alt

আদিবাসী দিবসে সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবি

আদিবাসীদের বিলুপ্ত করার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে অভিযোগ সন্তু লারমার

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : বুধবার, ১০ আগস্ট ২০২২

আদিবাসী দিবসের অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট ব্যক্তিরা সাংবিধানিকভাবে আদিবাসী হিসেবে পরিচয়ের দাবি জানিয়েছেন। মঙ্গলবার ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের অনুষ্ঠানে এই দাবি ওঠে। এ বছর আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসের প্রতিপাদ্য হল ‘ঐতিহ্যগত জ্ঞান সংরক্ষণ ও বিকাশে আদিবাসী নারীদের ভূমিকা’।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের পক্ষ থেকে ১১ দফা দাবি উপস্থাপন করা হয়। সাংবিধানিক অধিকার দাবির পাশাপাশি এতে রয়েছে- রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও ভূমির অধিকার নিশ্চিত, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন, ভূমি কমিশন আইন অবিলম্বে কার্যকর, স্বাধীন পূর্বসম্মতি ছাড়া ইকোপার্ক, সামাজিক বনায়ন, টুরিজম, ইপিজেড বা অন্য কোনো প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন না করা, রাষ্ট্রীয়ভাবে আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উদযাপন ইত্যাদি।

বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সভাপতি এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমার (সন্তু লারমা) সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বক্তব্য রাখেন।

সকালে বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ। বক্তব্যের পাশাপাশি মাদলসহ বিভিন্ন সংগঠনের সাংস্কৃতিক পরিবেশনার পর শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে শেষ হয় দিবসের কর্মসূচি।

অনুষ্ঠানে সন্তু লারমা বলেন, “১৯৭২ সালের সংবিধান রচনার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের আদিবাসীদের পরিচয় হরণ করা হয়। সেই সংবিধানে বলা হয়, বাংলাদেশের অধিবাসীদের বাঙালি নামে পরিচয় দেওয়া হবে। এরপর থেকেই বিগত ৫০ বছর যাবত আদিবাসীদের বিলুপ্ত করার জন্য বিভিন্ন চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।”

আদিবাসীদের ভূমির অধিকার প্রতিষ্ঠায় জোর দিয়ে তিনি বলেন, “ভূমি হারানোর যন্ত্রণা যিনি ভূমি হারিয়েছেন, তিনি ছাড়া আর কেউ বোঝেন না। আজকে বাংলাদেশে এমন কোনো আদিবাসী পরিবার নেই, যেই পরিবার নানাভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়নি, নিজেদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়নি।”

পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি হলেও তা পুরোপুরি বাস্তবায়ন না হওয়ার কথা উল্লেখ করে সন্তু লারমা বলেন, “সরকার অনেক গালভরা কথা বলে। পার্বত্য অঞ্চলে উন্নয়নের নামে রাস্তাঘাট, পর্যটন ব্যবস্থা চালু করে আদিবাসীদের উচ্ছেদ করে তাদের ভূমিহীন করে দেওয়া হচ্ছে। সমতলের আদিবাসীদের ভূমি সংরক্ষণে সরকারের তেমন কোনো পদক্ষেপ আমরা দেখতে পাই না।”

এবার তথ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের বিভিন্ন জনজাতিগোষ্ঠীকে আদিবাসী শব্দে পরিচয় না করাতে যে নির্দেশনা দেওয়া হয়, তার সমালোচনাও ওঠে অনুষ্ঠানে।

জাসদ সভাপতি ইনু বলেন, “দেশের মানচিত্র বদলায়, কিন্তু ভূমির সন্তানরা তো বদলায় না, তাদের নাম বদলায় না। সুতরাং, সংবিধানে যদি আদিবাসী শব্দটি বাদ দেওয়া হয়, তাতে তাদের অস্ত্বিত্ব, তাদের পরিচয় বিলীন হয়ে যায় না।আজকে যারা বলার চেষ্টা করছে, আদিবাসী শব্দ ব্যবহার করলে সংবিধান লঙ্ঘন হবে, তারা সংবিধানও বোঝে না, দেশও বোঝে না, জাতিও বোঝে না।”

ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি মেনন বলেন, “আজকে অনেক গণমাধ্যম আদিবাসী দিবসের বিভিন্ন উপস্থাপনায় কোট-আনকোট আদিবাসী লিখে সরকারের পক্ষ থেকে জারি হওয়া নির্দেশনাকে পাশ কাটিয়ে গিয়েছে, তাদের এই উদ্যোগকে আমি সাধুবাদ জানাই।

“আমাদের জীবনের অভিজ্ঞতায় এই ধরনের নির্দেশনা, এই ধরনের নিষেধাজ্ঞা নতুন নয়, আমরা যখন বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষার জন্য লড়াই করেছি, তখন ঘোষণা এসেছিল, রবীন্দ্র সঙ্গীত বর্জন করতে হবে। আমরা তার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে সমস্ত মানুষকে সাথে নিয়ে রবীন্দ্রসঙ্গীত গেয়েছি।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মেসবাহ কামাল বলেন, “আমাদের যে রক্তলাল পতাকা, সেখানে শুধু বাঙালিই নয়, আদিবাসীদেরও রক্ত মিশে আছে। সেকথা ভুলে গেলে চলবে না।”

এবারের জনশুমারির প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, “জনশুমারিতে আদিবাসীদের সংখ্যার যে হিসাব দেওয়া হয়েছে, সেটি বাস্তবিকভাবে আদিবাসীদের নিজস্ব হিসাবের জনসংখ্যার অনুকূলে না।১৯৯১ সালের আদমশুমারিতে বাংলাদেশের সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ছিল আড়াই লাখ। ২০২২ সালে এসে এই সংখ্যা হয়ে গেছে এক লাখ। এ কেমন জনশুমারি?”

আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় ককাসের আহ্বায়ক ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, “যারা আদিবাসীদের বর্তমান সংখ্যার হিসাব দিয়েছেন, তারা আদৌ বাংলাদেশের সকল আদিবাসী গোষ্ঠী সম্পর্কে জানেন কি না, এনিয়ে আমার সন্দেহ আছে। আদিবাসী জনগোষ্ঠীদের নিয়ে আলাদাভাবে জনশুমারি করা হোক।”

জাতীয় সংসদে নিজেদের জন্য দুটি সংরক্ষিত আসনের দাবি জানিয়ে আদিবাসী নারী পরিষদের সভাপতি বাসন্তী মুর্মু বলেন, “পাহাড় এবং সমতল থেকে একটি করে জাতীয় সংসদে মোট দুটি সংরক্ষিত আসন দাবি করছি। বাংলাদেশে আদিবাসী নারীরা প্রতিনিয়ত নানা অত্যাচার- নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন। জাতীয় সংসদে আমাদের কথাগুলো বলার কেউ নেই।”

অনুষ্ঠানে আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জিব দ্রং, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, জোবাইদা নাসরীন কনা, সমাজকর্মী আন্না মিনজ, নিজেরা করির সমন্বয়ক খুশি কবীরসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

নির্বাচন কমিশন সংশ্লিষ্ট দু’টি আইন সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদন

নির্বিঘ্নে অনুষ্ঠিত হবে দুর্গোৎসব: ডিএমপি কমিশনার

ছবি

পাহাড়ি ঢলে ঝিনাইগাতীতে নদীর বাঁধ ভেঙে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

ছবি

কাঁটাতারে ঝুলে মারা যাওয়া সেই ফেলানীর ছোট ভাই এখন বর্ডারগার্ড

ডেঙ্গু: আরও ৬ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত ৬৪৭ জন

৪ আগস্ট মুহাম্মদ ইউনূসকে নতুন সরকারের প্রধান হওয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়: নাহিদ ইসলাম

ছবি

কুমিল্লায় মাইকে ঘোষণা দিয়ে ৪টি মাজারে হামলা, আগুন

ছবি

জুলাই আন্দোলনের ঘটনায় রামপুরায় হত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধ: পাঁচ আসামির বিচার শুরু

ছবি

সাবেক ভূমিমন্ত্রী জাবেদ ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে ইন্টারপোল রেড নোটিসের আবেদন

ছবি

সরকার নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন আয়োজনের ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ: প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

টিআইবির প্রশ্ন: ভবিষ্যৎ মন্ত্রীদের জন্য বিলাসবহুল গাড়ি কেনায় অতি আগ্রহ কেন?

ছবি

নাহিদ ইসলামের জবানবন্দি: ছাত্রদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ আখ্যায়িত করে অপমানিত করা হয়েছে

ছবি

জাতিসংঘের ৮০তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্ক যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস

ছবি

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দল ও বিশেষজ্ঞদের সুপারিশ

ছবি

আমি যে কাজ করেছি তা বাংলাদেশের ইতিহাসে কোনদিন হয় নি: সিলেটে আসিফ নজরুল

ছবি

অগ্রণী ব্যাংকে শেখ হাসিনার দুটি লকার জব্দ

ছবি

দেশে ডেঙ্গুতে আরও ৫ জনের মৃত্যু, নতুন ভর্তি ৬২২

ছবি

মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে জাতিসংঘে যাচ্ছেন ফখরুল-তাহের-আখতার

ছবি

জুলাই সনদ বাস্তবায়নে চারটি পদ্ধতির পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের

ছবি

ডেমু ট্রেন কেনায় রাষ্ট্রের ক্ষতি, দুদকের মামলা

ছবি

বাংলাদেশ ও ব্রাজিলের প্রধান বিচারপতির বৈঠক

ছবি

ট্রাইব্যুনাল: নাহিদের সাক্ষ্য বুধবার, মাহমুদুর রহমানের জেরা শুরু

ছবি

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন, দলগুলোর সঙ্গে বুধবার আবার আলোচনায় বসছে ঐকমত্য কমিশন

ছবি

ভারতীয় হাই কমিশনার প্রণয় ভার্মা: বাংলাদেশ-ভারতের ভৌগোলিক নৈকট্য ও আন্তঃনির্ভতা নতুন সুযোগে রূপান্তরের সম্ভাবনা

ছবি

ধর্মীয় উৎসবে অতিরিক্ত নিরাপত্তা নয়, সমান নাগরিক অধিকারের বাংলাদেশ চান প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস

ছবি

ভুয়া প্রমাণিত হলে জুলাই যোদ্ধাদের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে গেজেট প্রকাশের নির্দেশ

ছবি

মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলায় নাহিদ ইসলামের সাক্ষ্য বুধবার

ছবি

জুলাই আন্দোলন: ইনু-নূরসহ ৯ আসামির ভার্চুয়াল হাজিরা

ছবি

বাংলাদেশে উষ্ণায়নের প্রভাব: কর্মদিবস নষ্ট, অর্থনীতি ও স্বাস্থ্যে বড় ক্ষতি

ছবি

এলডিসি থেকে উত্তরণ পিছিয়ে দিতে কাজ করছে সরকার: বাণিজ্য সচিব

ছবি

ডেঙ্গু মোকাবিলায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ১২ দফা জরুরি নির্দেশনা

ছবি

দুর্গাপূজা প্রস্তুতি নিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক

ছবি

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে অতিরিক্ত মহাপরিচালকদের দপ্তর বদল, একজনকে ওএসডি

ছবি

ফিলিস্তিনের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানাল বাংলাদেশ

ছবি

আরও ১ মাস বাড়লো ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ

ছবি

দেশে ডেঙ্গুতে আরও ৫ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত ছাড়াল ৩৮ হাজার

tab

আদিবাসী দিবসে সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবি

আদিবাসীদের বিলুপ্ত করার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে অভিযোগ সন্তু লারমার

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

বুধবার, ১০ আগস্ট ২০২২

আদিবাসী দিবসের অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট ব্যক্তিরা সাংবিধানিকভাবে আদিবাসী হিসেবে পরিচয়ের দাবি জানিয়েছেন। মঙ্গলবার ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের অনুষ্ঠানে এই দাবি ওঠে। এ বছর আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসের প্রতিপাদ্য হল ‘ঐতিহ্যগত জ্ঞান সংরক্ষণ ও বিকাশে আদিবাসী নারীদের ভূমিকা’।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের পক্ষ থেকে ১১ দফা দাবি উপস্থাপন করা হয়। সাংবিধানিক অধিকার দাবির পাশাপাশি এতে রয়েছে- রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও ভূমির অধিকার নিশ্চিত, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন, ভূমি কমিশন আইন অবিলম্বে কার্যকর, স্বাধীন পূর্বসম্মতি ছাড়া ইকোপার্ক, সামাজিক বনায়ন, টুরিজম, ইপিজেড বা অন্য কোনো প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন না করা, রাষ্ট্রীয়ভাবে আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উদযাপন ইত্যাদি।

বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সভাপতি এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমার (সন্তু লারমা) সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বক্তব্য রাখেন।

সকালে বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ। বক্তব্যের পাশাপাশি মাদলসহ বিভিন্ন সংগঠনের সাংস্কৃতিক পরিবেশনার পর শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে শেষ হয় দিবসের কর্মসূচি।

অনুষ্ঠানে সন্তু লারমা বলেন, “১৯৭২ সালের সংবিধান রচনার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের আদিবাসীদের পরিচয় হরণ করা হয়। সেই সংবিধানে বলা হয়, বাংলাদেশের অধিবাসীদের বাঙালি নামে পরিচয় দেওয়া হবে। এরপর থেকেই বিগত ৫০ বছর যাবত আদিবাসীদের বিলুপ্ত করার জন্য বিভিন্ন চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।”

আদিবাসীদের ভূমির অধিকার প্রতিষ্ঠায় জোর দিয়ে তিনি বলেন, “ভূমি হারানোর যন্ত্রণা যিনি ভূমি হারিয়েছেন, তিনি ছাড়া আর কেউ বোঝেন না। আজকে বাংলাদেশে এমন কোনো আদিবাসী পরিবার নেই, যেই পরিবার নানাভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়নি, নিজেদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়নি।”

পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি হলেও তা পুরোপুরি বাস্তবায়ন না হওয়ার কথা উল্লেখ করে সন্তু লারমা বলেন, “সরকার অনেক গালভরা কথা বলে। পার্বত্য অঞ্চলে উন্নয়নের নামে রাস্তাঘাট, পর্যটন ব্যবস্থা চালু করে আদিবাসীদের উচ্ছেদ করে তাদের ভূমিহীন করে দেওয়া হচ্ছে। সমতলের আদিবাসীদের ভূমি সংরক্ষণে সরকারের তেমন কোনো পদক্ষেপ আমরা দেখতে পাই না।”

এবার তথ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের বিভিন্ন জনজাতিগোষ্ঠীকে আদিবাসী শব্দে পরিচয় না করাতে যে নির্দেশনা দেওয়া হয়, তার সমালোচনাও ওঠে অনুষ্ঠানে।

জাসদ সভাপতি ইনু বলেন, “দেশের মানচিত্র বদলায়, কিন্তু ভূমির সন্তানরা তো বদলায় না, তাদের নাম বদলায় না। সুতরাং, সংবিধানে যদি আদিবাসী শব্দটি বাদ দেওয়া হয়, তাতে তাদের অস্ত্বিত্ব, তাদের পরিচয় বিলীন হয়ে যায় না।আজকে যারা বলার চেষ্টা করছে, আদিবাসী শব্দ ব্যবহার করলে সংবিধান লঙ্ঘন হবে, তারা সংবিধানও বোঝে না, দেশও বোঝে না, জাতিও বোঝে না।”

ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি মেনন বলেন, “আজকে অনেক গণমাধ্যম আদিবাসী দিবসের বিভিন্ন উপস্থাপনায় কোট-আনকোট আদিবাসী লিখে সরকারের পক্ষ থেকে জারি হওয়া নির্দেশনাকে পাশ কাটিয়ে গিয়েছে, তাদের এই উদ্যোগকে আমি সাধুবাদ জানাই।

“আমাদের জীবনের অভিজ্ঞতায় এই ধরনের নির্দেশনা, এই ধরনের নিষেধাজ্ঞা নতুন নয়, আমরা যখন বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষার জন্য লড়াই করেছি, তখন ঘোষণা এসেছিল, রবীন্দ্র সঙ্গীত বর্জন করতে হবে। আমরা তার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে সমস্ত মানুষকে সাথে নিয়ে রবীন্দ্রসঙ্গীত গেয়েছি।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মেসবাহ কামাল বলেন, “আমাদের যে রক্তলাল পতাকা, সেখানে শুধু বাঙালিই নয়, আদিবাসীদেরও রক্ত মিশে আছে। সেকথা ভুলে গেলে চলবে না।”

এবারের জনশুমারির প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, “জনশুমারিতে আদিবাসীদের সংখ্যার যে হিসাব দেওয়া হয়েছে, সেটি বাস্তবিকভাবে আদিবাসীদের নিজস্ব হিসাবের জনসংখ্যার অনুকূলে না।১৯৯১ সালের আদমশুমারিতে বাংলাদেশের সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ছিল আড়াই লাখ। ২০২২ সালে এসে এই সংখ্যা হয়ে গেছে এক লাখ। এ কেমন জনশুমারি?”

আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় ককাসের আহ্বায়ক ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, “যারা আদিবাসীদের বর্তমান সংখ্যার হিসাব দিয়েছেন, তারা আদৌ বাংলাদেশের সকল আদিবাসী গোষ্ঠী সম্পর্কে জানেন কি না, এনিয়ে আমার সন্দেহ আছে। আদিবাসী জনগোষ্ঠীদের নিয়ে আলাদাভাবে জনশুমারি করা হোক।”

জাতীয় সংসদে নিজেদের জন্য দুটি সংরক্ষিত আসনের দাবি জানিয়ে আদিবাসী নারী পরিষদের সভাপতি বাসন্তী মুর্মু বলেন, “পাহাড় এবং সমতল থেকে একটি করে জাতীয় সংসদে মোট দুটি সংরক্ষিত আসন দাবি করছি। বাংলাদেশে আদিবাসী নারীরা প্রতিনিয়ত নানা অত্যাচার- নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন। জাতীয় সংসদে আমাদের কথাগুলো বলার কেউ নেই।”

অনুষ্ঠানে আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জিব দ্রং, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, জোবাইদা নাসরীন কনা, সমাজকর্মী আন্না মিনজ, নিজেরা করির সমন্বয়ক খুশি কবীরসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

back to top