সারাদেশে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কার্যালয়গুলোর সার্বিক নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন থাকবে ৫ দিন
ইসি সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার, (১৮ ডিসেম্বর ২০২৫) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠিয়েছে ইসি। এসব কার্যালয়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করার নির্দেশনা দিতে বলা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো ইসির চিঠিতে বলা হয়, গত ১১ ডিসেম্বর ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়সূচি (তফসিল) জারি করা হয়েছে। ইতোমধ্যে নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্নের লক্ষে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়গুলোয় নির্বাচন সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ নথি, নির্বাচনী মালামাল, যন্ত্রপাতি সংরক্ষিত রয়েছে। নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনায় এসব কার্যালয়ে সংরক্ষিত গুরুত্বপূর্ণ নথি, নির্বাচনী মালামালের সুরক্ষাসহ অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অত্যাবশ্যক। চিঠিতে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়গুলোর নিরাপত্তা বিধানে প্রয়োজনীয় সংখ্যক পুলিশ ফোর্স মোতায়েনের নির্দেশনা দিতে বলা হয়েছে।
এর আগে প্রধান নির্বাচন কমিশনার, চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিবসহ মাঠ পর্যায়ের কার্যালয় এবং রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পাওয়া তিন আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার জন্য অতিরিক্ত নিরাপত্তা চেয়েছে ইসি। এছাড়া বর্তমানে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের জন্য গাড়িসহ পুলিশি এসকর্ট থাকলেও নির্বাচনকালীন সময়ে আরও একটি গাড়িসহ অতিরিক্ত এসকর্ট চাওয়া হয়েছে। চার কমিশনার ও সিনিয়র সচিবের বাসভবন ও অফিসে যাতায়াতসহ সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা প্রদানের জন্য বলা হয়েছে।
অপতথ্য, মনিটরিং সেল
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অপতথ্য নিয়ন্ত্রণে ভোটের আগে ও পরে মোট সাত দিন মনিটরিং সেল এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সম্মিলিতভাবে কাজ করবে। এ প্রসঙ্গে নির্বাচনী দায়িত্বে থাকা বিভিন্ন বাহিনীর করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত নির্দেশনা দিয়েছে ইসি। এ সংক্রান্ত একটি পরিপত্র জারি করে মাঠ প্রশাসনকে এ নির্দেশনা দেয়া হয়।
পরিপত্রে বলা হয়েছে, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিত করতে সব রাজনৈতিক দল ও প্রার্থী যাতে নির্বিঘে্ন কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেন, ভোটাররা নিরাপদে ভোট দিতে পারেন এবং ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়, সে লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাঠে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়ে দায়িত্ব পালন করবে। ভোট কেন্দ্রে প্রিসাইডিং অফিসার, রিটার্নিং অফিসারসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেয়া হবে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাঠামো অনুযায়ী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে লিড মন্ত্রণালয় হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। নির্বাচন-পূর্ব, নির্বাচনকালীন ও নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বাহিনী ও সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় বজায় রেখে কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। মাঠপর্যায়ে রিটার্নিং অফিসার ও প্রিসাইডিং অফিসারদের চাহিদা অনুযায়ী অগ্রাধিকারভিত্তিতে সহায়তা দেয়া হবে।
পরিপত্রে আরও বলা হয়, নির্বাচনের সময় বাহিনী মোতায়েনের ক্ষেত্রে কেন্দ্রভিত্তিক স্থায়ী মোতায়েন, স্থায়ী ও অস্থায়ী চেকপোস্ট, মোবাইল টহল, আভিযানিক দল এবং স্ট্রাইকিং ফোর্স সক্রিয় থাকবে। নির্বাচনের আগে চার দিন, ভোটের দিন এবং ভোটের পর দুই দিন পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা ও অপতথ্য মনিটরিং সেল পূর্ণাঙ্গভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
এছাড়া অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার, গুজব ও অপতথ্য রোধে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হবে। ঝুঁকিপূর্ণ ভোট কেন্দ্রে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ, সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে কাভারেজ এবং বডি ক্যামেরার মাধ্যমে লাইভ পর্যবেক্ষণ নিশ্চিত করা হবে। ভোটাররা যেন স্বচ্ছ, নিরাপদ ও উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন সে লক্ষ্যেই এসব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে বলে পরিপত্রে জানানো হয়।
পাঁচ দিন
নির্বাচন সামনে রেখে স্বাভাবিক মোতায়েনের বাইরে সব বাহিনীকে ভোটের আগে ও পরে মোট ৫ দিন মোতায়েনের নির্দেশনা দিয়ে পরিপত্র জারি করেছে ইসি। এছাড়া আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী থাকবে ছয়দিন। বৃহস্পতিবার, ইসি এ পরিপত্র জারি করেছে।
পরিপত্রে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, সংসদ নির্বাচন ও গণভোটকে কেন্দ্র করে আগামী ৯-১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাঠে নিয়োজিত থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। নির্বাচনের আগে ৩ দিন এবং পরে ১ দিন মোতায়েন থাকবে।
আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি একইদিনে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট। তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ২৯ ডিসেম্বর, মনোনয়নপত্র বাছাই ৩০ ডিসেম্বর থেকে ৪ জানুয়ারি, রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কমিশনে আপিল দায়েরের শেষ তারিখ ১১ জানুয়ারি আর নিষ্পত্তি ১২-১৮ জানুয়ারি, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২০ জানুয়ারি, রিটার্নিং কর্মকর্তা দ্বারা চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ ও প্রতীক বরাদ্দ করবেন ২১ জানুয়ারি, নির্বাচনী প্রচার চলবে ২২ জানুয়ারি থেকে ১০ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৭টা পর্যন্ত।