ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরীফ ওসমান বিন হাদি হত্যা মামলায় ময়মনসিংহের সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার সিবিউন দিউ ও সঞ্জয় চিসিমকে তৃতীয় দফায় তিন দিনের রিমান্ড দিয়েছে আদালত। এছাড়া হাদি হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্রসহ নরসিংদী থেকে গ্রেপ্তার ফয়সালকেও তিন দিনের রিমান্ডে পাঠানো হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তার পৃথক দুই আবেদনের শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার, (৩০ ডিসেম্বর ২০২৫)ঢাকার অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জশিতা ইসলাম এ আদেশ দেন।
গত ১২ ডিসেম্বর ঢাকার বিজয়নগর এলাকায় হামলার শিকার হন হাদি। চলন্ত রিকশায় থাকা হাদিকে গুলি করেন চলন্ত মোটরসাইকেলের পেছনে বসে থাকা আততায়ী। গুলিটি লাগে হাদির মাথায়। ১৮ ডিসেম্বর চিকিৎসাধীন অবস্থায় সিঙ্গাপুরে মারা যান তিনি। গত ১৪ ডিসেম্বর ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের বাদী হয়ে হত্যাচেষ্টার মামলা করেন। পরবর্তীতে মামলাটিতে ৩০২ ধারা যুক্ত হয়। হাদিকে গুলি করার ঘটনায় গত ১৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সিবিউন ও সঞ্জয়কে আটকের কথা জানায় বিজিবি। জিজ্ঞাসাবাদের পর এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ১৮ ডিসেম্বর আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করলে তাদের তিন দিনের রিমান্ডে পাঠানো হয়। ২১ ডিসেম্বর দ্বিতীয় দফায় সিবিউন ও সঞ্জয়ের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত। ২৬ ডিসেম্বর দুই দফা রিমান্ড শেষে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।
গত ১৬ ডিসেম্বর র্যাব-১১ এর একটি দল নরসিংদী সদর মডেল থানা এলাকার তরুয়ার বিলে অভিযান চালিয়ে ফয়সালকে আটক করে। এ সময় পানি থেকে থেকে আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করা হয়। অস্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। মঙ্গলবার, ফয়সালকে আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন হাদি হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের মতিঝিল আঞ্চলিক টিমের পরিদর্শক ফয়সাল আহমেদ।
আবেদনে বলা হয়, এটি একটি চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলা। মামলার এজাহারনামীয় ও পলাতক আসামি ফয়সাল করিম মাসুদের স্ত্রী সাহেদা পারভীন সামিয়ার তথ্য অনুযায়ী আসামি ফয়সালের দেখানো মতে পিস্তল ও গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, ফয়সালের দেখানো মতে উদ্ধারকৃত অস্ত্র ও গুলি হাদি হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অস্ত্রের উৎস ও সরবরাহকারী সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ, হত্যাকাণ্ডের ‘মোটিভ’ উদ্ধার, ইন্ধনদাতাদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার, পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য আসামির সাতদিনের রিমান্ড চান তিনি। অন্যদিকে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট সীমান্তে লোক পারাপারকারী চক্রের হোতা ফিলিপের অবস্থান শনাক্ত, গ্রেপ্তার ও আর কারও সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কিনা তা জানার জন্য সিবিউন ও সঞ্জয়কে পুনরায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ডে চান তদন্ত কর্মকর্তা।
রিমান্ডে আবেদনে তিনি বলেছেন, ফিলিপের সঙ্গে হাদি হত্যাকাণ্ডে জড়িত কে বা কারা যোগাযোগ করেছে, হত্যাকাণ্ডে ইন্ধনদাতা এবং অর্থদাতাদের শনাক্ত করার জন্য তাদের দুইজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রযোজন। রাষ্ট্রপক্ষে সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর মুহাম্মদ শামছুদ্দোহা সুমন রিমান্ডের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। তবে আসামিদের পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। পরে আদালত থেকে তাদের তিনদিনের রিমান্ডের আদেশ আসে।
হাদি হত্যা মামলায় এ পর্যন্ত ১২ আসামিকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তারা হলেন- ফয়সাল করিম মাসুদের বাবা মো. হুমায়ুন কবির ও মা হাসি বেগম, ফয়সালের স্ত্রী সামিয়া, বন্ধু মারিয়া আক্তার লিমা ও শ্যালক ওয়াহিদ আহমেদ সিপু, রেন্ট-এ কার ব্যবসায়ী মুফতি মো. নুরুজ্জামান নোমানী ওরফে উজ্জ্বল, ফয়সালের সহযোগী মো. কবির, ভারতে পালাতে সহযোগিতাকারী সিবিউন ও সঞ্জয়, আমিনুল ইসলাম রাজু ও নরসিংদীর ফয়সাল।