image

ছায়ানট ভবনে হামলা, ভাংচুর, আগুন

শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্ববায়ক ওসমান হাদির মৃত্যুর খবরে ক্ষোভ-বিক্ষোভের মধ্যে বাঙালি সংস্কৃতি চর্চার ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট ভবনে হামলা ও ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়েছে; দেওয়া হয়েছে আগুন।

বৃহ্স্পতিবার মধ্যরাতের পর একদল বিক্ষোভকারী ধানমন্ডির সাততলা এ ভবনের বিভিন্ন তলায় গিয়ে প্রতিটি কক্ষে ব্যাপক ভাঙচুর করেছে।

ছায়ানট ভবনের বিভিন্ন তলায় থাকা বাদ্যযন্ত্র ও শিল্প কর্ম ব্যাপক ভাংচুর করা হয়েছে । এর পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন কক্ষে থাকা কাগজপত্র ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়ে থাকতে দেখা গেছে।

মুখ কাপড় দিয়ে ঢেকে রেখে ও হেলমেট পরে আসা হামলাকারীরা বিভিন্ন তলায় ভাঙচুর শেষে চলে যাবার সময় ভবনের সামনে আগুন দেয়। তবে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা আসার আগেই সেই আগুন নিভে যাওয়ায় বড় অগ্নিকাণ্ড থেকে রক্ষা পায় বাঙালির সাংস্কৃতিক জাগরণের নেতৃত্ব দেওয়া সংগঠনটি।

সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন হাদির মৃত্যুর খবর আসার পর শাহবাগসহ রাজধানী ও দেশের বিভিন্ন স্থানে ক্ষোভ বিক্ষোভের মধ্যে বিভিন্ন স্থানে হামলার খবরের মধ্যে একদল বিক্ষোভকারী রাত ১টার পর জড়ো হতে থাকেন ধানমন্ডির শংকরে ছায়ানটের সামনে।

ঐতিহ্যবাহী এ ভবন ও সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটে হামলার বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা যায়, বিক্ষোভকারীরা দলে দলে সেখানে ঢুকে পড়ে ভাঙচুর চালাতে শুরু করে। তারা সংগঠনের নামফলক ভেঙে ফেলে। নিচ তলায় গিয়ে সব আসবাবপত্র ও বাদ্যযন্ত্র ভেঙে ফেলে।

ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে তিন তলা পর্যন্ত প্রায় প্রতিটি কক্ষ ভেঙে চুরমার করার চিত্র দেখা যায়। মিলনায়তনে হামলাকারীর যা পেয়েছেন সেটিই ভাঙচুর করেছেন। পুরো মনিটরিং সিস্টেম, লাইট ও ফ্যান ভেঙে ফেলা হয়েছে। সেখানে থাকা মাটির তৈরি চারুকর্ম ও শিল্প কর্ম ভেঙে ফেলা হয়েছে।

ভবনটিতে ঢুকে পড়া ব্যক্তিদের ক্ষোভের বলি হয়েছে প্রতিটি তলায় থাকা সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট এবং সেখানে পরিচালিত বিদ্যালয়ের সবগুলো কক্ষ ও অফিস রুম। বেশির ভাগ আসবাব ভেঙে ফেলা হয়েছে। কাগজপত্র ও সরঞ্জাম তছনছ করা হয়েছে।

এ ঘটনার ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন ভিডিওতে ভাঙচুরের সময় হামলাকারীদের বলতে শোনা যায় ‘ভারতীয় সংস্কৃতি চর্চার’ কোনো জায়গা নেই বাংলাদেশে।

ভিডিওতে দেখা যায়, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কক্ষও বাদ যায়নি। আলমারির গ্লাস ভেঙে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। চেয়ার-টেবিল সব ওলট পালট করা হয়েছে। ফ্যান ও জানালাও ভাঙচুর করা হয়েছে।

ধানমন্ডি থানার দায়িত্বরত কর্মকর্তা মিথুন সিংহ বলেন, ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়ার কিছু পরেই ছায়ানটে হামলার ঘটনা ঘটে। পুলিশের ধারণা বিক্ষোভকারীদের একই অংশ এ দুই হামলা চালিয়েছে।

খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ ও সেনাবাহিনী পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এ হামলার পর ছায়ানট ভবনে পরিচালিত ‘ছায়ানট সঙ্গীতবিদ্যায়তনের’ ক্লাসসহ সংগঠনের সব কার্যক্রম পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত স্থগিত রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

রাত সাড়ে ৩টার দিকে ছায়ানটের ফেইসবুকে পেইজে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।

বাঙালিকে আপন সংস্কৃতি ও দেশীয় বৈশিষ্ট্যে স্বাধীনসত্তায় বিকশিত হতে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে ১৯৬১ সালে প্রতিষ্ঠিত ছায়ানট এর আগে প্রাণঘাতি হামলার মুখেও পড়েছে।

পাকিস্তানি শাসকদের বাধা উপেক্ষা করে ১৯৬১ সালে রবীন্দ্রজন্মশতবর্ষ উদযাপন এবং তার সূত্র ধরে পরে সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানটের জন্ম। প্রতি বছর বাংলা নববর্ষে রমনা বটমূলে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান করে এটি পরিচিতি পেয়েছে।

বর্ষবরণেই সেই ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠানটিই ২০০১ সালে ভয়াবহ এক বোমা হামলার শিকার হয়। এতে প্রাণ য়ায় ১০ জনের এবং আহত হন বেশ কয়েকজন।

এরপরও দমে যায়নি ছায়ানট; সাংস্কৃতিক অঙ্গন ও সংগীতের দুই পুরোধা ওয়াহিদুল হক ও সন‌্জীদা খাতুনের নেতৃত্বে এগিয়ে যায় সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড।

এদিন রাতের হামলার পর সংগঠনটির সদস্য, ছাত্র ও শুভাকাঙ্খীরা সোশাল মিডিয়ায় সরব হয়ে বলেছেন, এ আঘাতেও তাদের কর্মকাণ্ড বন্ধ হবে না।

‘জাতীয়’ : আরও খবর

» প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার ভবন ‘ধ্বংসস্তূপ’, এখনো উড়ছে ধোঁয়া

» ঐতিহ্য সুরক্ষায় জাতীয় কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরলো ইউনেস্কো

» বাংলাদেশের জলসীমা থেকে ৯ জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে আরাকান আর্মি

» বায়দূষণে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ায় বছরে প্রায় ১০ লাখ মানুষের অকাল মৃত্যু: বিশ্বব্যাংক

» নির্বাচন: দেশের সব ভোটকেন্দ্রে থাকবে সিসি ক্যামেরা

» কলকাতা বইমেলায় এবারও থাকছে না বাংলাদেশ

» বিদায় সংবর্ধনায় প্রধান বিচারপতি: জুলাই বিপ্লব সংবিধানকে উল্টে দেয়ার প্রস্তাব করেনি, শুদ্ধ করার প্রস্তাব করেছিল

» বাংলা একাডেমি পুরস্কার পেলেন ৯ জন

» নির্বাচন: পাবনার দুটি আসনের সীমানা আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দিতে হাইকোর্টের রায়

» ফয়সাল করিমকে সীমান্তপারে সহায়তার অভিযোগে গ্রেপ্তারকৃত দুইজন রিমান্ডে

সম্প্রতি