। তবে বৈষম্যবিরোধীদের নেতৃত্বে গড়া এই দলটিতে তাদের ‘প্রভাব রয়েছে’।

এনসিপি, এবি পার্টি ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন মিলে গত রোববার একটি নতুন জোট গঠনের ঘোষণা দিয়েছে। এনসিপি বুধবার ১২৫ আসনে আসনে দলীয় প্রার্থী তালিকাও ঘোষণা করেছে। তবে ঢাকা-১০ কিংবা লক্ষ্মীপুর আসনে এখনও কাউকে মনোনয়ন দেয়নি দলটি।

‘জাতীয়’ : আরও খবর

» পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশের গেজেট প্রকাশ

সম্প্রতি