চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আহরণের গতি বৃদ্ধি পাওয়ায় রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হয়েছে। সংশোধিত বাজেট অনুযায়ী তা ২৪ হাজার কোটি টাকা বৃদ্ধি করে চলতি অর্থবছরের জন্য মোট ৫ লাখ ৮৮ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর সংশোধিত বাজেটের আকার ২ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে
চলতি অর্থবছরের শেষ নাগাদ মূল্যস্ফীতি ৭-এ নেমে আসার প্রত্যাশা
জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার হবে ৫ শতাংশ
৭ লাখ ৮৮ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে সংশোধিত জাতীয় বাজেট কার্যকর হবে। বিষয়টি বুধবার, (২৪ ডিসেম্বর ২০২৫) অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদকে অবহিত করা হয়েছে। তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক হয়।
পরে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি জানান, সংশোধিত বাজেটের আকার ২ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে ৭ লাখ ৮৮ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রেস সচিব জানান, নতুন সংশোধিত বাজেটে ধরা হয়েছে যে মূল্যস্ফীতি আমরা আশা করছি, এটা এখন যেহেতু শীতকালের সবজি উঠে গেছে, এটা আরও কমবে। আপনারা জানেন, গত বছর শেষের দিকে মূল্যস্ফীতি বিশেষ করে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৪ শতাংশ পর্যন্ত উঠেছিল। এখন খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমে ৭ শতাংশের কাছাকাছি এসেছে। চলতি অর্থবছরের শেষ নাগাদ মূল্যস্ফীতি ৭-এ নেমে আসবে এবং জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৫ শতাংশ হবে বলে আশা করা যাচ্ছে, এটা আজকে জানানো হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘চলতি অর্থবছরের রাজস্ব আহরণের গতি বৃদ্ধি পেয়েছে। জুলাই-অক্টোবর সময়ে গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি ছিল ২৪ দশমিক ১ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে তা বৃদ্ধি পেয়ে একই সময়ের জন্য দাঁড়িয়েছে ২৬ দশমিক ৪ শতাংশ। এর পরিপ্রেক্ষিতে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা থেকে ২৪ হাজার কোটি টাকা বৃদ্ধি করে চলতি অর্থবছরের জন্য মোট রাজস্ব আদায় সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ৫ লাখ ৮৮ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।’
শফিকুল আলম বলেন, ‘এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে আহরিত হবে ৫ লাখ ৩ হাজার কোটি টাকা। কর বহির্ভূত রাজস্ব আহরিত হবে ৬৫ হাজার কোটি টাকা এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বহির্ভূত সূত্র থেকে আহরিত হবে ২০ হাজার কোটি টাকা। মোট সরকারি ব্যয় ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা থেকে সেটা ২ হাজার কোটি টাকা হ্রাস পেয়ে রিভাইজ বাজেটটা হচ্ছে ৭ লাখ ৮৮ হাজার কোটি টাকা।’
তিনি জানান, সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি মানে এডিপির আকার ২ লাখ কোটি টাকার প্রাক্কলন করা হয়েছে, যা জিডিপির ৩ দশমিক ৩ শতাংশ। মূল বাজেট ছিল ২ লাখ ৩ হাজার কোটি টাকা এটা জিডিপির আগে ৩ দশমিক ৭ শতাংশ ছিল। বার্ষিক উন্নয়ন ব্যয় বাজেটের তুলনায় ৩০ হাজার কোটি টাকা হ্রাস পেয়েছে। সংশোধিত বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বৈদেশিক স্থানীয় মুদ্রায় আহরণ দাঁড়াবে যথাক্রমে ৭২ হাজার কোটি টাকা এবং ১ লাখ ২৮ হাজার কোটি টাকা। পরিচালন ব্যয়সহ অন্যান্য ব্যয় ৫ লাখ ৮৮ হাজার কোটি টাকা। মোট সংশোধিত বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ ২ লাখ কোটি টাকা, জিডিপি’র ৩ দশমিক ৩ শতাংশ। এর মধ্যে বৈদেশিক উৎস থেকে সংগৃহীত হবে ৬৩ হাজার কোটি টাকা এবং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সংগৃহীত হবে ১ লাখ ৩৭ হাজার কোটি টাকা।
বাজেটের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বাজেট যাতে আমাদের নিজেদের ওপর নির্ভরতা, আমরা যাতে আরও বেশি বাড়াতে পারি। আমরা অনেক ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় বৈদেশিক ঋণ নিয়ে আমরা অনেক প্রজেক্ট করি, সেগুলো থেকে আস্তে সরে এসে কত বেশি নিজস্ব অর্থায়নে কত বেশি প্রজেক্ট নেয়া যায়, সে বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এডুকেশন বিশেষ করে কোয়ালিটি অব এডুকেশনের কথা। উনি খুব বলেছেন যে, এটা সবচাইতে বেশি প্রাধান্য দিতে হবে। কোয়ালিটি এডুকেশনটা আমাদের খুব ইম্পরটেন্ট। আগের বছরগুলোতে আমাদের ফোকাসটা ছিলো আমরা কীভাবে এডুকেশন এসটাবলিশমেন্ট বাড়াবো, বিভিন্ন ধরনের স্কুল-কলেজ বা এমপিওভুক্তিকরণ এগুলো নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। তো আসলে আমাদের এডুকেশনের কোয়ালিটিটা রেপিডলি নিচে নেমেছে। এখানে প্রধান উপদেষ্টা জোর দিয়েছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেকটা হচ্ছে পল্লী উন্নয়ন। বাংলাদেশের কৃষকরা এ বছর রেকর্ড পরিমাণ খাদ্যশস্য উৎপন্ন করছে, তাদেরকে যাতে ফোকাস করে। তারা যাতে এই বাজেটের বেনিফিটটা পান বা তাদের জীবনযাত্রাকে যাতে আরও বেটার করা যায়। পল্লী উন্নয়ন যত ফোকাস দেয়া যায়, সেই বিষয়ে উনি বলেছেন। উনি তরুণদের ওপর ফোকাস দিতে বলেছেন, বাংলাদেশ একটা তারুণ্যের খনি। আমাদের এই তরুণদের যেভাবেই হোক, তাদের প্রতি ফোকাস দিতে হবে। নারীর ক্ষমতায়ন এবং নারীদের ওপর বাজেটের আরও ফোকাস বাড়াতে বলেছেন এবং তাদের সার্বিক উন্নতি আসলে দেশের উন্নতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত এবং এটা খুব উনি ভালোভাবে এটাকে তুলে ধরেছেন। আরেকটা হচ্ছে যে, স্থানীয় উৎপাদন। বাংলাদেশের লোকাল প্রোডাকশন অনেক কিছুই আমরা করি, আবার অনেক কিছু আমরা করি না। আমরা যাতে সব কিছুতেই স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারি, সে বিষয়ে উনি লোকাল প্রোডাকশনের ওপর জোর দিয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টা স্বাস্থ্য খাতের ওপরও জোর দিয়েছেন।’
অর্থ-বাণিজ্য: নির্বাচনের প্রার্থীদের জন্য শনিবার সব ব্যাংক খোলা থাকবে