‘জনস্বাস্থ্যের জন্য অনিরাপদ’ মনে হওয়ায় দেশের বাজার থেকে কিটক্যাট চকলেটের একটি ব্যাচ প্রত্যাহার করে নিতে নেসলে বাংলাদেশকে আদেশ দিয়েছে আদালত। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) খাদ্য পরিদর্শক কামরুল হাসানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার, (১৫ ডিসেম্বর ২০২৫)বিশেষ মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট নুসরাত সাহারা বিথী এ আদেশ দেন।
সরকারি খাদ্য পরীক্ষাগারের ফল তুলে ধরে আবেদনে কামরুল হাসান বলেছেন, কিটক্যাটের ‘ফোর-ফিঙ্গার ওয়েফার’ চকলেটের ব্যাচটি ‘নিম্নমান’ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘সনদবিহীন ও মানহীন এই চকলেট জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। ‘এজন্য আদালত কোম্পানিকে আগামী ২১ জানুয়ারির মধ্যে বাজার থেকে চকলেট প্রত্যাহার করে নেয়ার আদেশ দিয়েছে।’
কামরুল হাসান তার আবেদনে বাংলাদেশে কিটক্যাট চকলেট আমদানি ও বাজারজাতকরণে নিষেধাজ্ঞার আবেদনও করেন। তবে আদালত এ বিষয়ে কোনো আদেশ দেয়নি। ‘নিম্নমানের’ চকলেট সরবরাহের অভিযোগে গত ২৪ নভেম্বর একটি মামলা করেন কামরুল হাসান। এতে নেসলে বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দিপাল আবে বিক্রমা ও পাবলিক পলিসি ম্যানেজার রিয়াসাদ জামানকে আসামি করা হয়।
আদালতের নথি অনুযায়ী, নেসলে বাংলাদেশকে ‘৪৪৩৯৯১৩৯’ নম্বর ব্যাচের চকলেট প্রত্যাহার করে নিতে হবে, যার উৎপাদন ব্যাচ নম্বর ‘৬২৯৪০০৩৫৩৯০৫৪’। এই ব্যাচের চকলেট উৎপাদিত হয় সংযুক্ত আরব আমিরাতে, চলতি বছরের মে মাসে। আগামী বছরের এপ্রিল পর্যন্ত এসব চকলেটের মেয়াদ রয়েছে।
যা মিলেছে পরীক্ষাগারে
দুটি ভাগে পণ্যটির মান পরীক্ষা চালানো হয়। একটি অংশে পরীক্ষা করা হয় ওয়েফার বিস্কুট, আরেকটি পরীক্ষা হয় চকলেটের ওপরের প্রলেপ নিয়ে। কামরুল হাসান বলেছেন, ওয়েফার বিস্কুটে সর্বোচ্চ ১ শতাংশের বিপরীতে ২ দশমিক ৩২ শতাংশ অম্লতা (অ্যাসিডিটি) পাওয়া গেছে। অন্যদিকে চকলেটে ‘মিল্ক সলিড’ ছিল ৯ দশমিক ১২ শতাংশ, যা বিএসটিআই নির্ধারিত ১২-১৪ শতাংশের চেয়ে কম।
চকলেটে মিল্ক ফ্যাট পাওয়া যায় ১ দশমিক ১৬ শতাংশ, যা থাকার কথা ছিল আড়াই থেকে সাড়ে ৩ শতাংশ। কামরুল হাসান এর আগে বলেছিলেন, মিল্ক সলিড কম থাকার মানে হলো, খাদ্যে ভেজাল থাকতে পারে। আর মিল্ক ফ্যাট কম থাকা বোঝায়, দুধের চর্বির পরিবর্তে তেল বা ভেজিটেবল ফ্যাট ব্যবহার করা হয়েছে।
এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে নেসলে বাংলাদেশ। তারা বলছে, খাদ্যপণ্যটির গুণগত মানের পক্ষে ডিস্ট্রিবিউটররা যে তথ্য দিয়েছে, সেটি উপেক্ষা করা হচ্ছে। নেসলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও পাবলিক পলিসি ম্যানেজারের বিরুদ্ধে মামলা করার আগে কোনো ধরনের যোগাযোগ করা হয়নি বলেও দাবি কোম্পানিটির। একই আদালত নেসলের এক বিপণনকারীকে গত ৭ ডিসেম্বর কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়। গত ৩ নভেম্বর করা অন্য একটি মামলার পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেয় আদালত।