নতুন প্রধান বিচারপতির নাম তিন-চার দিনের মধ্যে
উচ্চ আদালত থেকে আলোচিত সন্ত্রাসীদের জামিন হওয়ায় প্রধান বিচারপতিকে উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। বৃহস্পতিবার, (১৮ ডিসেম্বর ২০২৫) সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের সঙ্গে বিদায়ী সাক্ষাৎ শেষে আইন উপদেষ্টা সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
আসিফ নজরুল সাংবাদিকদের বলেন, ‘একটা বিষয় আপনাদের বলে নেই, এখন প্রচুর আলোচনা হচ্ছে। যেমন ধরেন হাইকোর্টের কোনো কোনো বেঞ্চ অস্বাভাবিক জামিন দিয়ে দিচ্ছে। এটা নিয়ে আমি আমার কনসার্নের কথা মাননীয় প্রধান বিচারপতিকে এর আগে দেখা করে জানিয়েছিলাম। আজকেও জানিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘আজকে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের শেষ কর্মদিবস ছিল। আমি উনাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাতে এসেছিলাম। জাতির একটা সন্ধিক্ষণে উনি প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন। উনি আমাদের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রত্যাশা এবং সেগুলো পূরণ করার জন্য বিচার বিভাগীয় সংস্কারগুলোর ক্ষেত্রে অভিভাবকের ভূমিকা পালন করেছেন।’
আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে যেই আইনগুলো করেছি, সবকিছুর পেছনে উনার সমর্থন ছিল। আমাদের বিভিন্ন সময় যে বিভিন্ন কনসার্ন ছিল, তা ব্যক্ত করেছি।’
তিনি বলেন, ‘আমি আপনাদের প্রকাশ্যে বলে গেলাম, এর আগে যতবার দেখা হয়েছে; প্রধান বিচারপতিকে বলেছি। উনি কিছু ব্যবস্থা নিয়েছিলেন। যে বেঞ্চগুলো থেকে চার ঘণ্টায় আটশো’ জামিন দেয়া হয়েছিল, তিনি তাদেরকে ডেকেও পাঠিয়েছিলেন। উনি উনার মতো ব্যবস্থা নিয়েছেন। তারপর এই জামিনের প্রকোপ কিছুটা কমেছে, কিন্তু এখনও অব্যাহত আছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘অস্বাভাবিক জামিন এমন, যেখানে একজন ভয়ঙ্কর ব্যক্তি জামিন পেয়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের নায়কদের ওপর হামলা করতে পারেন। এই ধরনের জামিন যখন হয়, তখন আমরা প্রচণ্ড শঙ্কিত, আতঙ্কিত ও উদ্বেগ বোধ করি। কিন্তু আইন মন্ত্রণালয়ের হাইকোর্টের ওপর কোনো রকম কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই, নিয়ন্ত্রণ থাকার কথাও না।’
উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি আপনাদের কথা দিচ্ছি আমাদের যে নতুন প্রধান বিচারপতি থাকবেন, ওনার সঙ্গে প্রথম মিটিংয়ে আমি বলবো যে, সবক্ষেত্রে আইনগতভাবে জামিন প্রাপ্য অধিকার, সেটাই জামিন দেবেন। বিচারকরা অবশ্যই জামিন দেবেন। কিন্তু যেই অপরাধী বা যেই ব্যক্তি জামিনে মুক্তি পেয়ে আপনাকে, আমাকে খুন করতে পারে বলে আশঙ্কা করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে, সে জামিন পেতে পারেন না। আমরা এই ব্যাপারে প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি।’
আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি উনাকে (প্রধান বিচারপতি) বলেছিলাম, আমরা যে সংস্কারগুলো করেছি সেগুলো টেকসই করে রাখার জন্য উনার রিটায়ারমেন্টের পরও আমরা উনার কাছে আসবো, উনার পরামর্শ নেব। উনি সানন্দে সম্মতি জানিয়েছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘উনি আমাদেরকে যখন যা বুদ্ধি লাগে, পরামর্শ লাগে, সেই ব্যাপারে হেল্প করবেন।’
আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমি মনে করি ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের কারণে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে কোয়ালিফাইড, সবচেয়ে সৎ একজন প্রধান বিচারপতিকে আমরা পেয়েছিলাম। এটাও জুলাই গণঅভ্যুত্থানের একটা অর্জন। আগামীতেও এরকম দক্ষ অভিভাবকের নেতৃত্বে আমরা বিচার বিভাগে যেসব অনিয়ম আছে বা যেসব ব্যাপারে প্রশ্ন আছে, সেগুলো দূর করার ব্যাপারে কাজ করে যাবো।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, ‘কে পরবর্তী প্রধান বিচারপতি হচ্ছেন এটা সরকারের নীতি-নির্ধারণী বিষয়। এই নীতি-নির্ধারণী বিষয়ে এককভাবে কোনো কিছু বলার এখতিয়ার আমার নেই। তবে আমি আপনাদের বলি আপনারা হয়তো তিন-চার দিনের মধ্যে তা জানতে পারবেন’।