image

অবৈধ বোমা মেশিনে বালু অপসারণ, ঝুঁকিতে দেশের সর্ববৃহৎ তিস্তা ব্যারেজ

রোববার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫
ময়েন কবীর, ডিমলা (নীলফামারী)

নীলফামারীর ডিমলায় দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজ সংলগ্ন স্পর্শকাতর কমান্ড এলাকায় শক্তিশালী অবৈধ বোমা মেশিন বসিয়ে সিলট্রাপ থেকে পলিযুক্ত বালু অপসারণের অভিযোগ উঠেছে। এতে ব্যারেজের মূল অবকাঠামো মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন নদী ও পানি সম্পদ বিশেষজ্ঞরা।

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্তৃপক্ষের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে চলতি অর্থবছরের শুকনো মৌসুমে ইরি চাষাবাদের জন্য সেচ কার্যক্রম সচল রাখতে সিলট্রাপ থেকে বালু অপসারণের কাজ শুরু হয়েছে। এ কাজে প্রায় ৪ কোটি ৪২ লাখ টাকা ব্যয়ে ২ লাখ ৮৫ হাজার ঘনমিটার পলিযুক্ত বালু অপসারণের জন্য দুইটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড ব্রাদার্স, রংপুর ইতোমধ্যে ২৫টি শক্তিশালী বোমা মেশিন ব্যবহার করে খনন কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। অপর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান একই পদ্ধতিতে ২৭টি মেশিনে কাজ শুরু করেছে বলে জানা গেছে। সর্বমোট ৫০-এর ওপরে বোমা মেশিন লাগিয়ে পলি অপসারণের কাজ চালানো হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বোমা মেশিন ব্যবহারে নদীর তলদেশে গভীর গর্ত সৃষ্টি হয়, যা ব্যারেজের নিচের ফাউন্ডেশনের মাটি সরিয়ে দিতে পারে। এতে ৬১৫ দশমিক ৪৪ মিটার দীর্ঘ ও ৪৪টি জলকপাট সমৃদ্ধ তিস্তা ব্যারেজ মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে। অনেকেই এটিকে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।

নদী বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত বলেন, তিস্তা ব্যারেজ দেশের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো। এর কমান্ড এলাকায় ভারী বোমা মেশিন দিয়ে বালু অপসারণ করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এতে ব্যারেজের কাঠামোগত ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। বিষয়টি সরকারকে গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখতে হবে।

অন্যদিকে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী দাবি করেন, তাদের নিজস্ব ড্রেজারগুলো বিকল হয়ে পড়ায় বিকল্প পদ্ধতিতে স্থানীয় ড্রেজার ও মেশিন ব্যবহার করা হচ্ছে এবং নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখেই কাজ চলছে। এতে ব্যারেজের কোনো ক্ষতির সম্ভাবনা নেই বলেও তিনি দাবি করেন।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক নায়েরুজ্জামান বলেন, তিস্তা ব্যারেজের কমান্ড এলাকায় ভারী বোমা মেশিন ব্যবহারের প্রশ্নই উঠে না। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এরই মধ্যে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ইমরানুজ্জামান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বোমা মেশিন দিয়ে বালু অপসারণের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন এবং বিষয়টি জেলা প্রশাসককে অবহিত করার কথা জানিয়েছেন।

এদিকে স্থানীয় সচেতন মহল প্রশ্ন তুলেছেন, সরকারি অর্থ ব্যয়ে নির্মিত দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সেচ প্রকল্পের নিরাপত্তা উপেক্ষা করে কীভাবে অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণ পদ্ধতিতে বালু অপসারণের অনুমতি দেয়া হলো? বিষয়টি দ্রুত তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।

‘জাতীয়’ : আরও খবর

সম্প্রতি