alt

দায়িত্বে চাপ ছিল, বিদেশে চাকরির প্রলোভনও ছিল: দাবি মসিউরের

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : শনিবার, ২৮ মে ২০২২

প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমান দাবি করেছেন, পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ তোলার পর বিশ্ব ব্যাংকসহ ঋণদাতা সংস্থাগুলো দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়াতে চাপ দেওয়ার পাশাপাশি বিদেশে চাকরির প্রলোভনও দেখিয়েছিল।

শুক্রবার (২৭ মে) রাতে আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে, বহুল আলোচিত পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিন ঠিক হয়ে যাওয়ার পর এক দশক আগের সেই কথা তিনি প্রকাশ্যে আনলেন। যা আগে কখনও সামনে আসেনি।

বিশ্ব ব্যাংক, এডিবি, আইডিবি ও জাইকার অর্থায়নে ২০১২ সালে পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ শুরুর পর দুর্নীতির অভিযোগ তোলে বিশ্ব ব্যাংক। তখন বিশ্ব ব্যাংকের চাপে তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে পদত্যাগ করতে হয়, ছুটিতে যেতে হয় সেতু বিভাগের সাবেক সচিব মোশাররফ হোসাইনকে। মামলাও হয়।

তখন পদ্মা সেতু প্রকল্পের ইন্টিগ্রিটি অ্যাডভাইজর মসিউর রহমানের পদত্যাগের শর্তও দিয়েছিল বিশ্ব ব্যাংক। কিন্তু তিনি রাজি হননি।

এরপর বিশ্ব ব্যাংক আর এই প্রকল্পে ফেরেনি; আর নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্প এগিয়ে নিয়ে কাজ শেষ করে আগামী ২৫ জুন উদ্বোধন করতে যাচ্ছে পদ্মা সেতু।

মসিউর রহমান বলেন, আমার ওপরে যে চাপ ছিল যেমন, এখানে ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক ছাড়া অন্য যারা এতে অর্থায়ন করছে- বিশ্ব ব্যাংক, এডিবি, জাইকা- এরা একদিন সকালে আগে সময় ঠিক করে আমার সঙ্গে দেখা করতে চাইল। প্রথমে তারা বলল যে, জাপানের অ্যাম্বাসির অফিসে। আমি বললাম, দেখো জাপান অ্যাম্বাসির অফিসে আমি যাব না। আমার নিজের কাছে যুক্তি ছিল যে, জাপানি অ্যাম্বাসির কাছে যদি আমি যাই, তাহলে যেটা মানুষের ধারণা হবে এবং প্রচার হবে- সেটা হলো, আমি বোধহয় তাদের কাছে নতজানু হয়ে কোনো একটা সুবিধা চাচ্ছি। জাপানি অ্যাম্বাসেডরকে বললাম, তুমি তাহলে আমার এখানে আস। জাপানি অ্যাম্বাসেডর বলল- ‘না, তোমার ওখানে গেলে সাংবাদিকদের ফেইস করতে হবে, আমি সাংবাদিকদের ফেইস করতে পারব না’। আমি বললাম, সাংবাদিকদের আমি ফেইস করব, তুমি আস।

তিনি বলেন, ওরা এসে আমাকে বলল যে, আমাকে দায়িত্ব ত্যাগ করতে হবে, দেশও ত্যাগ করতে হবে। দেশত্যাগের শর্ত হলো তারা আমাকে বিদেশে বিশ্ব ব্যাংকে বা এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক বা কোথাও আমাকে একটা কনসালট্যান্সি জোগাড় করে দিবে এবং আমি যে বেতন চাই, সেই বেতনই তারা ব্যবস্থা করে দেবে। অথবা তারা কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার কিছু কাজ ঠিক করে দেবে এবং আমাকে তারা টাকা দেওয়ার বন্দোবস্ত করে দেবে। আমার উত্তর হলো দেখো, আমার যদি টাকা করার ইচ্ছা থাকত, তাহলে তোমরা যে দোষারোপ করছ, সেখানেই তো আমি টাকা করতে পারতাম। ওদের যেটা প্রস্তাব, এটা হলো একটা সামঞ্জস্যহীন প্রস্তাব। যে ‘দোষ’ করেছে, তাকে আবার তারা পুরস্কৃত করবে।

সেসময় আওয়ামী লীগ নেতা ও বন্ধুরাও তাকে বিদেশে চলে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন বলে জানান মসিউর।

তিনি আরও বলেন, যেটা আমার বলা উচিৎ হবে এবং না বলাটা অনুচিত হবে যে, এই শক্ত পজিশন নেওয়ার ক্ষমতাটা কোত্থেকে আসলো? বিশ্ব ব্যাংক বলার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের কিছু গুরুজন স্থানীয়, যারা প্রভাবশালী, দু’একজন আমার বন্ধু, তারাও আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত- বন্ধু হিসেবে তারা আমাকে বলেছে যে, দেখো তোমার নামে এসব ছড়াচ্ছে। তুমি কেন দায়িত্ব ত্যাগ করো না এবং দেশ ছাড় না কেন?

মসিউর রহমান বলেন, আমি দেশ ছাড়ব না এইজন্য যে, দেশের বাইরে গেলে আমার পায়ের তলায় মাটি থাকবে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে সাহস জুগিয়েছেন, এ কথা বলতে বলতেই লাইভ অনুষ্ঠানে আবেগাপ্লুত হয়ে ঝরঝরিয়ে কেঁদে ফেলেন মসিউর। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলে চলেন, আমি যেটা বলি সেটা হল, আমার ওপর একটা বড় ছায়া আছে। সেই ছায়াটা হল- বঙ্গবন্ধুর ছায়া। ওই ছায়া যতদিন থাকবে, ততদিন আমি নিরাপদ।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দূরদৃষ্টি ও সৎ সাহস না থাকলে পদ্মা সেতু হত না।

তিনি আরও বলেন, বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট শেষ কর্মদিবসে এই ঋণ বাতিল করে দেন। ঋণের অনুমোদন দেয় বিশ্ব ব্যাংকের বোর্ড। বোর্ডকে নাকচ করার ক্ষমতা প্রেসিডেন্টের আছে কি না, এই একটা প্রশ্ন থাকতে পারে।

পদ্মা সেতু প্রকল্পের শুরু থেকেই এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত এই উপদেষ্টা বলেন, পদ্মা সেতু শুরু হওয়ার আগে বা এই দুর্নীতির অভিযোগ সম্পর্কে বিশ্ব ব্যাংক সোচ্চার হওয়ার আগে যেটা অনুসরণ করা হতো- যে সংস্থা ঋণ দিয়েছে, প্রত্যেকে তাদের নিজের নিজের নিয়ম মেনে চলত। কিন্তু এইখানে বিশ্ব ব্যাংক- এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, জাইকা এদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে যে, যদি বিশ্ব ব্যাংক কোথাও দুর্নীতির জন্য কোনো সহায়তা বন্ধ করে তাহলে এরাও সে সহায়তা বন্ধ করবে। এরকম চাপ তারা সৃষ্টি করল। এই যে আন্তর্জাতিক ম-লে চাপ সৃষ্টি- এর বিরুদ্ধে একটা পজিশন নেওয়া, এটা অত্যন্ত সাহসী না হলে সম্ভব হত না।

পদ্মা সেতুর চালুর পর বাংলাদেশের উন্নয়ন কিভাবে ত্বরান্বিত হবে সে কথাও তুলে ধরেন তিনি।

মসিউর বলেন, উন্নয়ন ততক্ষণ শুরু হয় না, যখন না মানুষের মনে উন্নয়ন স্পৃহা জাগে। দ্বিতীয়ত যতক্ষণ না তাদের এই আস্থা জাগে যে, উন্নয়ন শুধু স্বপ্ন না, উন্নয়ন তারা বাস্তবায়ন করতে পারবে। আর এই বাস্তবায়ন সম্ভব হয় দেশের নেতৃত্ব ও নীতি যদি সঠিক পথে চলে। জনগণের আস্থা ও স্পৃহাই হলো সব থেকে বড় শক্তি। এই স্পৃহার এখনকার উৎস শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু সেতু যখন শুরু হয়, তখনও বিশ্ব ব্যাংক এটা ‘ভায়াবল’ হবে না বলে আপত্তি তুলেছিল জানিয়ে তিনি বলেন, কিন্তু পরবর্তীতে দেখা গেল যখন অনেক উন্নতি হবে, তখন বিশ্ব ব্যাংক আবার নিজে থেকেই ফিরে আসল। বঙ্গবন্ধু সেতু জাতীয় আয়ে ২ থেকে ৪ শতাংশ অবদান রাখছে, যেটা সমীক্ষার থেকেও বেশি।

পদ্মা সেতু হলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে শিল্প বাড়বে, মোংলা বন্দর থেকে চট্টগ্রাম বন্দর পর্যন্ত সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন হবে এবং এশিয়ান হাইওয়ে সুবিধা ব্যবহার করে দেশের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্ত ছাড়াও দেশের বাইরে যাওয়ার সুবিধা হবে বলে জানান তিনি। এর মানে হলো বাংলাদেশ বিশ্ব বাণিজ্য ও বিশ্ব অর্থনীতির একটা কেন্দ্রে এসে গেল। এই কেন্দ্রের যে ক্ষমতা, সেটা অর্জনের জন্য আমাদের কিছু কাজ করতে হবে। সেই কাজের উৎস হল, বিশ্বাস ও আস্থা, যেটা এই নেতৃত্বের কাছ থেকে পেয়েছি।

তিনি আরও বলেন, এমন সেতু আগামী ৫০ বা ১০০ বছরেও আর একটি হবে না। বিশ্ব ব্যাংক একটি শতবর্ষী প্রকল্পের অংশীদার হওয়া থেকে নিজেকে বাদ দিয়েছে। বাংলাদেশ এককভাবে এই শতবর্ষী প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। এটা দেশের অর্থনীতিকে সম্পূর্ণভাবে পাল্টে দেবে। এইটা একটা বড় অর্জন।

পদ্মা সেতু নিয়ে যে ‘ষড়যন্ত্র’ সেটা ‘আপতদৃষ্টিতে’ কোনো ব্যক্তি বা দলের বিরুদ্ধে মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে এতে দেশের ক্ষতি হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

‘রাজনীতির সাতকাহন’ নামে আওয়ামী লীগের এ সাপ্তাহিক আয়োজনে সঞ্চালনা করেন দলের উপ-প্রচার সম্পাদক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম; বক্তৃতা করেন সভাপতিম-লীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক।

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ভাতা বাড়ছে ১৫ শতাংশ, কার্যকর দুই ধাপে

ছবি

জবির জোবায়েদ হত্যা: ৪১ ঘন্টা পর মামলা, ৩জন গ্রেপ্তার

ছবি

২৫ সেপ্টেম্বর থেকে জোবায়েদকে হত্যার পরিকল্পনা করে ছাত্রী ও তার প্রেমিক: পুলিশ

ছবি

জুলাই গণঅভ্যুত্থান: ‘হত্যা’ মামলার বিচার হবে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে

ছবি

নতুন হ্যাকার গ্রুপ ‘মিস্টিরিয়াস এলিফ্যান্ট’: টার্গেটে বাংলাদেশও

ছবি

ডেঙ্গু: একদিনে মৃত্যু ৪, হাসপাতালে ভর্তি ৯৪২ জন

ছবি

ট্রাইব্যুনাল আইনে বিচার মানে ‘হাত-পা বেঁধে নদীতে ফেলে আসামিকে বলা সাঁতার কাটো’: রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী

ছবি

নির্বাচনের ‘সহায়ক পরিবেশ আছে’, আইনশৃঙ্খলা নিয়ে ‘উদ্বেগ নেই’: ইসি সচিব

ছবি

শাহজালাল বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে আগুন: ফায়ার সার্ভিসের পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন

ছবি

জুলাই যোদ্ধারা আইডি কার্ড ও আইনি সুরক্ষা চায়, বৈঠকে গুরুত্বারোপ

ছবি

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের সীমাবদ্ধতা নিয়ে যুক্তিতর্ক শুরু করলেন আসামিপক্ষের আইনজীবী

ছবি

নির্বাচন নিয়ে সংশয় দেখছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের হত্যাকাণ্ডের মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে

বাড়ি ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে শহীদ মিনারে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের সমাবেশ, একশজনের অনশন চলছে

বাংলাদেশে একদিনে ডেঙ্গুতে একজনের মৃত্যু; চলতি বছর মৃতের সংখ্যা ২৪৫

শাহজালাল বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে আগুন ২৭ ঘণ্টা পর নিভেছে

শাহজালাল বিমানবন্দরের আগুনে পোশাক খাতের বড় ক্ষতি: বিজিএমইএর উদ্বেগ

‘নাশকতা কিনা’ প্রশ্নে ক্ষোভ বিমান উপদেষ্টার

‘বাতাসের কারণে’ আগুন নেভাতে দেরি: ফায়ার সার্ভিসের ডিজি

অগ্নিকাণ্ডে নাশকতার প্রমাণ মিললে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ: প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর

বিমানবন্দরে অগ্নিকাণ্ড তদন্তে বিমানের সাত সদস্যের কমিটি

ছবি

দাবি আদায়ে অনড় এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা, বিক্ষোভ শেষে আবারও শহীদ মিনারে অবস্থান

ছবি

ভাষা সৈনিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আহসান উল্লাহ চৌধুরী আর নেই

ছবি

এবার ‘মার্চ টু যমুনা’র ঘোষণা এমপিও শিক্ষকদের

ছবি

বিচার বিভাগে নারীর অংশগ্রহণ জনআস্থার ‘বিশেষ প্রতীক’: প্রধান বিচারপতি

ছবি

বাংলাদেশ ওআইসির উদ্যোগের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ: শ্রম উপদেষ্টা

ছবি

ইভিএম: মামলা ও বকেয়ার বিষয়ে মাঠের তথ্য চেয়েছে ইসি

ছবি

ডেঙ্গু: আরও ৫১০ জন হাসপাতালে, আক্রান্ত ছাড়ালো ৫৮ হাজার

ছবি

এনসিপিকে ছাড়াই ‘জুলাই সনদ’ সই: ‘নবজন্ম হলো’, বললেন ইউনূস

ছবি

ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের সভা স্থগিত: পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের উদ্বেগ

ছবি

পুলিশ-জুলাই যোদ্ধা সংঘর্ষ সংসদ এলাকা রণক্ষেত্র

জুলাই জাতীয় সনদে সই আজ, অংশগ্রহণ নিয়ে সংশয়ে কয়েক দল

ছবি

জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর হতে যাচ্ছে আজ, কী থাকছে এই সনদে

গৃহবধূকে শ্বাসরোধে হত্যার দায়ে স্বামীর আমৃত্যু কারাদণ্ড

ছবি

এখন থেকে সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে ডেঙ্গু টেস্ট

চীনে নারী পাচার: দূতাবাস ও ইমিগ্রেশনের ‘যোগসাজশ’ দেখছে র‌্যাব

tab

দায়িত্বে চাপ ছিল, বিদেশে চাকরির প্রলোভনও ছিল: দাবি মসিউরের

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

শনিবার, ২৮ মে ২০২২

প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমান দাবি করেছেন, পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ তোলার পর বিশ্ব ব্যাংকসহ ঋণদাতা সংস্থাগুলো দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়াতে চাপ দেওয়ার পাশাপাশি বিদেশে চাকরির প্রলোভনও দেখিয়েছিল।

শুক্রবার (২৭ মে) রাতে আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে, বহুল আলোচিত পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিন ঠিক হয়ে যাওয়ার পর এক দশক আগের সেই কথা তিনি প্রকাশ্যে আনলেন। যা আগে কখনও সামনে আসেনি।

বিশ্ব ব্যাংক, এডিবি, আইডিবি ও জাইকার অর্থায়নে ২০১২ সালে পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ শুরুর পর দুর্নীতির অভিযোগ তোলে বিশ্ব ব্যাংক। তখন বিশ্ব ব্যাংকের চাপে তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে পদত্যাগ করতে হয়, ছুটিতে যেতে হয় সেতু বিভাগের সাবেক সচিব মোশাররফ হোসাইনকে। মামলাও হয়।

তখন পদ্মা সেতু প্রকল্পের ইন্টিগ্রিটি অ্যাডভাইজর মসিউর রহমানের পদত্যাগের শর্তও দিয়েছিল বিশ্ব ব্যাংক। কিন্তু তিনি রাজি হননি।

এরপর বিশ্ব ব্যাংক আর এই প্রকল্পে ফেরেনি; আর নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্প এগিয়ে নিয়ে কাজ শেষ করে আগামী ২৫ জুন উদ্বোধন করতে যাচ্ছে পদ্মা সেতু।

মসিউর রহমান বলেন, আমার ওপরে যে চাপ ছিল যেমন, এখানে ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক ছাড়া অন্য যারা এতে অর্থায়ন করছে- বিশ্ব ব্যাংক, এডিবি, জাইকা- এরা একদিন সকালে আগে সময় ঠিক করে আমার সঙ্গে দেখা করতে চাইল। প্রথমে তারা বলল যে, জাপানের অ্যাম্বাসির অফিসে। আমি বললাম, দেখো জাপান অ্যাম্বাসির অফিসে আমি যাব না। আমার নিজের কাছে যুক্তি ছিল যে, জাপানি অ্যাম্বাসির কাছে যদি আমি যাই, তাহলে যেটা মানুষের ধারণা হবে এবং প্রচার হবে- সেটা হলো, আমি বোধহয় তাদের কাছে নতজানু হয়ে কোনো একটা সুবিধা চাচ্ছি। জাপানি অ্যাম্বাসেডরকে বললাম, তুমি তাহলে আমার এখানে আস। জাপানি অ্যাম্বাসেডর বলল- ‘না, তোমার ওখানে গেলে সাংবাদিকদের ফেইস করতে হবে, আমি সাংবাদিকদের ফেইস করতে পারব না’। আমি বললাম, সাংবাদিকদের আমি ফেইস করব, তুমি আস।

তিনি বলেন, ওরা এসে আমাকে বলল যে, আমাকে দায়িত্ব ত্যাগ করতে হবে, দেশও ত্যাগ করতে হবে। দেশত্যাগের শর্ত হলো তারা আমাকে বিদেশে বিশ্ব ব্যাংকে বা এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক বা কোথাও আমাকে একটা কনসালট্যান্সি জোগাড় করে দিবে এবং আমি যে বেতন চাই, সেই বেতনই তারা ব্যবস্থা করে দেবে। অথবা তারা কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার কিছু কাজ ঠিক করে দেবে এবং আমাকে তারা টাকা দেওয়ার বন্দোবস্ত করে দেবে। আমার উত্তর হলো দেখো, আমার যদি টাকা করার ইচ্ছা থাকত, তাহলে তোমরা যে দোষারোপ করছ, সেখানেই তো আমি টাকা করতে পারতাম। ওদের যেটা প্রস্তাব, এটা হলো একটা সামঞ্জস্যহীন প্রস্তাব। যে ‘দোষ’ করেছে, তাকে আবার তারা পুরস্কৃত করবে।

সেসময় আওয়ামী লীগ নেতা ও বন্ধুরাও তাকে বিদেশে চলে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন বলে জানান মসিউর।

তিনি আরও বলেন, যেটা আমার বলা উচিৎ হবে এবং না বলাটা অনুচিত হবে যে, এই শক্ত পজিশন নেওয়ার ক্ষমতাটা কোত্থেকে আসলো? বিশ্ব ব্যাংক বলার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের কিছু গুরুজন স্থানীয়, যারা প্রভাবশালী, দু’একজন আমার বন্ধু, তারাও আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত- বন্ধু হিসেবে তারা আমাকে বলেছে যে, দেখো তোমার নামে এসব ছড়াচ্ছে। তুমি কেন দায়িত্ব ত্যাগ করো না এবং দেশ ছাড় না কেন?

মসিউর রহমান বলেন, আমি দেশ ছাড়ব না এইজন্য যে, দেশের বাইরে গেলে আমার পায়ের তলায় মাটি থাকবে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে সাহস জুগিয়েছেন, এ কথা বলতে বলতেই লাইভ অনুষ্ঠানে আবেগাপ্লুত হয়ে ঝরঝরিয়ে কেঁদে ফেলেন মসিউর। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলে চলেন, আমি যেটা বলি সেটা হল, আমার ওপর একটা বড় ছায়া আছে। সেই ছায়াটা হল- বঙ্গবন্ধুর ছায়া। ওই ছায়া যতদিন থাকবে, ততদিন আমি নিরাপদ।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দূরদৃষ্টি ও সৎ সাহস না থাকলে পদ্মা সেতু হত না।

তিনি আরও বলেন, বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট শেষ কর্মদিবসে এই ঋণ বাতিল করে দেন। ঋণের অনুমোদন দেয় বিশ্ব ব্যাংকের বোর্ড। বোর্ডকে নাকচ করার ক্ষমতা প্রেসিডেন্টের আছে কি না, এই একটা প্রশ্ন থাকতে পারে।

পদ্মা সেতু প্রকল্পের শুরু থেকেই এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত এই উপদেষ্টা বলেন, পদ্মা সেতু শুরু হওয়ার আগে বা এই দুর্নীতির অভিযোগ সম্পর্কে বিশ্ব ব্যাংক সোচ্চার হওয়ার আগে যেটা অনুসরণ করা হতো- যে সংস্থা ঋণ দিয়েছে, প্রত্যেকে তাদের নিজের নিজের নিয়ম মেনে চলত। কিন্তু এইখানে বিশ্ব ব্যাংক- এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, জাইকা এদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে যে, যদি বিশ্ব ব্যাংক কোথাও দুর্নীতির জন্য কোনো সহায়তা বন্ধ করে তাহলে এরাও সে সহায়তা বন্ধ করবে। এরকম চাপ তারা সৃষ্টি করল। এই যে আন্তর্জাতিক ম-লে চাপ সৃষ্টি- এর বিরুদ্ধে একটা পজিশন নেওয়া, এটা অত্যন্ত সাহসী না হলে সম্ভব হত না।

পদ্মা সেতুর চালুর পর বাংলাদেশের উন্নয়ন কিভাবে ত্বরান্বিত হবে সে কথাও তুলে ধরেন তিনি।

মসিউর বলেন, উন্নয়ন ততক্ষণ শুরু হয় না, যখন না মানুষের মনে উন্নয়ন স্পৃহা জাগে। দ্বিতীয়ত যতক্ষণ না তাদের এই আস্থা জাগে যে, উন্নয়ন শুধু স্বপ্ন না, উন্নয়ন তারা বাস্তবায়ন করতে পারবে। আর এই বাস্তবায়ন সম্ভব হয় দেশের নেতৃত্ব ও নীতি যদি সঠিক পথে চলে। জনগণের আস্থা ও স্পৃহাই হলো সব থেকে বড় শক্তি। এই স্পৃহার এখনকার উৎস শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু সেতু যখন শুরু হয়, তখনও বিশ্ব ব্যাংক এটা ‘ভায়াবল’ হবে না বলে আপত্তি তুলেছিল জানিয়ে তিনি বলেন, কিন্তু পরবর্তীতে দেখা গেল যখন অনেক উন্নতি হবে, তখন বিশ্ব ব্যাংক আবার নিজে থেকেই ফিরে আসল। বঙ্গবন্ধু সেতু জাতীয় আয়ে ২ থেকে ৪ শতাংশ অবদান রাখছে, যেটা সমীক্ষার থেকেও বেশি।

পদ্মা সেতু হলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে শিল্প বাড়বে, মোংলা বন্দর থেকে চট্টগ্রাম বন্দর পর্যন্ত সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন হবে এবং এশিয়ান হাইওয়ে সুবিধা ব্যবহার করে দেশের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্ত ছাড়াও দেশের বাইরে যাওয়ার সুবিধা হবে বলে জানান তিনি। এর মানে হলো বাংলাদেশ বিশ্ব বাণিজ্য ও বিশ্ব অর্থনীতির একটা কেন্দ্রে এসে গেল। এই কেন্দ্রের যে ক্ষমতা, সেটা অর্জনের জন্য আমাদের কিছু কাজ করতে হবে। সেই কাজের উৎস হল, বিশ্বাস ও আস্থা, যেটা এই নেতৃত্বের কাছ থেকে পেয়েছি।

তিনি আরও বলেন, এমন সেতু আগামী ৫০ বা ১০০ বছরেও আর একটি হবে না। বিশ্ব ব্যাংক একটি শতবর্ষী প্রকল্পের অংশীদার হওয়া থেকে নিজেকে বাদ দিয়েছে। বাংলাদেশ এককভাবে এই শতবর্ষী প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। এটা দেশের অর্থনীতিকে সম্পূর্ণভাবে পাল্টে দেবে। এইটা একটা বড় অর্জন।

পদ্মা সেতু নিয়ে যে ‘ষড়যন্ত্র’ সেটা ‘আপতদৃষ্টিতে’ কোনো ব্যক্তি বা দলের বিরুদ্ধে মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে এতে দেশের ক্ষতি হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

‘রাজনীতির সাতকাহন’ নামে আওয়ামী লীগের এ সাপ্তাহিক আয়োজনে সঞ্চালনা করেন দলের উপ-প্রচার সম্পাদক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম; বক্তৃতা করেন সভাপতিম-লীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক।

back to top