image
ছবি: সংগৃহীত

ডেঙ্গু: বছরজুড়ে হাসপাতালে ভর্তি ১০২,৮৬১ জন, মৃত্যু ৪১৩

বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫
সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

২০২৫ সালে বছরজুড়ে ছিল এডিস মশার উপদ্রব। এই মশার কামড়ে শুধু হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে শিশুসহ ১ লাখ ২ হাজার ৮৬১ জন। তার মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ৪১৩ জন।

মহাখালী স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে এ তথ্য পাওয়া গেলেও, যারা হাসপাতালে ভর্তি হয়নি তাদের পরিসংখ্যান জানা গেলে আক্রান্তের সংখ্যা আরও বাড়তো বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আরও ৬৮ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে বরিশাল বিভাগে ৯ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৭ জন, ঢাকা বিভাগে ১৭ জন, ঢাকা উত্তর সিটিতে ১২ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ৫ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৮ জন রয়েছে। এ সময় কোনো মৃত্যুর তথ্য পাওয়া যায়নি।

বছরজুড়ে হাসপাতালে ভর্তিকৃতদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ২১ হাজার ৫৫১ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৫ হাজার ১শ’ ১১৬ জন, ঢাকা বিভাগে ১৭ হাজার ৩৮৬ জন, ঢাকা উত্তর সিটিতে ১৭ হাজার ৫৯ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ১৪ হাজার ৬২৩ জন, খুলনা বিভাগে ৫ হাজার ৪শ’ ৭৩ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৪ হাজার ৩১৮ জন, রাজশাহী বিভাগে ৫ হাজার ৮৫২ জন, রংপুর বিভাগে ১ হাজার ৫৫ জন, সিলেট বিভাগে ৪২৮ জন।

এ বছর ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ১৯৪ জন, ঢাকা উত্তর সিটিতে ৬৮ জন, সিটির বাইরে ৯ জন, বরিশালে ৫০, চট্টগ্রামে ৩১, খুলনায় ১৩, রাজশাহীতে ২০, সিলেটে ২ ও ময়মনসিংহে ২৫ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।

কীটতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা ও আদ্রতা বিশ্লেষণ করে দেখেছেন, ডেঙ্গুর ঢেউ জানুয়ারি পর্যন্ত থাকবে। এখন এডিস মশা বা ডেঙ্গু মশা কিছুটা কমলেও কিউলেক্স মশার উপদ্রব বাড়ছে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক কবিরুল বাশার তার এক প্রতিবেদনে

বলেছেন, মশা পৃথিবীতে ভয়ঙ্কর প্রাণীদের মধ্যে অন্যতম। ছোট এই প্রাণীটির কামড়ে সবচেয়ে বেশি মানুষ ডেঙ্গুসহ বিভিন্ন ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন, আবার মারাও যাচ্ছেন।

এই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের মতে, ঢাকায় প্রথম ডেঙ্গু দেখা দেয় ১৯৬৩ সালে। তখন এটিকে ঢাকা ফিভার হিসেবে চিহ্নিত করা বা নাম দেয়া হয়েছিল। আর ডেঙ্গুর প্রথম আউটব্রেক হয় ২০০০ সালে। তখন বিজ্ঞানীরা একে ডেঙ্গু হিসেবে চিহ্নিত করেন।

বাংলাদেশের আবহাওয়া ও জলবায়ু মশা প্রজননের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। মশার ঘনত্ব ও প্রজাতির বৈচিত্র্য বেশি থাকার কারণে মশাবাহিত রোগের ঝুঁকিও অনেক বেশি বাংলাদেশে।

বিভিন্ন বিজ্ঞানীদের গবেষণা অনুযায়ী, বাংলাদেশ এ পর্যন্ত ১২৬ প্রজাতির মশা শনাক্ত করা হয়েছে। তার মধ্যে ঢাকায় পাওয়া গেছে ১৪-১৬ প্রজাতির মশা।

বাংলাদেশে মশাবাহিত রোগগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, ম্যালেরিয়া, ফাইলেরিয়া ও জাপানিজ অ্যানসেফালাইটিস।

২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন মোট ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন। তার মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ৫৭৫ জন।

২০২৩ সালে ডেঙ্গুতে বাংলাদেশের সব ইতিহাস ভেঙে ডেঙ্গুর সর্বোচ্চ রোগী ৩ লাখ ২১ হাজার ১শ’ ৭৯ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তার মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১,৭০৫ জন।

এই হিসেবে ডেঙ্গুতে গত তিন বছরে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন মোট ৫ লাখ ২৫ হাজার ২৫৪ জন। আর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ২ হাজার ৬শ’ ৯৩ জন। এভাবে প্রতি বছর ডেঙ্গু জ্বরের বাহক এডিস মশার কামড়ে শিশু থেকে বৃদ্ধসহ নানা বয়সের মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন আবার মারাও যাচ্ছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু বাংলাদেশের জন্য একটি ক্রমবর্ধমান স্বাস্থ্যঝুঁকি হয়ে উঠেছে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে সরকারি উদ্যোগ, গবেষণা, জনসচেতনতা এবং ব্যক্তিগত প্রতিরোধ ব্যবস্থা একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

নগর পরিকল্পনা উন্নয়ন করা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যকর করা এবং জনগণকে সচেতন করা হলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এখনই কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে ডেঙ্গুর প্রভাব আরও মারাত্মক হতে পারে। তাই সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে আনা এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ডেঙ্গু প্রতিরোধের জন্য এখনই যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি বলে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মন্তব্য করেন।

‘জাতীয়’ : আরও খবর

» খ্রিস্টীয় নববর্ষ উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানালেন প্রধান উপদেষ্টা

» ‘মব সন্ত্রাসে’ হত্যা ২০২৫ সালে আগের বছরের চেয়ে বেড়েছে

সম্প্রতি