image
রোববার, ঢাকা সেনানিবাসের কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে সুদানে নিহত সেনাবাহিনীর ছয় সদস্যের জানাজা অনুষ্ঠিত হয় -সংবাদ

সুদানে নিহত সেনাবাহিনীর ছয় শান্তিরক্ষীর জানাজা অনুষ্ঠিত

রোববার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫
সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

সুদানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের ঘাঁটিতে ড্রোন হামলায় নিহত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ছয় সদস্যের জানাজা ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার, (২১ ডিসেম্বর ২০২৫) সকাল সোয়া ৯টায় ঢাকা সেনানিবাসের কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে এ জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশগ্রহণ করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান, বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁনসহ সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তারা।

জানাজা শেষে নিহতদের প্রতি রাষ্ট্রীয় সম্মাননা দেয়া হয়। এ সময় রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের তরফে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এরপর একে একে তিন বাহিনী প্রধান নিহতদের কফিনে শ্রদ্ধা জানান। নিহতদের মরদেহ নিজ নিজ এলাকায় পাঠানোর কথা রয়েছে। তাদের দাফন সামরিক মর্যাদায় সম্পন্ন করা হবে।

জানাজার আগে শাহাদাত বরণকারীদের জীবনবৃত্তান্ত পাঠ করে শোনানো হয় এবং তাদের নিকট আত্মীয়রা বক্তব্য দেন। এরপর জাতিসংঘ মহাসচিবের পক্ষে ইউনিসফার চিফ কমিউনিটি লিয়াজোঁ অফিসার মি. বরিস-এফ্রেম চৌমাভি বক্তব্য দেন। জানাজা শেষে তাদের প্রতি যথাযথ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা প্রদান করা হয়। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার পক্ষে তার সামরিক সচিব পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শাহাদাত বরণকারীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর ইউনিসফার চিফ কমিউনিটি লিয়াজোঁ অফিসার শহীদ শান্তিরক্ষীদের নিকট আত্মীয়দের কাছে জাতিসংঘ মহাসচিবের পক্ষ থেকে জাতিসংঘের পতাকা হস্তান্তর করেন। জানাজা শেষে শাহাদাত বরণকারীদের পরিবারের কাছে প্রধান উপদেষ্টার স্বাক্ষরিত পৃথক শোকবার্তা হস্তান্তর করা হয়।

ড্রোন হামলার ঘটনায় বাংলাদেশ সরকার ও জাতিসংঘের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ইতোপূর্বে তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে একটি আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদপত্র পাঠানো হয়েছে এবং ইউনিসফাসহ সব মিশন এলাকায় দ্রুত ড্রোন প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে। সন্ত্রাসী ড্রোন হামলায় আহত নয়জন শান্তিরক্ষীর মধ্যে আটজন কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে অবস্থিত আগা খান ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে (লেভেলু ৩ হাসপাতাল) চিকিৎসাধীন। বর্তমানে সবাই শঙ্কামুক্ত রয়েছেন।

এর আগে গত শনিবার সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে নিহত শান্তিরক্ষীদের কফিন বহনকারী বিমান শাহাজালাল বিমানবন্দরে পৌঁছায় বলে জানিয়েছে আইএসপিআর। নিহতরা হলেন- কর্পোরাল মো. মাসুদ রানা (নাটোর), সৈনিক মো. মমিনুল ইসলাম (কুড়িগ্রাম), শামীম রেজা (রাজবাড়ী) ও শান্ত মন্ডল (কুড়িগ্রাম), মেস ওয়েটার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম (কিশোরগঞ্জ) এবং লন্ড্রি কর্মচারী মো. সবুজ মিয়া (গাইবান্ধা)।

আহত শান্তিরক্ষীরা হলেন- লেফটেন্যান্ট কর্নেল খোন্দকার খালেকুজ্জামান (কুষ্টিয়া), সার্জেন্ট মো. মোস্তাকিম হোসেন (দিনাজপুর), কর্পোরাল আফরোজা পারভিন ইতি (ঢাকা), ল্যান্স কর্পোরাল মহিবুল ইসলাম (বরগুনা), সৈনিক মো. মেজবাউল কবির (কুড়িগ্রাম), মোসা. উম্মে হানি আক্তার (রংপুর), চুমকি আক্তার (মানিকগঞ্জ) ও মো. মানাজির আহসান (নোয়াখালী)।

কুড়িগ্রামের দুই শান্তিরক্ষীকে

গ্রামের বাড়িতে দাফন

নিহত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ছয় সদস্যের মধ্যে কুড়িগ্রামের দুইজনকে তাদের গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়েছে। রোববার, দুপুরে দুই সেনা সদস্যের লাশ ঢাকা থেকে সামরিক হেলিকপ্টারে করে উলিপুর উপজেলার হেলিপ্যাডে নামানো হয়। পরে আলাদা অ্যাম্বুলেন্সে মো. মমিনুল ইসলামের মৃতদেহ উলিপুরের উত্তর পকুল গ্রামে এবং আরেক সেনা

সদস্য শান্ত মণ্ডলকে রাজারহাট উপজেলার ছাট মাধাই গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। লাশ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছালে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। পরে দুই সেনা সদস্যের মৃতদেহ তাদের গ্রামের বাড়িতে সামরিক মর্যাদায় দাফন করা হয়।

নিহত মমিনুল ইসলাম ২০০৮ সালে সেনাবাহিনীতে সৈনিক পদে যোগদান করেন। তিনি চলতি বছরে মিশনে যোগ দেন। দুই কন্যা সন্তানের জনক তিনি। মমিনুলের মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। অপর নিহত ব্যক্তি শান্ত মণ্ডল ২০১৮ সালে সেনাবাহিনীতে সৈনিক পদে যোগদান করেন। দুই বছর আগে দিলরুবা আক্তার বৃষ্টির সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় শান্ত। বর্তমানে বৃষ্টি পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা বলে জানিয়েছে পরিবার।

গত ১৩ ডিসেম্বর সুদানের আবেই এলাকায় বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠীর ড্রোন হামলায় ছয় বাংলাদেশি নিহত এবং আটজন আহত হন। পরবর্তীতে আরও একজন আহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ায় মোট আহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ৯ জনে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আহত সব শান্তিরক্ষীকে দ্রুত সর্বোচ্চ চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন, জাতিসংঘের পতাকাতলে বিশ্বশান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় জীবন উৎসর্গ করা এই ছয় সেনা সদস্যের আত্মত্যাগ শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের অঙ্গীকারের এক উজ্জ্বল ও গৌরবময় দৃষ্টান্ত। আইএসপিআর বলছে, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের অবদান আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। ১৯৪৮ সালে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশন শুরু হলেও বাংলাদেশ এতে যুক্ত হয় ১৯৮৮ সালে। ইরান-ইরাক সামরিক পর্যবেক্ষক মিশনে ১৫ জন সদস্য পাঠানোর মাধ্যমে এই যাত্রার সূচনা হয়। বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বের ১০টি দেশে শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালন করছে। প্রথমবারের মতো ডিআর কঙ্গোতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তিনটি হেলিকপ্টারও মোতায়েন করা হয়েছে।

শুরু থেকে এ পর্যন্ত জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের ১৬৮ জন সদস্য প্রাণ দিয়েছেন। তাদের মধ্যে সেনাবাহিনীর ১৩১ জন, নৌ-বাহিনীর ৪ জন, বিমান বাহিনীর ৬ জন এবং পুলিশের ২৪ জন সদস্য রয়েছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন ২৭২ জন। সেনা সদস্যদের পাশাপাশি বাংলাদেশি চিকিৎসক ও প্রকৌশলীরাও বিভিন্ন মিশনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছেন। যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি স্থানীয় জনগণের কল্যাণ, পুনর্গঠন, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং নারী ও শিশু সুরক্ষায় বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের ভূমিকা আলাদাভাবে প্রশংসিত। বিশ্ব সম্প্রদায় বাংলাদেশের এই ভূমিকার জন্য দেশটিকে ‘শান্তির কূটনীতির মোরসাল’ হিসেবেও অভিহিত করে। সুদানসহ বিশ্বের বিভিন্ন সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার কঠিন দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে জীবন উৎসর্গ করা এ ছয় বীরের মরদেহ গত শনিবার প্রিয় মাতৃভূমির মাটি স্পর্শ করে।

‘জাতীয়’ : আরও খবর

» হাদি হত্যা: সিবিউন ও সঞ্জয় আবারও ৫ দিনের রিমান্ডে

সম্প্রতি