রাজশাহীর তানোরে ৮ ইঞ্চি ব্যাসাধ্যের সরু গর্ত দিয়ে মাটির গভীরে চলে যাওয়া শিশু সাজিদকে উদ্ধার করা হয়েছে। দীর্ঘ ২৭ ঘন্টার রুদ্ধশ্বাস অভিযান শেষ পর্যন্ত সফল হয়েছে।
আজ রাত ৯টার দিকে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারের পর শিশুটিকে হাসপাতালের দিকে নিয়ে যাওয়া হয় বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স বিভাগের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী।
গতকাল বুধবার উপজেলার কোয়েলহাট পূর্বপাড়া গ্রামে গভীর নলকূপের জন্য খনন করা ওই গর্তে পড়ে যায় সাজিদ। এরপর বেলা ২টা ৫ মিনিটে ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারী দল উদ্ধার অভিযান শুরু করে। অভিযানে একে একে যোগ দেয় আটটি ইউনিট।
আগের খবর
অভিযানের ২৭ ঘণ্টা পর আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন ফায়ার সার্ভিসের অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স বিভাগের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী।
তিনি বলেন, তাঁরা ক্যামেরা নামিয়ে দেখেছি ৩০ ফুটের পর মাটি ও খড় জমে গেছে। তাঁরা আসার আগেই স্থানীয়রা বাচ্চাটিকে উদ্ধারের চেষ্টা করেন। তখন এসব ঢুকে যায়। তাঁরা ধারণা করেছিলেন, ৩০ ফুটের পর শিশুটিকে পাওয়া যাবে। কিন্তু ৪২ ফুট পর্যন্ত মাটি খনন করে গিয়েও পাওয়া যায়নি।
শিশুটির বেঁচে থাকার সম্ভাবনা আছে কি না, জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আপনারা যা ধারণা করছেন, আমরাও সেটিই ধারণা করছি। এখন অলমাইটি আল্লাহ চাইলে সবকিছুই হতে পারে।’
লেফটেন্যান্ট কর্নেল তাজুল ইসলাম চৌধুরী জানান, তাঁরা জেনেছেন যে গর্তটি ৯০ ফুট গভীর করে খনন করা হয়েছিল। তাঁরা সে পর্যন্তই যেতে চান। এ জন্য ওই গর্তের পাশে তিনটি এক্সকাভেটর দিয়ে খনন করা হচ্ছে। তাঁরা ১০ ফুট পরপর সুড়ঙ্গ কেটে গর্তটি দেখবেন। এ ছাড়া ম্যানুয়াল পদ্ধতিতেও তাঁরা চেষ্টা করবেন। উদ্ধার না হওয়া অভিযান চলমান থাকবে বলেও জানান তিনি।
ঘটনাস্থলে বিপুলসংখ্যক মানুষ উৎকন্ঠা নিয়ে অপেক্ষা করছেন। শিশুটির নাম সাজিদ। তার বাবার নাম রাকিবুল ইসলাম। কোয়েলহাট পূর্বপাড়া গ্রামেই তার বাড়ি। স্থানীয় লোকজন জানান, গ্রামের পাশের এ জমিটির মালিক কছির উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি। এক বছর আগে কছির উদ্দিন তার জমিতে সেচের জন্য একটি সেমিডিপ নলকূপ বসানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু ৩৫ ফুট বোরিং করার পর সেখানে পানি পাননি। তাই নলকূপ বসানো হয়নি। একবছর ধরে ৮ ইঞ্চি ব্যাসার্ধের গর্তটি সেভাবেই পড়ে ছিল।
বুধবার দুপুরে শিশুটির মা ওই মাঠে ধানগাছের খড় নিতে যান। ওই সময় সাজিদ খেলতে গিয়ে গর্তে পড়ে মাটির ভেতরে ঢুকে যায়। স্থানীয়রা প্রথমে উদ্ধারের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে ফায়ার সার্ভিসে খবর দেন।
পরে ফায়ার সার্ভিসের তানোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহী সদর স্টেশনের মোট আটটি ইউনিট গিয়ে শিশুটিকে উদ্ধারের চেষ্টা শুরু করে। শিশুটিকে জীবিত রাখতে পাইপের মাধ্যমে অক্সিজেন দেয়া হচ্ছে।
কোয়েল হাট পূর্ব পাড়ার স্থানীয় বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন ও জালাল উদ্দীন বলেন, রাকিব উদ্দীন গ্রামের শেষ মাথায় কোয়েল হাট পূর্ব পাড়া ডাঙ্গা ফোরাটুপা পুকুর পাড়ে বসত বাড়ি। রাকিবের বাড়ির পাশে বেলা ১২টার দিকে জমি থেকে মাটি নিয়ে আসা একটি ট্রলি জমিতে পুতে যায়। রাকিব ও তার স্ত্রী রুনা খাতুনসহ তারদের ২ বছরের ছেলেকে নিয়ে মাটিতে পুতে যাওয়া ট্রলিকে দেখতে যায়। শিশু বাচ্চাটি তার মায়ের কোল থেকে নেমে জমির মধ্যে হাটছিলেন। এরি মধ্যে একই গ্রামের কছির উদ্দীনের গত বছরের পরিত্যক্ত গভীর নলকুপের গর্তে (বোরিং) মধ্যে পড়ে যায়। পড়ে গিয়ে মা মা করে ডাকছে। কিন্তু তার মা বাবা গর্তের মধ্যে থেকে শিশু বাচ্চাকে তুলতে পারছিলো না। অবশেষে ফাসার সার্ভিস অফিসে জানানো হয়। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরাসহ স্থানীয় লোকজন মাটি খুড়ে উদ্ধার কাজ চালাচ্ছে।
শিশু বাচ্চাটির মা রুনা খাতুন বলেন, মাটিতে পুতে যাওয়া ট্রলি দেখতে এসে আমার বাচ্চাটি আমার কোল থেকে নেমে যায়। গর্তে মধ্যে পড়ে গিয়ে আমার বাচ্চা মা মা করে জোরে জোরে কাঁদছে। আমি তাকে খুজছি কিন্তু দেখতে পাচ্ছিনা। অবেশেষে গর্তের মধ্যে থেকে কান্নার শব্দ শোনা যাচ্ছে। মা হয়ে দাঁড়িয়ে থেকেও আমার বুকের ধনকে গর্ত থেকে আমি তুলতে পারছিনা বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।