image
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

সম্পদ বিবরণী চায় দুদক, যা বললো সামিট

মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আজিজ খান ও তার পরিবারের সম্পদের বিবরণী চেয়ে যে পদক্ষেপ নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), তাতে ‘পূর্ণ সহযোগিতা’ করার কথা বলেছে কোম্পানিটি। গতকাল সোমবার রাতে আয়কর বিবরণী বিষয়ক এক বিবৃতিতে এ প্রতিশ্রুতির কথা বলেছে সামিট করপোরেশন লিমিটেড।

গত রোববার মুহাম্মদ আজিজ খান, তার স্ত্রী আঞ্জুমান আজিজ খান ও মেয়ে আয়েশা আজিজ খানের দাখিল করা আয়কর নথিতে সম্পদের যে পরিমাণ দেখানো হয়েছে, তা ঘোষিত আয়ের সঙ্গে ‘অসামঞ্জস্যপূর্ণ’ হওয়ায় তাদের তলব করে দুদক। এনিয়ে সংবাদমাধ্যমে খবর ছাপা হলে তার প্রতিক্রিয়ায় পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা সম্পূর্ণ বিষয়টি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনের বরাতে জানতে পেরেছি।

‘যেকোনো সরকারি আইনি প্রক্রিয়ায় আমরা পূর্ণ সহযোগিতা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ খান পরিবার ‘স্বচ্ছতার সঙ্গে’ তাদের সম্পদ বিবরণী ঘোষণা করে আসছে দাবি করে বলা হয়, ‘সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে তাদের সম্পদের যে অংক তুলে ধরা হয়েছে অর্থাৎ আজিজ খানের ৩৩০ কোটি ৯৪ লাখ টাকা, আঞ্জুমান আজিজ খানের ৯২ কোটি ৬২ লাখ টাকা এবং আয়েশা আজিজ খানের ২৮৭ কোটি ৪৩ কোটি টাকা (যা প্রকৃত অংকের চেয়ে ঠিক ৩ কোটি টাকা বেশি দেখানো হয়েছে), তা বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের দাখিলকৃত তাদের ব্যক্তিগত আয়কর বিবরণীতে প্রদর্শিত সম্পদের সঙ্গে হুবহু মিলে যায়।

‘এসব সম্পদ নিয়মিত, ধারাবাহিকভাবে এবং স্বচ্ছতার সঙ্গে রিটার্নে ঘোষণা করা হয়েছে।’ প্রতিষ্ঠানটির ভাষ্য, এই আয়কর রিটার্নগুলো অত্যন্ত বিস্তারিত ও পূর্ণাঙ্গ দলিল, যেখানে কেবল সম্পদের তালিকাই নয়, বরং প্রতিটি উপার্জনের বিস্তারিত উৎসও স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে। তাই আয়ের সঙ্গে সম্পদের তথ্যে ‘ভুল, অসংগতি বা গরমিলের’ যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে, তা ‘মূলত ভিত্তিহীন’ বলেও সামিট মন্তব্য করে।

তাদের দাবি, ‘সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত সম্পদের হিসাব মূলত আমাদের কর নথিতে ঘোষিত সংখ্যাই। দুদক তাদের সম্পদ চাওয়ার পদক্ষেপ গ্রহণ করে গত রোববার বলেছে, অনুসন্ধানে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়েছে যে, আজিজ খান দেশের অর্থ সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে ‘পাচারের’ মাধ্যমে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। অথচ আয়কর নথিতে তিনি ‘অত্যন্ত কম পরিমাণ’ সম্পদ প্রদর্শন করেছেন, যা তার ঘোষিত আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।

আয়কর নথিতে তিনি যে পরিমাণ স্থাবর সম্পদের মূল্য দেখিয়েছেন, প্রকৃত মূল্য তার চেয়ে অনেক বেশি হতে পারে বলে দুদকের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। পাশাপাশি এসব সম্পদও তার আয়ের সঙ্গে ‘অসামঞ্জস্যপূর্ণ’ বলে দাবি করছে দুদক। এর ব্যাখ্যায় সামিটের ভাষ্য, প্রতিবেদনে ‘দেশ থেকে অর্থ সরিয়ে নেয়া’ বা ‘বিদেশে অর্থ স্থানান্তরের’ মাধ্যমে সম্পদ অর্জনের মতো ‘অস্পষ্ট’ এবং ‘ঢালাও অভিযোগ’ করা হয়েছে।

‘এগুলো গুরুতর অভিযোগ। জনসম্মক্ষে কোনো সুনির্দিষ্ট ভিত্তি বা প্রমাণ ছাড়া এবং কোনো বিচারিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার আগেই সংবাদমাধ্যমে এ ধরনের অভিযোগ করা অনুচিত।’ গত ৫ আগস্ট অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গোপালগঞ্জ-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ফারুক খানের ভাই সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান আজিজ খান আলোচনায় আসেন। এরপর গত ৭ অক্টোবর সামিটের আজিজ খানসহ পরিবারের ১১ সদস্যের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা হয়। বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) তাদের সবার ব্যাংক হিসাব ৩০ দিনের জন্য স্থগিত রাখতে সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চিঠি দেয়।

চিঠিতে সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান আজিজ খান, তার স্ত্রী আঞ্জুমান আজিজ খান, তিন মেয়ে আয়েশা আজিজ খান, আদিবা আজিজ খান ও আজিজা আজিজ খান, চার ভাই ফারুক খান, ফরিদ খান, লতিফ খান ও জাফর উম্মেদ খান এবং ভাইদের ছেলে ফয়সাল করিম খান ও সালমান খানের নাম ও এনআইডি নম্বর দেয়া হয়। তারা সবাই সামিট গ্রুপের বিভিন্ন কোম্পানির পরিচালক।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার পরিবারের সদস্য এবং ১০টি শিল্পগোষ্ঠীর পাচার করা অর্থ ফেরত আনতে রাষ্ট্রের তিনটি সংস্থা একযোগে কাজ করছে। অর্থ পাচার, দুর্নীতি ও জালিয়াতির অভিযোগ অনুসন্ধানে গঠিত যৌথ তদন্ত দল (জেআইটি) এ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এই যৌথ তদন্ত দলে দুদককে মূল ভূমিকায় রেখে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) একসঙ্গে কাজ করছে। পুরো কার্যক্রমের সমন্বয় করছে অর্থ পাচার প্রতিরোধে দায়িত্বপ্রাপ্ত আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বিএফআইইউ। ‘পাচার করা’ অর্থ ফেরত আনার ক্ষেত্রে সামিট গ্রুপসংক্রান্ত দায়িত্ব দেয়া হয়েছে দুদকের উপপরিচালক আলমগীর হোসেনকে। এ দলে তার সঙ্গে রয়েছেন সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ জিন্নাতুল ইসলাম ও মো. নাসরুল্লাহ হোসাইন।

‘জাতীয়’ : আরও খবর

সম্প্রতি