হাদি হত্যা: সিবিউন ও সঞ্জয় আবারও ৫ দিনের রিমান্ডে

গ্রেপ্তার হান্নানের জামিন

রোববার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫
সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদিকে গুলি করে হত্যার মামলায় সীমান্ত এলাকা থেকে গ্রেপ্তার সিবিউন দিউ ও সঞ্জয় চিসিমকে আবারও জিজ্ঞাসাবাদে ৫ দিন হেফাজতে নেয়ার অনুমতি পেয়েছে পুলিশ। তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে রোববার, (২১ ডিসেম্বর ২০২৫) সন্ধ্যায় ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম মো. সেফাতুল্লাহ তাদের রিমান্ডের আদেশ দিয়েছেন।

তিন দিনের রিমান্ড শেষে রোববার, তাদের আদালতে হাজির করা হয়। তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের মতিঝিল আঞ্চলিক টিমের পরিদর্শক ফয়সাল আহমেদ তাদের ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। আসামিদের পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ডের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। পরে আদালত তাদের রিমান্ডের আদেশ দেয়।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে পরিচিতি পাওয়া ঢাকা ৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী হাদি খুব কাছ থেকে আততায়ীর গুলিতে গুরুতর আহত হন গত ১২ ডিসেম্বর। ঢাকা ও সিঙ্গাপুরে সপ্তাহখানেক চিকিৎসাধীন থাকার পর গত বৃহস্পতিবার তার মৃত্যু হয়। হাদিকে গুলির তিন দিন পর ১৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় শেরপুরের নালিতাবাড়ী সীমান্ত থেকে সিবিউন দিউ ও সঞ্জয় চিসিমকে আটক করে বিজিবি। জিজ্ঞাসাবাদের পর তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে গত ১৮ ডিসেম্বর আদালতে হাজির করা হয়। এ দিন তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে বিচারক তাদের তিন দিন রিমান্ড মঞ্জুর করেন। সেই রিমান্ড শেষে রোববার, আবারও তাদের রিমান্ড আবেদন করা হয়।

তদন্ত কর্মকর্তা এ রিমান্ড আবেদনে বলেন, সীমান্ত পারাপার চক্রের ‘হোতা’ ফিলিপ নামে এক ব্যক্তির নেতৃত্বে সিবিউন ও সঞ্জয় কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছিলেন। ফিলিপের অবস্থান শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে এ আসামিদের পুনরায় ব্যাপকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। আসামিদের পালানোতে ফিলিপ ছাড়াও অন্য কারও সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখতে পুনরায় জিজ্ঞাসাবাদ প্রয়োজন। ফিলিপের সঙ্গে কে বা কারা যোগাযোগ করেছে, তা জানার জন্যও পুনরায় জিজ্ঞাসাবাদ প্রয়োজন।

গ্রেপ্তার সেই হান্নানের জামিন

হাদি হত্যায় ব্যবহৃত বলে যে মোটরসাইকেলের তথ্য দিয়েছিল র‌্যাব, সেই বাইকটির এক সময়ের মালিক আব্দুল হান্নানকে জামিন দিয়েছে আদালত। রোববার, শুনানি নিয়ে এ আদেশ দেন ঢাকার মহানগর হাকিম হাসান শাহাদাত। প্রসিকিউশন বিভাগের এসআই মাসুম মিয়া জানান, হান্নানের পক্ষে তার আইনজীবী জামিন আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত তার জামিন মঞ্জুর করেছে।

ওই বাইকটির নিবন্ধন নম্বর (ঢাকা মেট্রো ল-৫৪-৬৩৭৫) জানিয়ে তার মালিক হান্নানকে পরদিন বিকালে মোহাম্মদপুরের চাঁদ উদ্যান এলাকা থেকে আটক করে র‌্যাব। এরপর ১৪ ডিসেম্বর সকালে তাকে পল্টন থানায় সোপর্দ করা হয়। ওইদিনই ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে হান্নানকে ৩ দিনের রিমান্ডে পায় পুলিশ। রিমান্ড আবেদন শুনানিতে হান্নান আদালতকে বলেন, বাসায় পড়ে থাকায় বাইকটি তিনি শোরুমে বিক্রি করে দিয়েছিলেন। অসুস্থ থাকায় মালিকানা পরিবর্তন করা সম্ভব হয়নি।

রিমান্ড চলাকালে তাকে শোরুম মালিকের মুখোমুখি করা হয়। বিআরটিএ-তে তার নামে রেজিস্ট্রেশন করা দুটি গাড়ির তথ্য পাওয়া যায়। এর মধ্যে একটি সুজুকি জিক্সার, অন্যটি ইয়ামাহা ব্র্যান্ডের। রিমান্ড শেষে গত ১৭ ডিসেম্বর হান্নানকে কারাগারে পাঠানো হয়। এর মধ্যে ডিএমপি জানায়, সিসি ক্যামেরার ভিডিও বিশ্লেষণের মাধ্যমে গত ১৪ ডিসেম্বর হামলায় ব্যবহৃত হোন্ডা হর্নেট মোটরসাইকেল, হেলমেট ও ভুয়া নম্বর প্লেট রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বনলতা আবাসিক এলাকা থেকে উদ্ধার করেছে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট (সিটিটিসি)।

হত্যায় ব্যবহৃত হোন্ডা হর্নেট মোটরসাইকেলটির প্রকৃত নিবন্ধন নম্বর ঢাকা মেট্রো ল-৫৪-৬৫৭৪ জানিয়ে ডিএমপি জানায়, গুলি চালানোর সময় ঢাকা মেট্রো ল-৫৪-৬৩৭৬ নম্বরের ভুয়া প্লেট ব্যবহার করা হয়। অথচ হান্নানের মোটরসাইকেল নম্বরটি সুজুকি ব্র্যান্ডের জিক্সার মডেলের বাইক নিবন্ধিত। এসব বিষয় জামিন আবেদনের শুনানিতে তুলে ধরা হয়।

এর আগে গত ১৪ ডিসেম্বর রাতে পল্টন থানায় হাদি হত্যাচেষ্টা মামলা করেন ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের। হাদি হত্যার মামলায় গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে অন্যরা হলেন- প্রধান আসামি ফয়সাল করিম মাসুদের বাবা মো. হুমায়ুন কবির ও মা মোসা. হাসি বেগম, স্ত্রী সাহেদা পারভীন সামিয়া, বন্ধু মারিয়া আক্তার লিমা ও শ্যালক ওয়াহিদ আহমেদ সিপু, রেন্ট-এ কার ব্যবসায়ী মো. মুফতি নুরুজ্জামান নোমানী ওরফে উজ্জ্বল, ফয়সালের সহযোগী মো. কবির। এর মধ্যে হুমায়ুন ও হাসি দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। রিমান্ড শেষে নুরুজ্জামানকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অন্য আসামিরা রিমান্ডে রয়েছেন।

‘জাতীয়’ : আরও খবর

সম্প্রতি