আলোচিত ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন্স মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি) বিলুপ্ত করে আড়িপাতার ক্ষেত্রে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে নতুন আধা বিচারিক কাউন্সিল গঠনের বিধান রেখে টেলিযোগাযোগ (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫-এর চূড়ান্ত খসড়া অনুমোদন দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
আড়িপাততে নতুন সংস্থা সিআইএস; কাজ করবে
আধা বিচারিক কাউন্সিলের অনুমোদন নিয়ে
প্রতি চার মাসে বিটিআরসিকে গণশুনানি করতে হবে
এনটিএমসির বদলে গঠন করা হবে সেন্টার ফর ইনফরমেশন সাপোর্ট (সিআইএস) নামে নতুন একটি সংস্থা, যা আধা বিচারিক কাউন্সিলের অনুমোদন নিয়ে আড়িপাতার কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
বুধবার, (২৪ ডিসেম্বর ২০২৫) উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন পাওয়া নতুন অধ্যাদেশের খসড়ায় একই সঙ্গে ইন্টারনেট বা টেলিযোগাযোগ সেবা কখনোই বন্ধ করা যাবে না বলে ধারা সংযোজন করা হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে ঢাকার তেজগাঁওয়ে তার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের সভায় বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ অধ্যাদেশ সংশোধনের এ খসড়া অনুমোদন করা হয়। সভার পর প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে খসড়া অধ্যাদেশের সংশোধনীগুলোর বিষয়ে বলা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এ অধ্যাদেশের সংশোধন প্রস্তাব অনুমোদনের মাধ্যমে টেলিযোগাযোগ সেবার মান বাড়নো, এর রেগুলেশন এবং রাষ্ট্রের নজরদারি কাঠামোতে গঠনমূলক পরিবর্তন আনা হয়েছে। বেশ কিছুদিন ধরে এ আইনের বিরোধিতা করে কর্মসূচি পালন করে আসছিল বিভিন্ন মহল। দুই সপ্তাহ আগে উপদেষ্টা পরিষদে উঠলেও তা অনুমোদন করা হয়নি। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আপত্তির মুখে কিছু পরিমার্জনের পর এখন তা অন্তর্বর্তী সরকারের সবুজ সংকেত পেল।
এ আইনে যেসব বিধান রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে সেগুলোর সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেয়া হয়েছে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে। এর মধ্যে রয়েছে, ইন্টারনেট বা টেলিযোগাযোগ সেবা কখনই বন্ধ করা যাবে না। এতে বলা হয়, ২০১০ সালের ‘বিতর্কিত সংশোধনের’ কাঠামো থেকে বেরিয়ে এসে বিটিআরসির স্বাধীনতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় ও বিটিআরসির ক্ষমতা ও কার্যপরিধির মধ্যে ভারসাম্য আনা হয়েছে।
আগে সব লাইসেন্স ইস্যুর অনুমোদন মন্ত্রণালয় থেকে হলেও, এখন থেকে জাতীয় পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু লাইসেন্সে মন্ত্রণালয় ইন্ডিপেন্ডেন্ট স্টাডির ভিত্তিতে অনুমোদনের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত হবে ও অন্যান্য সব লাইসেন্স ইস্যু করার এখতিয়ার বিটিআরসির কাছে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। এছাড়া ডাক টেলিযোগাযোগ বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির সভাপতিত্বে একটি ‘জবাবদিহিতা কমিটি’ গঠন করা হয়েছে।
লাইসেন্সের আবেদন থেকে শুরু করে সিদ্ধান্ত পর্যন্ত সময় কমানো হয়েছে। এছাড়া আগের আইনে থাকা উচ্চ জরিমানা, ‘রিকারিং’ জরিমানা কমানো হয়েছে, যা টেলিযোগাযোগ খাতকে বিনিয়োগবান্ধব করবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়। সংশোধনের বিষয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এখন থেকে প্রতি চার মাসে বিটিআরসিকে গণশুনানি করতে হবে। তার ফলোআপ ওয়েবসাইটে রাখতে হবে এবং ‘কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট’ রোধেও বিধান করা হয়েছে নতুন আইনে।
সিম ও ডিভাইস রেজিস্ট্রেশনের তথ্য ব্যবহার করে কোনো নাগরিককে নজরদারি বা অযথা হয়রানি করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ করা হয়েছে। ‘স্পিচ অফেন্স’ সম্পর্কিত নিবর্তনমূলক ধারা পরিবর্তন করে সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৫-এর ধারাবাহিকতায় কেবল সহিংসতার আহ্বানকেই অপরাধের আওতাভুক্ত রাখা হয়েছে। টেলিযোগাযোগ সেবার ক্ষেত্রে আপিল এবং সালিশ বিষয়ক ধারা রাখা হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।
*আড়িপাতবে সিআইএস*
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আইনানুগ ইন্টারসেপশনের (আড়িপাতা) সংজ্ঞা এবং পরিধি স্পষ্টভাবে এবং সুবিস্তারে আইনে নির্ধারিত করা হয়েছে। কেবল বিচারিক ও জরুরি আইনানুগ আড়িপাতার প্রয়োজনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে ‘সেন্টার ফর ইনফরমেশন সাপোর্ট’ (সিআইএস) প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এটি বাধ্যতামূলকভাবে ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা অধ্যাদেশের মানদ- অনুযায়ী পরিচালিত হতে হবে।
সিআইএস প্রতিষ্ঠার জন্য বর্ণিত সংশোধনের মাধ্যমে এনটিএমসি বিলুপ্ত ঘোষণার প্রস্তাব করা হয়েছে অনমোদিত খসড়ায়। জাতীয় নিরাপত্তা, আইনশৃঙ্খলা, রুরি প্রাণরক্ষার প্রয়োজনে, বিচারিক বা তদন্তের প্রয়োজন এবং আন্তঃসীমান্ত সংক্রান্ত কাজে সুনির্দিষ্ট কার্যপদ্ধতি অনুসরণ করে আইনানুগ আড়িপাতার কাজ করতে পারবে। এ কাজ শুধু আইনে স্পষ্টভাবে বর্ণিত নির্দিষ্ট কিছু সংস্থা, সেটিও কেবল নিজ নিজ অধিক্ষেত্রের মধ্যে করতে পারবে।
সিআইএসের মাধ্যমে ‘রোল বেজড অ্যাক্সেস কন্ট্রোল’ ও আধা বিচারিক কাউন্সিলের অনুমোদন ছাড়া আড়িপাতার কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে না। নতুন গঠিত সিআইএস নিজে কোনো আড়িপাতার কাজ পরিচালনা করতে পারবে না, এটি কেবল কারিগরি ও তদারকিমূলক সহায়তা প্রদান করবে।
*আধা বিচারিক কাউন্সিল*
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আধা বিচারিক কাউন্সিলের অনুমোদন ব্যতীত আড়িপাতার কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে না। আইনানুগ আড়িপাতার জবাবদিহি নিশ্চিত করতে আধা-বিচারিক কাউন্সিল ও সংসদীয় তদারকির বিধান আনা হয়েছে। কাউন্সিলের কাছে বেআইনি আড়িপাতার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা যাবে। আধা বিচারিক কাউন্সিল আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী (সভাপতি), প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিবকে নিয়ে গঠিত হয়েছে।
সংসদীয় স্থায়ী কমিটি আইনানুগ আড়িপাতার বিষয়ে প্রতি বছর একটি জাতীয় বার্ষিক প্রতিবেদন জনগণের নিকট প্রকাশ করবে, যাতে আড়িপাতার কারণ ও ক্ষেত্রসমূহ বলা থাকবে। সংসদীয় স্থায়ী কমিটি প্রতি বছর কার্যক্রম বাজেট এবং প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা যাচাই করবে। এছাড়াও ইমেজ এবং ভয়েস প্রটেকশন, সিম ডেটা এবং ডিভাইস ডেটা প্রটেকশনের বিধান রাখা হয়েছে।
অর্থ-বাণিজ্য: নির্বাচনের প্রার্থীদের জন্য শনিবার সব ব্যাংক খোলা থাকবে