শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে জাতি শ্রদ্ধাবনত চিত্তে স্মরণ করেছে জাতির শহীদ শ্রেষ্ঠ সন্তানদের। মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতি সৌধে হাজারো মানুষ সমবেত হয়ে ফুলেল শ্রদ্ধা-ভালবাসা জানিয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে প্রতি বছর ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস হিসেবে পালিত হয়। এদিন দেশের সর্বত্র জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয় এবং ওড়ে শোকের প্রতীক কালো পতাকা।
রোববার, (১৪ ডিসেম্বর ২০২৫) সকালে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে বুদ্ধিজীবী দিবসের অনুষ্ঠানমালা শুরু হয়। রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে জাতির পক্ষ থেকে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
সকাল ৭টায় রাষ্ট্রপতি মিরপুর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর সকাল ৭টা ২০ মিনিটে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রধান উপদেষ্টা। রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রীয় সালাম প্রদান করে এবং এ সময় বিউগলে করুণ সুর বাজানো হয়।
শ্রদ্ধা নিবেদনের পর রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা পৃথকভাবে উপদেষ্টারা, শীর্ষ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তা, যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং অন্য আমন্ত্রিত অতিথিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার শ্রদ্ধা নিবেদনের পর, স্মৃতিসৌধ সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্মৃতিসৌধ এলাকায় সর্বস্তরের মানুষের ঢল নামে। দলে দলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পেশাজীবী সংগঠন, শ্রমিক সংগঠন, ছাত্রসংগঠন ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ব্যানার ও স্লোগানসহ শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খানের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি প্রতিনিধিদল শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তিনি বলেন, ‘শহীদ বুদ্ধিজীবীরা আমাদের জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। তাদের আত্মত্যাগ আমাদের ইতিহাসে চির অম্লান এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রেরণা জোগায়।’
এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু), ভিপি সাদিক কায়েমের নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু), ঢাকা আইনজীবী সমিতি, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), মিরপুর কলেজ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাদা দল, গণবিশ্ববিদ্যালয়, মহিলা পরিষদ, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব), ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইডিইবি), বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরসহ বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তি শ্রদ্ধা নিবেদন করে।
শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে একইভাবে ফুল আর ব্যানার হাতে এবার মানুষের সমাবেশ ছিল রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের শেষ প্রান্তে নিশ্চিত পরাজয়ের মুখে পাকিস্তান বাহিনী ও তাদের সহযোগী রাজাকার, আল বদর, আল শামস সদস্যরা শিক্ষক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, সংস্কৃতিকর্মীসহ বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে। শরীরে নিষ্ঠুর নির্যাতনের চিহ্নসহ জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের লাশ পাওয়া যায় রায়েরবাজার এলাকায়, পরে তা বধ্যভূমি হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রোববার, সকাল থেকেই সেই বধ্যভূমিতে স্থাপিত মিনারে সকাল থেকে নানা শ্রেণীপেশার মানুষ হাজির হয়েছেন জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণ করতে।
রায়েরবাজারে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন ডাকসু নেতারা, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট, জুলাই যোদ্ধা সংসদ, বাংলা একাডেমিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও রাজনৈতিক নেতারা। সদ্য সাবেক উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ঢাকা-১০ আসনের ভোটারদের সঙ্গে নিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন, পালন করেন এক মিনিটের নীরবতা।
পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আসিফ মাহমুদ বলেছেন, ‘স্বাধীনতা যুদ্ধে আমাদের এ দেশের সাহসী বীররা ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। তারা যেই প্রত্যাশার জায়গা থেকে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন, সেখান থেকে প্রাপ্তির পরিমাণটা অনেক কম। তবে আমরা একটা স্বাধীন দেশ পেয়েছি, স্বাধীন ভূখণ্ড পেয়েছি এবং সার্বভৌম রাষ্ট্র পেয়েছি। সেটা প্রতিষ্ঠার লড়াইটা আমাদের গত ৫৪ বছর করে যেতে হয়েছে, সর্বশেষ এডিশন হচ্ছে ২০২৪। যেখানে আরো শত-সহস্র মানুষকে জীবন দিতে হয়েছে স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য।’