বাংলাদেশের রাজনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাবশালী একটি নাম খালেদা জিয়া। তার রাজনৈতিক জীবন, সংগ্রাম ও শাসনকাল ছিলো বর্নাঢ্য। তিনি তার সমর্থকদের কাছে ‘আপোষহীন নেত্রী’ হিসেবে পরিচিত।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জন্ম অবিভক্ত দিনাজপুরের জলপাইগুড়িতে, ১৯৪৫ সালের ১৫ অগাস্ট। তার পারিবারিক নাম খালেদা খানম, ডাক নাম পুতুল।
ছিলেন গৃহবধূ। স্বামী সামরিক কর্মকর্তা জিয়াউর রহমানের সংসার সামলাতেন। পরে পরিচিত হলেন রাষ্ট্রপতির স্ত্রী হিসেবে যখন জিয়াউর রহমান সামরিক শাসনের জটিল প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রপতি হলেন।
রাজনীতিতে সরাসরি সক্রিয় হন ১৯৮১ সালে স্বামীর হত্যার পর। ১৯৮৪ সালে বিএনপির চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন। নেতৃত্ব দেন সামরিক শাসক এরশাদের বিরুদ্ধে গণআন্দোলনে। ৮০-এর দশক পুরোটাই তার সময় গেছে এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে।
হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ–এর সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে টানা আন্দোলনে নেতৃত্বের সময় একাধিকবার গৃহবন্দি, সভা-সমাবেশে বাধা, মামলা ও নিপীড়নের শিকার হন খালেদা জিয়া। আন্দোলনের সময় শেখ হাসিনার সঙ্গে যৌথভাবে গণতান্ত্রিক আন্দোলন গড়ে তোলেন।
১৯৯০ এর গণঅভ্যুত্থানে এরশাদ সরকারের পতন ঘটে। ১৯৯১ সালের সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করেন। বিএনপির নেতৃত্বাধীন সেই সরকারে সময়ই সংসদে সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে রাষ্ট্রপতির পরিবর্তে প্রধানমন্ত্রী শাসিত বা ‘সংসদীয় পদ্ধতির’ সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা পায়।
তার শাসনকালেই তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতি সংবিধানে যুক্ত হয়। ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে আওয়ামীলীগের বর্জনের মুখে নির্বাচন করে সংসদে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাস করে অল্প সময়ের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন খালেদা জিয়া।
পরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে বিরোধী দলের আসনে বসেন। তখন আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেন নানা ইস্যুতে। ২০০১ সালের পহেলা অক্টোবর সাধারণ নির্বাচন হলে বেগম জিয়ার নেতৃত্বে চার দলীয় জোট জয়ী হয়। যে জোটে শরিক ছিল জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ঐক্য জোট।
২০০১–২০০৬ সালে চারদলীয় জোট সরকারের সময় দেশের অর্থনীতি ও অবকাঠামো খাতে কিছু অগ্রগতি হয়েছিলো। তবে জঙ্গিবাদের উত্থান ও রাজনৈতিক সহিংসতা নিয়ে সমালোচনা হয়। রাজনৈতিক তীব্র সংকটে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে খালেদা জিয়া ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। রাজনৈতিক মতপার্থক্যে রাষ্ট্রপতিই সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হন।
এরপর ২০০৭–২০০৮ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে গ্রেপ্তার হন তিনি।
মুক্তি পেয়ে ২০০৮ এর নির্বাচনে তার দল অংশ নিলে কম আসনে জয়ী হয়ে আবার বিরোধী দলের আসনে বসেন। ২০১৮ সালে দুর্নীতির মামলায় কারাদণ্ড হয় তার।পরবর্তীতে গুরুতর অসুস্থতার কারণে শর্তসাপেক্ষ জেল থেকে বাসায় থাকার অনুমতি পান।তবে তাকে রাজনৈতিক কার্যক্রম চালাতে দেয়া হয়নি। ২০২৪ এর ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর মুক্তি পেয়ে দেশবাসীর প্রতি শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখা ও ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।
খালেদা জিয়া বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী। দীর্ঘদিন একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব দেয়া উপমহাদেশের একটি বড় ঘটনা। তার দীর্ঘ জীবনে শেখ হাসিনার সঙ্গে দীর্ঘ রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব—“দুই নারীর লড়াই” হিসেবে পশ্চিমা বিশ্বে পরিচিতি পায়।
খালেদা জিয়া বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী। তিনবার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের একটি বড় রাজনৈতিক ধারাকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে ‘আপসহীন নেত্রী’ হয়ে ওঠা খালেদা জিয়া সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে কখনো হারেননি।
তবে গত সাত বছর — প্রথমে কারাগারে থাকার কারণে ও পরে অসুস্থতার কারণে তিনি সক্রিয় রাজনীতি থেকে দূরে ছিলেন।
সারাদেশ: আদমদীঘিতে ভটভটি উল্টে দুইজন নিহত
ক্যাম্পাস: জকসু নির্বাচন স্থগিত
সারাদেশ: ঝিনাইদহের মাঠজুড়ে হলুদের গালিচা