image
ছবি: সংগৃহীত

হামলায় সরকারের অংশের ‘সম্মতির’ অভিযোগের পর হুমকি পাওয়ার কথা জানালেন উপদেষ্টা রিজওয়ানা

গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের একটি প্রস্তাবও বাস্তবায়ন হয়নি: কামাল

শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

সরকারের কোনো না কোনো অংশ প্রথম আলো, দ্য ডেইলি স্টার কার্যালয় ও ছায়ানট ভবনে হামলা-ভাঙচুর ও আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটতে দিয়েছে বলে মনে করেন সম্পাদক পরিষদের সভাপতি ও নিউ এইজ সম্পাদক নূরুল কবীর।

শনিবার, (২৭ ডিসেম্বর ২০২৫) সম্প্রচার সাংবাদিকদের সংগঠন ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টারের (বিজেসি) ষষ্ঠ সম্প্রচার সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। শাহনাজ শারমিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন- সাবেক গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান ও ডেইলি স্টারের কলসাল্টিং এডিটর কামাল আহমেদ, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সারা হোসেন, বিজেসির উপদেষ্টা খায়রুল আনোয়ার, যমুনা টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহিম আহমেদ, বিবিসি মিডিয়া অ্যাকশনের প্রতিনিধি মো. আল মামুন, সাংবাদিক তালাত মামুন, ইলিয়াস হোসেন, মিল্টন আনোয়ার প্রমুখ।

সম্পাদক পরিষদের সভাপতি নূরুল কবীর বলেন ‘পরিষ্কারভাবে আমরা জানি প্রথম আলো, ডেইলি স্টার ও ছায়ানটকে ধ্বংস করে দেয়ার জন্য একদিন আগে, দুই দিন আগে থেকে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। কারা ঘোষণা দিয়েছে?, এ দেশের সব মানুষ জানে, সরকারও জানে। বাংলাদেশের যে কোনো আইনে এটি ফৌজদারি অপরাধ। সরকার তো তাদের গ্রেপ্তার করে নাই আগেই প্রিভেন্ট করার করার জন্য। তারা তো আগেই ঘোষণা দিয়েছে এগুলোকে ধ্বংস করা হবে। এ কারণেই আমরা বলেছি সরকারের কোনো না কোনো অংশ এই ঘটনাটা ঘটতে দিয়েছে।...তাহলে সংগঠিত একটি শক্তি ওইখানে গিয়ে এই কাজ করেছে। ইতোমধ্যে যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের মধ্যে পরিষ্কারভাবে রাজনৈতিক পরিচয় খুঁজে পাওয়া গেছে।’

ভয় কি আমাকে দেখায়নি: রিজওয়ানা হাসান

অনুষ্ঠানে তথ্য উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘এই যারা আগুনটা দিয়েছে, তারা আসলে আমাদের কমন প্রতিপক্ষ। আপনার যদি কারও মতামত পছন্দ না হয়, আপনি ভিন্নমতের একটা পত্রিকা খোলেন, আপনার পত্রিকাকে আপনি জনপ্রিয় করে তোলেন, আপনি সেটা না করে পত্রিকায় আগুন লাগিয়ে দেবেন, আর মনে করবেন আপনার সমস্যা সমাধান হয়ে গেল, এটা তো হতে পারে না।’ ভয় যারা দেখাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে একসঙ্গে লড়াইয়ের আহ্বান জানিয়ে তথ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘ভয় কি আমাকে দেখায়নি? আপনারা তো এটা জানেন, আমার বাসার সামনেও ককটেল ফাটানো হয়েছে। অর্থাৎ ভয় যারা দেখাচ্ছে, তারা কিন্তু আমাদের কমন প্রতিপক্ষ। এই কমন বা অভিন্ন প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে যদি আমাদের লড়াই করতে হয়, লড়াই তো করতেই হবে এবং জিততে হয়, তাহলে একটা কথা বলবো আপনারা একজন আরেকজনকে প্রতিপক্ষ মনে করে কোনো কাজ হবে না।’

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও আগুন থামাতে সরকারের তৎপরতার কথা তুলে ধরেন রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, ‘তবে প্রোঅ্যাকটিভ যেটুকু হওয়ার কথা ছিল, সেটুকু না হওয়াতে এই গণমাধ্যমের যেমন ক্ষতি হয়েছে, আমাদেরও কিন্তু ক্ষতি কম হয়নি। আমরা সরকার হিসেবে এই ক্ষতিটা উপলব্ধি করি।’

একটি প্রস্তাবও বাস্তবায়ন হয়নি: কামাল আহমেদ

প্রতিবেদন জমা দেয়ার ৯ মাসেও কোনো সুপারিশ বাস্তবায়িত না হওয়ায় হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের গঠন করা গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ। তিনি বলেন ‘আমাদের গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের যেসব প্রস্তাব, তার একটি প্রস্তাবও এ পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়েছে, এমন কথা আমি বলতে পারছি না। এজন্য আমি দুঃখিত।’ কামাল আহমেদ উপদেষ্টার উদ্দেশে বলেন, ‘তার (সৈয়দা রিজওয়ানা) ঘাড়ে হয়তো দোষ চাপানো যাবে না; কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের ঘাড়ে তো দোষ চাপানো যাবে। অন্তর্বর্তী সরকার যে কিছুই করেনি, এটাই হচ্ছে সত্য।’

কামাল আহমেদ আরও বলেন, ‘আমরা গত ২২ মার্চ গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে (সরকারের কাছে মানে, প্রধান উপদেষ্টার কাছে) দিয়েছিলাম।

প্রধান উপদেষ্টা তখন আমাদের বলেছিলেন, ‘এর মধ্যে আশু বাস্তবায়নযোগ্যর একটি আলাদা তালিকা করে দেন। তাহলে আমরা সেগুলো অচিরেই বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেব। মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সেই তালিকা করে তার কাছে দিয়ে এসেছিলাম। তিনি সেটি বাস্তবায়নের জন্য কয়েকবার নির্দেশ দিয়েছেন বলে শুনেছি; কিন্তু কিছুই হয়নি।’

কামাল আহমেদ আরও বলেন, ‘তথ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা মাঝখানে খুব ব্যস্ততা দেখিয়েছেন, এই সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে তারা কাজ করছেন। সে কাজটি কী হয়েছে, কাজটি হয়েছে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের, বিভিন্ন দপ্তর, অধিদপ্তর আর বিভাগের কাছে মতামতের জন্য পাঠিয়েছে। তারা নানান মতামত দিয়েছে। মতামত হচ্ছে, এগুলো বাস্তবায়ন করা যাবে না।’

বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি), বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থাকে (বাসস) একীভূত করে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান করার সুপারিশের কথা উল্লেখ করে কামাল আহমেদ বলেন, সেই উদ্যোগও সরকার নিতে পারেনি।

‘জাতীয়’ : আরও খবর

» ভোলাগঞ্জ স্থলবন্দর উদ্বোধন করলেন নৌপরিবহন উপদেষ্টা

সম্প্রতি