দেশের বিভিন্ন স্থানে অবৈধ বালু উত্তোলন এবং বাঁধের উপর বসবাস বন্ধ করতে না পারলে লোহা দিয়ে বাঁধ দিলেও তা টিকবে না বলে মন্তব্য করেছেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক।
বৃহস্পতিবার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জেলা প্রশাসক সম্মেলনের তৃতীয় দিনের দ্বিতীয় অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী বলেন, “অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের একটা হিড়িক পড়েছে। এটা বন্ধ করতে না পারলে…। ডিসিদের বলেছি, নদীর তীর লোহা দিয়ে দেয়াল করে দিলেও তা রক্ষা করতে পারব না।
“দেশে ৪০৫টি নদী প্রবাহমান রয়েছে। জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে বর্ষা মৌসুমে অধিক পানি আর শুষ্ক মৌসুমে পানি অনেক কমে যায়। খনন করে নদীর নাব্যতা রক্ষা করার চেষ্টা করা হচ্ছে।”
জাহিদ ফারুক বলেন, জেলা প্রশাসকদের মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দেশে নদী রক্ষা ও নদীর ভাঙ্গন রোধের চেষ্টা করা হচ্ছে। নদী খননের একটা নীতিমালা প্রনয়ণ হচ্ছে যেটা মন্ত্রিপরিষদে পাঠানো হবে।
“সেখানে আমরা বলেছি, বালু উত্তোলনের সময় সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে করতে হবে। সন্ধ্যার পর কোনোভাবেই বালু উত্তোলন করা যাবে না।”
প্রতিমন্ত্রী বলেন, “সরকারের যেসব উন্নয়নমূলক প্রকল্প আছে, সেগুলো চলমান রাখার জন্য বালুর প্রয়োজন। যত্রতত্র থেকে বালি উত্তোলন চলবে না। জেলা প্রশাসকদের বলেছি, পানি উন্নয়ন বোর্ড, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রকৌশলীদের নিয়ে বালুর মহল চিহ্নিত করবেন।
“বাঁধের উপর ঘর-বাড়ি থাকে। ঘর-বাড়ি আর রান্নাবান্না করলে বাঁধে ইঁদুরের বাসা হয়। ফলে বাঁধ দুর্বল হয়ে যায়, যা বাইরে থেকে বোঝা যায় না। তখন বর্ষায় প্রবল স্রোতে বাঁধ ভেঙে যায়। তখন আপনারা বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ করেছে কিন্তু কাজটা সঠিক হয়নি।”
আশ্রয়ণ প্রকল্পের স্থান নির্ধারণ করার সময় পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলীর সঙ্গে আলোচনা করে উঁচু স্থান নির্ধারণ করার কথা ডিসিদের বলা হয়েছে বলে জানান পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “উপকূলীয় বাঁধ নিয়েও আলোচনা হয়েছে। ৬০ দশকের বাঁধগুলো। এখন ওয়ার্ল্ড ব্যাংকসহ বাংলাদেশের টাকা দিয়ে বাঁধ নির্মাণের কাজ চলছে।
“এই কাজগুলো শেষ হলে আগামী সাত-আট বছর পরে একটা সহনীয় পর্যায়ে আসবে। জলোচ্ছ্বাস থেকে এলাকাবাসী রক্ষা পাবেন।”
নদী দখল ও দূষণ রোধে ডিসিদের নির্দেশ
নদীর নাব্য রক্ষা, দূষণ ও দখল রোধে জেলা প্রশাসকদের আরও তৎপর হতে নির্দেশ দেওয়ার কথা জানিয়েছেন নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “নদীগুলোর নব্য রক্ষা, দূষণ ও দখল রোধে জেলা প্রশাসকদের একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। কারণ আমাদের নদী রক্ষার যে জেলা কমিটি, তার সভাপতি জেলা প্রশাসক। তারা ইতোমধ্যে অনেক ভূমিকা রাখছেন এবং এগুলো আরও জোরদার করার জন্য বলা হয়েছে।
“অবৈধ বালু উত্তোলনের ফলে নদীর গভীরা নষ্ট হয়ে নৌপথগুলোতে বিঘ্ন ঘটে। এগুলো সঠিকভাবে মনিটরিং করার জন্য জেলা প্রশাসকদের বলা হয়েছে।”
এক প্রশ্নের জবাবে খালিদ মাহমুদ বলেন, “সম্প্রতি নৌ দুর্ঘটনা বেড়েছে এমন নয়, কয়েকটি বড়-বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে। নৌ দুর্ঘটনা কমে গেছে।
“নৌ সেক্টরে দীর্ঘদিন ধরে একটা অচলায়তন, অনিয়ম (হয়ে) আসছে। এটা এতবড় একটা সেক্টর, একবারে পরিবর্তন সম্ভব নয়।”
তিনি বলেন, “আমরা যে লঞ্চে যাতায়াত করি, আমি প্রথম থেকেই বলে আসছি- এটার নকশায় পরিবর্তন করা দরকার। শুধু কোভিড পরিস্থিতির কারণে নয়, বর্তমান এ আধুনিক যুগে এটি চলে না। এ জায়গাটায় আমরা নজর দিচ্ছি।”
এ বিষয়ে কাজ চলছে বলেও জানান নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী। এ সেক্টরকে নিরাপদ করা তাদের লক্ষ্য বলে জানান।
অর্থ-বাণিজ্য: নির্বাচনের প্রার্থীদের জন্য শনিবার সব ব্যাংক খোলা থাকবে