ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরীফ ওসমান বিন হাদিকে হত্যাচেষ্টা মামলায় সন্দেহভাজন ফয়সাল করিম মাসুদের সহযোগী কবিরকে ৭ দিনের রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ।
শুনানিতে উঠে এলো মোটরসাইকেলের মালিকানার নতুন তথ্য
মঙ্গলবার, (১৬ ডিসেম্বর ২০২৫) শুনানি নিয়ে এ আদেশ দেন ঢাকার মহানগর হাকিম হাসিবুজ্জামান। প্রসিকিউশন বিভাগের এসআই রুকনুজ্জামান জানান, কবিরকে ১০ দিনের রিমান্ডে পেতে আবেদন করেন ডিবি পুলিশের মতিঝিল জোনাল টিমের পরিদর্শক ফয়সাল আহমেদ। শুনানি নিয়ে আদালত ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।
গতকাল সোমবার নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থেকে কবিরকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। সেদিনই ফয়সালের স্ত্রী সাহেদা পারভীন সামিয়া, শ্যালক ওয়াহিদ আহমেদ শিপু ও বন্ধু মারিয়া আক্তার লিমাকে ৫ দিনের রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ। এর আগে গত রোববার হামলায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল মালিক আব্দুল হান্নানের তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়। হাদিকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় পরিবারের সম্মতি নিয়ে গত রোববার রাতে পল্টন থানায় হত্যাচেষ্টা মামলা করেছেন ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের।
‘উপকারের’ কথা বলে হাদির অফিসে নিয়ে যায় ফয়সাল
হাদির ওপর হামলা হওয়ার কিছু দিন আগে ইনকিলাব মঞ্চের কার্যালয়ে যাওয়ার কথা আদালতকে বলেছেন প্রধান আসামি ফয়সাল করিম মাসুদের সহযোগী কবির। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হাসিবুজ্জামানের আদালতে রিমান্ড শুনানিতে তিনি এ কথা বলেন।
রাষ্ট্রপক্ষে প্রসিকিউটর কাইয়ুম হোসেন নয়ন বলেন, ‘কবির আদাবর থানার স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক। যে মোটরসাইকেল যোগে প্রকাশ্য দিবালোকে হাদিকে গুলি করা হয়, সেখানে এ আসামি উপস্থিত ছিলেন।’ তিনি বলেন, ‘ফয়সালের সঙ্গে কবিরের যোগাযোগ ছিল। ফয়সালকে নিয়ে হাদির বাসায় যায় কবির। ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে সে আত্মগোপনে চলে যায়। হাদিকে হত্যাচেষ্টার অস্ত্র ব্যবহার করেছে কবির। আর সে মোটরসাইকেলের মালিক। অস্ত্র উদ্ধার, এ ঘটনার সঙ্গে আর কেউ জড়িত আছে কি না, তা জানার জন্য সর্বোচ্চ ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থনা করছি।’
কবিরের পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন। তার কিছু বলার আছে কি না জানতে চায় আদালত। পরে কবির আদালতকে বলেন, ‘আমি উবার অ্যাপের মাধ্যমে গাড়ি চালাতাম। মাঝেমধ্যে ফয়সাল করিম মাসুদ আমাকে ফোন দিতেন। ধারে-কাছে থাকলে যেতাম। আমাকে গুলশানসহ বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যেত। ১৮-২০ দিন আগে ফোন করে হাদির অফিসে নিয়ে যেতে চায়। বলে, গেলে উপকার হবে। পরে হাদির অফিসে নিয়ে যায়।’
তিনি বলেন, ‘মোটরসাইকেলটি আমার বন্ধু মাউনুদ্দিন ইসলাম শুভ কিনেছে। আমরা দুইজনই একই দিনে গাড়ি কিনতে যাই। ও আমার আইডি কার্ড দিয়ে গাড়ি কেনে। মোটরসাইকেলের সবকিছু ওর নামে, শুধু আমার আইডি কার্ড ব্যবহার করেছে। গাড়ি কেনার সময় ছিলাম। মেলা দিন আগে গাড়িটা কিনেছি।’ শুনানি নিয়ে আদালত কবিরের ৭ দিনের রিমান্ডের আদেশ দেয়।
শুনানিতে উঠে এলো মোটরসাইকেলের মালিকানার
নতুন তথ্য
হাদিকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক দাবি করে মো. আব্দুল হান্নান নামে একজনকে গ্রেপ্তার ও আদালতের মাধ্যমে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। গত রোববার আদালতে রিমান্ড শুনানিতে হান্নান বলেছিলেন, আটকের পর তিনি র্যাবকে বলেছিলেন, তাকে শোরুমে (বিক্রয়কেন্দ্র) নিয়ে যেতে। তাহলে আসল সত্য বেরিয়ে আসবে। পরে পুলিশকেও একই কথা বলেছিলেন। কিন্তু তারা কেউ তার কথা শোনেনি।
মোটরসাইকেলটি তার নয় দাবি করে হান্নান সেদিন বলেছিলেন, মোটরসাইকেলটি তিনি মিরপুর মাজার রোডের ওই শোরুম থেকে কিনেছিলেন। কিন্তু হাতে সমস্যা হওয়ায় তিনি চালাতে পারছিলেন না। একপর্যায়ে সেটি ওই শোরুমে বিক্রি করে দেন। দুই মাস আগে মালিকানা বদলের জন্য শোরুম থেকে ফোন করা হলেও অসুস্থ থাকায় তিনি যেতে পারেননি।
মঙ্গলবার, এই মামলায় মো. কবির নামে গ্রেপ্তার একজনের রিমান্ড আবেদনের শুনানিতে ওই মোটরসাইকেলের মালিকানা নিয়ে নতুন তথ্য বেরিয়ে এসেছে। কবিরকে ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় প্রধান সন্দেহভাজন ফয়সল করিম মাসুদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী বলছে পুলিশ। তাকে নারায়ণগঞ্জের একটি ইটভাটা থেকে গ্রেপ্তারের তথ্য জানিয়ে র্যাব বলেছিলেন, কবির ৫ ডিসেম্বর ফয়সাল করিমের সঙ্গে বাংলামোটরে ওসমান হাদির প্রতিষ্ঠিত ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে গিয়েছিলেন সেখানকার পরিস্থিতি দেখে আসতে।
বিকেলে এই মামলায় কবিরকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের মতিঝিল জোনাল টিমের পরিদর্শক ফয়সাল আহম্মেদ। তিনি আদালতে বলেন, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনায় দেখা গেছে, আসামি কবির ও ফয়সলসহ অন্য আসামিরা ওসমান হাদির কালচারাল সেন্টারে গিয়েছিলেন। তাছাড়া হান্নানের বিক্রি করা মোটরসাইকেলের মালিক কবির।
বিচারক প্রশ্ন করেন, মোটরসাইকেলের মালিক কে? জবাবে কবির বলেন, ‘মোটরসাইকেলটা আমার এক বন্ধুর। আমি গাড়ি (মোটরসাইকেল) কিনতে গেছি। সেও গাড়ি কিনতে গেছে। সে আমার আইডি (জাতীয় পরিচয়পত্র) দিয়ে গাড়ি কিনছে।’ বিচারক বলেন, তার নাম কী? কবির বলেন, ‘স্যার, মাইনুদ্দিন ইসলাম শুভ।’ তখন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, ওই মোটরসাইকেল ব্যবহার করে ওসমান হাদিকে হুলি করা হয়েছে।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক উইং কমান্ডার এম জেড এম ইন্তেখাব চৌধুরী বলেছিলেন, কবির ৫ ডিসেম্বর ফয়সল করিমের সঙ্গে বাংলামোটরে ওসমান হাদির প্রতিষ্ঠিত ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে গিয়েছিলেন। প্রথমে তিনি স্বীকার করেননি। কিন্তু সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে তাকে দেখা গেছে। ওই ফুটেজ দেখানোর পর কবির স্বীকার করেন, ফয়সল করিম ও তিনি সেদিন ওই প্রতিষ্ঠান দেখে আসতে সেখানে গিয়েছিলেন।
জুলাই অভ্যুত্থান এবং আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে পরিচিতি পাওয়া হাদি ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। গত শুক্রবার গণসংযোগের জন্য বিজয়নগর এলাকায় গিয়ে তিনি আক্রান্ত হন। চলন্ত রিকশায় থাকা হাদিকে গুলি করেন চলন্ত মোটরসাইকেলের পেছনে বসে থাকা আততায়ী। গুলিটি লাগে হাদির মাথায়। গুরুতর আহত হাদিকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে অস্ত্রোপচার করার পর রাতেই তাকে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গতকাল সোমবার দুপুরে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে হাদিকে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হয়।