ফেব্রুয়ারিতে সংসদ নির্বাচন হয়ে গেলে নিজের পদ থেকে সরে যেতে চান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। তিনি বলেছেন, সাংবিধানিক দায়িত্বের কারণে তিনি এখনও এ পদে আছেন।
সাক্ষাৎকারে আরো যা বললেন
প্রায় সাত মাস হলো তার সঙ্গে ‘সাক্ষাৎ করেননি’ প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস
বিভিন্ন দেশের দূতাবাস থেকে নিজের ছবি সরিয়ে ফেলার কথাও বলেন রাষ্ট্রপতি
‘কণ্ঠরোধ’ করা হয়েছে, ‘কেড়ে নেয়া হয়েছে’ প্রেস ডিপার্টমেন্ট
তবে তিনি মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারে থাকতে অপমান বোধ করছেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্স বৃহস্পতিবার, (১১ ডিসেম্বর ২০২৫) হোয়াটসঅ্যাপে রাষ্ট্রপতির সাক্ষাৎকার নিয়েছে। সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেছেন।
রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিন বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক। এর বাইরে পদটি মূলত আনুষ্ঠানিক। দেশের কার্যনির্বাহী ক্ষমতা থাকে প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার হাতে।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লিতে চলে যাওয়ার পর সাহাবুদ্দিনের অবস্থান গুরুত্ব পায়। সংসদ ভেঙে দেয়ার পর সাহাবুদ্দিনই ছিলেন দেশের শেষ সাংবিধানিক কর্তৃপক্ষ।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ২০২৩ সালের ২৪ এপ্রিল পাঁচ বছরের জন্য রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন ৭৫ বছর বয়সী সাহাবুদ্দিন।
বঙ্গভবন থেকে হোয়াটসঅ্যাপে দেয়া সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন রয়টার্সকে বলেন, ‘আমি বিদায় নিতে আগ্রহী। আমি এখান থেকে চলে যেতে চাই। নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত আমাকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। সাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব রয়েছে বলেই আমি এ অবস্থানে আছি।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, প্রায় সাত মাস হলো প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস তার সঙ্গে কোনো ধরনের সাক্ষাৎ করেননি; তার প্রেস ডিপার্টমেন্ট কেড়ে নেয়া হয়েছে। বিভিন্ন দেশের দূতাবাস থেকে নিজের ছবি সরিয়ে ফেলার কথাও বলেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘সব কনস্যুলেট, দূতাবাস ও হাই কমিশনে রাষ্ট্রপতির ছবি ছিল। এগুলো হঠাৎ করে এক রাতের মধ্যে সরিয়ে ফেলা হয়। এতে মানুষের কাছে ভুল বার্তা যায়। মানুষজন ভাবতে পারে, রাষ্ট্রপতিকে হয়তো সরিয়ে দেয়া হচ্ছে। আমি খুব অপমানিত বোধ করেছি।’
সাহাবুদ্দিনের ভাষ্য, তিনি ছবি সরিয়ে ফেলার বিষয়ে মুহাম্মদ ইউনূসকে চিঠি লিখেছিলেন, কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
প্রতিবেদনে রয়টার্স লিখেছে, রাষ্ট্রপতির এমন মন্তব্যের বিষয়ে তারা প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস অফিসের কাছে বক্তব্য জানতে চেয়েছিল, কিন্তু তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া পায়নি।
রয়টার্সকে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন বলেন, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গে তার নিয়মিত যোগাযোগ আছে। এই সেনাপ্রধানের আমলে সেনাবাহিনী ২০২৪ সালের আগস্টে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বিক্ষোভের এক পর্যায়ে শিক্ষার্থী-জনতার পাশে দাঁড়িয়েছিল।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ওয়াকার-উজ-জামান স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে ক্ষমতা দখলের তার কোনো ইচ্ছা নেই। বাংলাদেশের সামরিক শাসনের ইতিহাস রয়েছে, কিন্তু জামান বলেছেন যে তিনি গণতন্ত্র ফিরে পেতে চান।
মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, যদিও কিছু ছাত্র-বিক্ষোভকারী প্রাথমিকভাবে তাকে (সেনাপ্রধান) পদত্যাগ করার দাবি জানিয়েছিল, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে কোনো রাজনৈতিক দল তাকে তা করতে বলেনি।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘জনমত জরিপে দেখা গেছে যে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং কট্টরপন্থি জামায়াতে ইসলামী পরবর্তী সরকার গঠনের জন্য এগিয়ে থাকবে। তারা ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত শাসন করা একটি জোটের অংশ ছিল।’
এতে আরও বলা হয়, ‘২০ বছর ধরে শাসন করা হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর তার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিলেন কিনা, রয়টার্সের এমন প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন উত্তর দিতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর থেকে তিনি স্বাধীন ছিলেন, কোনো দলের সঙ্গে যুক্ত নন।’
মো. আবদুল হামিদের উত্তরসূরি মো. সাহাবুদ্দিন বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি, যিনি চুপ্পু নামেই বেশি পরিচিত।
ছাত্রজীবনে পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ও সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন সাহাবুদ্দিন। পরে পাবনা যুবলীগের সভাপতির দায়িত্ব পান। ১৯৭১ সালে পাবনা জেলার স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ছিলেন তিনি, মুক্তিযুদ্ধেও সক্রিয়ভাবে অংশ নেন।
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর তার দল আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকে গ্রেপ্তার করে সে সময়ের ক্ষমতা দখলকারীরা। সাহাবুদ্দিনকেও তখন কারাবরণ করতে হয়।
পেশায় আইনজীবী মো. সাহাবুদ্দিন ১৯৮২ সালে বিসিএস (বিচার) ক্যাডারে যোগ দেন। বিচারকের বিভিন্ন পদে চাকরি শেষে ২০০৬ সালে জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে অবসর নেন।
২০০১ সালের বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী এবং সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ওপর হামলার অভিযোগ তদন্তে যে কমিশন হয়েছিল, সাহাবুদ্দিন ছিলেন তার প্রধান।
জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক এই মহাসচিব বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় আইন মন্ত্রণালয়ের নিযুক্ত করা সমন্বয়কারী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
তিনি ২০১১-২০১৬ সাল দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মনোনীত হন। আওয়ামী লীগের সর্বশেষ জাতীয় কাউন্সিলে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেন।