image

তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনেতা ও কূটনীতিকদের শোক

একদিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা

মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫
সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

বাংলাদেশের রাজনীতির ‘আপসহীন নেত্রী’ হিসেবে পরিচিত বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে অন্তর্বর্তী সরকার তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক এবং জানাজার জন্য আজ সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। এছাড়া দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের অন্যতম প্রভাবশালী নেতা খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনেতা এবং কূটনৈতিক মিশনগুলো। মঙ্গলবার, (৩০ ডিসেম্বর ২০২৫) দক্ষিণ এশিয়া, পূর্ব এশিয়া, ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে শোকবার্তা আসে। সেসব বার্তায় খালেদা জিয়ার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন এবং বাংলাদেশের আধুনিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট গঠনে তার ভূমিকার কথা তুলে ধরা হয়।

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে তিনি সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে ‘মহান অভিভাবক’ হিসেবে অভিহিত করেন। মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রে ফিরে পাওয়ার লড়াইয়ে তিনি নেতৃত্ব দেন। তার আপসহীন নেতৃত্বের ফলে গণতন্ত্রহীন অবস্থা থেকে জাতি বারবার মুক্ত হয়েছে।’ শোক পালনে আজ থেকে আগামী ২ জানুয়ারি পর্যন্ত তিন দিন জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে এবং বুধবার সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে।

আজ দুপুর ২টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা ও মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে খালেদা জিয়ার জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। জানাজা পড়াবেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মুফতি আবদুল মালেক। জানাজা শেষে তাকে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় জিয়া উদ্যানে স্বামী ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে দাফন করা হবে।

জানাজা ও দাফন কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন, মরদেহবাহী গাড়ির নিরাপত্তা ও সার্বিক শৃঙ্খলায় ১০ হাজার পুলিশ ও এপিবিএন সদস্যের পাশাপাশি সেনাবাহিনীও মোতায়েন থাকবে।

মায়ের মৃত্যুতে আবেগঘন প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, ‘আমার কাছে খালেদা জিয়া একজন মমতাময়ী মা, যিনি নিজের সমগ্র জীবন উৎসর্গ করেছেন দেশ ও মানুষের জন্য।’

আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল অভিযোগ করেছেন, খালেদা জিয়ার মৃত্যুর পেছনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারের দায় রয়েছে। তিনি বলেন, ‘উনাকে জেলখানায় বিভিন্ন সময় যেভাবে নির্যাতন করা হয়েছিল, উনাকে আমরা হয়তো এত তাড়াতাড়ি হারাতাম না।’

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শোক প্রকাশ করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শোকবার্তায় বলেছেন, গণতন্ত্র ও জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় খালেদা জিয়ার আপসহীন ভূমিকা ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের এবং জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল শোক জানিয়েছে।

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তার জানাজায় অংশ নিতে পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ ইসহাক দার ঢাকায় আসছেন। এছাড়া ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর শ্রদ্ধা জানাতে ঢাকায় আসছেন।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ, চীনের প্রধানমন্ত্রী লি চিয়াং, যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসসহ যুক্তরাজ্য, জাপান, জার্মানি, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, রাশিয়া ও ফ্রান্সের পক্ষ থেকে শোকবার্তা পাঠানো হয়েছে। ভারতের বিরোধীদলীয় নেতা রাহুল গান্ধীও গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।

খালেদা জিয়ার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মঙ্গলবার, থেকে টানা তিন দিন ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে। জানাজা ও দাফন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা গুলশানে জরুরি বৈঠক করেছেন। দলটির পক্ষ থেকে জানাজার সময় শৃঙ্খলা ও ভাবগাম্ভীর্য বজায় রাখার জন্য সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

‘জাতীয়’ : আরও খবর

» দিল্লি থেকে হাইকমিশনারকে ঢাকায় জরুরি তলব, বৈঠক করলেন নিরাপত্তা ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

» হাদি হত্যাকাণ্ড-: সিবিউন, সঞ্জয় ও ফয়সালের তিন দিনের রিমান্ড

» ৪৬তম বিসিএসের বুধবার ও কালের মৌখিক পরীক্ষা স্থগিত

সম্প্রতি