image

মুক্তিযুদ্ধের উপ-সেনাপতি এ কে খন্দকারের জীবনাবসান

শনিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫
সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

মুক্তিযুদ্ধের উপ-সেনাপতি, সাবেক বিমান বাহিনীপ্রধান ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল করিম খন্দকার (এ কে খন্দকার) বীরউত্তম মারা গেছেন। তার বয়স হয়েছিল প্রায় ৯৬ বছর। তিনি কিছুদিন ধরে বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। শনিবার,(২০ ডিসেম্বর ২০২৫) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মারা গেছেন বলে আইএসপিআরের এক বার্তায় জানানো হয়েছে। এ কে খন্দকার দুই ছেলে, এক কন্যা ও তিন নাতি-নাতনিসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। এর আগে গত ৮ জুন ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার সহধর্মিণী ফরিদা খন্দকার ইন্তেকাল করেন।

মুক্তিযুদ্ধের সময় গঠিত বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রথম প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল এ কে খন্দকার রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আমলে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। পরে এইচ এম এরশাদের সামরিক শাসনামলে পরিকল্পনামন্ত্রী হন। এরপর ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে পাবনা থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর পাঁচ বছর শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভায় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন এ কে খন্দকার। মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকার জন্য ২০১১ সালে এ কে খন্দকারকে স্বাধীনতা পদক দেয় সরকার।

২০১৪ সালের ৩ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত এ কে খন্দকারের ‘১৯৭১: ভেতরে বাইরে’ বইটিতে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ভুল তথ্য থাকায় তখন ব্যাপক সমালোচনা হয়। সে সময় সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব ছাড়েন এ কে খন্দকার। প্রকাশের চার বছর পর ২০১৯ সালে তিনি বইটির একটি অনুচ্ছেদ প্রত্যাহার করে নেন এবং ভুল তথ্য দেয়ার জন্য জাতি ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মার কাছে ক্ষমা চান।

এ কে খন্দকার ১৯৩০ সালের ১ জানুয়ারি জন্মগ্রহন করেন। তার পৈত্রিক বাড়ি পাবনার বেড়া উপজেলার পুরান ভারেঙ্গা গ্রামে হলেও তার জন্ম হয় রংপুরে। বাবার এ কর্মস্থলে বাবা খন্দকার আব্দুল লতিফের চাকরির সুবাদে তার পড়ালেখার হাতেখড়ি হয় নওগাঁ মিউনিসিপ্যাল স্কুলে। এরপর ১৯৪৭ সালে মালদহ স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন এবং ১৯৪৯ সালে রাজশাহী কলেজ থেকে ইন্টারমেডিয়েট পাস করেন। ঢাকা আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (বর্তমান বুয়েট) অধ্যয়নরত অবস্থায় তিনি পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে যোগ দেন, কমিশন পান ১৯৫২ সালে। ১৯৫১-১৯৬৯ পর্যন্ত বিমান বাহিনীর বিভিন্ন পদমর্যাদায় পশ্চিম পাকিস্তানে কাটে একে খন্দকারের। ১৯৬৯ সালে তিনি পাকিস্তান বিমান বাহিনীর ঢাকা ঘাঁটিতে উইং কমান্ডার হিসেবে বদলি হয়ে আসেন। সেই সময়ের উত্তাল দিন খুব কাছ থেকে দেখেন। এরপর একাত্তরের ২৫ মার্চ নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর ‘অপারেশন সার্চলাইট’ শুরু হয়। ২৮ মার্চ এ কে খন্দকার ২ সপ্তাহের জন্য ছুটির আবেদন করেন এবং তা মঞ্জুর হয়। তারপর তিন দফার চেষ্টায় ১৫ মে তিনি পরিবার ও বিমান বাহিনীর কয়েকজন বাঙালি কর্মকর্তাকে নিয়ে ভারতের আগরতলায় পৌঁছান। ভারতের নাগাল্যান্ডে ২ মাস প্রশিক্ষণ শেষে ভারতের দেয়া ৩টি বেসামরিক বিমান ও কয়েকজন বাঙালি বৈমানিক নিয়ে ২৮ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর যাত্রা শুরু হয়। ডিসেম্বর মাসের শুরুর দিকে মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সঙ্গে পাকিস্তানি বাহিনীর সরাসরি যুদ্ধ শুরু হলে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর বৈমানিকরা শত্রুর বিরুদ্ধে বেশ কিছু সফল আক্রমণ পরিচালনা করেন। স্বাধীনতার পর এ কে খন্দকার প্রধান হিসেবে বিমান বাহিনীতে যোগ দেন। মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ স্বাধীনতার পরে তাকে ‘বীর উত্তম’ খেতাব দেয়া হয়।

প্রধান উপদেষ্টার শোক

এ কে খন্দকারের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। এক শোকবার্তায় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এ কে খন্দকার ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক অবিস্মরণীয় সৈনিক। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি সাহসিকতা, দূরদর্শিতা ও নেতৃত্বগুণের পরিচয় দিয়ে দেশের স্বাধীনতা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে মুক্তিবাহিনীর ডেপুটি চিফ অব স্টাফ হিসেবে তার কৌশলগত সিদ্ধান্ত, সাংগঠনিক দক্ষতা ও অটল দেশপ্রেম স্বাধীনতার সংগ্রামকে আরও সুসংহত করেছিল।’ প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তার কর্ম, চিন্তা ও আদর্শ নতুন প্রজন্মের জন্য আজীবন অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।

মির্জা ফখরুলের শোক

মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য একে খন্দকার স্মরণীয় হয়ে থাকবেন বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এক বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশের প্রতি মমত্ববোধ ও দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য তার নিবেদিত ভূমিকা অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

‘জাতীয়’ : আরও খবর

» স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম ইনকিলাব মঞ্চের

সম্প্রতি