alt

জলবায়ু প্রকল্পে এএসইএম অংশীদারদের বিনিয়োগের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : শুক্রবার, ২৬ নভেম্বর ২০২১

বদ্বীপ পরিকল্পনার মতো বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদী জলবায়ু প্রকল্পে এএসইএম অংশীদারদের বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে তিনি এশিয়া ও ইউরোপকে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় কার্যকরভাবে লড়াইয়ের জন্য অর্থ ও প্রযুক্তি প্রবাহকে সংহত করতে ঐক্যদ্ধভাবে কাজ করারও আহ্বান জানিয়েছেন।

কম্বোডিয়ার নমপেনে ২৫ নভেম্বর থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শুরু হওয়া দুই দিনব্যাপী ১৩তম এএসইএম শীর্ষ সম্মেলনে শুক্রবার (২৬ নভেম্বর) প্রচারিত এক ভিডিও বার্তায় এ আহ্বান জানান। খবর বাসসের

এএসইএম-এর ২৫ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এএসইএম১৩-এর সামগ্রিক প্রতিপাদ্য ‘অংশীদারি প্রবৃদ্ধির জন্য বহুপাক্ষিকতাকে শক্তিশালী করা’ শীর্ষক সম্মেলনে ইউরোপীয় ও এশিয়ার সদস্য দেশ, ইইউ এবং আসিয়ান সচিবালয়ের নেতাদের একত্রিত করেছে। কম্বোডিয়া বর্তমানে এএসইএম এর সভাপতির দায়িত্বে রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এশিয়া ও ইউরোপকে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় অর্থ ও প্রযুক্তি প্রবাহ সংহত করতে অবশ্যই একত্রিত হয়ে হাতে হাত মিলাতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘যৌথ ও টেকসই উন্নয়নের জন্য আমাদের এখন আগের চেয়ে আরও বেশি করে বহুপাক্ষিক সহযোগিতা প্রয়োজন। উন্নত এবং শিল্পোন্নত অর্থনীতিগুলোকে কপ২৬ এর বাইরে তাদের জলবায়ু উচ্চাকাঙ্ক্ষা বাড়াতে হবে। আমি তাদের অনুরোধ করছি তারা যেন এমন দায়িত্ব না নেয় যা প্রকারান্তরে আমাদের নিজস্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ তার প্রতিবেশীদের জন্য সম্ভাবনাময় সুবিধা সংবলিত একটি আঞ্চলিক সংযোগ কেন্দ্র হতে চায়। ইইউ-এশিয়া সংযোগ কৌশলের অন্যতম সেতু হওয়ার প্রস্তাবও দিয়েছে বাংলাদেশ।’

তিনি তার বক্তব্যে রেল ও সড়কপথে উপ-আঞ্চলিক যোগাযোগ প্রকল্পে ইউরোপের সম্পৃক্ততাকে স্বাগত জানান। আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সহযোগিতার মাধ্যমে আমাদের যৌথ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যে সহায়তা করা প্রয়োজন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আসিয়ান আঞ্চলিক ফোরামের মতো আঞ্চলিক সংগঠনলোকে পাচার প্রতিরোধ, সমুদ্র ও সাইবার নিরাপত্তা প্রতিরোধে এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সময়োপযোগী সহযোগিতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের বহুপাক্ষিক সহযোগিতার একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হবে মিয়ানমারের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত জনগণ- রোহিঙ্গাদের জন্য একটি স্থায়ী ও শান্তিপূর্ণ সমাধান খুঁজে বের করা। বাংলাদেশ তাদের অস্থায়ী আশ্রয় দেয় এবং পরিস্থিতি স্থিতিশীল করে। আমরা মিয়ানমারে তাদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তনে জোর দাবি জানাচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘কক্সবাজার ক্যাম্পের নিরাপত্তা পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠছে এবং ক্রমবর্ধমান সহিংসতা ও অপরাধ শিগগিরই আমাদের সীমান্তের বাইরেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই সংকটের প্রতি অস্থায়ী প্রতিক্রিয়া খুব সামান্য উদ্দেশ্য পূরণ করবে। আমি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অনুরোধ করছি আমরা যে উদ্বেগ প্রকাশ করছি তার প্রতি যথাযথ মনোযোগ দিন। বাংলাদেশ নিজেকে এশিয়ার রীতিনীতি এবং ইউরোপীয় মূল্যবোধের সেরা মডেল হিসাবে বিবেচনা করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রথম দিন থেকেই বহুপাক্ষিকতার প্রতি আমাদের অঙ্গীকার অবিচল রয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা আমাদের বেশ কতগুলো ইউরোপিয়ান অংশীদারদের সঙ্গে কৌশলগত সংলাপে সম্পৃক্ত রয়েছেন এবং তারা আসিয়ানের একটি সেক্টোরাল ডায়ালগ পার্টনার হওয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। ইন্ডিয়ান ওশান রিম অ্যাসোসিয়েশন (আইওআরএ), ডি-৮, বিমসটেকে বর্তমানে তাদের নেতৃত্ব রয়েছে এবং আমাদের অভিন্ন লক্ষ্য অর্জনের জন্য অন্যান্য ফোরামগুলো ব্যবহার করা হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, ‘ভালো একটি আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার জন্য একটি শক্তি হিসাবে আমরা আসেম’কে (এএসইএম) আবির্ভূত হতে দেখতে চাই।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ বছর আমরা আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করছি।’

কোভিড-১৯ মহামারি বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এবং অর্থনীতির ওপর প্রবল চাপ সৃষ্টি করেছে এ কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই মহামারির কারণে আমাদের উন্নয়ন সংস্থানগুলো ঘুরিয়ে জরুরি চিকিৎসা ও ভ্যাকসিন কার্যক্রমে ব্যয় করতে বাধ্য করেছে।’

তিনি জানান, তার সরকার জীবন ও জীবিকা উভয় সুরক্ষার কৌশল গ্রহণ করেছে। তার সরকার মহামারির প্রভাব মোকাবিলায় ৫৪০ কোটি মার্কিন ডলারের ২৮ টি উদ্দীপনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের অগ্রাধিকার এখন আমাদের কষ্টার্জিত উন্নয়ন ধরে রাখা, দারিদ্র্য ও ক্ষুধা হ্রাস করা, মা ও শিশুদের বাঁচানো, শিক্ষা ও সাক্ষরতা বৃদ্ধি করা এবং স্বাস্থকর জীবনযাপন নিশ্চিত করা।’

প্রধানমন্ত্রী জানান, তার সরকারের লক্ষ্য ২০২২ সালের মার্চের মধ্যে দেশের জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ লোকের টিকাদান সম্পন্ন করা।

তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের এলডিসি থেকে উত্তরণের গতি বজায় রাখার আশা করি। ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি অর্জনের দিকে আমাদের মনোযোগ থাকবে। আমাদের লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তোলা। এই লক্ষ্য অর্জনে এশিয়া এবং ইউরোপের সঙ্গে আমাদের অংশীদারিত্ব গুরুত্বপূর্ণ।’

প্রধানমন্ত্রী ভ্যাকসিন অনুদানের জন্য এশিয়া, ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধুদের ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানসম্পন্ন ভ্যাকসিন উৎপাদনের ক্ষমতা আছে। আমরা চাই প্রযুক্তিগত জ্ঞান এবং এ জন্য লাইসেন্স।’

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের পরে এটি আন্তর্জাতিক নেতৃত্বের বৃহত্তম সম্মেলন (এতে ৩০টি ইউরোপীয় এবং ২১ টি এশীয় দেশের সঙ্গে ইইউ ও আসিয়ান সচিবালয় রয়েছে।) আসেমে ইইউ’র ২৭ সদস্য দেশের পাশাপাশি নরওয়ে, সুইজারল্যান্ড এবং যুক্তরাষ্ট্র রয়েছে।

কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুনসেন সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন। ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট চার্লস মিশেল, ইউরোপিয়ান কমিশন প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেন ইইঊ’র প্রতিনিধিত্ব করেন। স্লোভানিয়ার প্রধানমন্ত্রী জানেস জানসা পর্যায়ক্রমে ইইউ’র কাউন্সিলে প্রতিনিধিত্ব করেন। ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড সিকিউরিটি বিষয়ক উচ্চ প্রতিনিধি জোসেফ বোরেল সম্মেলনে অংশ নেন।

ছবি

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও ভুল তথ্য ছড়াচ্ছেন: প্রেস সচিব

ছবি

আইআরআইয়ের প্রাক-নির্বাচনী মূল্যায়ন প্রতিবেদন, বাংলাদেশে প্রাক-নির্বাচনী পরিবেশ এখনও নাজুক

ছবি

মেঘনা-ধনাগোদা নদীর উপর সেতু নির্মাণ প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করলেন সেতু বিভাগের সচিব

ছবি

তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিলের রায় ‘অসৎ উদ্দেশ্যে’ দেয়া হয়েছিল দাবি অ্যাটর্নি জেনারেলের

হালদা নদীকে মৎস্য হেরিটেজ ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি

ছবি

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন: দলগুলোকে দায়িত্ব দেয়ার চার দিনেও অগ্রগতি নেই

ছবি

শতভাগ জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনে বড় বাধা দুর্বল আইন, শক্তিশালীকরণের দাবি

ছবি

ইন্টারনেট বন্ধে স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা, বিলুপ্ত হচ্ছে এনটিএমসি

ছবি

ডেঙ্গুতে আরও ৫ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ১০৩৪ জন

ছবি

আওয়ামী লীগের চিঠিতে কোনও কাজ হবে না: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

জুলাইযোদ্ধা জাহাঙ্গীর আলমকে নির্যাতনের অভিযোগে জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের ১০ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা

ছবি

মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে গুম প্রতিরোধ ও প্রতিকার অধ্যাদেশের চূড়ান্ত অনুমোদন

ছবি

সাবেক বিচারপতিসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

ছবি

ডেঙ্গুতে একদিনে সর্বোচ্চ ১০ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে আরও ১,০৬৯ জন

জামিনে মুক্তি পাওয়া আ’লীগ নেতারা অপরাধে জড়ালে কঠোর ব্যবস্থা: উপদেষ্টা

ছবি

তদন্ত প্রতিবেদন: পাইলটের ত্রুটির কারণে মাইলস্টোন স্কুলে বিমান বিধ্বস্ত হয়

ছবি

বাংলাদেশে পুলিশ সংস্কারে সহায়তার আগ্রহ আয়ারল্যান্ডের

ছবি

নির্বাচন হলে দেশে স্থিতিশীলতা আরও ভালো হবে, আশা সেনাবাহিনীর

ছবি

অগ্নিঝুঁকিতে বেনাপোল স্থলবন্দরের পণ্যাগার, ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ, নিরাপত্তা জোরদার

ছবি

নির্বাচন হলে দেশে স্থিতিশীলতা আসবে, সেনাবাহিনী ফিরবে ব্যারাকে: জিওসি মাইনুর রহমান

ছবি

নিষিদ্ধ দলের মিছিলের চেষ্টা করলে আইনের কঠোর প্রয়োগ: প্রেস সচিব

দায়িত্ব পালনে অযোগ্যতা: হাই কোর্টের বিচারপতি খুরশীদ আলম সরকারের অপসারণ

ছবি

দেশে ডেঙ্গুতে একদিনে প্রাণ গেল ১০ জনের

ছবি

আইসিটি মামলায় আটক ১৫ সেনা কর্মকর্তার চাকরি নিয়ে সেনাসদরের ব্যাখ্যা: “এটি একটি আইনগত প্রক্রিয়া”

ছবি

১৪ মাসে ৪০ বিচারবহির্ভূত হত্যা, আইনের মাধ্যমে ফয়সালা করা হবে: স্বরাষ্ট্র্র উপদেষ্টা

ছবি

আরপিও সংশোধন অধ্যাদেশ জারি: বিএনপির আপত্তি আমলে নেয়নি অন্তর্বর্তী সরকার

কোটা আন্দোলনে হামলায় ঢাবির আরও ২৭৫ শিক্ষার্থী অভিযুক্ত

ছবি

নির্বাচন: দেড় লাখের মধ্যে ৪৮ হাজার পুলিশের প্রশিক্ষণ শেষ

আবু সাঈদ হত্যা মামলায় তিনবারেও সাক্ষী হাজিরে ব্যর্থ প্রসিকিউশন

ছবি

নভেম্বর মাসেও কমছে না ডেঙ্গু, পরিস্থিতি উদ্বেগজনক

ছবি

সনদ, গণভোট: দলগুলোকে দ্রুত ‘সিদ্ধান্ত’ নেয়ার আহ্বান, নইলে পদক্ষেপ নেবে অন্তর্বর্তী সরকার

ছবি

ডেঙ্গু ও নিউমোনিয়ায় মাধবদীতে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি

ছবি

বাণিজ্য ও প্রতিরক্ষা খাতে তুরস্কের সঙ্গে সহযোগিতা বাড়াতে চায় বাংলাদেশ

বিটিআরসির প্রস্তাবিত নীতিমালা বাস্তবায়ন হলে ইন্টারনেটের দাম বাড়বে: আইএসপিএবি

ছবি

ডেঙ্গুতে আরও ৫ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১১৪৭ জন

ছবি

পঞ্চদশ সংশোধনী পুরো বাতিল চেয়ে আপিল

tab

জলবায়ু প্রকল্পে এএসইএম অংশীদারদের বিনিয়োগের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

শুক্রবার, ২৬ নভেম্বর ২০২১

বদ্বীপ পরিকল্পনার মতো বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদী জলবায়ু প্রকল্পে এএসইএম অংশীদারদের বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে তিনি এশিয়া ও ইউরোপকে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় কার্যকরভাবে লড়াইয়ের জন্য অর্থ ও প্রযুক্তি প্রবাহকে সংহত করতে ঐক্যদ্ধভাবে কাজ করারও আহ্বান জানিয়েছেন।

কম্বোডিয়ার নমপেনে ২৫ নভেম্বর থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শুরু হওয়া দুই দিনব্যাপী ১৩তম এএসইএম শীর্ষ সম্মেলনে শুক্রবার (২৬ নভেম্বর) প্রচারিত এক ভিডিও বার্তায় এ আহ্বান জানান। খবর বাসসের

এএসইএম-এর ২৫ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এএসইএম১৩-এর সামগ্রিক প্রতিপাদ্য ‘অংশীদারি প্রবৃদ্ধির জন্য বহুপাক্ষিকতাকে শক্তিশালী করা’ শীর্ষক সম্মেলনে ইউরোপীয় ও এশিয়ার সদস্য দেশ, ইইউ এবং আসিয়ান সচিবালয়ের নেতাদের একত্রিত করেছে। কম্বোডিয়া বর্তমানে এএসইএম এর সভাপতির দায়িত্বে রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এশিয়া ও ইউরোপকে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় অর্থ ও প্রযুক্তি প্রবাহ সংহত করতে অবশ্যই একত্রিত হয়ে হাতে হাত মিলাতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘যৌথ ও টেকসই উন্নয়নের জন্য আমাদের এখন আগের চেয়ে আরও বেশি করে বহুপাক্ষিক সহযোগিতা প্রয়োজন। উন্নত এবং শিল্পোন্নত অর্থনীতিগুলোকে কপ২৬ এর বাইরে তাদের জলবায়ু উচ্চাকাঙ্ক্ষা বাড়াতে হবে। আমি তাদের অনুরোধ করছি তারা যেন এমন দায়িত্ব না নেয় যা প্রকারান্তরে আমাদের নিজস্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ তার প্রতিবেশীদের জন্য সম্ভাবনাময় সুবিধা সংবলিত একটি আঞ্চলিক সংযোগ কেন্দ্র হতে চায়। ইইউ-এশিয়া সংযোগ কৌশলের অন্যতম সেতু হওয়ার প্রস্তাবও দিয়েছে বাংলাদেশ।’

তিনি তার বক্তব্যে রেল ও সড়কপথে উপ-আঞ্চলিক যোগাযোগ প্রকল্পে ইউরোপের সম্পৃক্ততাকে স্বাগত জানান। আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সহযোগিতার মাধ্যমে আমাদের যৌথ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যে সহায়তা করা প্রয়োজন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আসিয়ান আঞ্চলিক ফোরামের মতো আঞ্চলিক সংগঠনলোকে পাচার প্রতিরোধ, সমুদ্র ও সাইবার নিরাপত্তা প্রতিরোধে এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সময়োপযোগী সহযোগিতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের বহুপাক্ষিক সহযোগিতার একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হবে মিয়ানমারের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত জনগণ- রোহিঙ্গাদের জন্য একটি স্থায়ী ও শান্তিপূর্ণ সমাধান খুঁজে বের করা। বাংলাদেশ তাদের অস্থায়ী আশ্রয় দেয় এবং পরিস্থিতি স্থিতিশীল করে। আমরা মিয়ানমারে তাদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তনে জোর দাবি জানাচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘কক্সবাজার ক্যাম্পের নিরাপত্তা পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠছে এবং ক্রমবর্ধমান সহিংসতা ও অপরাধ শিগগিরই আমাদের সীমান্তের বাইরেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই সংকটের প্রতি অস্থায়ী প্রতিক্রিয়া খুব সামান্য উদ্দেশ্য পূরণ করবে। আমি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অনুরোধ করছি আমরা যে উদ্বেগ প্রকাশ করছি তার প্রতি যথাযথ মনোযোগ দিন। বাংলাদেশ নিজেকে এশিয়ার রীতিনীতি এবং ইউরোপীয় মূল্যবোধের সেরা মডেল হিসাবে বিবেচনা করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রথম দিন থেকেই বহুপাক্ষিকতার প্রতি আমাদের অঙ্গীকার অবিচল রয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা আমাদের বেশ কতগুলো ইউরোপিয়ান অংশীদারদের সঙ্গে কৌশলগত সংলাপে সম্পৃক্ত রয়েছেন এবং তারা আসিয়ানের একটি সেক্টোরাল ডায়ালগ পার্টনার হওয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। ইন্ডিয়ান ওশান রিম অ্যাসোসিয়েশন (আইওআরএ), ডি-৮, বিমসটেকে বর্তমানে তাদের নেতৃত্ব রয়েছে এবং আমাদের অভিন্ন লক্ষ্য অর্জনের জন্য অন্যান্য ফোরামগুলো ব্যবহার করা হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, ‘ভালো একটি আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার জন্য একটি শক্তি হিসাবে আমরা আসেম’কে (এএসইএম) আবির্ভূত হতে দেখতে চাই।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ বছর আমরা আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করছি।’

কোভিড-১৯ মহামারি বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এবং অর্থনীতির ওপর প্রবল চাপ সৃষ্টি করেছে এ কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই মহামারির কারণে আমাদের উন্নয়ন সংস্থানগুলো ঘুরিয়ে জরুরি চিকিৎসা ও ভ্যাকসিন কার্যক্রমে ব্যয় করতে বাধ্য করেছে।’

তিনি জানান, তার সরকার জীবন ও জীবিকা উভয় সুরক্ষার কৌশল গ্রহণ করেছে। তার সরকার মহামারির প্রভাব মোকাবিলায় ৫৪০ কোটি মার্কিন ডলারের ২৮ টি উদ্দীপনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের অগ্রাধিকার এখন আমাদের কষ্টার্জিত উন্নয়ন ধরে রাখা, দারিদ্র্য ও ক্ষুধা হ্রাস করা, মা ও শিশুদের বাঁচানো, শিক্ষা ও সাক্ষরতা বৃদ্ধি করা এবং স্বাস্থকর জীবনযাপন নিশ্চিত করা।’

প্রধানমন্ত্রী জানান, তার সরকারের লক্ষ্য ২০২২ সালের মার্চের মধ্যে দেশের জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ লোকের টিকাদান সম্পন্ন করা।

তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের এলডিসি থেকে উত্তরণের গতি বজায় রাখার আশা করি। ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি অর্জনের দিকে আমাদের মনোযোগ থাকবে। আমাদের লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তোলা। এই লক্ষ্য অর্জনে এশিয়া এবং ইউরোপের সঙ্গে আমাদের অংশীদারিত্ব গুরুত্বপূর্ণ।’

প্রধানমন্ত্রী ভ্যাকসিন অনুদানের জন্য এশিয়া, ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধুদের ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানসম্পন্ন ভ্যাকসিন উৎপাদনের ক্ষমতা আছে। আমরা চাই প্রযুক্তিগত জ্ঞান এবং এ জন্য লাইসেন্স।’

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের পরে এটি আন্তর্জাতিক নেতৃত্বের বৃহত্তম সম্মেলন (এতে ৩০টি ইউরোপীয় এবং ২১ টি এশীয় দেশের সঙ্গে ইইউ ও আসিয়ান সচিবালয় রয়েছে।) আসেমে ইইউ’র ২৭ সদস্য দেশের পাশাপাশি নরওয়ে, সুইজারল্যান্ড এবং যুক্তরাষ্ট্র রয়েছে।

কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুনসেন সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন। ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট চার্লস মিশেল, ইউরোপিয়ান কমিশন প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেন ইইঊ’র প্রতিনিধিত্ব করেন। স্লোভানিয়ার প্রধানমন্ত্রী জানেস জানসা পর্যায়ক্রমে ইইউ’র কাউন্সিলে প্রতিনিধিত্ব করেন। ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড সিকিউরিটি বিষয়ক উচ্চ প্রতিনিধি জোসেফ বোরেল সম্মেলনে অংশ নেন।

back to top