ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরীফ ওসমান বিন হাদি হত্যাকাণ্ডের সুযোগ নিয়ে কিছুসংখ্যক ‘উগ্র, অবিবেচক গোষ্ঠী’ দেশের বিভিন্ন স্থানে অরাজকতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আববার। সিঙ্গাপুরে হাদি মারা যাওয়ার খবর দেশে আসার পর মধ্যরাতে দুই দৈনিক সংবাদপত্র প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টারের কার্যালয় এবং ছায়ানট আর পরের দিন উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর কার্যালয়ে হামলা ও অগ্নিসংযোগের নিন্দাও করেছেন তিনি।
শনিবার,(২০ ডিসেম্বর ২০২৫) এক বিবৃতিতে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন,‘শহীদ শরীফ ওসমান হাদির শাহাদাতের হৃদয়বিদারক ঘটনায় যখন গোটা জাতি শোকাহত, তখন এ ঘটনার অপসুযোগ নিয়ে কিছুসংখ্যক উগ্র, অবিবেচক গোষ্ঠী দেশের বিভিন্ন স্থানে অরাজকতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে।
‘এই গোষ্ঠী বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ছায়ানটের ভবন আক্রমণ করেছে। তাতে অগ্নিসংযোগ করেছে এবং এই প্রতিষ্ঠানের অনেক সংগীত ও শিক্ষা উপকরণ ধ্বংস করেছে।’
রাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তার পাঠানো এ বিবৃতিতে বলা হয়,‘ছায়ানটের পরিচালনায় ওই ভবনে নালন্দা নামে যে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম পরিচালিত হয়, এই আক্রমণে সেটিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। একই সঙ্গে সাংস্কৃতিক সংগঠন উদীচীর কার্যালয়ে আক্রমণ ও অগ্নিসংযোগের নিন্দা জানাই।’
উপদেষ্টা সি আর আবরার বলেন,‘বাংলাদেশের দুটি সংবাদপত্র প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টারের কার্যালয়ে সংঘটিত আক্রমণ এবং এ দেশের প্রবীণ ও সাহসী সাংবাদিক নূরুল কবীরকে অপদস্থ করার হীন কর্মকাণ্ডে আমি গভীর উদ্বেগ ও তীব্র নিন্দা প্রকাশ করছি। ‘স্বার্থান্বেষী মহলের এ ধরনের কার্যকলাপ জুলাই আন্দোলনের চেতনাকে কালিমালিপ্ত করার অপপ্রয়াসই শুধু নয়; এর ফলে বাংলাদেশবিরোধী ফ্যাসিস্ট অপশক্তির ষড়যন্ত্র সফল হওয়ার আশঙ্কাও দেখা দিতে পারে।’
গত বৃহ্স্পতিবার মধ্যরাতের পর একদল বিক্ষোভকারী হাদির মৃত্যুর খবরে ক্ষোভ-বিক্ষোভের মধ্যে বাঙালি সংস্কৃতি চর্চার ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট ভবনে হামলা ও ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়। দেয়া হয় আগুন। গত বৃহ্স্পতিবার মধ্যরাতের পর একদল বিক্ষোভকারী ধানমন্ডির সাততলা এ ভবনের বিভিন্ন তলায় গিয়ে প্রতিটি কক্ষে ব্যাপক ভাঙচুর করেছে। তাদের ক্ষোভের বলি হয়েছে বিভিন্ন তলায় থাকা বাদ্যযন্ত্র ও শিল্প কর্ম। এর পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন কক্ষে থাকা কাগজপত্র ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়ে থাকতে দেখা গেছে একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের লাইভের ভিডিওতে। মুখ কাপড় দিয়ে ঢেকে রেখে ও হেলমেট পরে আসা হামলাকারীরা বিভিন্ন তলায় ভাঙচুর শেষে চলে যাবার সময় ভবনের সামনে আগুন দেয়। তবে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা আসার আগেই সেই আগুন নিভে যাওয়ায় বড় অগ্নিকাণ্ড থেকে রক্ষা পায় বাঙালির সাংস্কৃতিক জাগরণের নেতৃত্ব দেয়া সংগঠনটি।
সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন হাদির মৃত্যুর খবর আসার পর শাহবাগসহ রাজধানী ও দেশের বিভিন্ন স্থানে ক্ষোভ বিক্ষোভের মধ্যে বিভিন্ন স্থানে হামলার খবরের মধ্যে একদল বিক্ষোভকারী রাত ১টার পর জড়ো হতে থাকেন ধানমন্ডির শংকরে ছায়ানটের সামনে। ঐতিহ্যবাহী এ ভবন ও সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটে হামলার বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা যায়, বিক্ষোভকারীরা দলে দলে সেখানে ঢুকে পড়ে ভাঙচুর চালাতে শুরু করে। তারা সংগঠনের নামফলক ভেঙে ফেলে। নিচ তলায় গিয়ে সব আসবাবপত্র ও বাদ্যযন্ত্র ভেঙে ফেলে।এর আগে হাদির মৃত্যুর খবরে বিক্ষুব্ধ জনতা হামলা করেছে রাজধানীর কাওরান বাজারে অবস্থিত দৈনিক প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার ভবনে। ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার পর প্রায় ১০ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন পুরোপুরি নেভাতে সক্ষম হয়। শনিবার সকালে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, দমকলকর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণ ও ক্ষয়ক্ষতির পর্যালোচনার কাজ করছেন। ভবনের সামনে উৎসুক জনতার ভিড় জমেছে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে পুলিশ সদস্যদেরও অবস্থান করতে দেখা গেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ডেইলি স্টার ভবনের ১ থেকে ৩ তলা পর্যন্ত আগুনে পুড়ে গেছে। আগুনে এসব তলার অফিস কক্ষ, আসবাব ও গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্যদিকে ৪ থেকে ৭তলা পর্যন্ত অফিসের প্রায় সব সামগ্রী লুটপাট ও ভাঙচুর করা হয়েছে। কাগজপত্র, কম্পিউটার, আসবাবসহ বিভিন্ন উপকরণ তছনছ করে ফেলা হয়েছে। এক কথায় পুরো ভবনই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। এছাড়া হামলায় প্রথম আলো ভবন পুরোপুরি ধ্বংসস্তুপ। ভবনের চারটি তলার যাবতীয় সবকিছু আগুনে পুড়ে গেছে। আগুনে ঝলসে যাওয়া ভবনের সামনে সকাল থেকেই ছিল উৎসুক মানুষের ভিড়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ভবন দুটির প্রধান ফটকে দায়িত্বরত অবস্থায় দেখা গেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের।