ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে আবার তলব করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা ভারতে প্রবেশ করে থাকলে তাঁদের গ্রেপ্তার করে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর আহ্বান জানানো হয়েছে।
রোববার সকালে হাইকমিশনারকে তলব করা হয় বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। এ সময় দিল্লিতে অবস্থানরত ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অব্যাহত উসকানিমূলক বক্তব্য নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের গভীর উদ্বেগের কথাও তাঁকে জানানো হয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়কালে বিভিন্ন ইস্যুতে এ নিয়ে অন্তত পঞ্চমবারের মতো প্রতিবেশী দেশের রাষ্ট্রদূতকে তলব করা হলো।
জুলাই অভ্যুত্থানের সমর্থক ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদিকে গত শুক্রবার ঢাকায় গুলি করে দুর্বৃত্তরা। হামলার পর থেকে তিনি সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। গুলিবর্ষণে জড়িতরা ভারতে পালিয়ে গেছে—এমন গুঞ্জন রয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ওসমান হাদির হত্যাচেষ্টার সঙ্গে জড়িত সন্দেহভাজনদের ভারতে পালিয়ে যাওয়া ঠেকাতে ভারতের সহযোগিতা কামনা করা হয়েছে। পাশাপাশি তাঁরা যদি ভারতীয় ভূখণ্ডে প্রবেশ করেও থাকে, সে ক্ষেত্রে তাঁদের তাৎক্ষণিক গ্রেপ্তার করে বাংলাদেশের কাছে প্রত্যর্পণের অনুরোধ জানানো হয়েছে।
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পর থেকেই বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কের মধ্যে টানাপোড়েন চলছে। গত বছরের ৫ আগস্ট গণ–অভ্যুত্থানের মুখে তিনি ভারতে আশ্রয় নেন। বাংলাদেশে একাধিক বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় টিকে থাকতে ভারত সরকারের সমর্থন ছিল—এমন অভিযোগ অভ্যুত্থানের পক্ষশক্তিগুলোর।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দিল্লিতে অবস্থান করে নিয়মিত বক্তব্য ও বিবৃতি দিয়ে যাচ্ছেন। সেসব বক্তব্য বন্ধ করার আহ্বান অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে একাধিকবার জানানো হলেও নয়াদিল্লির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
জুলাই আন্দোলন দমনে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের দায়ে গত ১৭ নভেম্বর বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার পর তাঁকে দেশে ফেরত পাঠাতে নয়াদিল্লিকে আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানায় অন্তর্বর্তী সরকার। তবে সে অনুরোধেও ভারতের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া আসেনি।
এরই মধ্যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণার পর শেখ হাসিনার বক্তব্য ও বিবৃতির সংখ্যা আরও বেড়ে যায়। এই প্রেক্ষাপটে আবারও ভারতের হাইকমিশনারকে তলব করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় ডেকে নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে উদ্বেগের বিষয়গুলো তুলে ধরেন পররাষ্ট্রসচিব আসাদ আলম সিয়াম।
হাইকমিশনারকে জানানো হয়, পলাতক শেখ হাসিনাকে উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে, যার মাধ্যমে তিনি তাঁর সমর্থকদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়াতে এবং আসন্ন নির্বাচন বানচালে প্ররোচিত করছেন। এ বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ সরকার গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।
এ ছাড়া কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের পলাতক নেতা-কর্মীরা ভারতে অবস্থান করে বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন ভণ্ডুল করতে নানা ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছেন বলেও জানানো হয়। এ ধরনের ফ্যাসিস্ট সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর আহ্বান জানানো হয় ভারতের হাইকমিশনারকে।
মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিত শেখ হাসিনা এবং তাঁর সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকে ফেরত পাঠানোর আহ্বানও পুনরায় জানানো হয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আশা প্রকাশ করেছে, প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সুরক্ষায় বাংলাদেশের জনগণের পাশে দাঁড়াবে ভারত সরকার।
জবাবে ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা বলেন, বাংলাদেশে একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে—এমন প্রত্যাশা ভারতের রয়েছে এবং এ বিষয়ে সর্বাত্মক সহযোগিতা দিতে তাঁর দেশ প্রস্তুত।