আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ফার্স্ট পলিটিক্যাল ডিভিশনের মহাপরিচালক নূর আহমাদ নূর গত সপ্তাহে বাংলাদেশ ঘুরে গেলেন। বৈঠক করেছেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নেতা মাওলানা মামুনুল হকের সঙ্গে। কিন্তু পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে কিছুই জানে না।
বিবিসি বাংলা তালেবান কর্মকর্তার সফর নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করার পর বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা হয়। এছাড়াও ভারতীয় বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে এ নিয়ে খবর প্রকাশিত হয়েছে।
মঙ্গলবার, (৩০ ডিসেম্বর ২০২৫) সন্ধ্যায় মাওলানা মামুনুল হকের দপ্তর থেকে সংবাদকে বলা হয়, আফগান কর্মকর্তা তার নিজের ব্যবসায়িক কাজে ঢাকায় এসেছিলেন। তারা সম্ভবত বাংলাদেশ-আফগান চেম্বার অব কর্মাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেই ঢাকায় এসেছিলেন। সে সময় আফগান কর্মকর্তা মাওলানা মামুনুল হকের মাদ্রাসা পরিদর্শনের গিয়েছিলেন। তখন তারা বৈঠক করেছেন, এর মধ্যে রাজনৈতিক কোনো বিষয় ছিল না। তিনি ঢাকায় একাধিক মাদ্রাসা পরিদর্শন করেছেন বলেও মামুনুল হকের দপ্তরের এক কর্মকর্তা সংবাদকে জানান।
গত ২১ ডিসেম্বর আফগানিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক নূর আহমাদ নূর ঢাকায় এসেছিলেন। প্রায় সপ্তাহ খানেক তিনি ঢাকায় ছিলেন। বিভিন্ন মহলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আফগান কর্মকর্তা তার ব্যাক্তিগত ব্যবসায়িক কাজে এসেছিলেন। এ ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাহবুবুর রহমান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ব্রিফিং করার সময় কোনো মন্তব্য করেননি। তাকে ভারতীয় পত্রিকায় আফগান কর্মকর্তার বাংলাদেশ সফর সম্পর্কে প্রকাশিত খবর সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য না করে চলে যান।
মঙ্গলবার, পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের নাম প্রকাশে অনচ্ছিুক এক কর্মকর্তা সংবাদকে বলেন, বিভিন্ন দেশ থেকে নানা কাজে অনেক কর্মকর্তা বাংলাদেশে আসেন। সবার আসার খবর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জানার কথা নয়। তবে সরকারিভাবে এলে তা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়। তবে আফগানিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক নূর আহমাদ নূরের ঢাকায় আসার ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কিছু জানে না বলে ওই কর্মকতা জানান।
তবে একটি সূত্রে জানা গেছে, গত সেপ্টেস্বর মাসে মাওলানা মামুনুল হকের নেতৃত্বে ইসলামপন্থি ৭ জন নেতা ও পণ্ডিত বাংলাদেশ থেকে আফগানিস্তান সফরে গিয়েছিলেন। তখন তারা একাধিক আফগান কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। অনেকে মনে করেন, মামুনুল হকরা বাংলাদেশের সঙ্গে আফগানিস্তানের সম্পর্ক আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। মাওলানা মামুনুল হক আফগানিস্তান সফরকালে আফগান কর্মকতাদের বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। মামুনুল হকদের সফরের ফিরতি সফরেই ঢাকায় এসেছিলেন আফগানিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ফার্স্ট পলিটিক্যাল ডিভিশনের মহাপরিচালক নূর আহমাদ নূর।
আফগানিস্তান সফর শেষ করে ঢাকায় ফিরে মাওলানা মামুনুল হক জানিয়েছিলেন, তালেবান সরকারের একাধিক মন্ত্রী ও কর্মকর্তার সঙ্গে তাদের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তালেবান সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নে আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলেও জানিয়েছিলেন তিনি।
জানা গেছে, তালেবান সরকারের পররাষ্ট্র নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে মি. নূরকে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অন্য দেশের কাছ থেকে তালেবান সরকারের পক্ষে স্বীকৃতি আদায়ের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। এরই অংশ হিসেবে গত জুলাইয়ে মি. নূর পাকিস্তান সফরেও গিয়েছিলেন। কিন্তু সেটি ছিল রাষ্ট্রীয় সফর। সম্প্রতি তিনি ভারতও সফর করেছেন বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, ঢাকায় নামার পর মি. নূরকে যারা স্বাগত জানিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে একজন বাংলাদেশ-আফগানিস্তান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (বিএসিসিআই) চেয়ারম্যান আবু সায়েম খালেদ। তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন যে, তালেবান সরকারের কর্মকর্তার বাংলাদেশ সফরের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হলো দু’দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণ।
এদিকে নূর আহমাদ নূরের ঢাকা সফর নিয়ে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো থেকে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ না করার কারণে বিভিন্ন মহলে নানান সন্দেহ ও সংশয় তৈরি হয়েছে।
২০২১ সালে ক্ষমতায় ফেরার পর রাশিয়া ছাড়া বিশ্বের আর কোনো দেশ আফগানিস্তানের তালেবান সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়নি। তবে স্বীকৃতি না দিয়েও অনেক দেশ তাদের সঙ্গে আর্থিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক বজায় রেখেছে, ভারত যাদের মধ্যে অন্যতম। সম্প্রতি রাষ্ট্রীয়ভাবে ভারত সফরও করতে দেখা গেছে তালেবান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকিকে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ূন কবির মঙ্গলবার, সন্ধ্যায় সংবাদকে বলেন, তিনি মনে করেন তালেবান এখন বাংলাদেশের সঙ্গেও সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে চাচ্ছে। এজন্য সে দেশের কর্মকর্তারা বাংলাদেশ সফর করতে আগ্রহী। আফগানিস্তানের এ কর্মকর্তার কর্মকর্তার ঢাকা সফর সেটারই অংশ বলে মনে করে সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ূন কবির।
হুমায়ূন কবির বলেন, কোন দেশের কোন কর্মকর্তা বা ব্যবসায়ী কেউ যদি ব্যক্তিগত সফরে বাংলাদেশে আসে তবে সেটা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জানার কথা নয়। সেটা জানবে ইমিগ্রেশন বিভাগ। কারণ বিমানবন্দরে তাকে তার পদবি জানিয়ে কাগজপত্রে স্বাক্ষর করতে হয়। কাজেই আফগান কর্মকর্তার ঢাকা সফর সম্পর্কে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের না জানার বিষয়টি খুব একটা অসম্ভব নয়।