image

আইনশৃঙ্খলা: কঠোর হচ্ছে ইসি, নামছে এক লাখ সেনা, জোরদার হচ্ছে যৌথ অভিযান

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে ইসির উচ্চপর্যায়ের বৈঠক

রোববার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫
সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ভোটের মাঠের নিরাপত্তা নিশ্চিতে এবং জনমনে স্বস্তি ফেরাতে পুনরায় যৌথ বাহিনীর কঠোর অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এছাড়া নির্বাচনে ১ লাখ সেনা মোতায়েন এবং প্রযুক্তির সহায়তায় আগামী ৭২ ঘণ্টা সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে।

রোববার,(২১ ডিসেম্বর ২০২৫) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে ইসির উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে এসব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। প্রথমে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক করেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌপ্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান এবং বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন। তপশিল ঘোষণার পর তিন বাহিনী প্রধানের সঙ্গে ইসির এটিই ছিল প্রথম সাক্ষাৎ। পরবর্তীতে দুপুর ২টা ৫০ মিনিটে নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে সিইসির সভাপতিত্বে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক মূল বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়, যা দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলে। এতে চার নির্বাচন কমিশনার, স্বরাষ্ট্র সচিব, তিন বাহিনীর প্রতিনিধি, আইজিপি, র‌্যাব, বিজিবি, কোস্টগার্ড, এনএসআই, ডিজিএফআই এবং আনসার ও ভিডিপির মহাপরিচালকসহ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ জানান, নির্বাচন ও গণভোটকে সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এখন থেকে যৌথ বাহিনীর অভিযান আরও জোরদার করা হবে। তিনি উল্লেখ করে বলেন, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম রোধে এই অভিযান পরিচালিত হবে।

সানাউল্লাহ বলেন, ‘অভিযান চলমান আছে এবং প্রতিদিনই প্রায় দুই হাজার জন করে গ্রেপ্তার হচ্ছে। তবে এখন থেকে এই অভিযান পুনরায় কঠোরভাবে শুরু হবে।’ নির্বাচন কমিশন মনে করছে, যৌথ বাহিনীর এই অভিযান সাধারণ মানুষের মধ্যে আস্থা তৈরিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নির্বাচনে মোট ১ লাখ সেনা সদস্য মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশনার সানাউল্লাহ জানান, ইতোমধ্যে এক-তৃতীয়াংশ সেনা মোতায়েন করা হয়েছে এবং ধাপে ধাপে বাকিদের নামানো হবে। তিন বাহিনী প্রধান সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বলে জানান তিনি।

ভোটের দিন এবং এর আগে ও পরে মোট ৭২ ঘণ্টা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মনিটরিংয়ের জন্য বিশেষ অ্যাপ ব্যবহার করবে ইসি। ‘আইনশৃঙ্খলা মনিটরিং অ্যাপের’ মাধ্যমে দেশের ৩০০ আসনের মানচিত্র চিহ্নিত থাকবে এবং কেন্দ্র দখল, ব্যালট ছিনতাই বা সহিংসতার ঘটনা ঘটলে প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা তাৎক্ষণিকভাবে ছবি, ভিডিও বা ভয়েস রেকর্ড পাঠাতে পারবেন।

অ্যাপের কর্মপ্রক্রিয়া সম্পর্কে জানানো হয়, মাঠ পর্যায় থেকে পাঠানো তথ্য প্রথমে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও মনিটরিং সেলের কাছে যাবে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না এলে তা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে এবং শেষ পর্যায়ে সরাসরি ইসির কাছে পৌঁছাবে। তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা হিসেবে ইসি সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ বন্ধসহ যেকোনো কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারবে।

নির্বাচনী পরিবেশ বিঘ্নিত করার চেষ্টাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে কমিশন। নির্বাচন কমিশনার সানাউল্লাহ বলেন, ‘মেসেজ ইজ ক্লিয়ার, আর কোনো ঘটনা ঘটার সুযোগ দেয়া হবে না। যারা হত্যাকাণ্ড বা নাশকতা ঘটাতে চায়, তাদের প্রতি মানবিক না হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’

তিনি আরও উল্লেখ করেন, চোরাগুপ্তা হামলা পরাজিত শক্তির কৌশল। নাশকতা করে কেউ যাতে পালাতে না পারে, সেজন্য প্রশাসনকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, তদন্তে অগ্রগতি হয়েছে এবং ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মূল হত্যাকারীদের ধরতে অভিযান চলছে।

ইসি দাবি করেছে, বর্তমানে দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তবে শহরাঞ্চলে কিছু নাশকতার ঝুঁকি বা ‘টার্গেট’ রয়েছে । জনমনে স্বস্তি ফেরাতে এবং উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট সম্পন্ন করতে ভোটারদের নিরাপত্তা, প্রার্থীদের নির্বিঘ্নে প্রচারণার সুযোগ এবং নির্বাচনী অবকাঠামো সুরক্ষায় সব বাহিনীকে সমন্বিতভাবে কাজ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

নির্বাচন কমিশন স্পষ্ট জানিয়েছে, নির্বাচনী পরিবেশ ব্যাহত করে এমন কোনো কর্মকাণ্ড বরদাস্ত করা হবে না এবং প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সর্বোচ্চ কঠোর হওয়ার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।

‘জাতীয়’ : আরও খবর

» হাদি হত্যা: সিবিউন ও সঞ্জয় আবারও ৫ দিনের রিমান্ডে

সম্প্রতি