রাজধানীর গুলশানে ‘ক্ষমতার অপব্যবহার’ করে একটি প্লট ‘অবৈধভাবে হস্তান্তরের ব্যবস্থা’ করিয়ে ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেডের কাছ থেকে ‘ঘুষ’ হিসেবে একটি ফ্ল্যাট নেয়ার অভিযোগে ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে মামলার অভিযোগপত্র অনুমোদন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বৃহস্পতিবার, (১১ ডিসেম্বর ২০২৫) দুদকের মহাপরিচালক আখতার হোসেন সাংবাদিকদের অভিযোগপত্র অনুমোদনের তথ্য দেন। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি ও যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির এমপি টিউলিপের বিরুদ্ধে গত ১৫ এপ্রিল দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলাটি করেন। তদন্ত শেষে এ মামলায় টিউলিপসহ রাজউকের সাবেক সহকারী আইন উপদেষ্টা শাহ মো. খসরুজ্জামান ও সরদার মোশাররফ হোসেনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দুদকের কমিশনে উপস্থাপন করা হলে তা অনুমোদন দেয়া হয়।
দুদকের এক কর্মকর্তা বলেছেন, শিগগির অভিযোগপত্র আদালতে উপস্থাপন করবেন তদন্ত কর্মকর্তা সংস্থার সহকারী পরিচালক এ কে এম মর্তুজা আলী সাগর। টিউলিপের বিরুদ্ধে এ মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, গুলশান ২ নম্বরে ওই প্লট হস্তান্তরে ব্রিটিশ এমপি ‘প্রভাব বিস্তার’ করেন এবং সেখানেই ‘ঘুষ’ হিসেবে ফ্ল্যাট নেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ‘অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র ও ক্ষমতার অপব্যবহারের’ মাধ্যমে ইস্টার্ন হাউজিং থেকে ঘুষ হিসেবে গুলশান ২ এর একটি ফ্ল্যাট টিউলিপ সিদ্দিককে দিতে সহায়তা করেন। তিনি (টিউলিপ) কোনো অর্থ পরিশোধ ছাড়াই ফ্ল্যাটটি গ্রহণ করেন এবং পরে সেটির খতিয়ান ও অনুমোদন পেতে ‘প্রভাব’ খাটান। তদন্তে পাওয়া তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে অভিযোগপত্রে বলা হয়, ‘গুলশানের সংশ্লিষ্ট প্লটটি গুরুতর অনিয়মের কারণে ইস্টার্ন হাউজিংয়ের পক্ষে হস্তান্তরযোগ্য ছিল না। তবুও শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে তার প্রভাব ব্যবহার করে টিউলিপ সিদ্দিক রাজউকের আইন উপদেষ্টা এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করেন। এর ফলে কোম্পানিটিকে আমমোক্তার অনুমোদন ও ফ্ল্যাট বিক্রির অনুমতি দেয়া হয়, বিনিময়েই টিউলিপ সিদ্দিকের কাছে ফ্ল্যাটটি হস্তান্তর করা হয়।’
এ ঘটনায় টিউলিপ সিদ্দিক ও সরদার মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে দ-বিধির ১৬১/১৬৫(ক)/ ৪৬৭/ ৪৬৮/৪৭১/১০৯ ধারার পাশাপাশি দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭-এর ৫(২) ধারায় অভিযোগপত্র দাখিলের অনুমোদন দিয়েছে কমিশন বলে জানান ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা। এদিকে মামলার আরেক আসামি শাহ মো. খসরুজ্জামান মামলাটি বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করলে আদালত এর বিরুদ্ধে তিন মাসের স্থগিতাদেশ দেয়। পরে আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত এতে ‘নো অর্ডার’ দেয়। ফলে এ আবেদন নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়া যাবে না বলে তুলে ধরেন আরেক কর্মকর্তা।