alt

বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী

শত্রুমুক্ত হয় দেবীদ্বার, ফুলবাড়ী, ফুলছড়ি, লক্ষ্মীপুর, কামালপুর

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : শুক্রবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২১

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস ছিল তুমুল উত্তেজনাপূর্ণ। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাদের শোষণ-শাসন ধরে রাখতে, মুক্তিকামী বাংলার মানুষকে দমিয়ে রাখতে নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ, নারী-শিশু নির্যাতন চালিয়েছে। অন্যদিকে, মুক্তিকামী বাংলার তরুণ, বৃদ্ধ, নারী এমন কী শিশুরাও তাদের বুকের রক্ত ঢেলে দিয়ে সবুজের বুকে লাল সূর্যকে ছিনিয়ে আনতে প্রাণপণ লড়াই করে যাচ্ছে। দিন যতই পার হতে থাকলো ততই পাকি সেনারা মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পরাজয় স্বীকার করে পিছু হটতে থাকল। এরপর শেষ যখন ডিসেম্বর শুরু হলো, তখনই পাকসেনা, রাজাকার-আলবদরদের শেষঘণ্টা বাজতে শুরু করল। প্রতিদিন করে বাড়তে থাকে মুক্ত-স্বাধীন স্বদেশের মাটি। ৪ ডিসেম্বর তেমনই একটি দিন।

এদিন লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লার দেবীদ্বার, গাইবান্ধার ফুলছড়ি, দিনাজপুরের ফুলবাড়ী, জামালপুরের ধানুয়াকামালপুর মুক্ত হয়। এ এলাকার মানুষেরা এদিন প্রথম মুক্ত-স্বাধীন স্বদেশের বাতাস বুক ভরে টেনে নেন।

পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ফুলবাড়ীকে পাকি হানাদার বাহিনী মুক্ত করার জন্য ৪ ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় সেনাবাহিনী যৌথভাবে ফুলবাড়ী থানার জলপাইতলী, পানিকাটা, দেশমা, রুদ্রানী, জলেশ্বরী, আমড়া, রানীনগরসহ বিভিন্ন সীমান্ত পথে ফুলবাড়ীতে প্রবেশ করে এবং পাক সেনাদের বিরুদ্ধে চতুর্মুখী আক্রমণ চালায়। এ সময় মিত্র বাহিনীর হাতে নিশ্চিত পরাজয় বুঝে পাকসেনারা মিত্র বাহিনীর ফুলবাড়ী শহরে আগমন রোধ করতে ওই দিন বিকেল আনুমানিক সাড়ে ৩টায় ফুলবাড়ীর ছোট যমুনার ওপর লোহার ব্রিজের পূর্বাংশ ডিনামাইট দিয়ে উড়িয়ে দেয়। সেই ব্রিজটি কালের সাক্ষী হয়ে আজো আছে ফুলবাড়ীর যমুনা নদীর বুকে।

এ সময় পাকিস্তানি বাহিনীর গুলিতে ফুলবাড়ী সরকারি কলেজের দক্ষিণ দিকে যমুনা নদীর ওপর ভারতীয় সেনাবাহিনীর একজন অফিসার নিহত হন। এরপর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী মেঠোপথে ফুলবাড়ী ছেড়ে সৈয়দপুরের দিকে পালিয়ে যায়। মুক্তিবাহিনী ফুলবাড়ীকে পাকি দখলদার মুক্ত করে ফুলবাড়ীর পুরো নিয়ন্ত্রণ নেয়।

এই দিনে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচন্ড প্রতিরোধের মুখে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী ফুলবাড়ী থেকে পিছু হটেই না শুধু এলাকা ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়। শত্রুমুক্ত করে ফুলবাড়ী উপজেলার সিঅ্যান্ডবি ডাকবাংলায় স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা।

পাকিস্তানি সেনা ও এ দেশীয় দোসর রাজাকার-আল বদরদের সহায়তায় লক্ষ্মীপুর জেলার পাঁচটি উপজেলায় ব্যাপক অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, ধর্ষণ শেষে শত শত নিরীহ জনসাধারণকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। এ দিন প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল হায়দার চৌধুরী এবং সুবেদার আবদুল মতিনের নেতৃত্বে দেড় শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা একত্রিত হয়ে দালাল বাজার, লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দক্ষিণ হামছাদি, শাঁখারীপাড়ার মিঠানীয়া খাল পাড়সহ বাগবাড়ির রাজাকার ক্যাম্পে হামলা চালিয়ে লক্ষ্মীপুরকে হানাদারমুক্ত করার সঙ্গে সঙ্গে শতাধিক রাজাকারকে আটক করে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার করে। এরপর প্রকাশ্যে লক্ষ্মীপুর শহরে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়।

মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে ১১নং সেক্টরের কোম্পানি কমান্ডার রুস্তম আলী খন্দকারের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি বিশাল দল ফুলছড়ি উপজেলার ব্রহ্মপুত্র বেষ্টিত গলনার চরে অবস্থান নেন। তারা ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গেরিলা আক্রমণে পাকসেনাদের পরাস্ত করেন। দুঃসাহসী গেরিলা কমান্ডার সামছুল আলম ও অন্যান্য সহযোগী কমান্ডাররা মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে পরিকল্পনা মাফিক অতর্কিতে ফুলছড়ি পুলিশ স্টেশন আক্রমণ করলে মুক্তিযোদ্ধাদের সাঁড়াশি আক্রমণে পাক হানাদার বাহিনী ফুলছড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায়। এই যুদ্ধে পাকহানাদার বাহিনীদের হাতে শহীদ হন পাঁচ বীর মুক্তিযোদ্ধা। এরা হলেন বগুড়ার জাহেদুল ইসলাম বাদল, সাঘাটার আফজাল হোসেন, আবদুস সোবহান, ওসমান গণি ও কাবেজ আলী। পরদিন ৪ ডিসেম্বর সকালে ফুলছড়ি হানাদারমুক্ত হয়। এই পাঁচ বীর শহীদকে সাঘাটার মুক্তিনগর ইউনিয়নের খামার ধনারুহা প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে সমাহিত করা হয়।

ওই সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন আহসান মালিক খানের নেতৃত্বে হানাদার বাহিনী ঘাঁটি গেড়ে বসেছিল। একদিকে মুক্তিযোদ্ধাদের অবরোধ অন্যদিকে হানাদারদের ঘাঁটি রক্ষায় মরণপণ চেষ্টায় শুরু হয় প্রচন্ড লড়াই। ১০ দিনের প্রচন্ড যুদ্ধের পর ৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৭টায় দুর্গে অবরুদ্ধ ৩১ বালুচ রেজিমেন্টের গ্যারিসন কমান্ডার ক্যাপ্টেন আহসান মালিক খানসহ ১৬২ পাকিস্তানি সৈন্য মিত্র বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। মুক্ত হয় কামালপুর। আর কামালপুর মুক্ত হওয়ার মধ্য দিয়েই সূচিত হয় শেরপুর, ময়মনসিংহ, জামালপুরসহ ঢাকা বিজয়ের পথ। কামালপুরের এ যুদ্ধে ক্যাপ্টেন সালাহ উদ্দিন মমতাজ, মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান তসলিমসহ শহীদ হন ১৯৭ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা। অন্যদিকে, একজন ক্যাপ্টেনসহ পাকিস্তানি বাহিনীর ২২০ জন সৈন্য নিহত হন এই যুদ্ধে ।

এইদিনে কমলগঞ্জের ভানুগাছ এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণের মুখে সদর থেকে পাকিবাহিনী পিছু হটে এবং স্বাধীনতার পতাকা ওড়ানো হয়। ভানুগাছ বাজারের কাছে ধলাই সেতুতে সম্মুখযুদ্ধে তিনজন ও কমলগঞ্জ থানার সামনে জাতীয় পতাকা ওড়ানোর সময় অন্য একজন অস্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট সদস্য পাক হানাদার বাহিনীর গুলিতে শহীদ হন। শহীদরা হলেন কুমিল্লার মুরাদনগরের কালাপাইনা গ্রামের সিপাহী মো. মিজানুর রহমান, দেবীদ্বারের বড় শালঘর গ্রামের সিপাহী আবদুর রশিদ, পাবনা শাহাদাৎপুরের দারগাপাড়া গ্রামের ল্যান্স নায়েক জিল্লুর রহমান, চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ের মগাদিয়া গ্রামের সিপাহী মো. শাহাজান মিয়া।

সম্মুখযুদ্ধে নিজের জীবন উৎসর্গকারী এই চার বীর যোদ্ধাকে ৫ ডিসেম্বর পাশের আলীনগর ইউনিয়নের পশ্চিম কামুদপুরে দাফন করা হয়। সেই থেকে ৪ ডিসেম্বর কমলগঞ্জ মুক্ত দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।

ছবি

প্রধান বিচারপতি: বিচার বিভাগকে সময়ের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক রাখতে হলে সংস্কার অপরিহার্য

ছবি

রাজশাহীতে নির্বাচন প্রসঙ্গে মন্তব্য এড়িয়ে গেলেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল

ছবি

নির্বাচন নিয়ে যারা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে, তারা স্বৈরাচারের দোসর : শফিকুল আলম

সাঁওতাল হত্যা দিবস: তিন হত্যার বিচার দাবি, সাঁওতালদের বিক্ষোভ

ছবি

আধুনিক অর্থনীতির ভিত্তি তৈরিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়াররা ব্যাপক অবদান রাখছেন: প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

১০-২০ কোটি টাকা ছাড়া ভোট করা যায় না, আমাদের ভাবতে হয়: আসিফ

ছবি

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ব্যয় নিয়ে তোলা অভিযোগ ভিত্তিহীন: কমিশনের প্রতিবাদ

ছবি

ইসি শতভাগ প্রস্তুত, ফেব্রুয়ারির প্রথম ভাগেই সংসদ নির্বাচন সম্ভব: মাছউদ

ছবি

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও ভুল তথ্য ছড়াচ্ছেন: প্রেস সচিব

ছবি

আইআরআইয়ের প্রাক-নির্বাচনী মূল্যায়ন প্রতিবেদন, বাংলাদেশে প্রাক-নির্বাচনী পরিবেশ এখনও নাজুক

ছবি

মেঘনা-ধনাগোদা নদীর উপর সেতু নির্মাণ প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করলেন সেতু বিভাগের সচিব

ছবি

তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিলের রায় ‘অসৎ উদ্দেশ্যে’ দেয়া হয়েছিল দাবি অ্যাটর্নি জেনারেলের

হালদা নদীকে মৎস্য হেরিটেজ ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি

ছবি

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন: দলগুলোকে দায়িত্ব দেয়ার চার দিনেও অগ্রগতি নেই

ছবি

শতভাগ জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনে বড় বাধা দুর্বল আইন, শক্তিশালীকরণের দাবি

ছবি

ইন্টারনেট বন্ধে স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা, বিলুপ্ত হচ্ছে এনটিএমসি

ছবি

ডেঙ্গুতে আরও ৫ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ১০৩৪ জন

ছবি

আওয়ামী লীগের চিঠিতে কোনও কাজ হবে না: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

জুলাইযোদ্ধা জাহাঙ্গীর আলমকে নির্যাতনের অভিযোগে জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের ১০ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা

ছবি

মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে গুম প্রতিরোধ ও প্রতিকার অধ্যাদেশের চূড়ান্ত অনুমোদন

ছবি

সাবেক বিচারপতিসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

ছবি

ডেঙ্গুতে একদিনে সর্বোচ্চ ১০ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে আরও ১,০৬৯ জন

জামিনে মুক্তি পাওয়া আ’লীগ নেতারা অপরাধে জড়ালে কঠোর ব্যবস্থা: উপদেষ্টা

ছবি

তদন্ত প্রতিবেদন: পাইলটের ত্রুটির কারণে মাইলস্টোন স্কুলে বিমান বিধ্বস্ত হয়

ছবি

বাংলাদেশে পুলিশ সংস্কারে সহায়তার আগ্রহ আয়ারল্যান্ডের

ছবি

নির্বাচন হলে দেশে স্থিতিশীলতা আরও ভালো হবে, আশা সেনাবাহিনীর

ছবি

অগ্নিঝুঁকিতে বেনাপোল স্থলবন্দরের পণ্যাগার, ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ, নিরাপত্তা জোরদার

ছবি

নির্বাচন হলে দেশে স্থিতিশীলতা আসবে, সেনাবাহিনী ফিরবে ব্যারাকে: জিওসি মাইনুর রহমান

ছবি

নিষিদ্ধ দলের মিছিলের চেষ্টা করলে আইনের কঠোর প্রয়োগ: প্রেস সচিব

দায়িত্ব পালনে অযোগ্যতা: হাই কোর্টের বিচারপতি খুরশীদ আলম সরকারের অপসারণ

ছবি

দেশে ডেঙ্গুতে একদিনে প্রাণ গেল ১০ জনের

ছবি

আইসিটি মামলায় আটক ১৫ সেনা কর্মকর্তার চাকরি নিয়ে সেনাসদরের ব্যাখ্যা: “এটি একটি আইনগত প্রক্রিয়া”

ছবি

১৪ মাসে ৪০ বিচারবহির্ভূত হত্যা, আইনের মাধ্যমে ফয়সালা করা হবে: স্বরাষ্ট্র্র উপদেষ্টা

ছবি

আরপিও সংশোধন অধ্যাদেশ জারি: বিএনপির আপত্তি আমলে নেয়নি অন্তর্বর্তী সরকার

কোটা আন্দোলনে হামলায় ঢাবির আরও ২৭৫ শিক্ষার্থী অভিযুক্ত

ছবি

নির্বাচন: দেড় লাখের মধ্যে ৪৮ হাজার পুলিশের প্রশিক্ষণ শেষ

tab

বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী

শত্রুমুক্ত হয় দেবীদ্বার, ফুলবাড়ী, ফুলছড়ি, লক্ষ্মীপুর, কামালপুর

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

শুক্রবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২১

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস ছিল তুমুল উত্তেজনাপূর্ণ। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাদের শোষণ-শাসন ধরে রাখতে, মুক্তিকামী বাংলার মানুষকে দমিয়ে রাখতে নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ, নারী-শিশু নির্যাতন চালিয়েছে। অন্যদিকে, মুক্তিকামী বাংলার তরুণ, বৃদ্ধ, নারী এমন কী শিশুরাও তাদের বুকের রক্ত ঢেলে দিয়ে সবুজের বুকে লাল সূর্যকে ছিনিয়ে আনতে প্রাণপণ লড়াই করে যাচ্ছে। দিন যতই পার হতে থাকলো ততই পাকি সেনারা মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পরাজয় স্বীকার করে পিছু হটতে থাকল। এরপর শেষ যখন ডিসেম্বর শুরু হলো, তখনই পাকসেনা, রাজাকার-আলবদরদের শেষঘণ্টা বাজতে শুরু করল। প্রতিদিন করে বাড়তে থাকে মুক্ত-স্বাধীন স্বদেশের মাটি। ৪ ডিসেম্বর তেমনই একটি দিন।

এদিন লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লার দেবীদ্বার, গাইবান্ধার ফুলছড়ি, দিনাজপুরের ফুলবাড়ী, জামালপুরের ধানুয়াকামালপুর মুক্ত হয়। এ এলাকার মানুষেরা এদিন প্রথম মুক্ত-স্বাধীন স্বদেশের বাতাস বুক ভরে টেনে নেন।

পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ফুলবাড়ীকে পাকি হানাদার বাহিনী মুক্ত করার জন্য ৪ ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় সেনাবাহিনী যৌথভাবে ফুলবাড়ী থানার জলপাইতলী, পানিকাটা, দেশমা, রুদ্রানী, জলেশ্বরী, আমড়া, রানীনগরসহ বিভিন্ন সীমান্ত পথে ফুলবাড়ীতে প্রবেশ করে এবং পাক সেনাদের বিরুদ্ধে চতুর্মুখী আক্রমণ চালায়। এ সময় মিত্র বাহিনীর হাতে নিশ্চিত পরাজয় বুঝে পাকসেনারা মিত্র বাহিনীর ফুলবাড়ী শহরে আগমন রোধ করতে ওই দিন বিকেল আনুমানিক সাড়ে ৩টায় ফুলবাড়ীর ছোট যমুনার ওপর লোহার ব্রিজের পূর্বাংশ ডিনামাইট দিয়ে উড়িয়ে দেয়। সেই ব্রিজটি কালের সাক্ষী হয়ে আজো আছে ফুলবাড়ীর যমুনা নদীর বুকে।

এ সময় পাকিস্তানি বাহিনীর গুলিতে ফুলবাড়ী সরকারি কলেজের দক্ষিণ দিকে যমুনা নদীর ওপর ভারতীয় সেনাবাহিনীর একজন অফিসার নিহত হন। এরপর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী মেঠোপথে ফুলবাড়ী ছেড়ে সৈয়দপুরের দিকে পালিয়ে যায়। মুক্তিবাহিনী ফুলবাড়ীকে পাকি দখলদার মুক্ত করে ফুলবাড়ীর পুরো নিয়ন্ত্রণ নেয়।

এই দিনে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচন্ড প্রতিরোধের মুখে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী ফুলবাড়ী থেকে পিছু হটেই না শুধু এলাকা ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়। শত্রুমুক্ত করে ফুলবাড়ী উপজেলার সিঅ্যান্ডবি ডাকবাংলায় স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা।

পাকিস্তানি সেনা ও এ দেশীয় দোসর রাজাকার-আল বদরদের সহায়তায় লক্ষ্মীপুর জেলার পাঁচটি উপজেলায় ব্যাপক অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, ধর্ষণ শেষে শত শত নিরীহ জনসাধারণকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। এ দিন প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল হায়দার চৌধুরী এবং সুবেদার আবদুল মতিনের নেতৃত্বে দেড় শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা একত্রিত হয়ে দালাল বাজার, লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দক্ষিণ হামছাদি, শাঁখারীপাড়ার মিঠানীয়া খাল পাড়সহ বাগবাড়ির রাজাকার ক্যাম্পে হামলা চালিয়ে লক্ষ্মীপুরকে হানাদারমুক্ত করার সঙ্গে সঙ্গে শতাধিক রাজাকারকে আটক করে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার করে। এরপর প্রকাশ্যে লক্ষ্মীপুর শহরে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়।

মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে ১১নং সেক্টরের কোম্পানি কমান্ডার রুস্তম আলী খন্দকারের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি বিশাল দল ফুলছড়ি উপজেলার ব্রহ্মপুত্র বেষ্টিত গলনার চরে অবস্থান নেন। তারা ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গেরিলা আক্রমণে পাকসেনাদের পরাস্ত করেন। দুঃসাহসী গেরিলা কমান্ডার সামছুল আলম ও অন্যান্য সহযোগী কমান্ডাররা মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে পরিকল্পনা মাফিক অতর্কিতে ফুলছড়ি পুলিশ স্টেশন আক্রমণ করলে মুক্তিযোদ্ধাদের সাঁড়াশি আক্রমণে পাক হানাদার বাহিনী ফুলছড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায়। এই যুদ্ধে পাকহানাদার বাহিনীদের হাতে শহীদ হন পাঁচ বীর মুক্তিযোদ্ধা। এরা হলেন বগুড়ার জাহেদুল ইসলাম বাদল, সাঘাটার আফজাল হোসেন, আবদুস সোবহান, ওসমান গণি ও কাবেজ আলী। পরদিন ৪ ডিসেম্বর সকালে ফুলছড়ি হানাদারমুক্ত হয়। এই পাঁচ বীর শহীদকে সাঘাটার মুক্তিনগর ইউনিয়নের খামার ধনারুহা প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে সমাহিত করা হয়।

ওই সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন আহসান মালিক খানের নেতৃত্বে হানাদার বাহিনী ঘাঁটি গেড়ে বসেছিল। একদিকে মুক্তিযোদ্ধাদের অবরোধ অন্যদিকে হানাদারদের ঘাঁটি রক্ষায় মরণপণ চেষ্টায় শুরু হয় প্রচন্ড লড়াই। ১০ দিনের প্রচন্ড যুদ্ধের পর ৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৭টায় দুর্গে অবরুদ্ধ ৩১ বালুচ রেজিমেন্টের গ্যারিসন কমান্ডার ক্যাপ্টেন আহসান মালিক খানসহ ১৬২ পাকিস্তানি সৈন্য মিত্র বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। মুক্ত হয় কামালপুর। আর কামালপুর মুক্ত হওয়ার মধ্য দিয়েই সূচিত হয় শেরপুর, ময়মনসিংহ, জামালপুরসহ ঢাকা বিজয়ের পথ। কামালপুরের এ যুদ্ধে ক্যাপ্টেন সালাহ উদ্দিন মমতাজ, মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান তসলিমসহ শহীদ হন ১৯৭ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা। অন্যদিকে, একজন ক্যাপ্টেনসহ পাকিস্তানি বাহিনীর ২২০ জন সৈন্য নিহত হন এই যুদ্ধে ।

এইদিনে কমলগঞ্জের ভানুগাছ এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণের মুখে সদর থেকে পাকিবাহিনী পিছু হটে এবং স্বাধীনতার পতাকা ওড়ানো হয়। ভানুগাছ বাজারের কাছে ধলাই সেতুতে সম্মুখযুদ্ধে তিনজন ও কমলগঞ্জ থানার সামনে জাতীয় পতাকা ওড়ানোর সময় অন্য একজন অস্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট সদস্য পাক হানাদার বাহিনীর গুলিতে শহীদ হন। শহীদরা হলেন কুমিল্লার মুরাদনগরের কালাপাইনা গ্রামের সিপাহী মো. মিজানুর রহমান, দেবীদ্বারের বড় শালঘর গ্রামের সিপাহী আবদুর রশিদ, পাবনা শাহাদাৎপুরের দারগাপাড়া গ্রামের ল্যান্স নায়েক জিল্লুর রহমান, চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ের মগাদিয়া গ্রামের সিপাহী মো. শাহাজান মিয়া।

সম্মুখযুদ্ধে নিজের জীবন উৎসর্গকারী এই চার বীর যোদ্ধাকে ৫ ডিসেম্বর পাশের আলীনগর ইউনিয়নের পশ্চিম কামুদপুরে দাফন করা হয়। সেই থেকে ৪ ডিসেম্বর কমলগঞ্জ মুক্ত দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।

back to top