ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদির হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও দ্রুত বিচারের দাবিতে সোমবার,(২৯ ডিসেম্বর ২০২৫) চতুর্থ দিনের মত শাহবাগ অবরোধ করেছে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। সোমবার দুপুর ২টার দিকে পূর্বঘোষিত কর্মসূচিতে অংশ নিতে শাহবাগ মোড়ের জুলাই স্তম্ভের নিচে জড়ো হয় তারা। পরে ২টা ২০ মিনিটের দিকে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান করেন তারা, এতে আশপাশের এলাকায় যানজট সৃষ্টি হয়েছে।
সেখানে ‘আপস না বিপ্লব, বিপ্লব বিপ্লব’, ‘আমরা সবাই হাদি হব, যুগে যুগে লড়ে যাব’, ‘শাহবাগ না ইনসাফ, ইনসাফ ইনসাফ’, ‘জান দিয়েছে হাদি ভাই, জুলাই কিন্তু বেঁচে নাই’, ‘বিচার বিচার বিচার চাই, হাদি হত্যার বিচার চাই’, ‘যেই হাদি জনতার, সেই হাদি মরে না’, ‘বাংলাদেশের আজাদী, ওসমান হাদি’, ‘সুশীলতার দিন শেষ, বিচার চাই বাংলাদেশ’সহ বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছেন অবরোধকারীরা।
আততায়ীর গুলিতে প্রাণ হারানো ওসমান হাদি হত্যার বিচার চেয়ে গত শুক্রবার বিকেল থেকে শাহবাগ মোড়ে অবরোধ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছে ইনকিলাব মঞ্চ। গতকাল রোববার রাতে চার দফা দাবি জানিয়ে ওই দিনের অবরোধ কর্মসূচি শেষ করে আন্দোলনকারীরা।
চার দাবি: খুনি, খুনের পরিকল্পনাকারী, খুনের সহযোগী, পলায়নে সহায়তাকারী ও আশ্রয়দাতাসহ পুরো খুনি চক্রের আগামী ২৪ দিনের মধ্যে বিচারকার্য সম্পন্ন করতে হবে। বাংলাদেশে অবস্থানরত সব ভারতীয়দের ওয়ার্ক পারমিট বাতিল করতে হবে। ভারত তার অভ্যন্তরে আশ্রয় নেয়া সব খুনিদের ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানালে ভারতের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা দায়ের করতে হবে। সিভিল মিলিটারি ইন্টেলিজেন্সের মধ্যে ঘাঁপটি মেরে লুকিয়ে থাকা ফ্যাসিস্টের দোসরদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার ও বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।
এদিকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, হাদি হত্যা মামলার তদন্ত কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে এসেছে।
আগামী ৭ জানুয়ারি এই মামলার চার্জশিট দেয়া হবে বলে আশা করছেন তিনি। তবে হাদি হত্যার প্রধান সন্দেহভাজনের পালিয়ে ভারতে যাওয়া এবং তাকে সহায়তার অভিযোগে দেশটিতে দুইজন গ্রেপ্তার হওয়ার যে তথ্য ঢাকার পুলিশ দিয়েছে, মেঘালয় পুলিশ তা অস্বীকার করেছে।
হাদি হত্যায় এ পর্যন্ত ১১ জনকে গ্রেপ্তারের তথ্য দিয়েছে পুলিশ। তাদের মধ্যে ৬ জন জবানবন্দি দিয়েছেন। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মামলার প্রধান আসামি ফয়সাল করিম মাসুদের বাবা হুমায়ুন কবির এবং মা হাসি বেগম, স্ত্রী সাহেদা পারভীন সামিয়া, বান্ধবী মারিয়া আক্তার লিমা ও শ্যালক ওয়াহিদ আহমেদ সিপু, রেন্ট-এ কার ব্যবসায়ী মুফতি মো. নুরুজ্জামান নোমানী ওরফে উজ্জ্বল, ফয়সালের সহযোগী মো. কবির, ‘ভারতে পালাতে’ সহায়তাকারী সিবিউন দিউ ও সঞ্জয় চিসিম।
ওসমান হাদি ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ছিলেন। গত ১২ ডিসেম্বর জুমার নামাজের কিছু পর রাজধানীর বিজয়নগর কালভার্ট রোডে রিকশায় থাকা হাদিকে মাথায় গুলি করার পর আততায়ীরা মোটরসাইকেল নিয়ে পালিয়ে যায়। পরে হাদিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে নেয়া হয়। সেখানে গত ১৮ ডিসেম্বর মারা যান তিনি। ২১ ডিসেম্বর মানিক মিয়া এভিনিউতে লাখ লাখ মানুষের অংশগ্রহণে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদসংলগ্ন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধিস্থলের পাশে দাফন করা হয়।