alt

‘নিজের ভাঁড় ভালো না, গোয়ালার ঘিয়ের দোষ দিয়ে লাভ কী?’

পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধ প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : বুধবার, ২২ জুন ২০২২

ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের যে ‘গৌরব ও অহংকার’ বাংলাদেশ অর্জন করেছে, তা সাধারণ মানুষ পাশে দাঁড়িয়েছিল বলেই সম্ভব হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেছেন, ‘মানুষের কাছ থেকে যে অভূতপূর্ব সাড়াটা আমি পেয়েছিলাম, সেটাই কিন্তু আমার সাহস আর শক্তি। মানুষ আমার পাশে দাঁড়িয়েছিল। তাদেরই সাহসে এই পদ্মা সেতু আজ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে।’

পদ্মা সেতু উদ্বোধনের ৩ দিন আগে বুধবার (২২ জুন) নিজের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বললেও বক্তব্যের একটি বড় অংশজুড়ে ছিল পদ্মা সেতু।

এ সময় পদ্মা সেতু ইস্যুতে বিশ্বব্যাংককে ধন্যবাদ জানান শেখ হাসিনা। পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংক ও জাইকার প্রতিক্রিয়া কী? তাদের দুঃখ প্রকাশ করা উচিত কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বরং বিশ্বব্যাংককে ধন্যবাদ জানাই। কারণ, এটা (ঋণ বন্ধ) ঘটেছিল বলেই আমরা এটা (পদ্মা সেতু) করতে পেরেছি। আমাদের একটা ধারণা ছিল, আমরা নিজেদের টাকায়, নিজেরা কিছু করতে পারি না। একটা পরমুখাপেক্ষিতা, দৈন্যতা ছিল। (বিশ্বব্যাংক ফিরিয়ে দেয়ার কারণে নিজস্ব অর্থায়নে সেতু বানিয়ে) আমাদের সেই ধারণা বদলে গেছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০১১ সালে এপ্রিল থেকে জুন মাসের মধ্যে সেতু প্রকল্পে অর্থায়নের বিষয়ে বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), জাইকা ও ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকের (আইডিবি) সঙ্গে ঋণচুক্তি সই করা হয়। এরপর শুরু হয় ষড়যন্ত্র। একটা কথা আছে, নিজের ভাঁড় ভালো না, গোয়ালার ঘিয়ের দোষ দিয়ে লাভ কী? পদ্মা সেতুর ঋণটা আসলে কেন বন্ধ হয়েছিল? আমাদের ঘরের (দেশের) কিছু লোকের জন্যই কিন্তু।’

বিএনপি-জামায়াত জোট ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে মাওয়া প্রান্তে সেতু নির্মাণের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিল মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর আমি ১৯৯৭ সালে জাপান সফর করি। পদ্মা ও রূপসা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের প্রস্তাব করি। তারা (জাপান) রাজি হয়। ২০০১ সালে পদ্মা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের সমীক্ষার তথ্য আমাদের দেয়। সমীক্ষায় মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতু নির্মাণের স্থান নির্বাচন করা হয়। ২০০১ সালের ৪ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে আমি মুন্সীগঞ্জের মাওয়ায় পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করি। কিন্তু ২০০১ সালের নির্বাচনে আমরা সরকারে আসতে পারিনি। ক্ষমতায় এসে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার মাওয়া প্রান্তে সেতু নির্মাণের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় এবং জাপান সরকারকে পুনরায় মানিকগঞ্জের আরিচা প্রান্তে পদ্মা সেতুর জন্য সমীক্ষা করতে বলে। দ্বিতীয়বার সমীক্ষার পর জাপান মাওয়া প্রান্তকেই নির্দিষ্ট করে সেতু নির্মাণের রিপোর্ট পেশ করে।’২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ আবার সরকারের দায়িত্বে এসে পদ্মা সেতু নির্মাণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

পদ্মা সেতু অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে নির্মাণ করা হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, পদ্মা সেতুর কাজের মান নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলতে পারবে না। এই সেতু বিশ্বের সেরা উপকরণে অত্যন্ত মানসম্পন্নভাবে তৈরি করা হয়েছে।

বিএনপি নেতাদেরও পদ্মা সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগ বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই আমন্ত্রণপত্র পৌঁছে দেন বলে জানান শেখ হাসিনা।

ব্যয় বাড়ার কারণ ব্যাখ্যা করে প্রধানমন্ত্রী জানান, ২০১০ সালের মধ্যে নকশা চূড়ান্ত হয়। পরের বছর জানুয়ারিতে সংশোধিত ডিপিপি দাঁড়ায় ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা। সেতুর দৈর্ঘ্য ৫ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার থেকে বাড়িয়ে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার করার কারণে ব্যয় বাড়ে। এরপর ৪১টি স্প্যানের মধ্যে ৩৭টি স্প্যানের নিচ দিয়ে নৌযান চলাচলের সুযোগ রাখা হয়েছে। যুক্ত করা হয় রেল সংযোগ। কংক্রিটের বদলে ইস্পাত বা স্টিলের অবকাঠামো যুক্ত হয়। পাইলিংয়ের ক্ষেত্রেও গভীরতা বাড়ে। বাড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন ব্যয়। ২০১৭ সাল থেকে সরকার জমি অধিগ্রহণে জমির দামের তিন গুণ অর্থ দেয়া শুরু করে। ২০১৬ সালে সেতুর খরচ আবার বাড়ে। ওই সময় ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যায়। নদীশাসনে নতুন করে এক দশমিক ৩ কিলোমিটার যুক্ত হয়। সব মিলে ৮ হাজার কোটি টাকা খরচ বেড়ে যায়। নিরাপত্তায় সেনাবাহিনীকে যুক্ত করা হয়। সব মিলে পদ্ম সেতুর প্রকল্প ব্যয় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। ২১ জুন পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ২৭ হাজার ৭৩২ কোটি ৮ লাখ টাকা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘৪০০ কেভি ট্রান্সমিশন লাইন টাওয়ার ও গ্যাসলাইনের এক হাজার কোটি টাকা ব্যয়সহ মূল সেতু নির্মাণে ব্যয় ১২ হাজার ১৩৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা ধরা হলেও ব্যয় হয়েছে ১১ হাজার ৯৩৮ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। এছাড়া নদীশাসনে ৮ হাজার ৭০৬ কোটি ৯১ লাখ, অ্যাপ্রোচ সড়কে এক হাজার ৮৯৫ কোটি ৫৫ লাখ, পুনর্বাসনে এক হাজার ১১৬ কোটি ৭৬ লাখ এবং ভূমি অধিগ্রহণে ব্যয় হয়েছে ২ হাজার ৬৯৮ কোটি ৭৩ লাখ টাকা।’

পদ্মা সেতুতে দুর্নীতি প্রসঙ্গে এ দেশের মানুষের ষড়যন্ত্র প্রসঙ্গে ড. ইউনূসের দিকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ব্যাংকের একটি এমডি পদ একজনের জন্য এত গুরুত্বপূর্ণ হয় কী করে! ক্ষুদ্র ব্যক্তিস্বার্থের জন্য দেশের মানুষের কেউ ক্ষতি করতে পারে; এটা সত্যিই কল্পনার বাইরে ছিল।’

ড. ইউনূস একটি ব্যাংকের এমডি হয়ে একটি ফাউন্ডেশনে কীভাবে এত ডলার অনুদান দিল সেই প্রশ্ন তুলে গণমাধ্যমকে তা তদন্ত করার পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক্ষেত্রে যদি কোন তথ্য লাগে তিনি তার জোগান দেবেন বলেও জানান। তিনি নিজে এটা করতে গেলে ‘প্রতিহিংসা’র প্রশ্ন আসতে পারে বলেও মন্তব্য করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আরও তথ্য আছে। কোন ব্যাংকে কত টাকা আছে, কোন চেকে কত টাকা সরালো, সেইসব তথ্যও আছে। বের করেন না। সব আমরা বলবো কেন? আপনারা একটু খুঁজে বের করেন। তারপরে যদি কিছু লাগে জোগান দিব।’

পদ্মা সেতুর যারা বিরোধিতা করে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছেন তাদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে কি না এমন প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘সময়ই বলে দেবে।’

এছাড়া পদ্মা সেতুর বিরোধিতাকারীদের ক্ষমা চাওয়া উচিত কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটা তাদের বিবেকের বিষয়। এ বিষয়ে আমরা কিছু বলবো না।’

ছবি

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও ভুল তথ্য ছড়াচ্ছেন: প্রেস সচিব

ছবি

আইআরআইয়ের প্রাক-নির্বাচনী মূল্যায়ন প্রতিবেদন, বাংলাদেশে প্রাক-নির্বাচনী পরিবেশ এখনও নাজুক

ছবি

মেঘনা-ধনাগোদা নদীর উপর সেতু নির্মাণ প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করলেন সেতু বিভাগের সচিব

ছবি

তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিলের রায় ‘অসৎ উদ্দেশ্যে’ দেয়া হয়েছিল দাবি অ্যাটর্নি জেনারেলের

হালদা নদীকে মৎস্য হেরিটেজ ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি

ছবি

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন: দলগুলোকে দায়িত্ব দেয়ার চার দিনেও অগ্রগতি নেই

ছবি

শতভাগ জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনে বড় বাধা দুর্বল আইন, শক্তিশালীকরণের দাবি

ছবি

ইন্টারনেট বন্ধে স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা, বিলুপ্ত হচ্ছে এনটিএমসি

ছবি

ডেঙ্গুতে আরও ৫ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ১০৩৪ জন

ছবি

আওয়ামী লীগের চিঠিতে কোনও কাজ হবে না: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

জুলাইযোদ্ধা জাহাঙ্গীর আলমকে নির্যাতনের অভিযোগে জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের ১০ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা

ছবি

মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে গুম প্রতিরোধ ও প্রতিকার অধ্যাদেশের চূড়ান্ত অনুমোদন

ছবি

সাবেক বিচারপতিসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

ছবি

ডেঙ্গুতে একদিনে সর্বোচ্চ ১০ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে আরও ১,০৬৯ জন

জামিনে মুক্তি পাওয়া আ’লীগ নেতারা অপরাধে জড়ালে কঠোর ব্যবস্থা: উপদেষ্টা

ছবি

তদন্ত প্রতিবেদন: পাইলটের ত্রুটির কারণে মাইলস্টোন স্কুলে বিমান বিধ্বস্ত হয়

ছবি

বাংলাদেশে পুলিশ সংস্কারে সহায়তার আগ্রহ আয়ারল্যান্ডের

ছবি

নির্বাচন হলে দেশে স্থিতিশীলতা আরও ভালো হবে, আশা সেনাবাহিনীর

ছবি

অগ্নিঝুঁকিতে বেনাপোল স্থলবন্দরের পণ্যাগার, ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ, নিরাপত্তা জোরদার

ছবি

নির্বাচন হলে দেশে স্থিতিশীলতা আসবে, সেনাবাহিনী ফিরবে ব্যারাকে: জিওসি মাইনুর রহমান

ছবি

নিষিদ্ধ দলের মিছিলের চেষ্টা করলে আইনের কঠোর প্রয়োগ: প্রেস সচিব

দায়িত্ব পালনে অযোগ্যতা: হাই কোর্টের বিচারপতি খুরশীদ আলম সরকারের অপসারণ

ছবি

দেশে ডেঙ্গুতে একদিনে প্রাণ গেল ১০ জনের

ছবি

আইসিটি মামলায় আটক ১৫ সেনা কর্মকর্তার চাকরি নিয়ে সেনাসদরের ব্যাখ্যা: “এটি একটি আইনগত প্রক্রিয়া”

ছবি

১৪ মাসে ৪০ বিচারবহির্ভূত হত্যা, আইনের মাধ্যমে ফয়সালা করা হবে: স্বরাষ্ট্র্র উপদেষ্টা

ছবি

আরপিও সংশোধন অধ্যাদেশ জারি: বিএনপির আপত্তি আমলে নেয়নি অন্তর্বর্তী সরকার

কোটা আন্দোলনে হামলায় ঢাবির আরও ২৭৫ শিক্ষার্থী অভিযুক্ত

ছবি

নির্বাচন: দেড় লাখের মধ্যে ৪৮ হাজার পুলিশের প্রশিক্ষণ শেষ

আবু সাঈদ হত্যা মামলায় তিনবারেও সাক্ষী হাজিরে ব্যর্থ প্রসিকিউশন

ছবি

নভেম্বর মাসেও কমছে না ডেঙ্গু, পরিস্থিতি উদ্বেগজনক

ছবি

সনদ, গণভোট: দলগুলোকে দ্রুত ‘সিদ্ধান্ত’ নেয়ার আহ্বান, নইলে পদক্ষেপ নেবে অন্তর্বর্তী সরকার

ছবি

ডেঙ্গু ও নিউমোনিয়ায় মাধবদীতে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি

ছবি

বাণিজ্য ও প্রতিরক্ষা খাতে তুরস্কের সঙ্গে সহযোগিতা বাড়াতে চায় বাংলাদেশ

বিটিআরসির প্রস্তাবিত নীতিমালা বাস্তবায়ন হলে ইন্টারনেটের দাম বাড়বে: আইএসপিএবি

ছবি

ডেঙ্গুতে আরও ৫ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১১৪৭ জন

ছবি

পঞ্চদশ সংশোধনী পুরো বাতিল চেয়ে আপিল

tab

‘নিজের ভাঁড় ভালো না, গোয়ালার ঘিয়ের দোষ দিয়ে লাভ কী?’

পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধ প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

বুধবার, ২২ জুন ২০২২

ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের যে ‘গৌরব ও অহংকার’ বাংলাদেশ অর্জন করেছে, তা সাধারণ মানুষ পাশে দাঁড়িয়েছিল বলেই সম্ভব হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেছেন, ‘মানুষের কাছ থেকে যে অভূতপূর্ব সাড়াটা আমি পেয়েছিলাম, সেটাই কিন্তু আমার সাহস আর শক্তি। মানুষ আমার পাশে দাঁড়িয়েছিল। তাদেরই সাহসে এই পদ্মা সেতু আজ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে।’

পদ্মা সেতু উদ্বোধনের ৩ দিন আগে বুধবার (২২ জুন) নিজের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বললেও বক্তব্যের একটি বড় অংশজুড়ে ছিল পদ্মা সেতু।

এ সময় পদ্মা সেতু ইস্যুতে বিশ্বব্যাংককে ধন্যবাদ জানান শেখ হাসিনা। পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংক ও জাইকার প্রতিক্রিয়া কী? তাদের দুঃখ প্রকাশ করা উচিত কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বরং বিশ্বব্যাংককে ধন্যবাদ জানাই। কারণ, এটা (ঋণ বন্ধ) ঘটেছিল বলেই আমরা এটা (পদ্মা সেতু) করতে পেরেছি। আমাদের একটা ধারণা ছিল, আমরা নিজেদের টাকায়, নিজেরা কিছু করতে পারি না। একটা পরমুখাপেক্ষিতা, দৈন্যতা ছিল। (বিশ্বব্যাংক ফিরিয়ে দেয়ার কারণে নিজস্ব অর্থায়নে সেতু বানিয়ে) আমাদের সেই ধারণা বদলে গেছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০১১ সালে এপ্রিল থেকে জুন মাসের মধ্যে সেতু প্রকল্পে অর্থায়নের বিষয়ে বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), জাইকা ও ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকের (আইডিবি) সঙ্গে ঋণচুক্তি সই করা হয়। এরপর শুরু হয় ষড়যন্ত্র। একটা কথা আছে, নিজের ভাঁড় ভালো না, গোয়ালার ঘিয়ের দোষ দিয়ে লাভ কী? পদ্মা সেতুর ঋণটা আসলে কেন বন্ধ হয়েছিল? আমাদের ঘরের (দেশের) কিছু লোকের জন্যই কিন্তু।’

বিএনপি-জামায়াত জোট ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে মাওয়া প্রান্তে সেতু নির্মাণের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিল মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর আমি ১৯৯৭ সালে জাপান সফর করি। পদ্মা ও রূপসা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের প্রস্তাব করি। তারা (জাপান) রাজি হয়। ২০০১ সালে পদ্মা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের সমীক্ষার তথ্য আমাদের দেয়। সমীক্ষায় মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতু নির্মাণের স্থান নির্বাচন করা হয়। ২০০১ সালের ৪ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে আমি মুন্সীগঞ্জের মাওয়ায় পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করি। কিন্তু ২০০১ সালের নির্বাচনে আমরা সরকারে আসতে পারিনি। ক্ষমতায় এসে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার মাওয়া প্রান্তে সেতু নির্মাণের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় এবং জাপান সরকারকে পুনরায় মানিকগঞ্জের আরিচা প্রান্তে পদ্মা সেতুর জন্য সমীক্ষা করতে বলে। দ্বিতীয়বার সমীক্ষার পর জাপান মাওয়া প্রান্তকেই নির্দিষ্ট করে সেতু নির্মাণের রিপোর্ট পেশ করে।’২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ আবার সরকারের দায়িত্বে এসে পদ্মা সেতু নির্মাণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

পদ্মা সেতু অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে নির্মাণ করা হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, পদ্মা সেতুর কাজের মান নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলতে পারবে না। এই সেতু বিশ্বের সেরা উপকরণে অত্যন্ত মানসম্পন্নভাবে তৈরি করা হয়েছে।

বিএনপি নেতাদেরও পদ্মা সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগ বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই আমন্ত্রণপত্র পৌঁছে দেন বলে জানান শেখ হাসিনা।

ব্যয় বাড়ার কারণ ব্যাখ্যা করে প্রধানমন্ত্রী জানান, ২০১০ সালের মধ্যে নকশা চূড়ান্ত হয়। পরের বছর জানুয়ারিতে সংশোধিত ডিপিপি দাঁড়ায় ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা। সেতুর দৈর্ঘ্য ৫ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার থেকে বাড়িয়ে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার করার কারণে ব্যয় বাড়ে। এরপর ৪১টি স্প্যানের মধ্যে ৩৭টি স্প্যানের নিচ দিয়ে নৌযান চলাচলের সুযোগ রাখা হয়েছে। যুক্ত করা হয় রেল সংযোগ। কংক্রিটের বদলে ইস্পাত বা স্টিলের অবকাঠামো যুক্ত হয়। পাইলিংয়ের ক্ষেত্রেও গভীরতা বাড়ে। বাড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন ব্যয়। ২০১৭ সাল থেকে সরকার জমি অধিগ্রহণে জমির দামের তিন গুণ অর্থ দেয়া শুরু করে। ২০১৬ সালে সেতুর খরচ আবার বাড়ে। ওই সময় ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যায়। নদীশাসনে নতুন করে এক দশমিক ৩ কিলোমিটার যুক্ত হয়। সব মিলে ৮ হাজার কোটি টাকা খরচ বেড়ে যায়। নিরাপত্তায় সেনাবাহিনীকে যুক্ত করা হয়। সব মিলে পদ্ম সেতুর প্রকল্প ব্যয় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। ২১ জুন পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ২৭ হাজার ৭৩২ কোটি ৮ লাখ টাকা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘৪০০ কেভি ট্রান্সমিশন লাইন টাওয়ার ও গ্যাসলাইনের এক হাজার কোটি টাকা ব্যয়সহ মূল সেতু নির্মাণে ব্যয় ১২ হাজার ১৩৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা ধরা হলেও ব্যয় হয়েছে ১১ হাজার ৯৩৮ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। এছাড়া নদীশাসনে ৮ হাজার ৭০৬ কোটি ৯১ লাখ, অ্যাপ্রোচ সড়কে এক হাজার ৮৯৫ কোটি ৫৫ লাখ, পুনর্বাসনে এক হাজার ১১৬ কোটি ৭৬ লাখ এবং ভূমি অধিগ্রহণে ব্যয় হয়েছে ২ হাজার ৬৯৮ কোটি ৭৩ লাখ টাকা।’

পদ্মা সেতুতে দুর্নীতি প্রসঙ্গে এ দেশের মানুষের ষড়যন্ত্র প্রসঙ্গে ড. ইউনূসের দিকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ব্যাংকের একটি এমডি পদ একজনের জন্য এত গুরুত্বপূর্ণ হয় কী করে! ক্ষুদ্র ব্যক্তিস্বার্থের জন্য দেশের মানুষের কেউ ক্ষতি করতে পারে; এটা সত্যিই কল্পনার বাইরে ছিল।’

ড. ইউনূস একটি ব্যাংকের এমডি হয়ে একটি ফাউন্ডেশনে কীভাবে এত ডলার অনুদান দিল সেই প্রশ্ন তুলে গণমাধ্যমকে তা তদন্ত করার পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক্ষেত্রে যদি কোন তথ্য লাগে তিনি তার জোগান দেবেন বলেও জানান। তিনি নিজে এটা করতে গেলে ‘প্রতিহিংসা’র প্রশ্ন আসতে পারে বলেও মন্তব্য করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আরও তথ্য আছে। কোন ব্যাংকে কত টাকা আছে, কোন চেকে কত টাকা সরালো, সেইসব তথ্যও আছে। বের করেন না। সব আমরা বলবো কেন? আপনারা একটু খুঁজে বের করেন। তারপরে যদি কিছু লাগে জোগান দিব।’

পদ্মা সেতুর যারা বিরোধিতা করে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছেন তাদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে কি না এমন প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘সময়ই বলে দেবে।’

এছাড়া পদ্মা সেতুর বিরোধিতাকারীদের ক্ষমা চাওয়া উচিত কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটা তাদের বিবেকের বিষয়। এ বিষয়ে আমরা কিছু বলবো না।’

back to top