ডেঙ্গুতে আরও ১৯৪ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে এবং চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে রোববার,(২১ ডিসেম্বর ২০২৫) পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১,০১,৭৯১ জন এবং চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৪১২ জন মারা গেছেন। মহাখালী স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে এ তথ্য জানিয়েছে।
মশাবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণে জাতীয় প্রতিষ্ঠান দরকার: কীটতত্ত্ববিদ
গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তিকৃতদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ৩২ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৪৫ জন, ঢাকা বিভাগে ২৬ জন, ঢাকা উত্তর সিটিতে ২৮ জন, ঢাকা দক্ষিণে ২২ জন, খুলনা বিভাগে ২৩ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৫ জন, রাজশাহী বিভাগে ১২ জন এবং রংপুর বিভাগে ১ জন ভর্তি হয়েছে। ঢাকা দক্ষিণে ২ জন মারা গেছেন।
হাসপাতালে ভর্তিকৃতদের মধ্যে ৫ বছর বয়সের ৪ জন, ৬-১০ বছর বয়সের ৬ জন, ১১-১৫ বছর বয়সের ১২ জন, ১৬-২০ বছর বয়সের ২৩ জন, ২১-২৫ বছর বয়সের ২৫ জন, ২৬-৩০ বছর বয়সের ২৯ জন, ৩১-৩৫ বছর বয়সের ১৬ জন, ৩৬-৪০ বছর বয়সের ১৮ জন, ৭১-৭৫ বছর বয়সের ২ জন এবং ৮০ বছর বয়সের ১ জনসহ বিভিন্ন বয়সের ডেঙ্গু রোগী রয়েছে। এখনও রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ৯৪৫ জন ভর্তি আছে।
কীটতত্ত্ববিদ ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, শীতে এডিস মশার উপদ্রব আস্তে আস্তে কিছুটা কমলেও কিউলেক্স মশার উপদ্রব বাড়ছে। এখনই কিউলেক্স মশা মারার উদ্যোগ নেয়া জরুরি বলে বিশেষজ্ঞরা মন্তব্য করেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সতর্কবার্তা জারি করেছেন যে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পৃথিবীর অর্ধেক মানুষ ডেঙ্গু ঝুঁকিতে রয়েছে। বাংলাদেশেও এর প্রভাব পড়ছে।
মশার ঘনত্ব ও প্রজাতির বৈচিত্র্য বেশি থাকার কারণে মশাবাহিত রোগশোকের ঝুঁকিও অনেক বেশি বাংলাদেশে। বিভিন্ন বিজ্ঞানীদের গবেষণা অনুযায়ী বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ১২৬ প্রজাতির মশা শনাক্ত করা হয়েছে। তার মধ্যে বর্তমানে ঢাকায় ১৪-১৬ প্রজাতির মশা রয়েছে। মশাবাহিত রোগগুলোর মধ্যে- ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, ম্যালেরিয়া, ফাইলেরিয়া ও জাপানিজ অ্যানসেফালাইটিস হলো অন্যতম।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ঢাকায় প্রথম ডেঙ্গু দেখা দেয় ১৯৬৩ সালে। তখন এটিকে ঢাকা ফিভার হিসেবে চিহ্নিত করা বা নাম দেয়া হয়েছিল। ডেঙ্গুর প্রথম আউটব্রেক হয় ২০০০ সালে। তখন বিজ্ঞানীরা একে ডেঙ্গু হিসেবে চিহ্নিত করেন।
২০০৮ সালে বাংলাদেশে প্রথম চিকুনগুনিয়া ধরা পড়ে, যেটি ডেঙ্গুর মতো একটি রোগ। এই রোগটি চিকুনগুনিয়া ভাইরাস বহনকারী এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায়। ২০১১-২০১৭ পর্যন্ত প্রায় প্রতি বছর বাংলাদেশে চিকুনগুনিয়া শনাক্ত হয়।
ঢাকায় সবচেয়ে বেশি চিকুনগুনিয়া শনাক্ত হয় ২০১৬ ও ২০১৭ সালে। ঢাকা ও চট্টগ্রামে সম্প্রতি চিকুনগুনিয়া পরিস্থিতি জনস্বাস্থ্যের জন্য গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক ও কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার তার এক প্রতিবেদনে বলেছেন, মশাবাহিত রোগ থেকে মানুষের জীবন বাঁচানো, জনদুর্ভোগ ও আর্থিক ক্ষতি ঠেকাতে টেকসই পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়ন দরকার।
এছাড়া মশাবাহিত রোগ নিয়ে গবেষণা ও নিয়ন্ত্রণের জন্য জাতীয় প্রতিষ্ঠান হওয়ার দরকার। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, কীটতত্ত্ববিদ, গবেষক ও অন্যান্য অংশীজনের সম্মিলিত প্রয়াস ঘটাতে পারলে মশাবাহিত রোগ থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করা সম্ভব বলে তিনি মন্তব্য করেন।